আমার এই চিঠি কোনদিনও তোমার হাতে পৌছবেনা। ঘুমিয়ে থাকবে ডাইরীর পাতায়। কোনদিনও জানবেনা আমার ব্যথার ঝর্নাটার কথা। তবুও আমি লিখি। লিখে লিখে সময় কাটাই। দুঃখ থেকে মুক্তি পাবার জন্য ভাবনার জালে আটকে ফেলি নিজেকে। হৃদয়ের না বলা যন্ত্রানাগুলোকে বন্দী করি ডাইরীর পাতায়।
আমি জানি এটা আমার পাগলামী। হবে হয়তো মানসিক রোগী হবার পূর্ব লক্ষন। হয়তো আমার প্রতিব›দ্ধী মনের অ›দ্ধ আবেগ। তবুও লিখি। কেনো লিখি জানো? আমার উত্তরসূরীদের উপহার দিতে চাই ব্যথাভরা করুন একটি উপন্যাস। যে উপন্যাস পড়ে তারা দুঃখের স্বরূপ বুঝবে। জানবে দুঃখের সংজ্ঞা। কিন্তু এখানেও আমি পরাজিত। কারন আমার বুকের ভেতরে ব্যথার ঝর্নাটা যেভাবে বইছে ঠিক সেভাবে তাকে তুলে আনতে পারছিনা। বুক ভাঙ্গার ব্যদনাকে কিসের সাথে তুলনা করবো তা ভেবে পাচ্ছিনা। এর কি কোন উপমা চলে? এর কোন উপমা হয়তো নেই। কারন এই ভাংচুর কখনো চোখে দেখা যায়না। বাহিরে খুবই শান্ত। কিন্তু ভেতরে যে ঝড় বহে তার তুলনায় এই লৌকিক পৃথিবীর সাইক্লোন, টর্নেডো আর হ্যারিকেনও কিছুই নয়।
আমার খুবই কষ্ট। প্রচন্ড কষ্ট। এই কষ্টটা তার উৎপত্তিস্থল থেকে আজ পাহাড়ী ঝর্না হয়ে নদীতে, নদী পেরিয়ে সাগরে এবং সবশেষে সাগর থেকে মহাসাগরে পড়েছে। এর শেষ গন্তব্য কোথায় আমি জানিনা। জানতে ভয় হয়। হয়তো দেখবো এর শেষ পরিনতি মৃত্যু। মৃত্যুকে আমার ভয় নেই। আমিতো প্রতিনিয়তই মৃত্যুকে কামনা করি। কারন এটাইতো সকল দুঃখ আর ব্যদনার একমাত্র মহৌষধ। তবুও আমার ভয়। কারন মৃত্যুর পূর্বে যদি নিজেকে প্রকাশ করতে না পারি পৃথিবীর কাছে। হয়তো আমার এই শেষ ইচ্ছা বিধাতা কখনো পূর্ন করবেনা। কারন আমি নিজেকে পারছিনা প্রকাশ করতে। ব্যক্ত করতে পারছিনা আমার মনের অভিব্যক্তিগুলো। পৃথিবী জানেনা আমার শূন্যতাটা কোথায়। তাইতো কষ্টের একটা প্রচন্ড স্রোত বুকের গভীর থেকে দলা পাকিয়ে উঠে। আমি জানি আমি কোন সাহিত্যিক নই। নই ভাষার জাদুকর। মোঃ খুরশীদ আলম গেয়েছিলেন-
“তোমার মতো যদি শিল্পী হতেম,
ভাষার তুলিতে সব একে যেতেম।”
তার মতো আমিও পারছিনা ভাষার রংতুলি দিয়ে নিজের ছবিটাকে ফুটিয়ে তুলতে।
এমন নিঠুর কেনো এই পৃথিবীটা? এত কষ্টের কেনো বেচে থাকাটা? এত দুরূহ কেনো জীবন থেকে পালানোটা? বেচে থাকার সংগ্রামে হারতে পারছিনা তাই হয়তো বেচে আছি। কিন্তু সেই বাচাটাও স্টার মার্ক নিয়ে বাচা নয়। তৃতীয় বিভাগে অর্থাৎ ধুকেধুকে বাচা। আমিতো এভাবে বাচতে চাইনা। চাই সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক একটা জীবন।
আমার কোন শূন্যতাটার কথা তোমাকে বলবো? এই বিশাল মহাবিশ্বে এক একটা গ্রহ আর উপগ্রহের চারিপাশে যেমন বিশাল শূন্যতা; আমার জীবনটাও তেমনি শূন্য, রিক্ত। সব স্বপ্ন, আশা, কল্পনা আর সাধগুলো ঝরে গেছে জীবন বৃক্ষ থেকে। অবহেলা, বঞ্চনা আর পরাজয় এখন প্রতি পদক্ষেপে। আমার প্রতিটি দিন এখন এক একটি যুগ।
আমাকে যদি পরাজয় শিরোনামে কোন রচনা লিখতে বলা হয়, তবে ঘন্টার পর ঘন্টা, দিনের পর দিন লিখতে পারবো। কিন্তু আমি জানিনা জয়ের স্বাধ কেমন। কষ্টের ফল মিষ্টি হয়। কিন্তু আমার কষ্টগুলো শুধু দুঃখই বয়ে আনলো। যে দুঃখের কোন সীমানা নেই। দিগন্তে যেখানে আকাশ পৃথিবীকে আলিঙ্গন করেছে; সেখানে দেখতে পাই রাঙা আলোর হাতছানি। কিন্তু সে আলো কখনো উজ্জল হয়ে কাছে আসেনা। বরং সাগরে ডুবন্ত সূর্যের মতো ক্রমেই লালিমা হারিয়ে মিশে যায় অ›দ্ধকারের অতল গহবরে।
বহুদিন পর আজ গোধূলির কমলা আলোয় অবগাহন করলাম। দূরে পাহাড়ের মাথায় ঝুলে আছে আলোর পিন্ডটা। কিছুক্ষনের মধ্যেই হারিয়ে যাবে আমাকে অ›দ্ধকারে ডুবিয়ে দিয়ে। একা আমি খোলা বাতায়নে বসে প্রতীক্ষায় থাকবো। ভোরের সূর্য রশ্মিকে গায়ে মাখার জন্য। আমার সে প্রতীক্ষা হয়তো কখনো শেষ হবেনা। তবুও প্রতীক্ষায় থাকবো হাজার জনম।
মোঃ জাহাঙ্গীর কবির।
০৭১৯১৩ জুন’১৯৯৮
আভা, সৌদি আরব।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০১০ দুপুর ১২:২১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




