যেহেতু রাজনৈতিক ব্যাপার তাই রাজা দিয়েই শুরু হোক...
মহারাজ যাচ্ছেন গরু কিনতে। সঙ্গে মন্ত্রী আছেন (যার বিশাল তেলের খনি আছে,সর্বদাই রাজার উপর তেল বর্ষন করেন)।সেনাপতি, কোটাল-টোটাল এরাও আছে।পাইক-পেয়াদা তো আছেই।
(হাটে,বড়সড় একটা গরুর সামনে দেখে এগিয়ে গেলেন তারা)
বিক্রেতা: হুজুর আচ্ছালা----আমালাইকুম...আসেন আসেন এই হাটের সবচাইতে বড় গরু এইটাই।(কর্মচারি চেয়ার এগিয়ে দেয়) বসেন হুজুর,আরাম করে বসেন।
মন্ত্রী: কত বড় সাহস তোর,তুই ঐ নোংরা জায়গায় রাজা মহাশয়কে বসতে বলিস!!
বি: ইয়ে..য়ে..হুজুর বেয়াদবি হয়ে গেছে,কষ্ট করে আসছেন তাই বললাম..
ম: আচ্ছা যা যা...দাম কত পড়বে এটার?
বি: হুজুর বেশী না..এক লাখ দি্যেন।
ম: হারামজাদা,বেয়াদব!তুই জানিস না আমাদের রাজা একজন ভিক্ষুক-কেও এক লাখ টাকা দান করেন (
বি: বড় ভুল হয়ে গেছে হুজুর,বড় ভুল হয়ে গেছে।আর কখনো এরকম বেয়াদবি হবেনা।আচ্ছা হুজুর দুই লাখ-ই দিয়েন।
ম: কেনাবেচা পরে হবে হারামজাদা,আগে বল তুই কোন সাহসে গরুর দাম মাত্র এক লাখ বললি..
বি: ইয়ে..হুজুর..মানে হুজুর..আমি আসলে চিন্তা করছিলাম,আমাদের রাজা যেহেতু,তাই উনার কাছ থেকে একটু কম-ই রাখি...
(এবারে মহারাজ সরব হলেন)
রাজা: মন্ত্রী..এই অসভ্য,মূর্খ গরুওয়ালার আস্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি,সে আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে..তার কত বড় সাহস সে আমার উপর দয়া দেখাতে চায়!!সে আমার কাছ থেকে কম রাখবে!!গরুওয়ালা দয়া দেখাবে আমার উপর..তাই না!!
বি: হুজুর মাফ করে দেন আমাকে..অশিক্ষিত মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলছি..
ম: জাঁহাপনা আপনি শান্ত হোন,আমি এই ব্যাটাকে...
রাজা: চুপ কর তুমি..এক্ষুনি এই হারামজাদাকে নিয়ে চল,ক্য়দিন গারদে থাক তারপর বুঝবে কার উপর দয়া করতে চেয়েছিল।আর তার শাস্তি হিসেবে এই গরুটা এখন থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।ওটাও নিয়ে চলো..
২.
অতীতের কথা থাক,একটু বর্তমানে আসি।এবারে আমাদের আমাদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রীও যাচ্ছেন গরু কিনতে,সঙ্গে আছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জনাব সাকাচৌ(যিনি কথার তুবড়ি ছোটানোয় একজন ওস্তাদ ব্যাক্তি),আছেন সহযোগী দলের সদস্য জনাব মোল্লা ছাহেব এবং আরো অনেকে..
(সবাই একটা গরুর সামনে এলেন)
বি: আসেন ছার,ভালো জায়গাতেই আসছেন।এই গরুর জাত খুব ভালো।
সাকাচৌ: ঠিক আছে ভাই দাম বলেন।
বি: এক লাখ পঞ্চাশ পড়বে ছার..
সাকা: আমি ভাই হার্টের রুগী,ডাক্তার এক্সাইটেড না হইতে বলছে,কিন্তু আপনার কথা শুনে তো হার্টে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে..
বি: কত আর বেশী বললাম..অল্প লাভ-ই নিব ছার।
সাকা: ভাইরে আপনি মনে করছেন আমাদের ম্যাডাম সরকারী নেতাদের মত দূর্নীতিবাজ।নারে ভাই,উনি গরীবের নেত্রী,জনগণের নেত্রী।উনি এতো গরীব ছিলেন যে,এতদিন বছরে মাত্র এক টাকা খাজনায় উনি একটা ছোটখাট(
বি: কী করব ছার,ইন্ডিয়া থেকে আসে,জাতও ভালো,দেখতেও ভালো...
সাকা: (নেত্রীর প্রতি) ম্যাডাম দেখলেন কান্ডটা..দেশটা তো পুরাই ইন্ডিয়ার কাছে বিক্রী হয়ে গেলো।আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন তো গোয়াল ভরা গরু ছিলো,ব্যাংক ভরা টাকা ছিলো,খনি ভরা কয়লা ছিলো;এমনকী ছাগল এতো বেশী ছিলো যে,একজন মানুষ পানিতে ডুবে মরলে আমরা দুইটা ছাগল দিতাম।আর এখন..দেশের কী যে অবস্থা..
বি: (মনে মনে-টেকা না থাকলে যাও,মুরগী দিয়া গরু কোরবানী দেওগা) আচ্ছা ছার,দশ হাজার কম-ই দিয়েন..নিয়া যান।
(এবার ম্যাডাম কথা বললেন)
ম্যাডাম: চৌধুরী সাহেব,দরকার নাই গরু কেনার।আমি আপোষহীন নেত্রী,কোনো আপোষে আমি যাবোনা।আজই,আজই সরকার বিরোধী কঠিন আন্দোলন শুরু হবে।এভাবে চললে তো কোরবানী ঈদ করা-ও সম্ভব হবেনা..
৩.
এবার সবাই সাবধান!!মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরুর হাটে যাচ্ছেন।তাঁর সঙ্গে আছেন বিশিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞ(বিশেষভাবে অজ্ঞ) এড.খাতুন(যিনি কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন)।,আরো আছেন খান সাহেব(যিনি সিন্ডিকেট ভাঙতে সদা তৎপর) এবং আরো অনেকে।
(হাটের সবচেয়ে বড় গরুর সামনে)
বি: স্যার আপনারা..আসেন আসেন।আমারটার মত সুন্দর আর বড় গরু এই হাটে আর একটাও নাই মাশাল্লা।
খান সাহেব: ভালোই.. কত নিবে?
বি: স্যার আপনাদের বেশী বলবোনা।দুই লাখ পড়বে।
খান: দামটা বেশী বলে ফেললেন না..
বি: বেশী কই স্যার..
খান: আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি এখানে কোনো সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের হাত আছে,তারাই আসলে সব কলকাঠি নাড়ছে,না হলে এতটুকু গরুর এত দাম হবার কথা না।অচিরেই এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হবে।আগামী বছর থেকেই ইনশাল্লাহ ন্যায্য মূল্যে গরু বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
বি: আসলে স্যার..সিন্ডিকেট না..পথে আসতে আসতে স্যার সন্ত্রাসী থেকে পুলিশ সবাইকে চাঁদা দিতে হয়..
এড.খাতুন: ক্কী..কী বললেন?বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই শান্ত।আমরা সন্ত্রাসীদের তালিকা করেছি যেখানে জীবিত ও মৃত সবার নাম আছে।চাঁদা কে নিয়েছে বলেন,তার নামও ঢুকায়ে দিবো।সন্ত্রাসী যে দলের-ই হোক না কেনো কাউকে ছাড় দেয়া হবে না..
(মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারে কিছু বলবেন)
প্রধানমন্ত্রী: থাক,থাক..এদেরকে দোষ দিয়ে লাভ কি..আমি জানি..আমি জানি কারা এগুলো করছে।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিহত করতেই(!!) বিরোধী দল চক্রান্ত করে গরুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।তাদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়া হবে।চলেন সবাই,গরু কেনার দরকার নেই,দেখি এবার আমেরিকায় ছেলের সাথে ঈদ করতে পারি কিনা..
__________________________________________________
সমীক্ষা:
উপরের লেখাটি একটি স্বপ্নে পাওয়া লেখা।শুধুই ফালতু প্যাঁচাল...
রাজার প্রতি আমাদের বলার কিছুই নেই।তাঁরা রাজা,তাঁরা জনগণের চেয়ে কয়েক কাতার উঁচুতে,তাছাড়া তাঁদের অস্তিত্তও এখন আর নাই।তাঁদের কথা সমাজ বই-এ থাকুক।শুধু বিক্রেতার প্রতি বলব.."এ জগতে হায় সেই বেশী চায় আছে যার ভুরি ভুরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি"-এইটা মনে রাখবেন।
ম্যাডামের ব্যাপারেও কী বলব..তিনি নিশান-পেট্রোলে চড়েন,তাঁর গলায় থাকে মুক্তার মালা,গায়ে লাখ টাকার শাড়ি,মুখে বাহারী মেক-আপ..তারপরও তিনি জনগণের নেত্রী,গরীবের নেত্রী।তাঁর একটা বাড়ীতে হয় না,দুটো লাগে।তবুও তিনি গরীবের নেত্রী।
আর প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের উদ্দেশ্যে বলছি..আমরা আপনার ১০ টাকা সের দরে চাল খাওয়ার আশায় বসে আছি।এবার হয়তো ভুট্টা খেতে পারবো,আশা করি সবাই জানেন,ভুট্টার বৈজ্ঞানিক নাম এখন আর জিয়ার নামে নেই,সেটা এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামে।
আর আমাদের জনগণের কথা কে বলবে?আমাদের মাঝেই কতজন আছে যাদের ঈদের দিন-ও খাবার জোটেনা,ভিক্ষায় নামতে হয়,তাদের কথা কে বলবে?আর কতদিন এইসব 'হুজুর','স্যার','ম্যাডাম'-এইসব গনতান্ত্রিক রাজারা আমাদের গরু বানিয়ে রাখবে?এই গরীব দেশে কারণে-অকারণে হরতাল ডেকে তাঁরা আর কত কোটি টাকার সম্পদ ধংস করতে চান?পরিবর্তনের স্লোগান দিলেন যাঁরা তারাই দেখি মানববন্ধন করতে দিচ্ছেননা,মিছিল করতে দিচ্ছেননা,হরতাল ডাকার সুযোগ তো তাঁরাই করে দিচ্ছেন।কেনো?'যুদ্ধাপরাধীর বিচার' দিয়ে আর কতদিন নিজেদের ভুলগুলো আড়াল করবেন?সংসদে বসে আর কতদিন কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন?আর কত শিক্ষার্থী বলি দিলে আপনাদের রক্তের পিপাসা মিটবে?আমরা আর কতদিন আপনাদের কাছে গরুর মতো অসহায় হয়ে থাকবো?
কতদিন??
এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়ায় সমীক্ষাটি আপাতত অসমাপ্ত রাখা হল...
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




