somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কদবেলের পুষ্টিগুন।

২৩ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১:৪১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


অঞ্চলভেদে কয়েতবেল নামেও পরিচিত। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই কদবেলগাছ চোখে পড়ে। গাজীপুর, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, সিলেট, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে বেশি জন্মে। বেশ জনপ্রিয় ফল। ফল পাকার মৌসুমে শহরের ফল দোকান বা অলিগলির মোড়ে কদবেলের পসরা দেখা যায়। ইংরেজি নাম Wood apple, পরিবার Rutaceae, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Feronia Limonia। জন্মস্থান দক্ষিণ ভারত।

কদবেল মাঝারি আকারের পত্রঝরা বৃক্ষ। উচ্চতায় ১০ থেকে ১২ মিটার হয়ে থাকে। শাখা-প্রশাখা ছায়াঘন এবং ছড়ানো। গাছের বাকল সবুজাভ থেকে বাদামি রঙের, কাঠ বেশ শক্ত। এর কাঠ দিয়ে কৃষি উপকরণ তৈরি, ঘরবাড়ি নির্মাণ ও দৈনন্দিন অন্যান্য কাজে ব্যবহার হয়। গাছের বৃদ্ধি ধীরগতিসম্পন্ন। প্রায় সব ধরনের মাটিতে কদবেল জন্মে, তবে রৌদ্রোজ্জ্বল সুনিষ্কাশিত দো-আঁশ থেকে বেলে দো-আঁশ মাটিতে ভালো জন্মে। গাছের পাতা আকারে অনেকটাই কামিনী ফুলের পাতার মতো। গোলাকার, ছোট, রং গাঢ় সবুজ। গাছের শাখা-প্রশাখায় কাঁটা থাকে। ফুল ফোটার মৌসুম মার্চ মাস। মঞ্জরিতে সবুজাভ-সাদা রঙের ফুল ধরে, ফুলে থাকে ৫-৬টি পাপড়ি। শাখায় একক বা গুচ্ছাকারে ফল ধরে। ফলের বোঁটা বেশ মজবুত। ফল আকারে গোলাকার, চামড়া খসখসে, স্বাদে টক-মিষ্টি, রং সবুজাভ থেকে বাদামি।


বেলের তুলনায় আকারে কদবেল ছোট। তবে বেলের মতো কদবেলের ওপরের অংশেও শক্ত আবরণ থাকে। পাকা ফলের ভেতরের শাঁস আঠালো, নরম ও রং বাদামি। লবণ-মরিচে মাখা কদবেলের স্বাদ অতুলনীয়। ফলে বীজ হয়, বীজ আকারে ছোট, রং সাদা। ফলের ওজন ২৫০ গ্রাম থেকে ৩৫০ গ্রাম হয়ে থাকে। ফল পাকার মৌসুম অক্টোবর-নভেম্বর মাস। ফলের বীজ, শিকড় ও ক্লেফট গ্রাফটিং পদ্ধতির মাধ্যমে চারা তৈরি করা যায়। উপযুক্ত পরিবেশে চারা রোপণের ৫-৬ বছরের মাঝে গাছে ফল ধরে। তবে কলম চারার গাছে আরো কম সময়ে ফলন পাওয়া যায় এবং কলম চারা বড় টবেও চাষ করা যায়। দেশীয় কদবেলের পাশাপাশি উচ্চ ফলনশীল কদবেলের জাত রয়েছে যা বারি কদবেল-১, বারি কদবেল-২ ও বাউ কদবেল-১ নামে পরিচিত। এ জাতগুলি সর্বত্র চাষ উপযোগী, কম সময়ে ফলন পাওয়া যায়, নিয়মিত ফল ধরে, খরা সহনশীল এবং ফলের আকার তুলনামূলক বড়। উল্লেখ্য যে, বারি কদবেল-২ জাতটি অমৌসুমে উত্পাদিত বারোমাসি কদবেলের জাত। এছাড়া থাই কদবেলের জাতও সম্প্রসারিত হচ্ছে। সাম্প্রতিক সময়ে শুরু হয়েছে কদবেলের বাণিজ্যিক চাষাবাদ।

কদবেলে রয়েছে পুষ্টি। কদবেলের পাতা, ফল ও বাকলে ভেষজগুণ বিদ্যমান। কদবেল কাঁচা ও পাকা দু’ভাবেই খাওয়া যায়। আচার ও চাটনি তৈরি হয়। পুষ্টিবিদদের মতে পেয়ারা, আমলকী, আনারস, লিচু ও কাঁঠালের চেয়ে কদবেল বেশি উপকারী। কদবেলে ক্যালসিয়াম, আমিষ, শর্করা, পানি, খনিজ লবণ, লৌহ, ভিটামিন-বি১, বি২ ও প্রচুর ভিটামিন-সি রয়েছে। পাতার রস পেট ফাঁপা ও হজমের সমস্যা দূর করে। ফল যকৃত ও হৃদরোগের কাজ করে, অজীর্ণ দূর করে, দাঁতের মাড়ি মজবুত করে, ব্রণ ও মেছতা দূর করে, রক্ত আমাশয় ও পেট ব্যথা নিরাময় করে, শরীরের ক্ষত ও ঘা নিরাময় করে, কিডনি ভালো রাখে, পিত্ত পাথর সারায়, সর্দি, কাশি ও হাঁপানি দূর করে, যক্ষ্মা, ক্যানসার ও পাইলস প্রতিরোধক, মূত্রবর্ধক, বলকারক ও স্নায়ুশক্তি বৃদ্ধিকারক, উদ্দীপক হিসেবে কাজ করে এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। কিডনি রোগীর ক্ষেত্রে কদবেল ডাক্তারের পরামর্শে খেতে হবে।







মূল লেখা : নূর আলম গন্ধী
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে অক্টোবর, ২০২২ দুপুর ১২:১৬
১৫টি মন্তব্য ১৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদির হত্যাচেষ্টা: কার রাজনৈতিক ফায়দা সবচেয়ে বেশি?

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১৮


হাদির হত্যাচেষ্টা আমাদের সাম্প্রতিক রাজনীতিতে একটি অশনি সংকেত। জুলাই ২০২৪ আন্দোলন-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশের দ্বিধাবিভক্ত সমাজে যখন নানামুখী চক্রান্ত এবং রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক অন্তর্কলহে শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও আয়-উন্নতির গুরুত্বপূর্ন প্রশ্নগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

Testimony of Sixty- By Edward Kennedy বাংলাদেশের রক্তাক্ত সত্যের এক আন্তর্জাতিক স্বীকারোক্তি

লিখেছেন কিরকুট, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩




১৯৭১ বাংলাদেশের ইতিহাসে এক গভীর বৈপরীত্যের বছর। এটি যেমন ছিল অন্ধকার ও রক্তাক্ত, তেমনি ছিল সত্যের প্রতি অবিচল এক সময়কাল। এই বছরের গণহত্যা, শরণার্থী স্রোত ও মানবিক বিপর্যয়ের বিবরণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি আর এমন কে

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩


যখন আমি থাকব না কী হবে আর?
থামবে মুহূর্তকাল কিছু দুনিয়ার?
আলো-বাতাস থাকবে এখন যেমন
তুষ্ট করছে গৌরবে সকলের মন।
নদী বয়ে যাবে চিরদিনের মতন,
জোয়ার-ভাটা চলবে সময় যখন।
দিনে সূর্য, আর রাতের আকাশে চাঁদ-
জোছনা ভোলাবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

২০২৪ সালের জুলাই মাস থেকে যেই হত্যাকান্ড শুরু হয়েছে, ইহা কয়েক বছর চলবে।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭



সামুর সামনের পাতায় এখন মহামতি ব্লগার শ্রাবনধারার ১ খানা পোষ্ট ঝুলছে; উহাতে তিনি "জুলাই বেপ্লবের" ১ জল্লাদ বেপ্লবীকে কে বা কাহারা গুলি করতে পারে, সেটার উপর উনার অনুসন্ধানী... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজাকার হিসাবেই গর্ববোধ করবেন মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৩ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:১৮


একজন রাজাকার চিরকাল রাজাকার কিন্তু একবার মুক্তিযোদ্ধা আজীবন মুক্তিযোদ্ধা নয় - হুমায়ুন আজাদের ভবিষ্যৎ বাণী সত্যি হতে চলেছে। বিএনপি থেকে ৫ বার বহিস্কৃত নেতা মেজর আখতারুজ্জামান। আপাদমস্তক টাউট বাটপার একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×