somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আজ পুর্নিমার রাত (শেষ পর্ব)

৩০ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:০২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জানালার গ্রীল ধরে দাড়িয়ে আছে জুই। ভাবছে সে কালকে সাজ্জাদ কোন কথা বলল না কেন? তাহলে কি ওর আমাকে পছন্দ হয়নি? জুই জানে ওর মতো মেয়েকে কারও পছন্দ হবে না। তাহলে ছেলেটা তাকে দেখতে আসল কেন? অতি টেনশনে প্রচন্ড ঘুম আসছে জুইর। বেশি রাত না করে ঘুমিয়ে পড়ল সে।
.
সকাল সকাল মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙ্গল জুইর।
--তোর ফোন এসেছে। শুনিস নি?
--শুনেছি মা।
--তাহলে ধর। কথা বল।
--মা আমার মনটা ভালো নেই। রেখে দাও ফোনটা।
--ফোনে কথা বললে মনটা ভালো হয়ে যাবে। ধরেই দেখ না কে করেছে।
অনিচ্ছা সত্তেও ফোনটা ধরল জুই।
--ভালো আছেন?
--কে বলছেন?
--চিনলেন না আমাকে? আমি সাজ্জাদ।
--ও সরি। আসলে গতকাল তো কথা হয় নি আপনার সাথে তাই বুঝতে পারিনি।
--হুম কালকে কথা হয় নি। এক কাজ করুন আজ ঘর থেকে বেরুবেন? কোথায় ঘুরতে যাবেন?
--আমার শারীরিক অবস্থা তো আপনি জানেন। এক কাজ করুন না, আপনে আমাদের বাসায় চলে আসুন। বাসায় কথা বলি।
--না না না। তাহলে এককাজ করুন। বিকেল ৫টার সময় আপনি সেজেগুজে থাকবেন আমি আপনাকে বাসা থেকে নিয়ে নেব।
হেসে উঠল জুই
--বিয়ের আগে শশুরবাড়ি আসতে শরম লাগে নাকি আপনা? আচ্ছা ঠিক আছে আমি সেজে থাকবো।
.
আজ মা ই আমাকে সাজিয়ে দিল। সাজ্জাতের সাথে বেরুতে মা সায় না দিলেও বাবা যেতে বলছে।
রিক্সায় পাশাপাশি বসে আছি আমি আর সাজ্জাদ। কথাটা প্রথমে আমিই শুরু করি
--কালকে থেকে আপনাকে একটা কথা বলব ভাবছি।
--বলে ফেলুন।
--আপনি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন কেন?
--কেন? আপনাকে কি বিয়ে করা যায় না?
--আমার এই অতীত জানার পর কেউ আমাকে বিয়ে করবে এতটুকু চিন্তা করি না আমি। আপনি কি আমার অতীত জানেন?
--না তো! আমি তো শুধু আপনার বর্তমানটা দেখছি।
--আমার এই বর্তমান দেখার পরও আমাকে বিয়ে করতে চাইলেন কেন?
--বলতে পারেন এক প্রকার আমার নিজ স্বার্থে। এতটা মহানুব ছেলে আমি নই।
--কি কারন?
এড়িয়ে গেল সাজ্জাদ।
--কফি খাবেন?
--না। আপনি আমাকে বাসায় নিয়ে যান।
সাজ্জাদ দেরী না করে আমাকে বাসায় পৌছে দেয়। বাসায় পৌছে আমি শায়লাকে ফোন দিলাম।
--হ্যালো শায়লা?
--হ্যালো। জুই নাকি?
--হুম। একটু বাসায় আসবি?
--রাত হয়ে গেছে তো। কাল আসি?
--না প্লিজ তুই আজই আয়। খুবই দরকার তোকে এই মূহুর্তে।
--ঠিক আছে আসছি।
.
রাত তখন ১১টা। শায়লা আমার বাসায়। শায়লা বাবার গাড়ি আছে। গাড়ি নিয়ে এসেছে। আমার কাছে আসবে বলায় শায়লার বাবা সায় দিয়েছিল। শায়েলাকে মূলত একটি চিঠি লিখার জন্য ডেকেছিলাম। শায়লা চিঠি লিখছে আর কাদছে।
--জুই।
--বল কি বলবি।
--চিঠি লিখাকি শেষ?
--হুম, শেষ।
--চিঠিটা কি ছিড়ে ফেলব?
--ছিড়ে ফেলবি কেন? এই চিঠিটা সাজ্জাতকে দিস। তার আগে আমাকে একবার পড়ে শোনা তো প্লিজ!
কাদতে কাদতে চিঠি পড়ছে শায়লা
.
প্রিয় সাজ্জাদ
আপনাকে আমার অতীত জানানো উচিত। তাই এই চিঠি লিখা। আজ জানতে পারলাম আমাকে বিয়ের বিনিময়ে বাবা আপনাকে আমেরিকাতে লেখাপড়া করাবে। আপনি ঠিকই বলেছেন, আমার মত মেয়েকে বিয়া করার কারনটা আপনার নিজ স্বার্থ। তবে হ্যা, আজকে থেকে একবছর আগেও আমার ছিল সুন্দর জীবন। ঠিক যেমনটা একজন মেয়ে চায়। আজ থেকে প্রায় ২ বছর আগে আমার জীবনে একটি ছেলে এসেছিল। নাম ছিল নাঈম। সবসময় ২ জন একত্রে থাকার চেষ্টা করতাম। একত্রে আনন্দ করতাম, একত্রে ঝগড়া করতাম। আমার সব স্বপ্ন ছিল নাঈমকে নিয়ে, নাঈমেরও সব স্বপ্ন ছিল আমাকে নিয়ে। পূর্নিমার রাত আমি খুব উপভোগ করতাম। নাঈমকে নিয়ে বসে থাকতাম ধানমন্ডি লেকে। হঠাৎ একদিন বুঝতে পারলাম নাঈম আর আমার মাঝে নেই। পরে জানতে পারলাম ওর সাথে আরেকটি মেয়ের নতুন সম্পর্ক হয়েছে। এই নিয়ে প্রশ্ন করলে আমাদের মধ্যে ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। ভেঙ্গে যায় নাঈমকে নিয়ে আমার স্বপ্ন।
৪ মাস পর হঠাৎ একদিন পূর্নিমা রাতে নাঈম আমার বাসায় আসল। ওর সাথে শেষবারের মত ধানমন্ডি লেকে যেতে বলল। কোন প্রশ্ন না করে ওকে সায় দিলাম। ওর সাথে প্রায় ৩০ মিনিটের মত বসেছিলাম ধানমন্ডি লেকের পাশে। হঠাৎ করে খেয়াল করলাম পকেট থেকে কি যেন বের করছে নাঈম। বের করেই মারতে চেয়েছিল আমার মুখে। আমি হাত দিয়ে বাধা দেই। কিন্তু তবুও এসিডের কিছু ফোটা এসে পড়ে আমার চোখে। সেই থেকে আজ আমি অন্ধ। অন্ধ জুই। এই কথা গুলো আপনাকে বলার খুব ইচ্ছে ছিল, তাই বললাম।
ইতি
জুই
.
আজ আরেক পূর্নিমার রাত। আজকের পূর্নিমা সে হয়ত চোখে দেখে না, কিন্তু স্পষ্ট অনুভব করে সে। রাত কম হয়নি। শায়লা চিঠি নিয়ে চলে গেছে রাত ১২টার সময়। চিঠিটার কথা খুব মনে পড়ছে জুই। আজ অনেকদিন পর গোপন কথা গুলো বললো সে তাই আজ তার দুঃখটা একটু কম। আজ জুইর খুব নাঈমের কথা মনে পড়ছে। জুই অনেক্ষন খেয়াল করছে কেমন যেন পুরোনো পরিচিত একটা গন্ধ পাচ্ছে সে। মনে পড়ল, নাঈম এই বডি স্প্রে ব্যবহার করত।
--নাঈম, নাঈম নাকি?
--হুম। ঠিক ধরেছ।
--কোথায় তুমি?
--এই তো, আমি সবসময় তোমার পাশে থাকি।
--কেন তুমি আমার এত বড় ক্ষতি করলে?
--ক্ষোভ। তোমার পরে ভালোবাসা মেয়েটা আমাকে ধোকা দিয়েছিল। সহ্য হল না আমার। তাই আগে ওকে মেরে পরে তোমাকে মারতে গিয়েছিলাম। কিন্তু বেচে গেলে তুমি। তাই নিজেকে শেষ করে দিলাম।
--নিজেকে শেষ করে কি পেলে তুমি?
--জানি না।
হঠাৎ করে ফোনটা বেজে উঠল। সাথে সাথে মিলিয়ে গেল নাঈমের গন্ধ
--কে? কে বলছেন?
--আমি সাজ্জাত।
--ও। আমার বান্ধবীর কাছে আপনাকে লিখা চিঠি দিয়েছি। পড়ে নিবেন। আশা করি আমাকে আর দরকার হবে না আপনার। আর দরকার হলেও আমাকে আর কখনো পাবেন না আপনি।
--কেন?
উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দিল জুই।
.
সকালে অনেক্ষন ধরে দরজায় নক করছে জুইর মা। চিন্তা বাড়ল। হাত লাগাল জুইর বাবা। অনেক ধাক্কাধাক্কির পর দরজা ভাঙ্গল। ততক্ষনে আশপাশের প্রতিবেশিরা চলে এসেছে বাসায়। এসে সবাই একটা জিনিষই দেখল। ঘুমিয়ে আছে জুই। হাতে ৩ পাতা এন্টিবায়োটিক ওষুধের শুধু কভার।
.
এই গল্পের ১ম পর্ব
Click This Link
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×