somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লালন ও রবি ঠাকুরনামা

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৫ দুপুর ২:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মাঝে মাঝে আমার খুব মনে হয়, রবি ঠাকুরজি বাঙালির জন্য বাংলা ভাষায় যা লিখে গেছেন তারপর বাংলা ভাষায় আর কেউ কিছু না লিখলেও তেমন কোনো ক্ষতি হতো না। একজন মানুষের জীবনের এমন কোনো অনুভূতির স্ফুরণ নেই যার প্রকাশ ঠাকুরজির কবিতা, গান, গল্পে প্রকাশ পায়নি। প্রেম, বিরহ, সুখ, তাড়না, বঞ্চনা, বৈষয়িক, দেশপ্রেম, জাগৃতি- বাঙালির তাবৎ সেন্টিমেন্ট তিনি এতো সূক্ষ্মভাবে দেখেছেন এবং লিখেছেন যে, বাঙালির এখন আর চোখে না দেখলেও চলে। রবীন্দ্রনাথ যা দেখেছেন, তা-ই দিয়েই ভালোবেসে কাটিয়ে দেয়া যাবে দু-চার শতাব্দী।
কাজী নজরুলের প্রেম, নারী, যাতনা নিয়ে পাঠককূল যতোটা উদ্বেল রবি বাবুকে অতোটা খোলতাই করার সুযোগ দেননি কবি নিজেই। বড় ‘বেদনা-সহায়ক’ ছিলেন তিনি। ঠাকুরজির জীবনে নারী অনেক অম্লতা দিয়েছে। কবি বুকে সয়ে কাগজে কেঁদেছেন। নজরুলের মতো জাহান্নামের আগুনে বসে পুষ্পের মতো উল্লাস করার সাহস ঠাকুরজির ছিলো না হয়তো। স্বল্পভাষী কবি নীরবে সয়েছেন।
তবু মাঝে মাঝে ‘তব’ দেখা পাওয়াও চাট্টিখানি কথা নয়। মাঝে মাঝে দেখা পাওয়ার একটা ‘তব’ থাকলে না মাঝে মাঝে উপলক্ষ তৈরি হয়! কবিকে আঘাত করা নারীরা কতোই না সৌভাগ্যবতী!!
মাঝে মাঝে তব দেখা পাই, চিরদিন কেন পাই না?
কেন মেঘ আসে হৃদয়-আকাশে, তোমারে দেখিতে দেয় না?।
ক্ষণিক আলোকে আঁখির পলকে তোমায় যবে পাই দেখিতে
হারাই-হারাই সদা হয় ভয়, হারাইয়া ফেলি চকিতে ॥

রবি ঠাকুরকে নিয়ে বললাম যখন, তখন লালন সাঁইকে নিয়েও কিছু কথা বলি।
কথা তো সেই সুফিবাদ নিয়েই। এখন সুফিবাদের নানা টার্ম দেখা যায়। কিন্তু লালনের যে সুফি ধরনটা আমরা আজ দেখছি সেটা কিন্তু অনেকাংশেই বানোয়াট। যেমন আজকাল প্রচার পাওয়া লালনের অনেক বিখ্যাত গান আসলে লালনেরই লেখা নয়। অন্য কেউ লিখে লালনের বলে চালিয়ে দিচ্ছে। কলকাতার গবেষক অধ্যাপক সুধীর চক্রবর্তী সম্প্রতি ‘বইয়ের দেশ’কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘যেসব গান আজকাল লালনের গান বলে গাওয়া হয়, তাদের অনেকগুলোই আসলে লালনের গানই নয়।’
লালন ফকির আপাত নির্বিবাদী একজন লোক ছিলেন। তিনি নিজের মতো করে তার ধর্মীয় বিশ্বাস পালন করতেন। তিনি কারো কাছে গিয়ে বলেননি, আমি তো নতুন এক মতাদর্শের সন্ধান পেয়েছি। তোমরা আমার অনুসরণ করো...।
ঐতিহ্যগতভাবে ভাববাদী বাঙালি গ্রামীণ সমাজ তার ভাবধর্মী গানে আকৃষ্ট হয়ে তাকে ভালোবেসেছে, তার গান গেয়েছে, গানে প্রভাবিত হয়েছে।
সবকিছুর উর্ধ্বে লালনের গানই লালনের বড় পরিচয়। তার ভাববাদী গানই সর্বৈব।তার মতাদর্শ তেমন কোনো আদর্শিক মানদণ্ডে যুৎসই বলে বিবেচিত হয়নি। বর্তমানে তার নামে প্রচারিত যে কুরুচিপূর্ণ মতাদর্শ, সেটা মোটের ওপর একটা বোগাস জিনিস!
লালনদর্শনের সবচে আলোচ্য তত্ত্ব হলো দেহতত্ত্ব। দেহতত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে হলে বিশাল কাহিনী বলতে হবে। ছোট করে বলি, লালনের দেহতত্ত্ব ইসলাম সমর্থিত যেমন নয় তেমনি সায়েন্টিফিকভাবেও এই তত্ত্ব পরিত্যাজ্য। দেহ সাধনের মাধ্যমে পরমাত্মার সন্ধান পাওয়ার ধারণাটা একমুখী দর্শন। ইসলামি সুফিবাদে এই সাধনের ভিত্তি কিয়দংশ থাকলেও সামগ্রিকভাবে অগ্রাহ্য।
শ্রীমতি মহাত্মা গান্ধি যে দেহব্রত পালন করতেন তা সম্ভবত লালনের দেহতত্ত্ব দর্শনে প্রভাবিত ছিলো।
লালন সৃষ্টিকর্তাই বিশ্বাসী ছিলেন, সে হিসেবে তাকে নাস্তিক বলা যায় না। লালন কোনো প্রতিষ্ঠিত ধর্মমতে বিশ্বাসী ছিলেন কি-না, সে প্রশ্ন আজও অপাঠযোগ্য। তবে তাকে তার দেহতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে তিনি অবশ্যই ইসলাম ‘ধর্মহীন’।
সুতরাং তাকে মুসলমান বানানোর প্রচেষ্টা নিতান্ত অরণ্যে রোদন।
আমার লালনসখ্যতা নিয়ে আমার অনেক প্রিয়জনের উষ্মা রয়েছে। লালনসখ্যতার কারণ ও মুগ্ধতা বিষয়ে আরেকদিন বলবো। আজ না হয় এটুকুতেই ক্ষমা হোক!
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×