রাষ্ট্র যখন হত্যার দর্শক
দায়হীন সরকারের শাসনে বাংলাদেশ কোথায় যাচ্ছে?
দিপু চন্দ্র দাস মৃত্যুর মুখে দাঁড়িয়ে কাঁদছিলেন—
“আমি নবীকে নিয়ে কিছু বলিনি, আমাকে মারবেন না।”
রাষ্ট্র তখন কোথায় ছিল?
আগুনে পুড়তে পুড়তে ছোট্ট আয়েশা চিৎকার করেছিল—
“আব্বু আমাকে নাও।”
সেই আর্তনাদ কি রাষ্ট্র শোনেনি?
আর শরীফ ওসমান হাদি—প্রকাশ্য রাজপথে গুলিবিদ্ধ হয়ে পড়ে থাকলেন, মাথার ভেতর ঢুকে যাওয়া বুলেট নিয়ে। তিনি জানতেন, তাকে মারা হতে পারে। তিনি বলেও গিয়েছিলেন। তারপরও রাষ্ট্র তাকে নিরাপত্তা দেয়নি। কারণ এই রাষ্ট্র এখন আর নাগরিক রক্ষার রাষ্ট্র নয়—এটি ক্ষমতাসীনদের সুবিধা রক্ষার যন্ত্রে পরিণত হয়েছে।
এই তিনটি ঘটনা বিচ্ছিন্ন নয়। এগুলো কোনো “দুর্ভাগ্যজনক দুর্ঘটনা”ও নয়। এগুলো একটি ব্যর্থ, দায়িত্বহীন ও নৈতিকভাবে দেউলিয়া রাষ্ট্রব্যবস্থার স্বাভাবিক ফল।
অন্তর্বর্তী সরকার ১৬ মাস ধরে ক্ষমতায়। এই সময়ে রাষ্ট্র কি নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে?
উত্তর এক শব্দে—না।
খুন হয়, পুড়িয়ে মারা হয়, প্রকাশ্যে গুলি চলে—আর সরকার বিবৃতি দেয়। তদন্ত কমিটি হয়। ফাইল ঘোরে। অপরাধীরা ঘুরে বেড়ায়। এটিই এখন বাংলাদেশের রাষ্ট্রচরিত্র।
ক্ষমতার রাজনীতি, নাগরিকের মৃত্যু
স্বাধীনতার ৫৪ বছর পরও বাংলাদেশ একই জায়গায় দাঁড়িয়ে—
ভোটাধিকার নেই,
বিচার নেই,
নিরাপত্তা নেই,
জবাবদিহি নেই।
সংসদ নির্বাক, প্রশাসন দলীয় অনুগত, আইন শক্তিশালীদের ঢাল। নাগরিক অধিকার এখন আর সাংবিধানিক অধিকার নয়—রাষ্ট্রের করুণায় পাওয়া সাময়িক সুবিধা।
২৪-এর গণঅভ্যুত্থান এই কারণেই হয়েছিল। মানুষ আর ভয় নিয়ে বাঁচতে চায়নি। তারা রাজপথে নেমেছিল রাষ্ট্রের চরিত্র বদলাতে। কিন্তু অভ্যুত্থানের পর কী বদলেছে?
সরকার বদলেছে,
কিন্তু শাসনের দর্শন বদলায়নি।
ক্ষমতার ভাষা বদলায়নি।
রাষ্ট্রের ঔদ্ধত্য অক্ষুণ্ন আছে।
রাষ্ট্র ব্যর্থ, তাই মানুষ তাকিয়ে আছে
এই শূন্যতা থেকেই আজ জনগণের দৃষ্টি তারেক রহমানের দিকে। এটি কোনো দলীয় আবেগ নয়। এটি দীর্ঘ রাজনৈতিক ব্যর্থতার পর জন্ম নেওয়া এক ধরনের শেষ আশার প্রতীক্ষা।
মানুষ চায় এমন নেতৃত্ব—
যে নিরাপত্তাকে রাজনৈতিক ইস্যু বানাবে না,
ন্যায়বিচারকে প্রতিশোধে পরিণত করবে না,
রাষ্ট্রকে দলের সম্পত্তি ভাববে না।
অধ্যাপক এমাজউদ্দীন আহমদ ২০১৮ সালে যে সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছিলেন, তা আজ আরও প্রাসঙ্গিক। তারেক রহমানের সামনে পথ কণ্টকময়—চারপাশে সুবিধাবাদী, তোষামোদকারী, ক্ষমতালোভী মানুষ। তাকে বাঁচতে হবে নিজের বিবেক দিয়ে, দলের নয়—রাষ্ট্রের স্বার্থে।
জনগণকেন্দ্রিক রাজনীতি না হলে এই দেশ বাঁচবে না
শ্রমিক আজ নিরাপত্তাহীন।
কৃষক ন্যায্য দাম পায় না।
মধ্যবিত্ত নিঃশেষ।
মূল্যস্ফীতি মানুষের শ্বাসরোধ করছে।
স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিলাসে পরিণত হয়েছে।
নারী, শিশু, সংখ্যালঘু—কেউই নিরাপদ নয়।
এই বাস্তবতায় “সবার বাংলাদেশ” কোনো স্লোগান হতে পারে না—এটি হতে হবে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের ন্যূনতম শর্ত।
কিন্তু তার জন্য আগে দরকার—
আইনের শাসন,
বহুদলীয় গণতন্ত্র,
জবাবদিহিমূলক সরকার।
আর কত দিপু, কত আয়েশা, কত হাদি?
আমরা আর কোনো দিপুকে পুড়ে মরতে দেখতে চাই না।
আর কোনো আয়েশার কান্না শুনতে চাই না।
আর কোনো হাদির রক্তে রাজপথ রাঙাতে চাই না।
আমরা চাই এমন রাষ্ট্র—
যেখানে আইন দুর্বলের আশ্রয়,
শক্তিশালীর ঢাল নয়।
এই দাবি কোনো অলৌকিক কিছুর নয়।
এটি নাগরিকের ন্যূনতম অধিকার।
রাষ্ট্র যদি আবার ব্যর্থ হয়—
জনগণ আবার কথা বলবে।
ইতিহাস তার সাক্ষী।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



