অনেকদিন পরে যখন আবার গ্রামে এলেন, তখন তিনি খেয়াল করলেন যে গ্রামের ছেলেমেয়েরা স্কুলে যায় ঠিক ই কিন্তু ৩য় শ্রেণীতে পরেও তারা নিজের নামের বানান সঠিক ভাবে শিখতে পারেনি।তার অভ্যাসবশতই তখন তিনি নিজ সামর্থ অনুযায়ী সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করলেন।তিনি নিজ খরচে গ্রামের কিছু ছেলেমেয়েদের জন্য একজন শিক্ষক নিযুক্ত করলেন। আর এভাবেই একটি শিক্ষালয়েরর যাত্রা শুরু হল।বর্তমানে যেটার নাম- FRIENDS’ COMMUNITY SCHOOL। এটি এমন একটি শিক্ষালয় যেখানে সব শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনার একটি উপযুক্ত পরিবেশ ও যথাযথ দিকনির্দেশনা পেয়ে থাকে।
শুরু থেকে এ পর্যন্তঃ
২০১০ সালের জানুয়ারি মাস থেকে শুধুমাত্র ১ম-৫ম শ্রেণীর ২০/২৫ জন ছাত্রছাত্রী নিয়ে এটি শুরু করা হয়। আরেকজন শুভানুধ্যায়ী- ডাক্তার সোহানা আফরোজ এর মা -এ কার্যক্রম এর জন্য প্রতি মাসে ২০০০ টাকা দিতে শুরু করলেন। ফলে ছাত্রছাত্রীদের জন্য বেঞ্চ তৈরি, টিনের শেড তৈরি, যারা রাতে পড়তে ইচ্ছুক তাদের জন্য জেনারেটর এর ব্যবস্থা, শিক্ষকের সংখ্যা বৃদ্ধি ইত্যাদি করা সম্ভব হল।
সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ছাত্রছাত্রীদের পড়ানো, খাতা, পেন্সিল, কলম ইত্যাদি দিয়ে সাহায্য করা, দিনে অথবা রাতে সুবিধামত সময়ে পড়তে আসার সুযোগ দেয়া ইত্যাদি কারনে দ্রুত যথেষ্ঠ সাড়া পাওয়া গেল। অনেক অভিভাবক অনুরোধ করলেন যে, ৬ষ্ঠ-১০ম শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদেরকেও যেন এখানে পড়ার সুযোগ দেয়া হয়। তাই বর্তমানে এখানে ১ম থেকে ১০ম শ্রেণীর মোট ২৫০ জন ছাত্রছাত্রী পড়তে আসে। শুধু খাদুলী গ্রামেরই নয়, পার্শ্ববর্তী কুড়িগাছি, নিশ্চিন্তপুর গ্রামের অনেক ছাত্রছাত্রীও এখানে পড়তে আসে। সকালে, বিকালে ও সন্ধ্যায় নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট গ্রুপের ছাত্রছাত্রীরা পালাক্রমে পড়ে। বর্তমানে প্রায় ১০ জন শিক্ষক এখানে নিযুক্ত রয়েছেন। ছাত্রছাত্রীদের জন্য ডাক্তার সোহানা আফরোজ একটি টিউবওয়েল এবং রাতে পড়ার জন্য একটি সোলার প্যানেল এরব্যাবস্থা করে দিয়েছেন।
ডাক্তার ইব্রাহীম এ শিক্ষালয়টি নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখেন।তার আত্মীয়, বন্ধু ও পরিচিত আরও অনেকেই এখন এটা নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখে। তারা সবাই মিলে তাদের সামান্যতম সামর্থ দিয়ে স্কুলটির জন্য কিছু না কিছু করছে। তার স্ত্রী ও ছোটবোন মাঝে মাঝে বাচ্চাদের ক্লাশ নেন। কেউ কেউ আর্থিক সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন। কেঊ এর মানোন্নয়নের বিভিন্ন আইডিয়া, কেউ ভলান্টারি ওয়ার্ক এর মাধ্যমে সাহায্য করছেন।
ছাত্র ছাত্রী বাড়ার কারনে অনেকেই টিনশেডের নিচে বা বেঞ্চে বসার জায়গা না পেয়ে মাটিতে বসে রৌদ্রের মধ্যে পড়াশুনা করতো। এজন্য বর্তমানে প্রায় ২৫০/৩০০ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য আরও বড় করে স্কুলঘর তোলা হয়েছে।দূরবর্তী ছাত্রদের জন্য আবাসিক ব্যবস্থা করার চিন্তাও আছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১০ জনের জন্য স্কুলঘরেই থাকার ব্যবস্থা করাও হয়েছে।
ছাত্রছাত্রীরা যেভাবে উপকৃত হয়েছেঃ
কি পড়তে হবে, কিভাবে পড়তে হবে তা দেখিয়ে দেয়া এবং নিয়মিত অনুশীলন করান এ স্কুলের শিক্ষকদের প্রধান দায়িত্ব। মূলত, একজন ছাত্র/ ছাত্রীর ন্যূণতম যেটুকু দিকনির্দেশনা বা সাহায্য তার পরিবার থেকে না পেলে সে আগাতে পারে না (বলা বাহুল্য, গ্রামের বিদ্যালয়ে তারা এটুকু যত্নশীল শিক্ষক পায় না), এখানে অন্তত সেটুকু তারা পাচ্ছে।এছাড়াও এখানে ছাত্রছাত্রীদের পড়তে উৎসাহিত করা, কুইজ কম্পিটিশন ও পূরষ্কার এর ব্যাবস্থা করা হয়ে থাকে।
সরকারি বিদ্যালয়ে গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা বিনামূল্যে পাঠ্যবই এবং উপবৃত্তি পেয়ে থাকে। কিন্তু সেখানে নিয়মিত যাওয়া ও সঠিকভাবে শিক্ষাগ্রহণ অনেকেরই হয় না। এই শিক্ষালয়টিতে ছাত্রছাত্রীরা নিয়মিত পড়তে আসে। ফলে তাদের পক্ষে এখন বিদ্যালয়ের পরীক্ষাতেও ভাল করা সম্ভব হচ্ছে।
স্কুলঘর এর মানোন্নয়ন, বেঞ্চ ইত্যাদি তৈরির জন্য সুনির্দিষ্ট তহবিল দরকার। তাছাড়া প্রতি মাসে ছাত্রছাত্রীদের বিভিন্ন ন্যূণতম প্রয়োজনটুকু পূরণ ও শিক্ষকদের বেতন দেয়ার জন্য আলাদা তহবিল থাকা জরুরী। বিভিন্ন দাতা ব্যক্তি বা সংস্থার কাছ থেকে প্রতি মাসে নির্দিষ্ট হারে সংগৃহিত অর্থ দিয়ে এ তহবিল গঠিত হতে পারে।
ডাক্তার ইব্রাহীম এর স্বপ্ন ও পরিকল্পনাঃ
এই শিক্ষালয়টিতে গ্রামের প্রতিটি শিশুদেরকে স্বশিক্ষিত, স্বনির্ভর, স্বাস্থ্যসচেতন, আধুনিক ও সুন্দর মানসিকতা সম্পন্ন করে গড়ে তোলার জন্য ধীরে ধীরে সকল ব্যবস্থা ই করার চেষ্টা করা হবে। তার স্বপ্নটা কিভাবে যেন এ স্কুলের গল্পটা যারাই শুনে, তাদের ই স্বপ্ন হয়ে যায়। আর এ টা বাস্তব করতে যত মানুষ এগিয়ে আসবে, তত দ্রুত এটা সত্যি ই সম্ভব হবে।
প্রার্থনা করি,আল্লাহ যেন পুরো স্বপ্নটা পূরন করতে আরো সহায় হোন।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ১০:৪৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




