শরতের সোনা ঝরা এক রোদেলা বিকেল। মুঠি মুঠি সোনা ছড়াচ্ছে উজ্জল আগুনের পিন্ডটা। মাথার উপরে অপরাজিতার মত নীল আকাশ। কোন শিশুর কাঁচা হাতে আকা ছবির মত। মনে হচ্ছে নীলের সমুদ্রে ভাসছে সারাটা আকাশ। সেই নীলের সাগরে পাল তুলেছে বরফের মত শুভ্র সাদা মেঘের নাও। ভেসে বেড়াচ্ছে দিগন্তের এপার থেকে ওপার অবধি। ক্ষনে ক্ষনে চলে রুপ বদলের পালা। কখনোবা হাতির শুড়, কখনে প্রকান্ড এক দৈত্য আবার কখনোবা মায়াবী কোন এক কিশোরীর আবছা অবয়ব। নিচে দিগন্ত বিস্তৃত জলের রাশি। সেই অথৈ জলে গলা ডুবিয়ে দাড়িয়ে আছে সবুজ ধান আর পাটের গাছগুলো। দিগন্ত বিস্তৃত এই সবুজের সহারোহ। দিগন্তে নীল আকাশের সাথে মিতালী পাতিয়েছে সবুজ ফসলের মাঠ।দ্বীপের মত মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে মাঠের পাড়ের দুরের গ্রামটি। সবুজ মাঠের বুক চিরে সাপের মত একে বেকে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি নদী। নদীর তীরে গলা জলে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে সাদা কাশফুলগুলো। নদীর বুকে পাল তোলা নৌকা। ঠিক যেন শিল্পীর তুলিতে আকা এক অপরুপ ছবি। রং বেরঙ্গের পাল তোলা নৌকাগুলো একসময় হারিয়ে যায় মাঠের পাড়ের দুরের দেশে। রেশ থেকে যায় মাঝির মুখের ভাটিয়ালী আর ভাওয়াইয়া গানের। কোথাওবা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শ্যামল সবুজ গাছে ছাওয়া ছোট্টা কোন গ্রাম। ভর দুপুরে গ্রামের দামাল কিশোরেরা গাছের মগডাল থেকে ঝাপিয়ে পড়ে নদীর বুকে। শুরু হয় ডুব-সাতারের খেলা। আবার কোথাও এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে গঞ্জ, হাট-বাজার। হাট বারে নানা রঙ্গের, নানা আকৃতির নৌকায় করে হাটি আসে লোকজন। মানুষের পদভারে গমগম করতে থাকে সারা বাজার।
বর্ষা। বাংলার বর্ষাকাল। এমনি অপরূপ রূপ নিয়েই বর্ষা আসে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে। কখনোবা অঝোর ধারায় বৃষ্টি। বৃষ্টির চাদরে ঢাকা পড়ে ঝাপসা হয়ে আসে চারপাশ। বৃষ্টির ফোটা গুলো আছড়ে পড়ে কচি সবুজ ধান আর পাটরর ক্ষেতে। মৃদু কাতাসে নদীর বুকে জেগে উঠা ঢেউয়ের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় বৃষ্টির পানি। টিনের চালে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ গ্রামের যুবতী মেয়ের দলকে করে দেয় আপমনা। রিমঝিম শব্দের মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে যায় স্বপ্নের দেশে। বিভোর হয় অনাগত সুখ-স্বপ্নে। ঘুলঘুলিতে পায়রাগুলো বসে থাকে চুপচাপ। দুষ্টু চড়–ইগুলো কিচিরমিচির ভুলে বসে থাকে চুপ করে। তাল আর নারকেলের শাখায় ঝুলানো বাবুই এর বাসাগুলো দুলতে থাকে মৃদু বাতাসে। কখনোবা মেঘমুক্ত নীল আকাশ। দূর আকাশে ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো শঙ্খচিল গুলো উড়ে বেড়ায়। সারা আকাশ জুড়ে সাদা মেঘ কন্যাদের আনাগোনা। রাতে নীল আকাশের গায়ে হেটে যায় পূর্নিমার চাদ। রূপালী চাদ তরল রূপা ঢেলে দেয় অকৃপন হাতে। মায়াবী জোছনার স্নিগ্ধ আলোয় ভরে উঠে বিশ্ব চরাচর। কবি, সাহিত্যিকরা বলেছেন শরতের জোছনা নাকি ‘ভয়ঙ্কর’ জোছনা। পেজা তুলার মতো ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলায় প্রতিফলিত হয়ে জোছনার স্নিগ্ধ উজ্জল আলো আরো উজ্জল হয়ে উঠে। ভরা বর্ষার জলে থই থই করা মাঠ আর ফসলের ক্ষেতে পিছলে পড়ে উজ্জল হলুদ জোছনার আলো। মনে গয় যেন তরল রূপার এক সাগর। বাড়ির ঘাটে বাধা নৌকা আর বাশি নিয়ে কোন নিঃসঙ্গ রাখাল চলে যায় দূরে সবুজ ফসলের মাঠে। নির্জন জোছনা রাতের সমস্ত নিরবতাকে ভেঙ্গে খান খান করে দিয়ে বেজে উঠে করুন সুর। করুন সেই সুরের মুর্ছনায় কেপে উঠে নির্জন রাত। থেমে যায় পাতার কানে বাতাসের ফিসফিস শব্দ। মাঝ আকাশে থমকে দাড়ায় পথচলা চাদ। বাড়ীতে একাকী ফেলে আসা প্রেয়সীর কথা মনে করে আনমনা হয়ে যায় নদীর বুকে ভেসে চলা নৌকার মাঝি। কাপন ধরে কৃষানের যুবতী কন্যার বুকের গভীরে। সেই নির্জন নিশুতি রাতে বাশির করুন সুরে প্রকাশিত হয় হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা ব্যদনার্ত এক ইতিহাস। রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়। চাদের বুকে ছায়া পড়ে নিশাচর পাখিদের। ভয়ে কেদে উঠে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আধো জাগা শিশুর দল। শিমুলের ডালে কর্কশ স্বরে ডেকে উঠে লক্ষী পেচা। লন্ঠনের টিমটিমে আলোয় নদীর বুকে মাছ ধরে জেলেরা। কেউ হুক্কা খায় গুড়গুড় শব্দে। তাদের প্রিয়জনেরা এপাশ ওপাশ করে শূন্য বিছানায়। আবহমান বাংলায় এমনি করেই বর্ষা আসে প্রতি বছর রং আর রূপের পসরা সাজিয়ে। শরতের সীমানায় এসেও তা ম্লান হয়না। শরতের বর্ষাই যেন ফুটিয়ে তোলে গ্রাম বাংলার অপরূপ রূপটি। শরতের ভোরে বিলের মাঝে ফুটে থাকা সাদা শাপলা ফুলের মত বিকশিত হয়।
মোঃ জাহাঙ্গীর কবির।
১৩.০৯.২০০৪ ইং ; ২০২০
নারায়ণগঞ্জ।
মাথার উপরে অপরাজিতার মত নীল আকাশ। কোন শিশুর কাঁচা হাতে আকা ছবির মত। মনে হচ্ছে নীলের সমুদ্রে ভাসছে সারাটা আকাশ। সেই নীলের সাগরে পাল তুলেছে বরফের মত শুভ্র সাদা মেঘের নাও। ভেসে বেড়াচ্ছে দিগন্তের এপার থেকে ওপার অবধি। ক্ষনে ক্ষনে চলে রুপ বদলের পালা। কখনোবা হাতির শুড়, কখনে প্রকান্ড এক দৈত্য আবার কখনোবা মায়াবী কোন এক কিশোরীর আবছা অবয়ব। নিচে দিগন্ত বিস্তৃত জলের রাশি। সেই অথৈ জলে গলা ডুবিয়ে দাড়িয়ে আছে সবুজ ধান আর পাটের গাছগুলো। দিগন্ত বিস্তৃত এই সবুজের সহারোহ। দিগন্তে নীল আকাশের সাথে মিতালী পাতিয়েছে সবুজ ফসলের মাঠ।দ্বীপের মত মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে মাঠের পাড়ের দুরের গ্রামটি। সবুজ মাঠের বুক চিরে সাপের মত একে বেকে বয়ে গেছে ছোট্ট একটি নদী। নদীর তীরে গলা জলে মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে সাদা কাশফুলগুলো। নদীর বুকে পাল তোলা নৌকা। ঠিক যেন শিল্পীর তুলিতে আকা এক অপরুপ ছবি। রং বেরঙ্গের পাল তোলা নৌকাগুলো একসময় হারিয়ে যায় মাঠের পাড়ের দুরের দেশে। রেশ থেকে যায় মাঝির মুখের ভাটিয়ালী আর ভাওয়াইয়া গানের। কোথাওবা নদীর তীরে গড়ে উঠেছে শ্যামল সবুজ গাছে ছাওয়া ছোট্টা কোন গ্রাম। ভর দুপুরে গ্রামের দামাল কিশোরেরা গাছের মগডাল থেকে ঝাপিয়ে পড়ে নদীর বুকে। শুরু হয় ডুব-সাতারের খেলা। আবার কোথাও এই নদীকে কেন্দ্র করেই গড়ে উঠেছে গঞ্জ, হাট-বাজার। হাট বারে নানা রঙ্গের, নানা আকৃতির নৌকায় করে হাটি আসে লোকজন। মানুষের পদভারে গমগম করতে থাকে সারা বাজার।
বর্ষা। বাংলার বর্ষাকাল। এমনি অপরূপ রূপ নিয়েই বর্ষা আসে বাংলাদেশের গ্রামগুলোতে। কখনোবা অঝোর ধারায় বৃষ্টি। বৃষ্টির চাদরে ঢাকা পড়ে ঝাপসা হয়ে আসে চারপাশ। বৃষ্টির ফোটা গুলো আছড়ে পড়ে কচি সবুজ ধান আর পাটরর ক্ষেতে। মৃদু কাতাসে নদীর বুকে জেগে উঠা ঢেউয়ের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে যায় বৃষ্টির পানি। টিনের চালে বৃষ্টির টাপুর টুপুর শব্দ গ্রামের যুবতী মেয়ের দলকে করে দেয় আপমনা। রিমঝিম শব্দের মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে হারিয়ে যায় স্বপ্নের দেশে। বিভোর হয় অনাগত সুখ-স্বপ্নে। ঘুলঘুলিতে পায়রাগুলো বসে থাকে চুপচাপ। দুষ্টু চড়–ইগুলো কিচিরমিচির ভুলে বসে থাকে চুপ করে। তাল আর নারকেলের শাখায় ঝুলানো বাবুই এর বাসাগুলো দুলতে থাকে মৃদু বাতাসে। কখনোবা মেঘমুক্ত নীল আকাশ। দূর আকাশে ক্ষুদ্র বিন্দুর মতো শঙ্খচিল গুলো উড়ে বেড়ায়। সারা আকাশ জুড়ে সাদা মেঘ কন্যাদের আনাগোনা। রাতে নীল আকাশের গায়ে হেটে যায় পূর্নিমার চাদ। রূপালী চাদ তরল রূপা ঢেলে দেয় অকৃপন হাতে। মায়াবী জোছনার স্নিগ্ধ আলোয় ভরে উঠে বিশ্ব চরাচর। কবি, সাহিত্যিকরা বলেছেন শরতের জোছনা নাকি ‘ভয়ঙ্কর’ জোছনা। পেজা তুলার মতো ভেসে বেড়ানো সাদা মেঘের ভেলায় প্রতিফলিত হয়ে জোছনার স্নিগ্ধ উজ্জল আলো আরো উজ্জল হয়ে উঠে। ভরা বর্ষার জলে থই থই করা মাঠ আর ফসলের ক্ষেতে পিছলে পড়ে উজ্জল হলুদ জোছনার আলো। মনে গয় যেন তরল রূপার এক সাগর। বাড়ির ঘাটে বাধা নৌকা আর বাশি নিয়ে কোন নিঃসঙ্গ রাখাল চলে যায় দূরে সবুজ ফসলের মাঠে। নির্জন জোছনা রাতের সমস্ত নিরবতাকে ভেঙ্গে খান খান করে দিয়ে বেজে উঠে করুন সুর। করুন সেই সুরের মুর্ছনায় কেপে উঠে নির্জন রাত। থেমে যায় পাতার কানে বাতাসের ফিসফিস শব্দ। মাঝ আকাশে থমকে দাড়ায় পথচলা চাদ। বাড়ীতে একাকী ফেলে আসা প্রেয়সীর কথা মনে করে আনমনা হয়ে যায় নদীর বুকে ভেসে চলা নৌকার মাঝি। কাপন ধরে কৃষানের যুবতী কন্যার বুকের গভীরে। সেই নির্জন নিশুতি রাতে বাশির করুন সুরে প্রকাশিত হয় হৃদয়ের গভীরে লুকিয়ে থাকা ব্যদনার্ত এক ইতিহাস। রাত গভীর থেকে গভীরতর হয়। চাদের বুকে ছায়া পড়ে নিশাচর পাখিদের। ভয়ে কেদে উঠে মায়ের গলা জড়িয়ে ধরে আধো জাগা শিশুর দল। শিমুলের ডালে কর্কশ স্বরে ডেকে উঠে লক্ষী পেচা। লন্ঠনের টিমটিমে আলোয় নদীর বুকে মাছ ধরে জেলেরা। কেউ হুক্কা খায় গুড়গুড় শব্দে। তাদের প্রিয়জনেরা এপাশ ওপাশ করে শূন্য বিছানায়। আবহমান বাংলায় এমনি করেই বর্ষা আসে প্রতি বছর রং আর রূপের পসরা সাজিয়ে। শরতের সীমানায় এসেও তা ম্লান হয়না। শরতের বর্ষাই যেন ফুটিয়ে তোলে গ্রাম বাংলার অপরূপ রূপটি। শরতের ভোরে বিলের মাঝে ফুটে থাকা সাদা শাপলা ফুলের মত বিকশিত হয়।
মোঃ জাহাঙ্গীর কবির।
১৩.০৯.২০০৪ ইং ; ২০২০
নারায়ণগঞ্জ।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১০ দুপুর ২:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




