somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোট গল্প 'আশান্বিতা'

১২ ই নভেম্বর, ২০১৯ দুপুর ১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চৈতালীর বিয়ে হয়েছে ১৫ বছর। কোন সন্তান হয়নি। বরের সঙ্গে ওর সম্পর্ক অনেক বেশি ভালো। সে চৈতালীকে অনেক ভালোবাসে। যদিও বাচ্চা না হওয়ার শূন্যতাটি চৈতালীরই বেশি। ওর বর কিষান যথেষ্ট বাস্তববাদী মানুষ। আবদার পূরণ করতে কিষান বাড়ীর কাছের এক ইয়াতিম খানা থেকে একটি ৯ বছরের মেয়ে শিশু এনে দিয়েছে। চৈতালী এখন ওকে নিয়েই ব্যস্ত। ক’দিন হলো এই মেয়েটিকে পেয়ে তার প্রতি প্রগাঢ় মায়া হয়ে গেছে। মেয়ের নাম রেখেছে আশান্বিতা। খুব স্বাভাবিকভাবে মাত্র একটি বছর হয়েছে মা হারানো মেয়েটিও মা হিসেবে চৈতালীকে পেয়ে দারুন খুশি। এভাবে কেটে গেল ৬টি বছর। চৈতালী আশান্বিতাকে মায়ের মমতার পুরোটা দিয়ে মানুষ করার চেষ্টা করছে। সে কি খাবে, কি পরবে, কি পড়বে সব সে ঠিক করে দিচ্ছে। যেহেতু আশান্বিতা এই এলাকায় বড় হয়েছে অনেক খেলার সাথী তার আগে থেকেই ছিল। মেয়েটি খুব বন্ধু প্রিয় হয়েছে। তবে ইদানিং রাতে সে কম ঘুমাচ্ছে এবং সকালে দেরী করে উঠছে। বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেয়ার সময় আর টাকার প্রয়োজন আজকাল বেড়ে যাচ্ছে। বিষয়টা নিয়ে চৈতালী বেশ চিন্তিত।
চৈতালী চেষ্টা করছে এদের মধ্য থেকে যারা ভাল তাদের সাথেই মেয়েকে শুধু মিশতে দিবে। এটা সে আশান্বিতাকে বুঝিয়ে বলেছে। কিন্তু অবাক বিষয় এটা বলার পর থেকেই মেয়ে কেমন দূরে সরে যাচ্ছে। চৈতালীকে আগের মত আর জড়িয়ে ধরে না, গল্প করেনা। মা যেন তার খুব অপছন্দের কেউ। চৈতালী একদিন কৌতুহল বসত প্রশ্ন করল, আশান্বিতা! মায়ের উপর রাগ করেছিস? আশান্বিতা নিতান্ত বিরক্ত হয়ে উত্তর দিল, তোমার উপর রাগ কেন করব। কথাটি বলতে বলতে প্রায় সরে যেতেই চৈতালী ওকে কাছে টেনে বলল, কি হয়েছে আমাকে বল, আমি তোর মা। মাকে কিছু লুকোতে আছে? আশান্বিতা চৈতালীকে অবাক করে হাতটি জোর করে ছাড়িয়ে নিল। বলল, আমার মা মরে গেছে। যদি মা ই হতে তবে প্রিয় বন্ধুদের সাথে মিশতে বাড়ন করতে? চৈতালী মেয়ের উত্তরে হতভম্ব হয়ে গেল।
আশান্বিতা নিজের মত আপন মনে সব কিছু করছে সব সময়। চৈতালী মনে মনে ভাবলো হয়ত সে নিজেই ভুল ছিল। সে নিজেকে বোঝাতে লাগলো, তুমি মা হতে চাও এত কম ধৈর্য্য হলে কি চলবে। সে এখন আর আশান্বিতাকে কিছু বাড়ন করছেনা। নিজের মত চলতে দিচ্ছে।
একদিন একটি মেয়ে হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এসে চৈতালীকে বলল, আন্টি আন্টি! আশান্বিতাকে কে যেন আটকে রেখেছে। আপনি চলেন। চৈতালী কি করবে? কিষান অফিসে ফোন দিবে? নাহ সে ফোন না দিয়ে ছুটে গেল। আশান্বিতার এক বান্ধবী একটি সেল ফোনে এগিয়ে দিল। আন্টি একজন কথা বলবে আপনার সাথে। কাপা হাতে চৈতালী ফোন কানে চেপে হ্যালো বলতেই, অপাশ থেকে একটি পুরুষ কন্ঠ বলে উঠলো, আপনি আশান্বিতার মা? ও এখন আমাদের কাছে। খুব ভাল আছে। ওকে আপনি আপনার কাছে নিতে চাইলে ১ লক্ষ টাকা চৌরাস্তা পেরুলে যে ভাঙ্গা মন্দির সেখানে রেখে যান। আর হ্যা আাপনার স্বামী বা পুলিশে ফোন দিলে কিন্তু মেয়েকে জীবিত ফিরে পাবেন না। চৈতালী হিতাহিত জ্ঞান হারিয়ে ফেলছে। শুধু বিরবির করে বলল, আচ্ছা। আমার মেয়েরে কোন ক্ষতি করোনা। প্লিজ! করোনা।
আজ রবিবার এখনও ব্যাংক আওয়ার পার হয়নি। চৈতালী চেক বই নিয়ে ছুটলো ব্যাংকে। ১ লক্ষ টাকা নিয়ে ভাঙ্গা মন্দিরে গিয়ে দাড়ালো। কোথাও কাউকে দেখা যাচ্ছেনা। হঠাৎ আশান্বিতা বের হয়ে এল হাত দুটো বাঁধা। পেছন থেকে সেই পুরুষ কন্ঠ বলল, টাকাটা ঠিক মত এনেছেন তো? ছুড়ে দেন আমার দিকে। চৈতালী ছুড়ে দিল।
আশান্বিতাকে জাড়িয়ে নিল বুকে। চুমু দিল অজস্র। মন্দিরের সীমানা পেড়িয়ে যত দ্রুত পারলো বাড়ির পথে চলে এলো। মা মেয়ে কেউ কথা বলছে না। চৈতালী কাদছে। আশান্বিতা মুখ মলিন করে আছে। চৈতালী শুধু জানতে চাইল, তোমার কোন ক্ষতি হয়নি তো? আশান্বিতা মাথা নেড়ে বলল, না।
অনেক গভীর রাত কিষান ঘুমাচ্ছে। চৈতালীর কানে ফিসফিস করে বলা কথা ভেসে আসলো। সে নিঃশ্বব্দে এগিয়ে গিয়ে দূর থেকে দেখলো আশান্বিতা ল্যান্ড ফোনে কারো সাথে কথা বলছে। চৈতালী অবাক হলেও আরো এগিয়ে গেল কথা শোনার জন্য। সে স্পষ্ট শুনতে পেল, আশান্বিতা বলছে, যা একটা অভিনয় আজ করলাম যাই বলিস একটা পুরস্কার প্রাপ্য। মহিলা এত বোকা! এ যুগে মানুষ এত বোকা হয়। সে তো কল্পনাও করতে পারেনি এটা সম্পূর্ণ আমারই পরিকল্পনা। এই টাকা টা কত জরুরী ছিল বল। এবার শুধু নিজেদের খাওয়ার ব্যবস্থাই না বাবা ট্যাবলেটগুলো বিক্রিও করব। দারুন ব্যবসা হবে। লেখাপড়া ভাল লাগে না। এসব বিক্রি করেই অনেক টাকার মালিক হব।
চৈতালী নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছেনা। আশান্বিতা! ওর মেয়ে। ওর মা ডাক শুনতে যে কিনা সব দিতে রাজি। সেই মেয়ে এটা কি করেছে? হাউমাউ করে বুকের মাঝ থেকে উঠে আসা কান্না চৈতালী আচল চাপা দিয়ে বিছানায় আছরে পরল। এখন সে ঠিক বুঝতে পারছে মেয়ে কেন তাকে সব কিছু তে আড়াল করে চলছিল। ওর কান্নায় কিষানের ঘুম ভেঙ্গে গেল। কি হয়েছে চৈতালী? কাঁদছো কেন?
চৈতালী নিজেকে সামলে নিল। ঠিক করল কিষানকে সব বলবে। তবে আজ নয়।
পরদিন সকাল।
আশান্বিতা এবার এসএসসি পরীক্ষা দিবে। স্কুলে চলে গেল। চৈতালী আশান্বিতার ঘর তন্ন তন্ন করে অনুসন্ধান করল। জামা কাপরের একটি ভাজে সে গত কাল তোলা টাকার নোট দেখতে পেল। আর ড্রয়ারে পেল ইয়াবা ট্যাবলেট। সে এসব আবার জায়গা মত রেখে দিল।
কিষানকে সব খুলে বলল। কিষান প্রথমে চৈতালীকে বেশ কড়া করে বকলেও। যখন বুঝলো চৈতালী যা করেছে মায়ের মমতা থেকে করেছে। সে চিন্তা করতে বসল, কি করতে হবে এখন তার।
চৈতালী বারবার বলছে, চলো ওকে দরকারী সব কিছু দিয়ে আমরা দু’জন চলে যাই দূরে কোথাও। একদিন হয়ত ভুল ভাবে আর শুধরে গিয়ে আমাদের খুজে বের করবে। এত ভালবাসা, মায়া, আদর দিলাম। সবই কি ও ভুলে যাবে?
কিষান ওর একজন ডাক্তার বন্ধুকে কল করলো। সে পরামর্শ দিল। আশান্বিতা যেহেতু ক্রাইম করে হলেও টাকা যোগাড় করছে। পুলিশে কল কর, তাকে এই ধারনা দিতে হবে যে অপরাধ করলে শাস্তি ধার্য করা হয় এবং অপ্রাপ্ত বয়স্কদের অসংলগ্ন আচরন বা মাদকাশক্তি থেকে মুক্ত করার কোন ভালো সংস্থার সাথে যোগাযোগ করে সেখানে দিয়ে দাও ওকে। ডাক্তার এবং সাইক্রিয়েটিস্ট তাকে সুস্থ করে তুলবে। অসুস্থ বা মাদকাশক্ত মেয়ে কখনও স্বাভাবিক আচরণ করবেনা, বরং তার এই অপরাধ প্রবণতার কাছে তোমাদের জীবনও ঝুকির মধ্যে।
চৈতালী ও কিষান এটাই করল। হয়ত মেয়েটি এবার সত্যি ওদের জীবেনে আবার সুস্থ হয়ে ফিরে আসবে। হয়ত সুস্থ হয়ে ওদেরকে আর প্রয়োজন হবে না মেয়ের। তবুও নিঃশ্বার্থ ভাবেই ওরা চায় আশান্বিতা সুস্থ জীবন ফিরে পাক। মা ও বাবার সত্যিকারের দায়িত্ব পালন করে নিজেদের বিবেকের কাছে পরিশুদ্ধ থাকতে চায় ওরা।
আশান্বিতাকে চৈতালী শরীরে ধারন করে জন্ম না দিতে পেরেও হৃদয়ে জন্ম দিয়েছে অপরিমেয় ভালোবাসায় লক্ষ বার।

তানিয়া
১২/১১
১৭টি মন্তব্য ১৭টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

হালহকিকত

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:১২

ছবি নেট ।

মগজে বাস করে অস্পষ্ট কিছু শব্দ
কুয়াসায় ঢাকা ভোর
মাফলারে চায়ের সদ্য লেগে থাকা লালচে দাগ
দু:খ একদম কাছের
অনেকটা রক্তের সম্পর্কের আত্মীয় ।

প্রেম... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×