somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিন্তনপত্র- "অভাব নয়, অজ্ঞতাই সকল ভুলের মূল।"(সূফী সাধক আনোয়ারুল হক)

২৪ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

"অভাব নয়,অজ্ঞতাই সকল ভুলের মুল।"
( সাধক আনোয়ারুল হক )

কথায় আছে, "অভাবে স্বভাব নষ্ট।" জন্মগত ভাবে আকৃতিতে মানুষরূপী হলেও আত্মিকভাবে অভাবী তারাই যারা ভাবে ও আচরণে মানবতার ব্যবহার জানেনা। অর্থাৎ মানুষের পরিচয় দেয়ার উপযোগী আচরণ ও ভাব, যাদের অর্জন হয়নি। তারাই প্রকৃত অর্থে আত্মপরিচয়হীন মানুষ। এবার আলোচনায় আসে অভাব কী ? অভাব হলো সেই সব গুণাবলী, যে সব
গুণাবলীর কারণে কেহ আকৃতিতে মানুষ হলেও অজ্ঞতাবশত ভাবে ও আচরণে মানবতা দেখাতে পারেনা।

যারা মানবতার ব্যবহার করতে পারেনা, অজ্ঞাতার প্রভাবে তারা আত্বমর্যাদাহীন, অনাদর্শীক, অমানবিক জীবন ধারন করে। আর যাঁরা অনাদর্শীক, অমানবিক তথা হিংস্রতা, লোভ, ক্রোধ, ঘৃণা, মিথ‍্যে অহংকার এসকল গূণাবলীর জীবন ধারন করে, তারা কেবলই বেঁচে থাকার জন্য অন্যের গোলামী করে কিম্বা অন্যকে নিজেদের গোলামী করার জন্য বল প্রয়োগ করে থাকে। অথচ জগতের মর্যাদা সম্পন্ন নবী, রাসুলগণ( যীসু, মুহাম্মদ) সহ সক্রেটিস, সাধক খাজা ম‌ঈনুদ্দীন ও অন‍্যান‍্য সকল আদর্শবান মহাপুরুষেরা মানবতাপূর্ণ তথা ভালোবাসা, প্রেম, সম্মান, শ্রদ্ধা, ভক্তি, ক্ষমা, বিশ্বাস ইত্যাদি আদর্শিক তথা আত্মমর্যাদাপূর্ণ জীবন রক্ষার জন‍্য আজীবন গোলামীর বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। এখন প্রশ্ন আসে অজ্ঞতা কী এবং কীভাবে তা মানব জীবনে প্রভাব বিস্তার করে?

সত‍্য পথের পথচলা তথা জ্ঞানের ভুবনে বিচরণ করতে অক্ষম চেতনাজগতের এমন চেতনশক্তিই হলো ব‍্যক্তির অজ্ঞতা। সাধারনত অন্ধরা যেভাবে অনুমান ও ধারণা নির্ভর হয়ে পরনির্ভর জীবন যাপন করে থাকেন, অজ্ঞতার প্রভাবে প্রভাবিত সাধারণ মানুষও সেভাবেই অনুমান ও ধারণা নির্ভর পরনির্ভরশীল জীবন যাপন করে থাকেন। তাই তাঁরা আস্থার সাথে নির্ভুল কর্ম করতে পারেন না। প্রসঙ্গত সূফী সাধক আনোয়ারুল হক এঁর অমর বাণী," অভাব নয়,অজ্ঞতাই সকল ভুলের মুল। "

কর্ম, মানবতা, শান্তি হলো সত্য পথের পথিকের পথ চলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। হাক্কানী চিন্তনপীঠ তথা সত্যানুসন্ধানের মাধ্যমেই আরম্ভ হয় সত্য পথের পথিকের কর্ম পরিক্রমা। আর সত্যানুসন্ধানের অভ্যাস গঠন ব্যতীত শাস্তিময় জীবনের জন‍্য মানবতার কর্ম করার সতস্ফূর্ততা কারো জাগ্রত হয় কি না আমার জানা নেই। আর মানবতার কর্ম ছাড়া প্রকৃতপক্ষে মানুষ শান্তিতে থাকতে পারেন না। তাই সত্যানুসন্ধানী অনুসারীদের অজ্ঞতার জীবন থেকে রক্ষার জন্য সূফী সাধক শেখ আব্দুল হানিফ এঁর উপদেশ বাণী, " হাক্কানী তথা সত‍্য পথের পথ চলায় আগ্রহী পথিকেরা যেন, প্রতিদিন অন্ততপক্ষে দশ মিনিট হাক্কানীর কর্ম করার জন্য হাক্কানী চিন্তন অভ্যাস গড়ে তোলেন।"

জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সকলেই স্বীয় কর্মানুসারে চেতনাজগতের বিভন্ন স্তরের দোলনায় দোল খেতে খেতে জীবন যাপন করেন। আর তাঁরাই আনন্দের জীবন যাপন করার সুযোগ পায়, যাঁরা চেতনা জগতের অজ্ঞতার সীমানা পাড়ি দিয়ে জ্ঞানের সীমান্তে প্রবেশের উপযোগী নির্ভুলকর্ম করার স্বক্ষমতা অর্জন করেন । প্রশ্ন আসে কিভাবে জ্ঞানের সীমানায় প্রবেশ করার স্বক্ষমতা অর্জন করা যায় ?

প্রভুর নির্দেশনা (রূহ), তথা গুরুজীর নির্দেশনা অনুশীলনই হল জ্ঞানের সীমানায় প্রবেশের অনন‍্য উপায়। কারন জ্ঞানের জগত হল প্রভুর নিয়ন্ত্রণাধীন জগত। "আকাশ সমূহ ও পৃথিবী ব‍্যাপী প্রভুর জ্ঞানের আসন ব‍্যপৃত। এতদ উভয়ের রক্ষণাবেক্ষণের জন‍্য প্রভুকে কোন কষ্ট কিম্বা বেগ পেতে হয়না। তিনি অতিশয় উন্নত ও মহান (আলকুরআন)।" শাস্ত্রীয় মত সহ বাস্তবে দেখা যায়, আমাদের পার্থিব জীবন অত্যন্ত সীমিত। কেবলই বর্তমানে যতটা সময় আমরা শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে থাকতে পারি, ততটা সময়‌ই হলো আমাদের পার্থিব জীবন । পরবর্তি শ্বাসপ্রশ্বাসের সুযোগ কতটা আছে এবিষয়ে যাদের জ্ঞান নেই,তারা জ্ঞানের পরিসর কতইনা ক্ষুদ্র। তাই যারা অজ্ঞতার জীবনের পরিসরে পথ চলছি তাদের জন্য অতীত কিংবা ভবিষ্যতের পার্থিব জীবন নাগালের বাইরে। আর এই পার্থিব জীবনের অজানা অজ্ঞতার স্তর অতিক্রম করতে হলে, পথ প্রদর্শকের নির্দেশনা অনুসরণ করা অত্যাবশ্যক। আর যারা মুর্শীদের নির্দেশনা অনুসরণ করেনা তারা নির্ভুল কর্ম করতে পারেনা। তাই শিষ্টাচারহীনদের জীবন অসফল থাকে। প্রসঙ্গত সাধকের অমৃত বাণী," আদবে আওলিয়া, বেআদবে শয়তান। " এখন প্রশ্ন আসে, কে এই সফলকামীর পথপ্রদর্শক?

গুণীজন বলেন, সময় আমাদের সকলের সার্বক্ষণিক সঙ্গের সাথী। আর বর্তমান‌ কর্ম ছাড়া কারো জীবনের কোন অভিজ্ঞতা অর্জন হয়না, কাজেই জ্ঞান অন্বেষণের জন‍্য উপযুক্ত কার্যকরি সময় হলো বর্তমান সময়। আর উপযুক্ত ব্যক্তি হলেন, বর্তমানের উপস্থিত ব্যক্তি। আর বর্তমানের কাজই হলো উৎকৃষ্ট কাজ। প্রশ্ন আসে, মানবতার জীবন গড়ায় এই বর্তমান জীবনে কার নির্দেশনা হবে অনুশীলন যোগ্য? এপ্রসঙ্গে শাস্ত্র থেকে জানা যায়, "যাদের মূর্শীদ নেই,তাদের মুর্শীদ শয়তান। " এছাড়াও আছে," নিশ্চয়ই তোমাদের নিকট তোমাদের মধ্য হতে রাসুল ( বার্তাবাহক) এসেছেন(আল-কোরআন)। " আর এপ্রসঙ্গে সূফী সাধক আনোয়ারুল হকের বাণী," মুর্শীদ (পথ প্রদর্শক) আমি খু্ঁজবোনাকো বন-জঙ্গলে যাইয়া, আমার মুর্শীদ আমার মাঝেই আছেন যে পথ চাইয়া।"

মহাবিশ্বের চলমান আলোকধারী নক্ষত্র মন্ডলীর অবস্থান হতে যেভাবে আলো এবং অন্ধকারের উপস্হিতির খেলা চলে তেমনিভাবেই চেতনা জগতের স্তরভেদে ব‍্যক্তির লক্ষ‍্য কেন্দ্রিক কর্মবৃত্তকে ঘিরেই জ্ঞান ও অজ্ঞতার প্রভাব কার্যকর থাকে। লক্ষ‍্য কেন্দ্রিক কর্মে নিমগ্ন মুর্শীদানুসারী সত‍্যানুসন্ধানীগন চেতনাজগতের মুর্শীদীজ্ঞানের আলোকরশ্মিতে সচেতনভাবে কর্মরত থাকার সক্ষমতা লাভ করেন। ফলে তাঁরা নির্ভুলভাবে সফল কর্ম করে উন্নত আত্মবল অর্জন পূর্বক আনন্দময় জীবনের অনুভুতি উপভোগ করে থাকেন। কিন্তু মূর্শিদী জ্ঞানশূণ‍্য চেতনাজগতের অজ্ঞতার প্রভাবে লক্ষ‍্যের প্রতি নিমগ্নতাহীন সাধারণ মানুষ অনুন্নত আত্মবলের প্রভাবে কর্মের মাঝে অসচেতন থাকে। তাই তারা নির্ভুলভাবে কর্ম করতে অসফল হন। আর কর্মে অসফলতার প্রভাবেই তারা আনন্দের অনূভুতি উপভোগ থেকে বঞ্চিত হন। আর বেদনাদায়ক অনুভূতির প্রভাব অনূভব করে। এখন প্রশ্ন হলো, চেতনাজগতের অবস্থান কোথায় এবং চেতনাজগতের কোন স্তরে নির্ভুল কর্ম করা যায়?

সমগ্র জগত জুড়েই হলো চেতনাজগৎ। জগতের প্রতিটি পরমাণুর ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র কণা, সুনির্দিষ্ট চেতনাশক্তিতে স্বীয় প্রভুর নির্দেশনা অনুসারে পরিবেশ গঠনে স্বক্রীয় থাকে। তাই তো আমরা চেতনাজগতের নানাবিধ চিন্তাশক্তির ব‍্যবহার উপযোগী সুনিপুন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ সমৃদ্ধ সুগঠিত দেহের অধিকারী। আর তাইতো আজও জগৎজুড়ে নানান বৃক্ষরাজি, লতাপাতা, ফুলফলে সুশোভিত এই জীবজগত প্রাণের স্পন্দনে স্পন্দিত। কৃতজ্ঞতা জানাই সেই অসীম দয়ালু ও পরম করুণাময় ক্ষমতাধর জগৎপতি মহান প্রতিপালক রাব্বুল আলামীনকে।

পূর্বেই বলা হয়েছে," চেতনাজগতের জ্ঞানের পরিমন্ডলে বিচরণ অক্ষম চেতনাশক্তিই হলো ব‍্যক্তির অজ্ঞতা "। কোন কর্ম ছাড়াই সবার পক্ষেই অজ্ঞতার স্তরে অবস্থান করা সম্ভব হলেও নির্ভুল কর্ম ছাড়া কারো পক্ষেই জ্ঞানের স্তরে অবস্থান করা সম্ভব না। তাই নির্ভুল কর্ম করার যোগ‍্যতালাভ করেই প্রত্যেককে চেতনা জগতের জ্ঞানের অবস্থানে যেতে হয়। ফলে যারা কোন বিষয়ে নির্ভুল কর্ম করতে জানেনা, সেই অজানা স্তর‌ জুড়েই থাকে তাদের চেতনা জগতের অজ্ঞতার স্তর। তাই অজ্ঞদের নিকট যে বিষয়ের জ্ঞান নেই, সেই বিষয়ে তাদের নির্ভুল কর্ম করা একেবারেই অসম্ভব। ফলে একমাত্র চেতনা জগতের জ্ঞানের স্তরেই কারো পক্ষে নির্ভুল কর্ম করা সম্ভব।

কর্মের উৎপত্তি হয় ব‍্যক্তির চেতনাশক্তির ব‍্যবহার থেকে।কর্মের মাত্রাগত অবস্থা বিবেচনা করে সত্যান্বেষীগণ সমগ্র চেতনাজগতকে প্রধানতঃ দুভাগে ভাগ করেন। চেতনার সচেতন স্তর। আর চেতনার অসচেতন স্তর। চেতনার অসচেতন স্তরের জগতের একটি স্তর হলো অচেতন স্তর। চেতনা জগতের অচেতন স্তর‌ জুড়েই থাকে ব্যক্তির চেতনার অজ্ঞতার স্তর। এ স্তরের কর্ম সম্পর্কে ব্যক্তির পক্ষে কোন অনুমান কিম্বা ধারনা করার স্বক্ষমতাও থাকে না। তাই চেতনার এই স্তরে কোন ব্যক্তির পক্ষে নির্ভুল কর্ম করার উপযোগী আত্মবল জাগ্রত হয়না। ফলে চেতনার অজ্ঞতার স্তরে ব্যক্তিরা নির্ভুল কর্ম করতে সম্পূর্ণভাবে অক্ষম।

আবার অনুমান ও পূর্বধারনারগত চেতনা জগতের অসচেতন স্তরের আরও দুটো স্তরে ব্যক্তির অজ্ঞতার প্রভাব প্রতিফলিত হতে দেখা যায়। এই দুটি স্তরের একটি হলো চেতনার প্রাকচেতন স্তর, আর অন্যটি হলো চেতনার অবচেতন স্তর। চেতনার প্রাকচেতনগত কর্ম হলো পূর্ব ধারনানির্ভর কর্ম। আর চেতনার অবচেতন স্তরের কর্ম হলো ব্যক্তির অভ্যাস‌ নির্ভর কর্ম। চেতনার অসচেতন স্তরে অনুমান কিম্বা ধারনা নির্ভর পূর্বাভিজ্ঞতার কর্ম নির্ভুলভাবে করা গেলেও ভবিষ্যত কিম্বা বর্তমান কেন্দ্রিক জ্ঞাননির্ভর নির্ভুল কর্ম করা যায় কিনা আমার জানা নেই। একমাত্র গুরুজীর নির্দেশনার অনুশীলন তথা জ্ঞাননির্ভর কর্মের মাধ্যমেই বর্তমানে নির্ভুলকর্ম‌ করা সম্ভব। আর সত‍্যানুসন্ধানীদের জ্ঞানশক্তিই হলো ব্যক্তির নিত্য জাগ্রত আত্মবল যা ব‍্যক্তির প্রকৃত অমূল্য সম্পদ। হাক্কানী চিন্তনপীঠে জ্ঞানশক্তিই হলো নির্ভুলকর্ম করার হাতিয়ার। এজন্যই কর্মের জগতে জ্ঞানীরা তথা সত‍্যমানুষেরাই সফল ও মর্যাদায় সবার উপরে। প্রসঙ্গত সাধকের বাণী," সবার উপর সত‍্য মানুষ, তাঁহার উপরে নাই। " এবার প্রশ্ন আসতে পারে, তাহলে অজ্ঞতার সীমানা কতটা?

অজ্ঞতার সীমানা চেনার ক্ষেত্রে - জ্ঞান সাধনার পথে গুণীজন বলেন, " নিজেকে চেন",এছাড়াও আছে, " ও যার আপন খবর আপনার হয়না, একবার আপনারে চিনতে পারলে রে, যায় অচেনারে চেনা।" আবার ধর্মীয় শাস্ত্র থেকে জানা যায়, " যে ব্যক্তি নিজেকে চেনে, তিনি তাঁর প্রতিপালককেও চিনতে পারেন।" হাক্কানী চিন্তনপীঠে বলা হয়," যে ব‍্যক্তি তার মালিক, রব তথা প্রতিপালক এবং আল্লাহ্ সম্পর্কে নিজস্ব ধারণালাভ করতে পারেনাই, তার পক্ষে সত‍্য পথের পথ চলা সম্ভব না। তাহলে প্রশ্ন আসে যে ব্যক্তি নিজেকে চেনেননা, তিনি কি নিজের পরিচয় সম্পর্কে কিম্বা প্রতিপালক সম্পর্কে সত্য কিছু বলতে পারবেন? আর যিনি নিজের সত্য সম্পর্কে কিছু বলতে পারেন না, তিনি কি সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারবেন? আরও প্রশ্ন আসে চেতনা জগতের যে স্তরের কর্মে নিজেকে চেনা যায় না, তাকি নিজের নির্ভুল জ্ঞানের কর্ম? আর নিজস্ব কর্মের যে সকল কর্ম নির্ভুল নয়, সেগুলোও কী জ্ঞানের কর্ম হতে পারে? এবার ভেবে দেখুন অজ্ঞতার সীমানা কত ব‍্যপক!

আমরা বাঁচার জন‍্য প্রত‍্যাহ খাবারে সঞ্চিত বিভিন্ন প্রকার খাদ‍্যপ্রাণ গ্রহণ করে থাকি। অথচ সুস্থ্য জীবন ধারনের জন্য দেহের কি কি খাদ‍্যপ্রাণ আবশ‍্যক তা জানা যেমন জরুরী, তেমনি কোন ধরনের খাবারে কোন কোন প্রকার খাদ‍্যপ্রাণ কতটা থাকে, তা নিরুপণ পূর্বক সেই খাবার পরিমিত পরিমানে গ্রহণ করাও অত‍্যাবশ‍্যক। দেখা যায় অনেক সময় বিভিন্ন কাঁচা ফল-মূলে পছন্দমত মিষ্টতা কিম্বা স্বাদ না থাকাই অনেকেই তা খেতে চান না। আবার দেখা যায়, ঐ সকল ফল-মূল সময়ের ব‍্যবধানেই যখন সুমিষ্ট ও সুস্বাদু হয় তখন অনেকেই সেগুলো খেতে পছন্দ করেন। পুষ্টিজ্ঞানহীণ অজ্ঞতার কারনে যথাসময়ে পরিমিত পরিমাণ খাদ‍্যপ্রাণ গ্রহণ না করার কারনে অনেকেই সুস্থ্য জীবন যাপন করতে পারেনা। প্রশ্ন আসে তবে কে জীবনের এই অসুস্থতার জন্য দায়ী ?

ধর্মীয় শাস্ত্রীয় নির্দেশনায় জানা যায়, "শান্তিপূর্ণ জীবন যাপনের ক্ষেত্রে জ্ঞান অন্বেষণ করা প্রত‍্যেক নর-নারীর জন্য অত‍্যাবশ‍্যক।" কিন্তু অজ্ঞতার প্রভাবে কেউই সঠিক সময়ে সঠিকভাবে কোন কর্মই সফলভাবে করতে পারেনা। তাই তারা উপযুক্ত জ্ঞানের অভাবে জীবনের অসুস্থতা ও অশান্তির পরিবেশ গড়ে থাকে। ধর্মীয় শাস্ত্রে বলা হয়," জ্ঞানীর নিদ্রা, জাহেলের তথা অজ্ঞের এবাদতের চেয়েও উত্তম।" অর্থাৎ জ্ঞানী ব‍্যতীত জীবনের জন্য কোনই উত্তম কর্ম অজ্ঞরা করতে পারেনা। জীবনের এই অজ্ঞতার প্রভাব থেকে মুক্তিলাভ ও সুস্থ্য জীবন যাপনের জন্য উত্তম কর্ম করতে চাইলে প্রত‍্যেকের কেবলই জ্ঞানীদের তথা সত‍্যমানুষের নির্দেশনা অনুসরণ পূর্বক জীবন যাপনে সচেষ্ট থাকা অত‍্যাবশ‍্যক। অন‍্যথায় কারো পক্ষেই নিজের আনন্দঘণ সুস্থ্য জীবনের গন্ডিতে প্রবেশ করা সম্ভব না।

সত‍্যানুসন্ধানীদের মতে অজ্ঞাতার উৎস হলো ইগো বা মিথ‍্যে অহংকার। ব‍্যক্তি যা নয়, তা নিয়েই মিথ্যা দৃষ্টিভঙ্গির আবেগ জনিত পরিচিতি তুলে ধরার প্রবণতা থেকেই ব‍্যক্তির অজ্ঞতা প্রকাশিত হয়। অজ্ঞতা কখনো ব‍্যক্তি কেন্দ্রিক,কখনও দল কেন্দ্রিক,কখনও ধর্মকেন্দ্রিক, আবার কখনও খাদ‍্যচাহিদা ও সাজগোজ বা সৌন্দর্য প্রীয়তার আবেগ থেকেও প্রকাশিত হতে দেখা যায়। অধিকাংশ অজ্ঞতার প্রভাবেই ব‍্যক্তির আবেগ, উদ্বেগ, উৎকণ্ঠা, উত্তেজনা এসকল অনুভূতির উদ্রেক ঘটায়। যার প্রভাবে ব‍্যক্তি নিজেই নিজের স্বাস্থ‍্যহানি ঘটিয়ে প্রতারিত হয়। এ প্রসঙ্গে সূফী সাধক শেখ আব্দুল হানিফ বলেন, " মানুষ নিজের সাথে নিজেই বেশি প্রতারণা করে। "

জ্ঞানীরা স্রষ্টার অসংখ্য সৃষ্টির নিয়ামতের ব‍্যবহার বিধি জানেন,তাই তাঁদের অভাব ও অজ্ঞতার প্রভাব নিয়ন্ত্রণে থাকে। ফলে তাঁরা স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত থেকে শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করেন। আর যাদের অজ্ঞতা ও অভাব নিয়ন্ত্রণে থাকেনা তারা স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত থাকতে পারেনা। ফলে তারা অশান্তির মাঝে জীবন যাপন করে। এবিষয়ে শাস্ত্রে আছে, প্রভুর প্রতি কৃতজ্ঞচিত্ত্ব হও,আরো পাবে।"

অভাব আর অজ্ঞতা থেকে আত্মরক্ষার উপায় কী? শান্তিপূর্ণ জীবন যাপন করার জন‍্য সবার জন‍্যই জ্ঞানার্জন করা অত‍্যাবশ‍্যক। আর কর্মের মাঝে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন পূর্বক স্রষ্টার নির্দেশনা অনুসরণ করাই হলো জ্ঞানার্জনের সরল পথ। ভ্রান্ত আর অভিশপ্তরা ব‍্যতীত বিশ্বাসী সফলকামীগন সকলেই সরল পথের অনুসারী। স্রষ্টার বিশ্বাসী, সৎকর্মশীল, সত‍্যানুরাগী আর ধৈর্যশীলেরা ব‍্যতীত সকলেই ক্ষতিগ্রস্তভাবে জীবন যাপন করে (আলকুরআন )। আর যারা প্রভুর নির্দেশনা অগ্রাহ্য পূর্বক শিষ্টাচার বহির্ভুত জীবন যাপন করে,তারা সকলেই অজ্ঞতার প্রভাবদুষ্ট সরলপথ বিচ‍্যুত,ক্ষতিগ্রস্ত, অভিষপ্ত ও বিভ্রান্তির মাঝে থাকে । এবিষয়ে সূফী সাধক আনোয়ারুল হকের বাণী, " আদবে আওলিয়া, আর বেয়াদবে শয়তান।"

স্বর্গীয় ও নারকীয় সকল জগতের ভ্রুণানুর গুণাবলীর অবস্থান ব‍্যক্তির চেতনা জগতেই রয়েছে। অজ্ঞতার চর্যায় জাগ্রত হতে থাকে ব‍্যক্তির নারকীয় জগৎ। আর জ্ঞানের চর্যায় জাগ্রত হতে থাকে স্বর্গীয় জগৎ। প্রত‍্যেকের ইচ্ছেশক্তিই যথেষ্ট নিজস্ব পছন্দের ভুবন গড়ে তুলতে। কথায় আছে," যে যা ধায়,সেই তা পায় বিধাতার কোন দোষ নাই। " আর শ্বস্ত্রে আছে," মানুষের জন‍্য তার ইচ্ছেশক্তি ব‍্যতীত আর কিছুই নেই। এছাড়া আছে, যে কেহ বিন্দু পরিমান ভাল কর্মে লেগে থাকেন, প্রভু তার জন‍্য দশ গুণের অধিক ফলাফল বরাদ্ধ দেন। আর বিন্দু পরিমাণ মন্দ কাজের প্রতিদানও তিনি দেন। " প্রভুই সকল কর্মের প্রকৃত কর্মফলদাতা। আর সকল বিচারকের শ্রেষ্ঠ সুবিচারক (আলকুরআন)।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×