
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন একদিন বলেছিলেন কানাডায় যারা বাড়ি করেছেন তাদের মধ্যে ব্যবসায়ী ও রাজনীতিকদের চেয়ে আমলার সংখ্যা বেশি। কথাটি শুনতে মন্দ লাগলেও ইহা দিনের আলোর মতোই সত্য। কিন্তু আমলাদের লাগাম পরাবে কে? দায়িত্ব কার? সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ১৯৭৯-এর ১১, ১২ ও ১৩ বিধিতে পরিস্কারভাবে বলা আছে সরকারি কর্মচারীদের সম্পদ বিবরণী দাখিলের নির্দেশনা। কিন্তু বিড়ালের গলায় ঘন্টা বাধিবে কে?
ভূমি মন্ত্রনালয় ২০১৯ সালে ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণির কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব জমা নিয়েছিল কিন্তু তারা ১ম ও ২য় শ্রেণির কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব নেননি! অর্থাৎ সম্পদের হিসাব জমা না দিতে আমলারা সব একাট্টা। পত্রিকা মারফত জানা যায় ২০২১ সালের জুনে এবং ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে পরে আবার মার্চ মাসে আবারো সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব চাওয়া হয়। যদিও সরকারি কর্মচারীদের প্রতি ৫ বছর পর পর সম্পদের হিসাব দেওয়ার বাধ্যবাধকতা আছে। সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের সম্পদের হিসাব দিতে এতো গড়িমসি কেন? কারণ একটাই তাদের আয়ের সংগে সম্পদের কোন সামঞ্জস্যতা নেই।
বিবিএস এর তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশে স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে কোটিপতি ছিল ৫ জন, ১৯৭৫ সালে ৪৭ জন, ১৯৮০ সালে ৯৮ জন, ১৯৯০ সালে ৯৪৩ জন, ১৯৯৬ সালে ২৫৯৪ জন, ২০০১ সালে ৫১৬২ জন, ২০০৬ সালে ৮৮৮৭ জন, ২০০৮ সালে ১৯১৬৩ জন, ২০২০ সালে ৯৩৮৯০ জন। ২০২১ সালের শেষে এ সংখ্যা হয়েছে ১০১৯৭৬ জন। মজার বিষয় হচ্ছে করোনা মহামারীর মধ্যে যেখানে ব্যবসা বাণিজ্য আমাদানি রপ্তানী সবকিছুই স্থবির হয়েছিল অথচ সে সময় কোটিপতি বেড়েছে ৮০৮৬ জন। করোনার সময় তারা এতো টাকা উপার্জন করলো কি করে?
আমরা হয়তো সুযোগ না পেয়ে সৎ হয়েছি কিন্তু যাদের সুয়োগ আছে তাদের লাগাম টানার সময় এখনই। যেমনভাবে সরকার সরকারী কর্মকর্তা কর্মচারীদের অযাচিত বিদেশ ভ্রমনের লাগাম টেনে ধরেছেন ঠিক একই ভাবে তাদের আয়-ব্যয়ের তথা সম্পদের হিসাবের চুলচেরা তথ্য না নিলে যেমন ভাবে বাড়বে কানাড়ার বেগমপাড়ায় বাঙালীদের আনাগোনা ঠিক তেমনিভাবে বাড়বে কোটিপতির সংখ্যা।
উল্লেখিত বিষয়ের আলোকে মনে হচ্ছে ব্যবসায়ী, রাজনীতিক ও আমলারা একটি বিষয়ে একজোট তা হলো কেউই তাদের সম্পদের হিসাব দিতে রাজি না। সরকারের উচিত হবে বিদেশে লক্ষ হাজার কোটি টাকা পাচার বন্ধে সরকারী বেসরকারী কর্মকর্তা কর্মচারী, ব্যবসায়ী ও রাজনীতিক সবার আয়-ব্যয়ের তথ্য তথা তাদের সম্পদ বিবরনী দাখিলে বাধ্যকরা ও অসামঞ্জস্যতা দেখলে অবস্থা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহন করা নচেৎ সততা পিছন দিয়ে পালাবে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে মে, ২০২২ দুপুর ১২:১৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



