somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পুস্তকচারণ

২৫ শে নভেম্বর, ২০১০ রাত ৮:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"He who lends a book is an idiot. He who returns it is more of an idiot."

আপনার পড়া প্রথম বই কি ছিল?
ব্রেমেনের গায়কদের গল্প? নাসিরুদ্দীন হোজ্জা? ঠাকুরমার ঝুলি? চাচা চৌধুরী, না আরব্য রজনীর গল্প? নাকি ইসলামের কোন এক খলীফার আটার বোঝা মাথায় নিয়ে গরীব প্রজার ঘরে পৌঁছে দেয়ার কাহিনী?

বোধোদয় হবার পর থেকে যেসব বই পড়ার অভিজ্ঞতা স্মৃতি হাতড়ে খুঁজে পাই, তার মধ্যে আরো অনেকগুলোর সাথে বিশেষ করে এ বইগুলোর কথাও বেশ মনে পড়ে। মায়ের মুখে অবশ্য আরো পুরনো গল্প শুনতে পাই, পড়তে শেখার আগের গল্প। পুঁচকে আমি বাবার এনে দেয়া ছবিওয়ালা বইগুলোর দিকে রাজ্যের আগ্রহ নিয়ে নাকি চেয়ে থাকতাম, আর কি ঘটছে বুঝতে না পারলে গিয়ে এটা-ওটা জিজ্ঞেস করে আসতাম। পড়তে শেখার পরও প্রথমদিকে পড়ার চেয়ে শুনতেই ভাল লাগতো কখনো কখনো।

আরো একটু যখন বড় হলাম, প্রাইমারিতে পড়ি, তখন বইয়ের তালিকায় নতুন করে যোগ হল 'তিন গোয়েন্দা'। প্রথমে ভাল লাগত না, মনে আছে একবার ভাইয়ের ওপর রেগে গিয়ে কোনটার যেন পৃষ্ঠা ছিঁড়ে ফেলেছিলাম গোটাকয়েক। :P তারপর আস্তে আস্তে একসময় নিজেই নেশায় পড়ে গেলাম।

এরপর শুরু হল কিশোর ক্লাসিকের পালা। শার্লক হোমস আর জুলভার্নের পেটমোটা সমগ্রের সাথে ঘর ভরল সেবা আর প্রজাপতির পুঁচকে সাইজের লোভনীয় বইগুলো দিয়ে। 'তিন গোয়েন্দা' আর ভাল লাগে না, বন্ধুদের ভাল লাগার কথা শুনলেই নাক কুঁচকে বসে থাকতাম। :| তখনই একটু একটু করে ভাবতে শিখেছিলাম জীবন নিয়ে, হাইস্কুলের গণ্ডী পেরোইনি তো, চোখে রঙের খেলা! নানান ধ্যান-ধারণা আর দর্শন তখন থেকেই শেকড় গেড়ে বসে মনে, যার অনেক কিছুই বদলে গেছে পরে, তবে কিছু আছে সেই আগের মতই, পুরনো সব বইয়ের গন্ধ নিয়ে।

বাঙ্গালি লেখকদের বই তুলনামূলকভাবে কম পড়া হত তখন, হুমায়ুন আহমেদ আর জাফর ইকবাল ছাড়া। এদের ভক্ত হতে পারিনি অবশ্য কখনো। নাইন-টেনের দিকে দুজন লেখকের অসম্ভব ভক্ত হয়ে পড়লাম। এদের একজন হলেন জয় গোস্বামী। দুটো মাত্র বই পড়েছি এই কবির, দুটোই আবার উপন্যাস! এত বেশি অন্যরকম..মাথা খারাপ হয়ে গিয়েছিলো একেবারে! প্লেটোনিক ভালবাসার ধারণাটা মাথায় গেড়ে বসে তখনই, এখন আর নেই অবশ্য। ;) তবে তাঁর কাছ থেকেই অনেক কিছু অন্যরকম করে ভাবতে শিখেছিলাম।

আর দ্বিতীয়জন, বুদ্ধদেব বসুর 'তিথিডোর' পড়ে তো আমি অবাক! একেবারেই আমার মত এক চরিত্র ছিল সেখানে। তার ওপর আমার কোন কোন বন্ধুও যখন তাই বলল, আমাকে আর পায় কে! :P খুবই ভাল লেগেছিল, তাই কয়েক বছর পর খুব আগ্রহ নিয়ে আবার পড়তে বসি বইটা, কিন্তু আগের মত করে নিজের ছায়া আর খুঁজে পাই নি। "পাল্টে গেছি"-মনে মনে ভাবলাম।

কলেজে বই পড়েছি খুব কম, আর বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে আবিষ্কার করলাম, ফিকশনের ওপর আগের মত টান আর নেই। ঝুঁকে পড়লাম নন-ফিকশনের দিকে। মানবিকের কোন বিষয় নিয়ে কেন পড়ছি না সে শোক আগেই ছিল, এসময় আরো বাড়ল। মায়ের অনেক করে বলার পরও যে ধর্ম বিষয়ক বই খুবই কম পড়তাম, তা নিয়েও দেখা গেল এসময় নিজে থেকেই অনেক পড়াশোনা শুরু করেছি।

কাজের চাপে স্কুলজীবনের মত অতো বই পড়া এখন আর হয় না, তবু চেষ্টা করি সবসময়ই পড়ার মধ্যে থাকতে। বইকে যখন বলা হয় 'soul food', অনেকের মত আমারো একে অত্যুক্তি মনে হয় না। 'তিথিডোর'-এর একটা কথা খুব মনে পড়ে-বই না পড়লে আমরা শুধু নিজের মনের কথাই জানতে পারি, আর বই অন্যের মনের কথা জানারও সুযোগ করে দেয়। তাই আবুল ফজলের মত করে আমিও সবসময় বলতে চাই-
"বই আমার সঙ্গী; নিত্যসঙ্গী, শয্যাসঙ্গীও।"
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে নভেম্বর, ২০১০ সকাল ৯:০৬
৯টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অনির্বাণ শিখা

লিখেছেন নীলসাধু, ০৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



রাত ন’টার মত বাজে। আমি কি যেন লিখছি হঠাৎ আমার মেজো মেয়ে ছুটতে ছুটতে এসে বলল, বাবা একজন খুব বিখ্যাত মানুষ তোমাকে টেলিফোন করেছেন।

আমি দেখলাম আমার মেয়ের মুখ উত্তেজনায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

=ইয়াম্মি খুব টেস্ট=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:১৪



©কাজী ফাতেমা ছবি
সবুজ আমের কুচি কুচি
কাঁচা লংকা সাথে
ঝালে ঝুলে, সাথে চিনি
কচলে নরম হাতে....

মিষ্টি ঝালের সংমিশ্রনে
ভর্তা কি কয় তারে!
খেলে পরে একবার, খেতে
ইচ্ছে বারে বারে।

ভর্তার আস্বাদ লাগলো জিভে
ইয়াম্মি খুব টেস্ট
গ্রীষ্মের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অণু থ্রিলারঃ পরিচয়

লিখেছেন আমি তুমি আমরা, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৭


ছবিঃ Bing AI এর সাহায্যে প্রস্তুতকৃত

১৯৪৬ কিংবা ১৯৪৭ সাল।
দাবানলের মত সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়েছে সারাদেশে।
যে যেভাবে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। একটাই লক্ষ্য সবার-যদি কোনভাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো - ছবি ব্লগ

লিখেছেন শোভন শামস, ০৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:১৯

"পেইন্টেড লেডিস অফ সান ফ্রান্সিসকো", কিংবা "পোস্টকার্ড রো" বা "সেভেন সিস্টারস" নামে পরিচিত, বাড়িগুলো। এটা সান ফ্রান্সিসকোর আলামো স্কোয়ার, স্টেইনার স্ট্রিটে অবস্থিত রঙিন ভিক্টোরিয়ান বাড়ির একটি সারি। বহু... ...বাকিটুকু পড়ুন

এশিয়ান র‍্যাংকিং এ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান !!

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ০৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:২০

যুক্তরাজ্যভিত্তিক শিক্ষা সাময়িকী 'টাইমস হায়ার এডুকেশন' ২০২৪ সালে এশিয়ার সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকা প্রকাশ করেছে। এশিয়ার সেরা ৩০০ তালিকায় নেই দেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়।তালিকায় ভারতের ৪০, পাকিস্তানের ১২টি, মালয়েশিয়ার ১১টি বিশ্ববিদ্যালয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×