সন্ধ্যা ৭:৩০।
দীপ্ত এইমাত্র অফিস থেকে বাইরে বেরিয়ে আসল। যাক, আজ অন্তত মলির কথাটা মিথ্যে প্রমাণ করতে পারবে সে।মলির অভিযোগ, প্রতিদিনই নাকি সে রাত ৯/১০ টার আগে বাসায় ফিরতে পারে না। আজকেই সে রাত ৯ টার আগে বাসায় ফিরে মলির কথাটা মিথ্যে প্রমাণ করবে। প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করার সুবাদে দীপ্ত প্রায় প্রতিদিনই রাত করে বাড়ি ফিরে বউয়ের অভিমানী মুখটি দেখতে হয় অতঃপর মান ভাঙানোর কাজটি সুসম্পন্ন করতে হয়। আর ছেলেটার চোখে দেখতে পায় তীব্র ঘুমের হাতছানি।
দীপ্ত বাড়ির উদ্দেশ্যে পা বাড়ায়। তবে বাসায় যাওয়ার আগে আজকে একটু শপিং এ যেতে হবে।ছেলেটা একটা নতুন রিমোট কন্ট্রোল গাড়ির জন্য অনেকদিন ধরে আবদার করে আসছে। কিন্তু একে তো পাওয়া যায় না সময় তার উপর টাকা পয়সার ঘাটতি থাকায় ছেলের সামান্য এই আবদারটুকুও পূরণ করতে পারছিল না দীপ্ত। বেতন যা যায় তা থেকে বাড়িতে টাকা পাঠানোর পর যা থাকে তা দিয়ে এক ছেলেকে নিয়ে দীপ্ত ও মলির গড়া সুখের সংসারটাকে একটু কষ্ট করেই চালাতে হয়। যাই হোক, আজকে দীপ্ত’র বেতন হয়েছে। আজকে ছেলেটার আবদার পূরণ করে দিতেই হবে। মলিকেও একটা শাড়ি কিনে দিতে হবে।অনেক দিন থেকে কাউকেই কিছু কিনে দেয়া হয় না, সাথে ছেলেটার জন্যও কিছু কেনাকাটা করতে হবে। এইরে, চিন্তা ভাবনা করতে করতেই তো সময় গড়িয়ে যাবে। পাছে আজকেও না রাত করে বাড়ি ফিরতে হয়। এসব চিন্তা করতে করতে দ্রুত পা চালায় দীপ্ত।
হঠাৎ পায়ে কিসের যেন হালকা আঘাতে তার চিন্তায় ছেদ পড়ে। নিচু হয়ে তাকায় সে। ল্যাম্পপোস্টের আলোতে সে নিচু হয়ে দেখতে পায় একটা মানিব্যাগ নিচে রাস্তায় পড়ে আছে। হাতে নেয় সে ওটি। না জানি কার মানিব্যাগ? বেচারা নিশ্চয়ই খুব টেনশনে আছে। ঠিকানা কিছু পাওয়া যায় কিনা দেখতে ব্যাগের ভিতরটা খুঁজে দেখে দীপ্ত। ওতে কিছু টাকা দেখতে পায় সে। হ্যাঁ এই তো পাওয়া গেছে। একটা পাসপোর্ট সাইজের ছবি। ছবিটা টেনে বের করে আনে সে। ছবির পিছনে নামও লেখা আছে: দুরন্ত; ফোন 019111……….
এটা নিশ্চয়ই উনারই মানিব্যাগ হবে, দীপ্ত ভাবে। ফোন করে সে ঐ নাম্বারটিতে।
-হ্যালো স্লামালাইকুম।
-ওয়ালাইকুমাস্লাম। দুরন্ত বলছেন?
-জ্বী, আপনি কে বলছেন প্লিজ?
- জ্বী আমার নাম দীপ্ত। আমি রাস্তায় একটা মানিব্যাগ কুড়িয়ে পেয়েছি। ওতে দুরন্ত নামের একজনের ছবি এবং মোবাইল……..
-জ্বী,জ্বী ওইটা আমার ব্যাগ। (কথায় কেমন যেন আলগা একটা ব্যাকুলতা শুনতে পায় দীপ্ত।)
- আচ্ছা বলেন তো ব্যাগটা কোন কোম্পানির?
- দুরন্ত নামের লোকটি মানিব্যাগের নিখুঁত বর্ণনা দেয় এমনকি এর ভিতরে কি কি কাগজ আছে তা সম্পর্কেও।
- দীপ্ত নিশ্চিত হয় যে মানিব্যাগটি আসলে দুরন্তেরই।
- আচ্ছা ব্যাগটি আপনাকে কীভাবে দেব।
- আপনি এখন ঠিক কোন জায়গায় আছেন বলেন তো। আমি আসছি।
- এই তো আমি একটি ফার্মেসীর ঠিক পাশে। ফার্মেসীটির নাম স্নিগ্ধা ফার্মেসী।
- আচ্ছা আচ্ছা বুঝতে পেরেছি (দীপ্ত আশ্চর্য হয় কারণ সে শুধু ফার্মেসীর নামটি বলেছে কোনো জায়গার নাম বা অন্য কোনো বর্ণনাই দেয়নি!)
- আচ্ছা দীপ্ত ভাই আপনি কি একটু কষ্ট করে ফার্মেসীর ঠিক পাশের গলিটি দিয়ে ঢুকবেন। আমি ঐদিকেই আসছি। আচ্ছা, আপনাকে চিনবো কি করে? মানে, আপনার গায়ের শার্টের কালারটা কি যদি বলতেন?
- ও আচ্ছা। আমার গায়ে নীল কালারের একটা স্টাইপ শার্ট। আর হাতে একটা কালো অফিসিয়াল ব্যাগ আছে।
- ওক্কে, আপনাকে আমি চিনে নেবো। আপনি শুধু কাইন্ডলি একটু গলিটা দিয়ে ঢুকেন অথবা কষ্ট হলে যেখানে আছেন সেখানেই না হয় থাকেন আমি আসছি।
-না না, ঠিক আছে। আমি গলি দিয়ে ঢুকছি।
- সো নাইস অফ ইউ।
দীপ্ত ফোনটা রেখে আস্তে আস্তে গলি দিয়ে ঢুকতে থাকে। গলির রাস্তাটা একেবারে নির্জন।দীপ্তর কেমন যেন একটা ভয় ভয় শুরু হতে থাকে। তার অবচেতন মন তার চেতন মনটাকে সতর্ক করতে থাকে যেন। হঠাৎ গলির প্রান্ত থেকে একটা কালো মূর্তি দৃশ্যমান হয়।মূর্তিটা ধীরে ধীরে সামনে এগুতে থাকে। দীপ্ত বুজতে পারে ওই দুরন্ত। দীপ্ত সামনে এগিয়ে যায়। কালো মূর্তিটাও আস্তে আস্তে দৃশ্যমান হতে থাকে।
-আপনি নিশ্চয়ই দীপ্ত দা?
-হ্যাঁ, আপনি কি দুরন্ত?
-জ্বী জ্বী। কথা বলতে বলতেই দীপ্ত বুঝতে পারে তার চারপাশে অপরিচিত কতকগুলো মানবমূর্তি তাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে আছে।
দীপ্ত এবার বুঝতে পারে কি হতে চলেছে এখানে। সে একটা চক্রের খপ্পরে পড়েছে। এরা পরিকল্পনা মতোই ঘটনাটা ঘটিয়েছে। না জানি কতজনকে এভাবে ওরা ফাঁদে ফেলেছে? কিন্তু এখন আর কিছুই করার নেই তার। সে বুজতে অনেক বেশি সময় নিয়ে ফেলেছে। সেই খেসারত এখন তাকে দিতে হবে! সে বিস্মিত ও বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। তাকে নিয়ে কয়েকজোড়া হাতের ধস্তাধস্তি সে টের পায়।কিন্তু তার বিস্মিত মন এগুলোর অনেক ঊর্ধ্বে। সে সবকিছুই বুঝতে পারছে কিন্তু কিছুই যেন টের পাচ্ছে না!
কিছুক্ষণ পরে।
দীপ্ত মাটিতে লুটিয়ে আছে। তাকে এভাবে ফেলে রেখে যাওয়া হয়েছে। তবে ফেলে যাওয়ার আগে তার কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে সব কিছু। তার ব্যাগের ভিতরের কাগজগুলো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চতুর্দিকে। একটা সাজানো নাটকের একটি হারানো মানিব্যাগ ফিরিয়ে দিতে এসে এখন তার নিজের মানিব্যাগটাই খোয়াতে হলো যাতে ছিলো তার এ মাসের পুরো বেতন!
আচ্ছা, এখন কয়টা বাজে? দীপ্তর হাতে ঘড়ি নেই। ওটাও ছিনিয়ে নেয়া হয়েছে। অবশ্য ছিনিয়ে নেয়াও তো বলা যায় না, দীপ্ত তো ওদের বাঁধা দেয়নি! সেই শক্তি, মনোবলও তো ওর ছিলো না, ও যে পুরাই হতবাক হয়ে গিয়েছিলো।
দীপ্ত কি আজও মলির অভিযোগ থেকে উদ্ধার হতে পারবেনা? আকাশে চাঁদ উঠেছে। চতুর্দশীর চাঁদ। সেও কি দীপ্তের দিকে তাকিয়ে উপহাসের হাসি হাসছে!
সর্বশেষ এডিট : ২৮ শে মে, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:৪৯