মানুষ প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে তার কাজকে সহজ করার জন্যে। আবার অনেকেই আছেন সেই প্রযুক্তিকে ব্যবহার করতে ভয় পাই। বিশেষ করে আমাদের দেশের মতো লোকজনের মধ্যে এরকম মানুষ হয়তো বেশি থাকে। কিন্তূ কেন? চিন্তা করলে দেখা যায়, এটা তারা ইচ্ছা করে করছে তা নয়। মুলত ঐ প্রযুক্তি সম্পর্কে তার স্বচ্ছ ধারণা না থাকার কারনেই এমনটি হয়। যেমন আমার এক বন্ধুর বাবা শুরুতে মোবাইলে ফোন আসলে ভয় পেয়ে যেতেন এমনকি তিনি ঐ মোবাইলের আশে পাশে ও যেতে চাইতেন না। কিন্তূ সমাজের শিক্ষিত ব্যাক্তিরা যারা কিনা প্রযুক্তিকে আরো একধাপ এগিয়ে নিতে চাই তারা যদি প্রযুক্তি ব্যবহার না করে উল্টো আর একজনকে এই প্রযুক্তি ব্যবহারে বাধ সাধে তাহলে কেমন দেখায়...............চলুন জানা যাক তেমনই এক ঘটনা।
তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সদ্য জয়েন করেছি। বিভাগের ২ বছরের সিনিয়র ভাইকে (কলিগ) মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস লেকচার দিতে দেখতাম। এবং ঐ কাজে তিনি তার ল্যাপটপ ব্যবহার করতেন। মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরের মাধ্যমে ক্লাস লেকচার এর অনেক অনেক সুবিধার কথা ভেবে আমি ও ঐ একই কাজ শুরু করলাম। যদিও আমি ল্যাপটপের বদলে (আমার ল্যাপটপ ছিল না বলে) বিভাগের একটি ডেস্কটপ-ই ব্যবহার করতাম। কিন্তূ ডেস্কটপ অন্য রুম থেকে নিয়ে এসে ক্লাস শেষে আবার জায়গা মত রেখে আসা কিছুটা ঝামেলার ও বটে। বিভাগে বেশ কয়েকজন পিওন টাইপের আছে, তারা সিনিয়রদের বা তথাকথিত জাতির বিবেকদের জুতা মুছে দিলেও আমাদের ঐ কজটুকু তাদের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে না বা পড়ানো হয় না।
যাই হোক- আমি, ঐ সিনিয়র ভাইয়া কলিগ এবং আমাদের একজন সিনিয়র অধ্যাপক একদিন শিক্ষক লাউন্জে বসে কথা প্রসংগে বিভাগে নতুন মডেলের একাধিক মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর কেনার বেপারে আলোচনা করলাম (ঐ সময় আমাদের বিভাগে একটি-ই মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ছিল, যা সেমিনারে বা থিসিস প্রেজেন্টশনে ব্যবহার হতো)। এবং সিদ্ধান্ত নিলাম এই বেপারটি আমরা বিভাগীয় সভাতে উত্থাপন করবো।
সামনে এরকম একটি বিভাগীয় সভা এসে ও গেল। আমরা প্রস্তূত আমাদের প্রস্তাব উপস্হাপনের জন্যে। এমন সময় অন্য একজন সিনিয়র অধ্যাপক ফ্লোর চাইলেন এবং যথারীতি ফ্লোর দেওয়া হলো। তিনি আমাদের কে অবাক করে দিয়ে বললেন বিভাগে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর দিয়ে ক্লাস নেওয়া হচ্ছে তা বন্ধ করতে হবে। প্রশ্ন এলো কেন? উত্তর হলো, এটা কোন ক্লাস নয় এটা সিনেমা দেখানো। ছাত্র-ছাত্রীরা না বুঝে সিনেমা দেখতে থাকে। আমরা বলেছিলাম ছাত্র-ছাত্রীরা না বুঝলে তো শিক্ষককে প্রশ্ন করতে পারে, কিন্তূ কোন কিছুতেই তাদেরকে বুঝানো গেল না। একজন বলে বসলেন তোমরা ভালো পড়াতে পার না, বললাম ভালো পড়ানোর সাথে মাল্টিমিডিয়ার কি রিলেশন, কে শোনে কার কথা। তারপর বেশকিছু তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল। কিন্তূ বেশিরভাগ সিনিয়র শিক্ষক মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ব্যবহারের বিরুদ্ধে অবস্হান নিল। অগত্য আমরা বলেছিলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালের নিয়ম-কানুনে কোথাও লেখা নেই যে চক দিয়ে ক্লাস লেকচার দিতে হবে, তাই আমাদের ইচ্ছা আমরা মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করবো নাকি চক।
বুঝতেই পারছেন আমাদের অবস্হা হয়েছিল "ভিক্ষা চাইনে কুকুর ঠেকাও" এর মত। আমদের মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর আর কেনা হলো না। তবে বিভাগে যতদিন ছিলাম মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর ই ব্যবহার করতাম। বিদেশে এসেছি উচ্চ শিক্ষার জন্যে, এ আবার কোথায় এসে পড়লাম এরা দেখি ক্লাসে মাল্টিমিডিয়া এবং কত উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে। ঐ সিনিয়র ভাইয়া আছেন অন্য দেশে সেখানেও নাকি তিনি দেখছেন ক্লাসে মাল্টিমিডিয়া ব্যবহার করতে
বি.দ্র.-এই লেখা বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্হিতিকে তুলে ধরছে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই এপ্রিল, ২০০৯ দুপুর ১:০৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




