somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মিথ্যে ভালোবাসা... (ছোটগল্প)

২৮ শে ডিসেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ অনেকদিন পর তপুর সাথে রানার দেখা। দীর্ঘ ৪০ বছর পর। সেই যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যম্পাসে দেখা হয়েছে, তার পর আর দেখা হয়নি তাদের। আজ হঠাৎ রানা তপুর অফিসে গেলে তাদের কথা হয়। দীর্ঘ আলাপচারিতার পর তপু তার বাড়িতে রানাকে দাওয়াত দেয়। রানাও রাজি হয়। কথা দেয় রানার পরিবার নিয়ে বেড়াতে যাবে।
.
রানা যখন তার স্ত্রীকে নিয়ে তপুর বাড়িতে যায় তখন রেনু তাদের চেনে নি। কিন্তু রানা রেনুকে চিনে ফেলে। তাই সে বলে
--আমি তপুর ক্লাসমেট। আমরা ২ জন একই ইউনিভার্সিটিতে লেখাপড়া করেছি।
এই কথা শুনে রেনুতো অবাক। কারন রেনু এবং তপুও ক্লাসমিট ছিল। একই ইউনিভার্সিটিতে পড়ত। সে হিসেবে তপুর বন্ধুকে তার চেনারই কথা। কারন তপুর বন্ধুই তার বন্ধু।
--কে তুমি?
--আমি রানা। আর তুই রেনু নাহ? এত মোটা ফ্রেমের চশমা পরার পরও তোকে আমার চিনতে ভুল হয় নি।
অনেকটা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে রেনু।
--কিরে ভিতরে আসতে বলবি নাহ?
--আরে ভিতরে আয়।
ঠিক সেই সময় তপুও এসে হাজির হয়।
.
আড্ডায় মেতে ওঠে পুরোনো বন্ধুরা। এক সময় তপু রানার স্ত্রীকে বলল
--বুঝলে রুহি ভার্সিটি ক্যম্পাসে আমি রানা রেনু আশিক অথৈই আরো কত বন্ধুরা যে একত্রে আড্ডা দিয়েছি। কত ঝগড়া কত দুষ্টমি মিশে আছে আমাদের ক্যম্পাসে তা বলেই শেষ করা যাবে না।
--আমি জানি। রানা আমাকে বলেছে। তবে আমি এও শুনেছি রেনু আপু নাকি সারাক্ষন রানার সাথেই লাইগা থাকত।
--সে আর বলতে হয়। তারপরও রেনুর মন কিন্তু আমি জয় করে নেই।
--রেনু আপুর সাথে আপনার বিয়ে হয় কিভাবে বলুন তো?
--হা হা হা, রেনু আর রানা অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড ছিল। তারপর কি নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হয় জানি নাহ, রানা স্কলার শীপ নিয়ে কানাডা চলে যায়, তারপর আর রানার সাথে কথা হয়নি। প্রায় ২ থেকে ৩ বছর পর একদিন রেনুর সাথে দেখা হয়, কথা বলতে বলতে জানতে পারি, সে নাকি এখনো বিয়ে করেনি। তখন আমিই প্রথম রেনুকে বিয়ের প্রস্তাব দেই। ও নিঃসংকোচে সায় দেয়। তারপর অবশ্য দুই পরিবারই ধুমধামে আমাদের বিয়ে দেন।
.
রানা রেনু এতক্ষন পাশে বসে সব কথা শুনছিল। হঠাৎ দাড়াতে দাড়াতে রেনু বলল
--তোমরা কথা বল। আমি চা নিয়ে আসি।
.
রানার সাথেও রেনুর দীর্ঘ ৪০ বছর পর দেখা। রেনুর উঠে যাওয়ার কারন রানা ভালো ভাবেই বুঝেছিল।
--তপু রুহি তোমরা কথা বল। আমি একটু রেনুকে সাহায্য করি।
.
সোজা রান্নাঘরের দিকই গেল রানা। কিন্তু রেনু সেখানে ছিল না। একটু খুজতেই রেনুকে রানা পেল বারান্ধার মধ্যে।
--কিরে রেনু। বারান্দায় কি করিস?
চমকে ওঠে রেনু। পিছে ফেরে রানাকে দেখে চমকে ওঠে সে। কিন্তু রেনু থেকেও বেশি অবাক হয় রানা। যখন সে রেনুর চোখে পানি দেখে।
--এই তো দাড়িয়ে আছি।
--কিন্তু তুই কাদছিস কেন?
--না আসলে আমার মেয়ের কথা মনে পড়ছিলতো তাই।
--তাই বল। আমি তো ভাবছিলাম তুই আমার কথা ভাবছিস। তো, কি করে তোর মেয়ে?
--ও জার্মানীতে লেখাপড়া করছে। এই সব কথা বাদ দে তো এখন।
--আচ্ছা ঠিকাছে। কিন্তু বল তো, তুই ওখান থেকে উঠে এলি কেন?
--এমনি।
--নাহ। কিছুতে হয়েছে।
কিছুক্ষন নিরব থাকার পর রেনু একটা কথা বলে চলে গেল
--রানা, এই ৪০ বছর তুই আমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছিস।
রানা বুঝে কোথায় রেনুর কষ্ট। কিন্তু এই বুড়ো বয়সে যে তার আর কিছুই করার নেই।
.
.
রাত ঠিক ১টা
রাইরে ঝুমঝুম বৃষ্টি হচ্ছে।
বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টির দৃশ্য দেখছে রেনু। তার আজ খুব বৃষ্টিতে ভিজতে মন চাচ্ছে। কিন্তু তার শরীর ভাল নেই। তপু তো তাদের মেয়ে প্রীতির সাথে কথা বলায় খুব ব্যস্ত। কথা শেষ করেই তপু সোজা বারান্দায় এলো
--রেনু একটা খুশির সংবাদ আছে।
--কি?
--তুমি নানি হয়েছ। প্রীতির ছেলে হয়েছে।
--ওহ খুব খুশির খবর তো।
--কালকে সবাইকে মিষ্টিমুখ করাতে হবে। তুমি কি কোন কারনে চিন্তিত রেনু?
--কই না তো। তপু!
--হুম?
--আজ তোমাকে আমার জীবনের লুকিয়ে রাখা একটা সত্য বলতে চাই।
--কি এমন লুকিয়ে রাখা কথা, বল তো?
--বলতো আজ আমাদের সংসার জীবনের কত বছর?
--প্রায় ৩৫ থেকে ৩৭ বছর তো হবেই।
--আচ্ছা বল তো, মা হিসেবে আমি কখনো আমার দায়িত্বে অবহেলা করেছি?
--অবশ্যই না।
--স্ত্রী হিসেবে আমি কখনো কোন দায়িত্বে অবহেলা করেছি?
--না। কিন্তু এই সব কথা কেন বলছ?
--তবে আজ একটা কথা শুনে রাখ।
--কি কথা?
--আমি এতদিন যা করেছি তা শুধু আমার দায়িত্ব থেকে করেছি। আমার এত দিনের সংসার জীবনে তুমি কখনোই আমার মনে ছিলে নাহ। সেই ভার্সিটি থেকে আমার মনে একজনই ছিল, সে ছিল শুধুই রানা। তুমি নও।
.
এই বলে শোবার ঘরে চলে যায় রেনু। আর তপুর মনের ভিতরে চলতে থাকে বজ্রপাত। জীবনের শেষ মূহুর্তে এসে এমন কথা শুনতে হবে তা কখনো কল্পনাই করে নি সে। তাহলে কি এতদিনের ভালবাসা সবই ছিল ছলনা? কোনদিন যদি প্রীতি জানতে পারে তার মায়ের মনে এতদিন তার বাবা ছিল না, ছিল অন্য একজন তখন সে কি ভাববে? সে কি করবে তখন? রানা কি বুঝে রেনুর তার প্রতি ভালোবাসা?
.
হাজার প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে প্রনয়ের মনে। হঠাৎ প্রনয়ের মনে হল তার সকল চিন্তা উধাও। তার মনের মধ্যে যে আগুন রেনু লাগিয়ে দিয়েছে তার শেষ। চোখটা বন্ধ হয়ে আসছে তার। তপু বুঝতে পারছে যে সে অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে নয়তো মরে যাচ্ছে। শেষ বারের মত একটি শব্দ উচ্চারন করেই মাটিতে লুটিয়ে পড়ল তপু।
--রেনু..............
.
(গল্পটি লিখেছিলাম জুলাই মাসে। হোস্টেলে কোন কাজ ছিল না, তাই বসে বসে লিখেছিলাম। বানানে ভুল হলে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখার অনুরোধ রইল।)
৭টি মন্তব্য ৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

খুলনায় বসবাসরত কোন ব্লগার আছেন?

লিখেছেন ইফতেখার ভূইয়া, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:৩২

খুলনা প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় তথা কুয়েট-এ অধ্যয়নরত কিংবা ঐ এলাকায় বসবাসরত কোন ব্লগার কি সামুতে আছেন? একটি দরিদ্র পরিবারকে সহযোগীতার জন্য মূলত কিছু তথ্য প্রয়োজন।

পরিবারটির কর্তা ব্যক্তি পেশায় একজন ভ্যান চালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

একমাত্র আল্লাহর ইবাদত হবে আল্লাহ, রাসূল (সা.) ও আমিরের ইতায়াতে ওলামা তরিকায়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৬:১০



সূরাঃ ১ ফাতিহা, ৪ নং আয়াতের অনুবাদ-
৪। আমরা আপনার ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।

সূরাঃ ৪ নিসার ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

×