১৬-এপ্রিল, ২০০৯ দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদকীয় কলামে উচ্চশিক্ষার জন্যে বিদেশে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ফিরে না আসা টাকে চরম গাফলতি ও অসততা বলে দাবি করা হয়েছে। এবং এর জন্যে নাকি কঠোর পদক্ষেপের কথা চিন্তা করতে হবে। প্রথম আলোর এই দাবি যে একবারেই অযোক্তিক তা এই লেখার মাধ্যমে তুলে ধরার চেষ্টা করবো।
আমরা জানি কিভাবে আমাদের দেশের ছেলে-মেয়েরা বাইরে পড়তে যায়। সংগত কারণেই যারা বিভিন্ন দেশে স্কলারশিপ নিয়ে পড়তে যায় তাদেরকে নিয়েই লিখব। একটি স্কলারশিপ যোগাড় করা যে কি কঠিন তা যারা জানেন তাদেরকে বুঝানোর অবকাশ নেই। আমাদের দেশ থেকে যে যে স্কলারশিপ (ভিন্ন দেশের সরকারি স্কলারশিপ) নিয়ে পড়তে যাওয়া হচ্ছে তাদের মধ্যে উদাহরণ স্বরুপ রয়েছে জাপানে মনবুকাগাকুশো, ইউকে এবং কানাডায় কমনওয়েলথ, অষ্ট্রলিয়াতে আইপিআরএস, জার্মানে ড্যাড, কোরিয়াতে আইআইটিএ এবং এরুপ। আবার বিভিন্ন দেশে আরএ শিপ, টিএ শিপ নিয়ে ও অনেক অনেক ছেলে-মেয়েরা বাইরে পড়তে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও উল্লেখিত স্কলারশিপের মাধ্যমেই বাইরে পড়তে যায়। এবং এই স্কলারশিপগুলো যোগাড় করতে অন্যান্যদের মত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে আবদেন করে এবং সমস্ত প্রক্রিয়া অনুসরনের পর তার হয়ত স্কলারশিপ পান। অর্থাৎ স্কলারশিপগুলো পাওয়ার জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অতিরিক্ত কোন সুযোগ পান না। এবং বাংলাদেশ সরকার এই জন্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরদের জন্যে কোন অতিরিক্ত ব্যয় ও বহন করে না।
ভারত, পাকিস্থান, ইরান, তুরস্ক, মালয়েশিয়া এরকম বিভিন্ন দেশ নিজেরা ফান্ডিং করে পৃথিবির সেরা সেরা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন স্কলারশিপ চালু রেখেছে যেখানে শুধুমাত্র ঐ সব দেশের ছাত্ররাই আবেদন করতে পারবে। বাংলাদেশ সরকার এরকম কোন ফান্ডিং কোথাও করে রেখেছে বলে আমার জানা নাই। বরং আমলারা সরকারি সুযোগ-সুবিধায় বাইরে পড়তে যান কিন্ত অন্যরা এই সুবিধা পাই না বললেই চলে।
প্রথম আলো পত্রিকার মতে "পাবলিক বিশ্ববিদ্যালের ঐসব শিক্ষকদের তৈরি করতে অনেক সময় ও টাকা লেগেছে"। আসলে কি তাই? বাংলাদেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটি ছাত্র পাশ করাতে সরকারের অনেক টাকা খরচ হয়। এটা সবার জন্য প্রযোজ্য, তাহলে বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষকদের কথা আলাদা ভাবে বলতে হবে কেন? এরকম তো না যে, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাশ করার পর তাদেরকে শিক্ষক হিসাবে গড়ে তোলার জন্য আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে এবং টাকা খরচ করা হয়েছে।
সাধারণত, শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করার কিছুদিনের মধ্যেই উচ্চ শিক্ষার জন্যে বিদেশ পাড়ি জমান। এবং যাওয়ার সময় তার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংগে একটি চুক্তি করেন। চুক্তিটি সংক্ষেপে এরকম: লেখাপড়া শেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করতে হবে এবং যতদিন বাইরে ছিল কমপক্ষে ততদিন সার্ভিস দিতে হবে। তা না হলে বাইরে থাকাকালীন যে বেতনভাতা নিয়েছে তা ফেরত দিতে হবে। এখন নিয়ম মেনে কেই যদি বাইরে থেকে আর ফেরত না আসে, তাহলে সে টা কি অন্যায়? মোটেও না। প্রথম আলো পত্রিকার মতে "এটা অন্যায় এবং এতে করে নাকি বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষকরা দ্বায়িত্ব অস্বীকার করছেন তাই আরো কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে"। কেন বাইরে থেকে কি দেশ সেবা করা যায় না? একজন শিক্ষক যখন বাইরে কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতার সুযোগ পান তিনি কিন্ত অনেক ছাত্রকে ঐ বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপ পাওয়াতে সহায়তা করতে পারেন।
এখন যদি চুক্তিটি বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষকদের জন্যে আরো কঠিন করে তোলা হয় তাহলে সেটা কি রকম হতে পারে। ধরা যাক, বলা হলো: বাইরে না থেকে দেশে ফেরৎ আসতে হবে। এটা কি কোন চুক্তি হতে পারে? এটা হবে মানবাধিকার লংঘন। চাকুরিতদের জন্য পৃথিবিতে এরকম চুক্তি আছে বলে মনে হয় না।
বীরভোগ্য বসুন্ধরা। তাই ভালো সুযোগ পেলে কেউই হাত ছাড়া করতে চায় না। নিয়ম মেনে যারা বাইরে থেকে যাচ্ছেন তাদেরকে নিয়ে অনাকারণে মাথা গরম না করে কিভাবে এই প্রক্রিয়া থামানো যায় তা নিয়ে ভাবতে হবে। প্রয়োজনে ঢালাওভাবে শিক্ষকদের আর্থিক সুবিধা না দিলেও যোগ্যতা এবং পারফর্মান্স অনুযায়ী আর্থিক সুবিধা দিতে হবে। যারা বাইরে থেকে যেতে চাইছেন তাদেরকে অল্টারনেট প্রস্তাব দেওয়া যেতে পারে। মেধাবীদের কে ধরে রাখার বিভিন্ন উপায় খুজে বের করতে হবে। শুধু কঠোর চুক্তি করে সেটা সম্ভব না।
যারা নিয়ম না মেনে বাইরে থেকে যাচ্ছেন তাদের বিরুধ্যে যে কোন ধরনের ব্যবস্থা নিন তাতে কোন সমষ্যা দেখি না কিন্ত যারা নিয়ম মেনে যারা চলছেন তারা কিভাবে অন্যায় করছেন সেটা বোধগম্য নয়। তাই যদি হয় তাহলে বাংলাদেশ থেকে উচ্চ শিক্ষা নিয়েছেন এমন কেই ই তো বাইরে থাকতে পারেন না, কারণ তাদেরকে শিক্ষিত করতে সরকারের অনেক টাকা খরচ হয়েছে। শুধু বিশ্ববিদ্যালের শিক্ষকদের জন্যে তা প্রযোজ্য হবে কেন?
প্রথম আলোর লেখা: Click This Link

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




