"মাহালী" হল বাংলাদেশের একটি উপজাতির নাম। রেবাতী মাহালী ছিলেন সেই মাহালী জনপদের একজন ১৭ বছর বয়সী সুন্দরী আধুনিকা মেয়ে। তিনি আধুনিকা ছিলেন এ হিসেবে যে- সেসব মেয়েদের মধ্যে একমাত্র তিনিই কুচি দিয়ে শাড়ি পড়তেন এবং মুখে তেল দেয়ার মাধ্যমে মেকাপ করতেন।
১৯৭১ এর একদিন পাকসেনারা একটি এলাকার সকল মাহালী নারী, পুরুষ ও শিশুদের জড়ো করলো ( এটা বাংলাদেশের ঠিক কোন অঞ্চলে ঘটেছিলো, তা আমি মনে করতে পারছি ন। খুব সম্ভবত সিলেটের কোন এক পাহাড়ী এলাকায়)।তারপর নারী ও শিশুদের ছাপড়া ঘরের মধ্যে বন্দী করলো। সকল পুরুষদের কে এক জায়গায় জড়ো করে দাঁড় করালো এবং তাদের প্রতি এলোপাথারী গুলি চালানো হল। তাদের মধ্যে কেউ কেউ দৌড়ে পালিয়ে গিয়ে প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হয়েছিলো। ওদিকে, যেসব ঘরে নারী ও শিশুদের রাখা হয়েছিলো- সেগুলোতে আগুন ধরিয়ে দেয়া হল তাদের পুড়িয়ে মারার জন্য। অনেকেই পূড়ে মরতে লাগলো। রেবাতী মাহালী তখন মাথা ঠান্ডা রেখে ছাপড়া ঘরের পেছনের দিক দিয়ে কোন না কোন ভাবে ফাকা তইরি করে অনেক মহিলা ও শিশুদের বের করে দিতে লাগলেন। এটা ছিলো পাহাড়ের চূড়ায়। সেখান থেকে চা বাগানের মধ্যে দিয়ে ঢালু পাহাড় বেয়ে তারা নেমে গিয়ে পালিয়ে যেতে পারলো। ইতোমধ্যে রেবাতির মা সহ অনেকেই পূড়ে মারা গিয়েছিলো। কিন্তু তার ফুপু পালাতে পেরেছিলেন।
যাই হোক, পাকীরা যখন দূর থেকে দেখলো যে, পাহাড়ের চূড়ায় ঘরের পেছন দিক দিয়ে রেবাতী সবাইকে বের করে পালিয়ে যাওয়ার ব্যাবস্থা করে দিচ্ছেন....তখন তারা রেবাতী কে ধরতে এলো। তারপর যা হওয়ার তা ই হল, রেবাতী কে হিংস্র পাক সেনারা ছিড়ে কুড়ে খেতে লাগলো । আর রেবাতী............বুক ফাটানো আর্তনাদে আশেপাশে লুকিয়ে থাকা অন্যান্য মাহালীদের অন্তরটা বিদ্ধ করতে লাগলো। তখন ওদের কারো শক্তি বা সাহস ছিলো না রেবাতী কে বাচাতে এগিয়ে আসার। পাকীরা এরপর যখন ছিন্নভিন্ন রক্তাক্ত রেবাতীকে ফেলে রেখে চলে যায়.....তখন দূজন মাহালী পুরূষ সাহস করে এগিয়ে আসে রেবাতী কে উদ্ধার করতে। কিন্তু রেবাতী তীব্র যন্ত্রনায় ছটফট করে চিৎকার করতে করতে সেখানেই মারা যায়। সেই চিৎকার আজো ভুলতে পারে না সেদিন বেচে যাওয়া সেই মাহালী রা, যাদের বাচিয়ে দিতে যেয়ে রেবাতী নিজেও বেচে গিয়েছিলো আগুনে পূড়ে ছাই হওয়ার মত মৃত্যুর হাত থেকে...........কিন্তু শেষ রক্ষা মেয়েটি পায় নি।
রেবাতীর করুন মৃত্যু সেই অনগ্রসর চা শ্রমিক মাহালী দের অবচেতন মনে অন্য রকম ভাবে প্রভাব ফেলেছে। যে চোখ আর কান গুলো রেবাতীর শেষ পরিনতির সাক্ষী হয়ে বেচে রইলো, রেবাতীর জন্য কিছু করতে না পেরে তীব্র অপরাধবোধে ভুগতে লাগলো......... সে চোখ কান গুলো যুদ্ধের পরবর্তী ৩০ বছর ধরে -অমাবস্যার রাতে সেই গাছটির নিচে রেবাতিকে ঠিক সেভাবেই চিৎকার করতে দেখে। সেদিনের মতই চিৎকার করতে করতে একসময় চুপ হয়ে যায় তাদের সেই রেবাতী।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ রাত ৯:৫৫

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




