আমরা সবাই পরধীন। আল্লাহ আমাদের পরাধীন করেই সৃষ্টি করেছেন। তবে নিজেদেরকে স্বাধীন করার উপায়ও তিনি বলে দিয়েছেন।
মানুষ তার দৈহিক-জীবগত কারনেই পরনির্ভর। সার্বভৌমত্ব কেবল আল্লাহকেই মানায়। তবে মানুষ যেটুকু পারে, তাহল বাতিল শক্তির গ্রাস থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে।
ইসলামে হক ও বাতিল পরস্পর বিপরীতার্থক শব্দ। ‘যা’আকাল হাক্কু ওয়া যাহাকাল বাতিলু’--নিশ্চয় সত্য সমাগত এবং মিথ্যা দূরীভূত হয়েছে (কুরআন)। যেখানে হক নেই, সেখানে বাতিল আছে ধরে নিতে হবে। এর মাঝখানে আর কোন তরীকা নাই।
আমরা সম্পূর্নভাবে নিজেদের দৈহিক, সামাজিক, অবস্থানিক, পারিপর্শ্বিক, ভৌগলিক সীমানা (constraint) দ্বারা আবদ্ধ, কিন্তু সবচেয়ে বেশী যা আমাদের দাসে পরিনত করে তা হল কায়েমি বাতিল শক্তির শাসন। বাতিল শক্তি সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক সকল ক্ষেত্রে আমাদের ওপর আধিপত্য করে আড়ষ্ট করে ফেলে। মানুষের প্রাকৃতিক সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্তি পাওয়ার কোন উপায় নেই, তবে ইসলাম পালনের (লক্ষ্যনীয় যে, ইসলাম শব্দের অর্থ কিন্তু আত্মসমর্পন) মাধ্যমে সে খোদার সার্বভৌমত্বের অধীনে যথার্থভাবে বাস করতে পারে।
ইসলাম মানে তাই আত্মসমর্পন, খোদার কাছে আনুগত্য স্বীকারের মাধ্যমে জীবনের পথ খুজে পাওয়া।তাই কেউ নিজেকে মুসলমান দাবী করার সাথে সাথে সে ইসলামে পূর্নাঙ্গভাবে দাখিল হয়ে যায়, অর্থাৎ সে শুধু মাত্র আল্লাহকেই ভয় করে, অন্য কাউকে নয়।
সমাজে বাতিল ও হক শক্তির মধ্যে কায়েম হবার জন্য এই দ্বন্দ্ব চিরকালীন। মার্ক্সবাদের উন্মাদ শ্রেনীসংগ্রামের ধারনা এভাবে ইসলামে যুক্তিযুক্তভাবে নাকচ হয়ে যায়।
দেশের তরুন যুবসমাজের কাছে আমার আহবান, ভাবুন নিজেকে নিয়ে। দেখুন, সমাজের স্রোতে গা ভাসিয়ে দিয়ে কি বাতিল শক্তির নিরাপদ দর্শক হবেন, নাকি নজরুল-তিতুমীরের মতো বলবেন,
‘সত্য-মুক্ত স্বাধীন জীবন লক্ষ্য শুধু যাদের
খোদার রাহে জীবন দিতে ডাক পড়েছে তাদের’
বাংলাদেশে বাতিল শক্তির কাছে ইসলামি ছাত্রশিবির সবচেয়ে বড় আতংকের নাম। ১৯৭৭ সালে যাত্রা শুরু করে শিবির ক্রমেই মাথা তুলে দাড়াচ্ছে। শক্তিশালি ভোগবাদি-বস্তুবাদি-দুশ্চরিত্র লোকেরা জানে, দেশের যুবসমাজকে যদি ভোগবিলাসে রপ্ত অথবা ধ্বংসাত্মক কাজে ব্যস্ত রাখা না যায়, তবে একসময় সমস্যা হবে। কিন্তু শকুনের দোয়ায় যেমন গরু মরে না, তেমনি ১৩৩ শহীদের রক্তস্নাত এই কাফেলা কোন অশুভ আর্তনাদের ভয় পাওয়ার জন্য নয়। এই কাফেলার আহবান মানবজীবনের সত্য-সুন্দর-পবিত্র রাস্তার দিকে।