somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গরুর হাটে একদিন ও একটি (অসমাপ্ত) রাজনৈতিক সমীক্ষা

১৪ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১.
যেহেতু রাজনৈতিক ব্যাপার তাই রাজা দিয়েই শুরু হোক...
মহারাজ যাচ্ছেন গরু কিনতে। সঙ্গে মন্ত্রী আছেন (যার বিশাল তেলের খনি আছে,সর্বদাই রাজার উপর তেল বর্ষন করেন)।সেনাপতি, কোটাল-টোটাল এরাও আছে।পাইক-পেয়াদা তো আছেই।

(হাটে,বড়সড় একটা গরুর সামনে দেখে এগিয়ে গেলেন তারা)
বিক্রেতা: হুজুর আচ্ছালা----আমালাইকুম...আসেন আসেন এই হাটের সবচাইতে বড় গরু এইটাই।(কর্মচারি চেয়ার এগিয়ে দেয়) বসেন হুজুর,আরাম করে বসেন।
মন্ত্রী: কত বড় সাহস তোর,তুই ঐ নোংরা জায়গায় রাজা মহাশয়কে বসতে বলিস!!
বি: ইয়ে..য়ে..হুজুর বেয়াদবি হয়ে গেছে,কষ্ট করে আসছেন তাই বললাম..
ম: আচ্ছা যা যা...দাম কত পড়বে এটার?
বি: হুজুর বেশী না..এক লাখ দি্যেন।
ম: হারামজাদা,বেয়াদব!তুই জানিস না আমাদের রাজা একজন ভিক্ষুক-কেও এক লাখ টাকা দান করেন (:-/)..?আর তুই কিনা গরুর দাম বললি মাত্র এক লাখ..এত আস্পর্ধা তোর!!
বি: বড় ভুল হয়ে গেছে হুজুর,বড় ভুল হয়ে গেছে।আর কখনো এরকম বেয়াদবি হবেনা।আচ্ছা হুজুর দুই লাখ-ই দিয়েন।
ম: কেনাবেচা পরে হবে হারামজাদা,আগে বল তুই কোন সাহসে গরুর দাম মাত্র এক লাখ বললি..
বি: ইয়ে..হুজুর..মানে হুজুর..আমি আসলে চিন্তা করছিলাম,আমাদের রাজা যেহেতু,তাই উনার কাছ থেকে একটু কম-ই রাখি...
(এবারে মহারাজ সরব হলেন)
রাজা: মন্ত্রী..এই অসভ্য,মূর্খ গরুওয়ালার আস্পর্ধা দেখে আমি অবাক হচ্ছি,সে আমার সহ্যের সীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে..তার কত বড় সাহস সে আমার উপর দয়া দেখাতে চায়!!সে আমার কাছ থেকে কম রাখবে!!গরুওয়ালা দয়া দেখাবে আমার উপর..তাই না!!
বি: হুজুর মাফ করে দেন আমাকে..অশিক্ষিত মানুষ কি বলতে কি বলে ফেলছি..
ম: জাঁহাপনা আপনি শান্ত হোন,আমি এই ব্যাটাকে...
রাজা: চুপ কর তুমি..এক্ষুনি এই হারামজাদাকে নিয়ে চল,ক্য়দিন গারদে থাক তারপর বুঝবে কার উপর দয়া করতে চেয়েছিল।আর তার শাস্তি হিসেবে এই গরুটা এখন থেকে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি।ওটাও নিয়ে চলো..

২.
অতীতের কথা থাক,একটু বর্তমানে আসি।এবারে আমাদের আমাদের প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রীও যাচ্ছেন গরু কিনতে,সঙ্গে আছেন তাঁর ঘনিষ্ঠ সহযোগী জনাব সাকাচৌ(যিনি কথার তুবড়ি ছোটানোয় একজন ওস্তাদ ব্যাক্তি),আছেন সহযোগী দলের সদস্য জনাব মোল্লা ছাহেব এবং আরো অনেকে..

(সবাই একটা গরুর সামনে এলেন)
বি: আসেন ছার,ভালো জায়গাতেই আসছেন।এই গরুর জাত খুব ভালো।
সাকাচৌ: ঠিক আছে ভাই দাম বলেন।
বি: এক লাখ পঞ্চাশ পড়বে ছার..
সাকা: আমি ভাই হার্টের রুগী,ডাক্তার এক্সাইটেড না হইতে বলছে,কিন্তু আপনার কথা শুনে তো হার্টে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে মনে হচ্ছে..
বি: কত আর বেশী বললাম..অল্প লাভ-ই নিব ছার।
সাকা: ভাইরে আপনি মনে করছেন আমাদের ম্যাডাম সরকারী নেতাদের মত দূর্নীতিবাজ।নারে ভাই,উনি গরীবের নেত্রী,জনগণের নেত্রী।উনি এতো গরীব ছিলেন যে,এতদিন বছরে মাত্র এক টাকা খাজনায় উনি একটা ছোটখাট(:-/) বাড়িতে থাকতেন।সরকার তো সেটাতেও তারে থাকতে দিল না।আর আপনি এই গরীবের নেত্রীকে এতো দাম বলতে পারলেন?
বি: কী করব ছার,ইন্ডিয়া থেকে আসে,জাতও ভালো,দেখতেও ভালো...
সাকা: (নেত্রীর প্রতি) ম্যাডাম দেখলেন কান্ডটা..দেশটা তো পুরাই ইন্ডিয়ার কাছে বিক্রী হয়ে গেলো।আমরা যখন ক্ষমতায় ছিলাম তখন তো গোয়াল ভরা গরু ছিলো,ব্যাংক ভরা টাকা ছিলো,খনি ভরা কয়লা ছিলো;এমনকী ছাগল এতো বেশী ছিলো যে,একজন মানুষ পানিতে ডুবে মরলে আমরা দুইটা ছাগল দিতাম।আর এখন..দেশের কী যে অবস্থা..
বি: (মনে মনে-টেকা না থাকলে যাও,মুরগী দিয়া গরু কোরবানী দেওগা) আচ্ছা ছার,দশ হাজার কম-ই দিয়েন..নিয়া যান।
(এবার ম্যাডাম কথা বললেন)
ম্যাডাম: চৌধুরী সাহেব,দরকার নাই গরু কেনার।আমি আপোষহীন নেত্রী,কোনো আপোষে আমি যাবোনা।আজই,আজই সরকার বিরোধী কঠিন আন্দোলন শুরু হবে।এভাবে চললে তো কোরবানী ঈদ করা-ও সম্ভব হবেনা..

৩.
এবার সবাই সাবধান!!মাননীয় প্রধানমন্ত্রী গরুর হাটে যাচ্ছেন।তাঁর সঙ্গে আছেন বিশিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞ(বিশেষভাবে অজ্ঞ) এড.খাতুন(যিনি কাউকে ছাড় দিতে রাজি নন)।,আরো আছেন খান সাহেব(যিনি সিন্ডিকেট ভাঙতে সদা তৎপর) এবং আরো অনেকে।
(হাটের সবচেয়ে বড় গরুর সামনে)

বি: স্যার আপনারা..আসেন আসেন।আমারটার মত সুন্দর আর বড় গরু এই হাটে আর একটাও নাই মাশাল্লা।
খান সাহেব: ভালোই.. কত নিবে?
বি: স্যার আপনাদের বেশী বলবোনা।দুই লাখ পড়বে।
খান: দামটা বেশী বলে ফেললেন না..
বি: বেশী কই স্যার..
খান: আমি স্পষ্ট বুঝতে পারছি এখানে কোনো সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেটের হাত আছে,তারাই আসলে সব কলকাঠি নাড়ছে,না হলে এতটুকু গরুর এত দাম হবার কথা না।অচিরেই এই সিন্ডিকেট ভেঙ্গে দেয়া হবে।আগামী বছর থেকেই ইনশাল্লাহ ন্যায্য মূল্যে গরু বিক্রির ব্যবস্থা করা হবে।
বি: আসলে স্যার..সিন্ডিকেট না..পথে আসতে আসতে স্যার সন্ত্রাসী থেকে পুলিশ সবাইকে চাঁদা দিতে হয়..
এড.খাতুন: ক্কী..কী বললেন?বর্তমানে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি একেবারেই শান্ত।আমরা সন্ত্রাসীদের তালিকা করেছি যেখানে জীবিত ও মৃত সবার নাম আছে।চাঁদা কে নিয়েছে বলেন,তার নামও ঢুকায়ে দিবো।সন্ত্রাসী যে দলের-ই হোক না কেনো কাউকে ছাড় দেয়া হবে না..
(মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এবারে কিছু বলবেন)
প্রধানমন্ত্রী: থাক,থাক..এদেরকে দোষ দিয়ে লাভ কি..আমি জানি..আমি জানি কারা এগুলো করছে।যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রতিহত করতেই(!!) বিরোধী দল চক্রান্ত করে গরুর দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।তাদের সব পরিকল্পনা নস্যাৎ করে দেয়া হবে।চলেন সবাই,গরু কেনার দরকার নেই,দেখি এবার আমেরিকায় ছেলের সাথে ঈদ করতে পারি কিনা..

__________________________________________________

সমীক্ষা:

উপরের লেখাটি একটি স্বপ্নে পাওয়া লেখা।শুধুই ফালতু প্যাঁচাল...

রাজার প্রতি আমাদের বলার কিছুই নেই।তাঁরা রাজা,তাঁরা জনগণের চেয়ে কয়েক কাতার উঁচুতে,তাছাড়া তাঁদের অস্তিত্তও এখন আর নাই।তাঁদের কথা সমাজ বই-এ থাকুক।শুধু বিক্রেতার প্রতি বলব.."এ জগতে হায় সেই বেশী চায় আছে যার ভুরি ভুরি/রাজার হস্ত করে সমস্ত কাঙালের ধন চুরি"-এইটা মনে রাখবেন।

ম্যাডামের ব্যাপারেও কী বলব..তিনি নিশান-পেট্রোলে চড়েন,তাঁর গলায় থাকে মুক্তার মালা,গায়ে লাখ টাকার শাড়ি,মুখে বাহারী মেক-আপ..তারপরও তিনি জনগণের নেত্রী,গরীবের নেত্রী।তাঁর একটা বাড়ীতে হয় না,দুটো লাগে।তবুও তিনি গরীবের নেত্রী।

আর প্রধানমন্ত্রী মহোদয়ের উদ্দেশ্যে বলছি..আমরা আপনার ১০ টাকা সের দরে চাল খাওয়ার আশায় বসে আছি।এবার হয়তো ভুট্টা খেতে পারবো,আশা করি সবাই জানেন,ভুট্টার বৈজ্ঞানিক নাম এখন আর জিয়ার নামে নেই,সেটা এখন আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নামে।

আর আমাদের জনগণের কথা কে বলবে?আমাদের মাঝেই কতজন আছে যাদের ঈদের দিন-ও খাবার জোটেনা,ভিক্ষায় নামতে হয়,তাদের কথা কে বলবে?আর কতদিন এইসব 'হুজুর','স্যার','ম্যাডাম'-এইসব গনতান্ত্রিক রাজারা আমাদের গরু বানিয়ে রাখবে?এই গরীব দেশে কারণে-অকারণে হরতাল ডেকে তাঁরা আর কত কোটি টাকার সম্পদ ধংস করতে চান?পরিবর্তনের স্লোগান দিলেন যাঁরা তারাই দেখি মানববন্ধন করতে দিচ্ছেননা,মিছিল করতে দিচ্ছেননা,হরতাল ডাকার সুযোগ তো তাঁরাই করে দিচ্ছেন।কেনো?'যুদ্ধাপরাধীর বিচার' দিয়ে আর কতদিন নিজেদের ভুলগুলো আড়াল করবেন?সংসদে বসে আর কতদিন কাদা ছোড়াছুড়ি করবেন?আর কত শিক্ষার্থী বলি দিলে আপনাদের রক্তের পিপাসা মিটবে?আমরা আর কতদিন আপনাদের কাছে গরুর মতো অসহায় হয়ে থাকবো?
কতদিন??

এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়ায় সমীক্ষাটি আপাতত অসমাপ্ত রাখা হল...







সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই নভেম্বর, ২০১০ সন্ধ্যা ৬:৩৮
৪টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের কবিতা

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৫৪



বিজয়ের মাস ডিসেম্বর, লক্ষ প্রাণে লেখা বিজয়ের
সেই সোনালি অক্ষর,
দিকে দিকে শুনি জয়ধ্বনি বাংলাদেশের নামে, এই
স্বাধীনতা কেনা রক্তের দামে;
হৃদয়ে হৃদয়ে বাজে মুক্তির শত গান, ডিসেম্বরে
পেয়েছি আমরা বিজয়ীর সম্মান;
মার্চের সেই অমর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×