somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আস্তিকতা বনাম নাস্তিকতা: একটি বিশ্লেষণ - ২

১০ ই মে, ২০০৯ সকাল ১০:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রথম পর্ব

বার্ডেন-অব-প্রুফ

- বিশ্বাস নামক ঝুটকে এড়িয়ে যাওয়ার জন্য অনেকেই একটি কৌশলের আশ্রয় নেয়া শুরু করেছেন। তাদের ভাষায় সেটা হচ্ছে, “ওয়েল, আমরা বলি না যে আমরা গডের অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না, বা না-গডে বিশ্বাস করি; আস্তিকরা যা বলে তার সামনে আমরা শুধু একটা ‘না’ সূচক উপসর্গ বসিয়ে দেই।” বিশ্বাস নামক ঝুটকে এড়িয়ে যাওয়ার এটি একটি মোক্ষম কৌশল। যেন স্রষ্টা নিয়ে নাস্তিকদের নিজস্ব কোন চিন্তা-ভাবনাই নেই। তাদের চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণরূপে আস্তিকদের উপর নির্ভরশীল। তারা শুধু একটি ‘না’ হাতে করে নিয়ে বসে আছে। আস্তিকরা কিছু বলার সাথে সাথে তারা সেই ‘না’-কে তাদের (আস্তিকদের) কথার সম্মুখভাগে ছুঁড়ে মারবে! অর্থাৎ আস্তিকরা যদি বলে ‘ক’, নাস্তিকরা সাথে সাথে বলবে ‘না-ক’! আস্তিকরা যদি বলে ‘খাবো’, নাস্তিকরা সাথে সাথে বলবে ‘না-খাবো’! আমার এক নাস্তিক বন্ধুকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, আচ্ছা এই পৃথিবীতে যদি কোনই আস্তিক না থাকতো সেক্ষেত্রে তুই স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করতিস কিনা। বন্ধু ‘হ্যাঁ’ বা ‘না’ কোন জবাব দিতে পারেনি!

- “স্রষ্টার অস্তিত্বে বিশ্বাস করি না, বা আস্তিকদের যুক্তি অপর্যাপ্ত” বলে কেউ কিন্তু চুপ-চাপ থাকতে পারে না। বরঞ্চ বিভিন্নভাবে তাদের না-বিশ্বাসকে যুক্তি দিয়ে সমর্থন করারই চেষ্টা করা হয়। প্রকৃতপক্ষে স্রষ্টার অনস্তিত্বের স্বপক্ষে কেউ যুক্তি উপস্থাপন করার সাথে সাথে তার কাছে সেটা একটা ধনাত্মক বিশ্বাস হয়ে যায়। ফলে বার্ডেন-অব-প্রুফ তার ঘাড়েও বর্তায়।

- প্রত্যেকেই একটি নিদ্রিষ্ট বয়স পর্যন্ত আস্তিক থাকার পর নাস্তিক হয়। ফলে বার্ডেন-অব-প্রুফ স্বাভাবিকভাবেই নাস্তিকদের ঘাড়ে বর্তাবে, যেহেতু তারাই বিশ্বাস পরিবর্তন করেছেন। ধরা যাক, একটি কোম্পানিতে একশ’ জন লোক একসাথে যোগ দিলেন। দশ বছর চাকরি করার পর পাঁচ জন অব্যাহতি দিলেন। যে পাঁচ জন অব্যাহতি দিলেন তাদেরকেই কিন্তু অব্যাহতির কারণ দর্শাতে হবে। এখন এই পাঁচ জন লোক যদি উল্টোদিকে বাকি পঁচানব্বই জনকে "কেন তারা চাকরি করছেন" তার কারণ দর্শাতে বলে তাহলে হাস্যকর শুনাবে নিশ্চয়। পাঁচ জন লোক কী কারণে বিশ্বাস পরিবর্তন করলেন, সেটা তাদেরকেই ব্যাখ্যা করতে হবে। তারা যদি ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হয় সেক্ষেত্রে তাদের সামনে কিছু পথ খোলা আছে: আস্তিকদেরকে বিজয়ী হিসেবে মেনে নিতে হবে; অথবা স্রষ্টার অস্তিত্ব মেনে নিতে হবে; অথবা না-স্রষ্টায় বিশ্বাসকে মেনে নিতে হবে। অন্যদিকে আস্তিকরা যেহেতু জন্মগতভাবে স্রষ্টায় বিশ্বাস করে আসছে সেহেতু তাদেরকে স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করার দরকার নেই। সুতরাং আস্তিকরা স্রষ্টায় বিশ্বাস অব্যাহত রেখে নাস্তিকদের কোর্টে বল ছুঁড়ে দিয়ে নাকে তেল দিয়ে ঘুমাতে পারে, যে সুযোগ কিন্তু নাস্তিকদের নেই। অর্থাৎ নাস্তিকদেরকেই সবসময় চাপের মুখে থাকতে হবে।

- স্রষ্টার অস্তিত্ব যে পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয় – সেটা যুক্তিবাদী মানুষ মাত্রই বোঝার কথা। নাস্তিকরা যদি এ'রকম কোন প্রমাণের জন্য অপেক্ষা করে থাকেন তাহলে তারা নিঃসন্দেহে বোকার স্বর্গে বাস করছেন। তারা যে কার জন্য অপেক্ষা করছেন কে জানে! কে তাদেরকে স্রষ্টার অস্তিত্ব পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করে দেখাবে! রোবট কীভাবে মানুষের অস্তিত্ব প্রমাণ করবে! তার মানে কি মানুষ বলে কিছু নাই!

- বেশীরভাগ নাস্তিক দুর্বল চিত্তের কিছু আস্তিকদের সাথে বিতর্কে প্রচলিত কিছু বিশ্বাস ও ধর্মকে টেনে এনে তাদেরকে ধরাশায়ী করার চেষ্টা করেন। কিন্তু দুর্বল চিত্তের কিছু আস্তিককে বিতর্কে হারিয়ে দিলেই স্রষ্টা ‘নাই’ হয়ে যায় না! প্রচলিত বিশ্বাস ও আস্তিকদের যুক্তি ছাড়াই নাস্তিকরা কি স্বতন্ত্রভাবে স্রষ্টার অনস্তিত্বের স্বপক্ষে যুক্তি-প্রমাণ দাঁড় করাতে পারবেন? নাস্তিকদের আরেকটি অজ্ঞতা হচ্ছে স্রষ্টার প্রসঙ্গ উঠলেই তারা ইতিহাস থেকে বিভিন্ন গড ও দেব-দেবীর নাম টেনে নিয়ে এসে পানি ঘোলা করার চেষ্টা করেন।

- কেউ কেউ আবার সমতল ও ভূ-কেন্দ্রিক পৃথিবীর উদাহরণ নিয়ে এসে বলেন, “পৃথিবীর তাবৎ মানুষ একটা সময় পর্যন্ত সমতল পৃথিবী ও ভূ-কেন্দ্রিকতাকে বিশ্বাস করতো। কিন্তু পরবর্তীতে কিছু বিজ্ঞানী এসে তাদের সেই বিশ্বাসকে ভুল প্রমাণ করেছেন।” এ'রকম একটি তুলনাকে কীসের সাথে কীসের তুলনা বলা যাবে কে জানে! যাহোক, তার মানে তারা স্রষ্টাকেও বিজ্ঞানের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নিয়েছেন। তা-ই যদি হয়, তাহলে তাদের ঘাড়েই কিন্তু স্রষ্টার অনস্তিত্ব প্রমাণ করার দায়িত্ব থেকে যাচ্ছে। দেখা যাক, তারা কতদূর এগোতে সক্ষম হয়। অধিকন্তু, তাদের এই ‘যুক্তি’ দিয়েই কিন্তু তাদের যুক্তিকে খণ্ডন করা সম্ভব। যেমন তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী এই মহাবিশ্বের কোন স্রষ্টা নাই। কিন্তু বিজ্ঞান তো আজ বাদে কাল স্রষ্টার অস্তিত্ব প্রমাণ করতেও পারে!

- স্রষ্টায় বিশ্বাস যেহেতু আস্তিকদের তত্ত্ব সেহেতু নাস্তিকরা যদি এই তত্ত্বের উপর আস্থা রাখতে না পারে সেক্ষেত্রে এই বিতর্কের কোনই শেষ নেই। ফলে আস্তিকরাই কিন্তু চূড়ান্ত বিজয়ী হিসেবে থেকে যাবে। অকাট্য প্রমাণ ছাড়া মানুষ কোন্ দুঃখে এ'রকম একটি তত্ত্বকে পরিত্যাগ করবে? যুক্তিবাদী মানুষ জেনে-শুনে কেনই বা এতবড় ঝুঁকি নিতে যাবে? নাস্তিকরা কি অধিকতর ভাল কোন তত্ত্ব অফার করতে পেরেছেন? স্রষ্টায় বিশ্বাসের একমাত্র বিকল্প তত্ত্ব হচ্ছে না-স্রষ্টায় বিশ্বাস। এ ছাড়া আসলে অন্য কোন তত্ত্ব দাঁড় করানোও অসম্ভব। এই সুস্পষ্ট সীমাবদ্ধতা তারা যেন বুঝতেই চায় না। তবে হ্যাঁ, বিকল্প একটি তত্ত্ব আছে, আর সেটি হচ্ছে মানুষকে অমরত্ব অর্জন করতে হবে। নাস্তিকরা কি অমরত্ব অর্জনের ফর্মুলা আবিষ্কার করতে পারবেন? বিতর্কের চূড়ান্ত অবসানকল্পে নাস্তিকদের জন্য এটি একটি ফলসিফিকেশন টেস্ট হতে পারে।

- আস্তিকদের কোন তাড়াহুড়া নেই, যেহেতু তারা সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণ না হওয়া পর্যন্ত স্রষ্টার স্বপক্ষে তাদের নিজস্ব যুক্তিকেই তারা যথেষ্ট বলে মনে করে। নাস্তিকরা তাতে দ্বিমত পোষণ করলে তাদেরকেই বলতে হবে আর কীভাবে প্রমাণ দেখালে তারা স্রষ্টায় বিশ্বাস করবেন এবং কেন। এক্ষেত্রেও কিন্তু বার্ডেন নাস্তিকদের ঘাড়েই থাকছে।
*****

হুমম…আমি তো এতদিন ধরে শুনে এসেছি স্রষ্টায় বিশ্বাস নিছকই একটি অন্ধ বিশ্বাস! তুই আবার এসব কী আবল-তাবল বলছিস? আমি বন্ধুর প্রশ্ন ও যুক্তিগুলোর তেমন কোন পাল্টা যুক্তিসম্মত জবাব দিতে পারিনি। দর্শনশাস্ত্রের কিছু প্রচলিত যুক্তি দিয়েও তাকে বাঁটে আনতে পারলাম না। অর্থাৎ আমার বন্ধু বলতে চাইছে, “তুই যা-ই বলিস না কেন, স্রষ্টায় বিশ্বাস কোন ভাবেই অন্ধ বিশ্বাস হতে পারে না। তার কারণ হচ্ছে এই বিশ্বাস অসংখ্য যুক্তি ও গুরুত্বপূর্ণ তথ্যের উপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে যেগুলোকে কেউ অস্বীকার করতে পারে না। বিশ্বাস মানেই অন্ধ বিশ্বাস নহে। অনেকেই বিষয়টা নিয়ে সেভাবে ভাবে না।”

প্রশ্নোত্তর পর্ব

* বন্ধুকে জিজ্ঞেস করলাম: ইহুদী, খ্রীষ্টান, হিন্দু, বৌদ্ধ, মুসলিম,… শিখদের তো আবার আলাদা-আলাদা স্রষ্টা! তাহলে কোন্ স্রষ্টায় মানুষ বিশ্বাস করবে?

বন্ধু আমার এহেন ‘যৌক্তিক ও বুদ্ধিদীপ্ত’ প্রশ্নে কিছুটা ভ্যাবা-চ্যাকা খেয়ে বলে, “তুই তো দেখি একজন বোকার হদ্দই রয়ে গেছিস! এই মহাবিশ্বের স্রষ্টা থেকে থাকলে কতগুলো থাকা উচিৎ বলে তুই মনে করিস? এই একবিংশ শতাব্দীতে তোর এই ‘যৌক্তিক ও বুদ্ধিদীপ্ত’ প্রশ্ন আসলে কোন প্রশ্নই না। তোর এই প্রশ্ন শুনে গ্রামের লোকজনও হাসিঠাট্টা করে হয়ত বলবে, ‘উনি মনে হয় বান্দর ও মানুষের মাঝামাঝি কোন এক প্রজাতি হবে!’ আমাকে বলেছিস ভাল কথা, অন্য কাউকে যেন মনের ভুলেও এই প্রশ্ন জিজ্ঞেস করিস না। তবে তোর সন্দেহ থাকলে একাধিক স্রষ্টায়ও বিশ্বাস করতে পারিস! সেক্ষেত্রে আবার কিন্তু স্রষ্টার প্রকৃত সংখ্যা এবং তারা একে অপর থেকে স্বতন্ত্র কি-না – এরকম অনেক জটিল প্রশ্ন চলে আসবে! আর তোকেই বা কোন্ স্রষ্টা সৃষ্টি করেছে সেটা কীভাবে জানবি? তাছাড়া গাছ-পালা-জীব-জন্তুর স্রষ্টা? পৃথিবীর স্রষ্টা? চন্দ্রের স্রষ্টা? সূর্যের স্রষ্টা? ন্যাচারাল ল্য’র স্রষ্টা? পানির স্রষ্টা? বাতাসের স্রষ্টা? নাস্তিকদের তো তাহলে কোন স্রষ্টাই থাকবে না, যেহেতু তারা স্রষ্টার অস্তিত্বেই বিশ্বাস করে না! একজন স্রষ্টা সম্পূর্ণ মহাবিশ্বের জন্য যথেষ্ট হলে একাধিক স্রষ্টা কেন দরকার সেটা তোকেই ব্যাখ্যা করতে হবে। তাছাড়া একাধিক স্রষ্টার ক্ষেত্রে কিন্তু ‘দুর্বল স্রষ্টা’ ইসুও চলে আসবে! যারা একাধিক স্রষ্টার সম্ভাবনার কথা বলেন তাদেরকে প্রথমে স্রষ্টার প্রকৃত সংখ্যা নিশ্চিত হওয়ার পরই কেবল ‘স্রষ্টা আছে কি নেই’ বিতর্কে নামা উচিৎ। ধরা যাক, এই মহাবিশ্বের এক হাজার স্রষ্টা ধরে নিয়ে রিচার্ড ডকিন্স যুক্তি দিয়ে বা কম্পুটারের কীবোর্ড ঠেলে সবাইকে ‘নাই’ করে দিলেন। তারপর তিনি কীভাবে নিশ্চিত হবেন যে আর কোন স্রষ্টা নাই! একাধিক স্রষ্টার ক্ষেত্রে নাস্তিকরাই কিন্তু মহা বিপদে পড়ে যাবেন। কারণ তারা কতগুলো স্রষ্টাকে যুক্তি দিয়ে ‘নাই’ করে দেবেন সেটা তারা নিজেরাই জানেন না! ন্যাচার না করুক, ভুলে-ভালে যদি একজন স্রষ্টা বাকি রয়ে যায় তাহলে কিন্তু তাদের খবর আছে! অতএব দেখা যাচ্ছে যে ‘একাধিক স্রষ্টা’ একটি অখণ্ডনযোগ্য এবং সেই সাথে অযৌক্তিক ও অবৈজ্ঞানিক বিশ্বাস।”

* এবার তুই বল, স্রষ্টা-ই যদি সবকিছু সৃষ্টি করে থাকে তাহলে স্রষ্টাকে আবার কে সৃষ্টি করেছে?

বন্ধু বলে, “গুরুত্বপূর্ণ তবে গতানুগতিক একটি প্রশ্ন। এই লেখার উদ্দেশ্য কিন্তু স্রষ্টার সৃষ্টি নিয়ে নয়। তোর মূল প্রশ্ন অনুযায়ী আমি শুধু স্রষ্টায় বিশ্বাস একটি অন্ধ বিশ্বাস কি-না সেটা দেখানোরই চেষ্টা করছি। তবে নাস্তিকরাও কিন্তু আকস্মিক ঘটনায় বিশ্বাস করে। এখন কেউ যদি প্রশ্ন করে আকস্মিক ঘটনাকে কে সৃষ্টি করেছে? – এর উত্তর কি তারা দিতে পারবে? নাস্তিকদের যেখানে ধাপে-ধাপে আকস্মিক ঘটনার উপর আস্থা রাখতে হয় সেখানে এই মহাবিশ্বের নাড়ি-নক্ষত্র ব্যাখ্যার জন্য একমাত্র স্রষ্টায় বিশ্বাস কি বেশী যৌক্তিক নয়? সৃষ্টির কিছু কিছু বিষয়ের বাস্তবসম্মত ব্যাখ্যার জন্য বিজ্ঞান আছে। বিজ্ঞান এখানে সাহায্যকারী একটি টুল হিসেবে কাজ করবে। তাছাড়া ব্যাপারটা এভাবেও চিন্তা করতে পারিস: (ক) স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষ সৃষ্টি হয়ে ন্যাচারাল বস্তু দিয়ে কম্পুটার ও রোবটের মতো কিছু মেশিন বানিয়েছে; (খ) স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্রষ্টা সৃষ্টি হয়ে মানুষ সহ বিলিয়ন বিলিয়ন মেশিন সৃষ্টি করেছে। ‘ক’ যদি সত্য হয় তাহলে ‘খ’ সত্য হবে না কেন? নাস্তিকদের বিশ্বাস অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে মানুষের মতো বুদ্ধিমান প্রাণী সৃষ্টি হয়ে যদি কিছু করতে পারে, তাহলে একই যুক্তি অনুযায়ী স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্রষ্টা সৃষ্টি হয়ে মানুষের চেয়ে অ-নে-ক বেশী কিছু করতে পারবে না কেন? সর্বোপরি, সংজ্ঞা অনুযায়ী স্রষ্টার কোন স্রষ্টা থাকতে পারে না। ইট ডাজ নট মেক সেন্স!”

* আচ্ছা, স্রষ্টায় বিশ্বাসের প্রশ্ন আসছেই বা কেন? মানুষ কি তাহলে আবেগ দিয়ে স্রষ্টায় বিশ্বাস করে?

বন্ধুর উত্তর, “আরে হোঁদল, এতক্ষণ ধরে তাহলে কী বক-বক করলাম? স্রষ্টা ছাড়া বিলিয়ন বিলিয়ন বছর ধরে বিলিয়ন বিলিয়ন প্রক্রিয়া নির্ধারিতভাবে কাজ করার সম্ভাবনা একেবারেই শূন্য। শুধুই বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন প্রকৃতি দিয়ে এই অসাধারণ ও বিস্ময়কর ফিনমিন্যানকে ব্যাখ্যা করা যায় না। এ জন্যই অনেকে স্রষ্টায় বিশ্বাস করে। কেউ কেউ আবেগ দিয়েও বিশ্বাস করতে পারে, যারা এভাবে চিন্তা করে না।”

* আচ্ছা, সবকিছুতেই যদি স্রষ্টার ‘পরম হাতের ছোঁয়া’ থাকে তাহলে বিজ্ঞানীরা আবার কী করবেন? তাঁরা কি বসে বসে ঘোড়ার ঘাস কাটবেন? তাঁদের গবেষণায় বাধার সৃষ্টি হবে না?

বন্ধু কিছুটা রাগান্বিত স্বরে, “এমন আজগুবি কথা কে বলে-রে? বিজ্ঞানীদের কাজ করতে সমস্যা হবে কেন? মনে কর, মাইক্রোসফট কোম্পানি থেকে কিছু ইলেকট্রনিক্স আইটেম বানিয়ে একটি ইউনিভার্সিটির ল্যাবে পাঠানো হলো। এবার ছাত্র-শিক্ষকরা কি এগুলো নিয়ে বসে বসে ঘোড়ার ঘাস কাটবে? তারা যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে পারবে না কেন? যন্ত্রপাতি খুলে তাদের কার্যপ্রণালীই বা জানতে পারবে না কেন? যন্ত্রপাতির উপর মাইক্রোসফট কোম্পানির ‘হাতের ছোঁয়া’ আছে বলে কোন কাজ কি বন্ধ থাকবে? এটা কারো কারো যুক্তির সীমাবদ্ধতা অথবা স্রষ্টাকে এড়ানোর একটি ছুতাও হতে পারে। তবে গ্যালিলিও, নিউটন, লুই পাস্তুর, ও আব্দুস সালাম প্রমুখদের কিন্তু কোন সমস্যা হয়নি। কেউ কেউ অযাচিতভাবে বিজ্ঞান বিষয়ক গবেষণার মধ্যে স্রষ্টাকে টেনে এনে বোকার মতো কথাবার্তা বলেন।”

* আচ্ছা, স্রষ্টা থেকে থাকলে সুনামি, ভূমিকম্প, রোগ-আপদ ইত্যাদিতে যে হাজার-হাজার মানুষ মারা যাচ্ছে তার ব্যাখ্যা কী?

বন্ধুর জবাব, “ওয়েল, প্রথমত, এর কোন সদুত্তর আমার জানা নেই। দ্বিতীয়ত, তুই-আমি এ বিষয়ে প্রশ্ন করার কে? আমরাই বা তাদের রক্ষা করতে পারছি না কেন? তোর-আমারই বা নিশ্চয়তা কোথায়! যে কোন মুহূর্তে তুই-আমিও তো তাদের মতো ‘দূর্ভাগা’ হতে পারি! তৃতীয়ত, এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে মাত্রা পরিবর্তন করতে হবে। অর্থাৎ পার্থিব জগৎ থেকে জানা সম্ভব নয়। শুধুই পার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকে সবকিছু বিচার না করে অপার্থিব দৃষ্টিকোণ থেকেও ভাবতে হবে। তবে একটি উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। মনে কর, ঢাকার এক বাড়িতে তুই ভালভাবেই বাস করছিস। হঠাৎ করে কোন এক দৈব দূর্বিপাক এসে তোর বাড়ির পাশের বস্তির লোকগুলোকে তুলে নিয়ে গিয়ে উন্নত বিশ্বের কিছু শহরে রেখে দিল। সেখানে তারা তোর চেয়ে অনেক উন্নত জীবনা-যাপন করছে। তুই এ বিষয়ে কিছুই জানিস না। তুই হয়ত মনে করছিস যে তারা মরে ভূত হয়ে গেছে! তাদের জন্য হয়ত করুণাও হচ্ছে এই ভেবে যে, একে তো বস্তির লোকজন তারপর আবার তাদের উপরই এমন মহা-বিপদ নেমে এলো! এবার বিষয়টা ভেবে দ্যাখ।”

* সেদিনের মতো বন্ধুকে আমার শেষ প্রশ্ন, আচ্ছা স্রষ্টায় বিশ্বাসকে কি ডগম্যাটিক বলা যেতে পারে?

বন্ধুর সোজা-সাপ্টা জবাব, “অসম্ভব! তা হতেই পারে না! এমন বে-আক্কল কথা কে বলেছে? একটি বিশ্বাসকে তখনই ডগম্যাটিক বলা যাবে যখন সেই বিষয়ে একাধিক যুক্তিসম্মত অপশন থাকা সত্ত্বেও কেউ একটিকে সত্য ও বাকিগুলোকে মিথ্যা বলে বিশ্বাস করবে। যেমন ধর্মে বিশ্বাসের ক্ষেত্রে ডগম্যাটিজমের প্রশ্ন আসতে পারে। কিন্তু এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার ক্ষেত্রে বিষয়টি সম্পূর্ণ আলাদা। তার কারণ হচ্ছে স্রষ্টায় বিশ্বাসের বিকল্প কোন যৌক্তিক অপশন-ই যেহেতু মানুষের হাতে নেই সেহেতু এই বিশ্বাসকে কোনভাবেই ডগম্যাটিক বলা যেতে পারে না। আস্তিক-নাস্তিক নির্বিশেষে অনেকেই ডগম্যাটিক বিষয়টা নিয়ে সেভাবে ভাবে না। তারা হয়ত মনে করে বিশ্বাস মানেই ডগম্যাটিক! বরঞ্চ বিকল্প কোন অপশন না থাকা সত্ত্বেও স্রষ্টায় অবিশ্বাস করা মানে নিজেকে জোর করে অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেয়া। একজন যুক্তিবাদী মানুষ জেনে-শুনে নিজেকে কখনো চরমতম অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দিতে পারেন না। আর এ কারণে স্রষ্টায় অবিশ্বাস করাটাই অযৌক্তিকতা ও ডগম্যাটিজমের মধ্যে পড়ে। কারণ এক্ষেত্রে যুক্তির চেয়ে আবেগ বা বাতিক কাজ করে বেশী। তারা অসীম টাইম-স্প্যানকে অস্বীকার করে সবকিছুর ফলাফল তৎক্ষণাৎ দেখতে চায়। আর তাৎক্ষণিক ফলাফল না দেখতে পেয়ে চিন্তা-ভাবনার পরিধীকে সংকীর্ণ-থেকে-সংকীর্ণতর বানিয়ে ফেলে। সে কারণে তারা মনের বিরুদ্ধে হলেও স্রষ্টাকে অস্বীকার করে সাময়িক কিছু প্রশান্তি লাভের আশায় পার্থিব বিষয়ের মধ্যে স্রষ্টার বিকল্প খুঁজে বেড়ায়। যেমন একটি বৈজ্ঞানিক আবিষ্কারের সাথে সাথে তারা হয়ত মনে করে এবার বুঝি স্রষ্টার দিন শেষ! তারপর আবার হতাশা! আবার বিকল্প স্রষ্টার সন্ধান!

নাস্তিকরা এ পর্যন্ত তাদের বিশ্বাস বা অবিশ্বাসের স্বপক্ষে স্বতন্ত্র কোন তত্ত্ব দাঁড় করাতে সক্ষম হয়নি। এই অস্বস্থিকর অবস্থা এড়াতে তারা বিজ্ঞানের মধ্যে মাথা গোঁজা শুরু করেছেন। অর্থাৎ বিজ্ঞানকে স্রষ্টার ‘বিকল্প তত্ত্ব’ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন। কিন্তু তারা যেটা বুঝতে চায় না সেটা হচ্ছে বিজ্ঞান নিজে যেমন ‘বিকল্প স্রষ্টা’ নয় তেমনি আবার বিজ্ঞানীরা স্রষ্টা নিয়ে গবেষণাও করেন না! তাছাড়া বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার যত বেশী হবে, যত বেশী জটিল হবে, যত বেশী বিস্ময়কর হবে, সেটা তত বেশী স্রষ্টার অস্তিত্বের প্রতিই দিক নির্দেশ করবে, অনস্তিত্বের দিকে নয়। ফলে প্রত্যেকটি বিস্ময়কর আবিষ্কার স্রষ্টার অস্তিত্বের সাগরে একেকটি মূল্যবান বিন্দু। কারণ প্রত্যেকটি আবিষ্কার একেকটি তথ্য বহন করে। এই মহাবিশ্বে তথ্যের পরিমাণ যত বেশী হবে, সেটা তত বেশী একজন স্বজ্ঞাত সত্তার প্রতিই দিক নির্দেশ করবে, অকস্মিক ঘটনার দিকে নয়। তাছাড়া NAS (National Academy of Sciences)-এর বিজ্ঞানীরা কী বিশ্বাস করলেন তাতে যে কিছুই যায় আসে না সেটা এতক্ষণে বুঝতে পারছিস নিশ্চয়। বিজ্ঞানীদের মধ্যে নাস্তিকতার প্রবণতা বেড়েছে মূলত ইউরোপে চার্চের সাথে বিজ্ঞানীদের সঙ্ঘর্ষ ও তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে।

একটি বিশ্বাসকে তখনই অন্ধ বিশ্বাস বলা যাবে যখন তার স্বপক্ষে বিশ্বাসযোগ্য কোন যুক্তিই দাঁড় করানো সম্ভব হবে না। স্রষ্টার অস্তিত্ব পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণ করা সম্ভব না হলেও তার স্বপক্ষে অনেক জোরালো যুক্তি আছে। সবচেয়ে বড় যুক্তি হচ্ছে প্রাণীজগত ও উদ্ভিদজগত সহ এই বিশাল মহাবিশ্ব।

ওহ্‌ হ্যাঁ, আমি এ পর্যন্ত যা বলেছি তার সবকিছুই কিন্তু বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন বিবর্তনের ফলাফল। লেখার মধ্যে কোন রকম বুদ্ধিমত্তা কাজ করেনি! আর বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন বিবর্তনের ফলাফল হওয়াতে আমার কোন কথায় মন খারাপ করতেও পারবি না কিন্তু! তবে মন খারাপ করলেও সেটা হবে বোবা-কালা-অন্ধ-অচেতন ও উদ্দেশ্যহীন বিবর্তনের ফলাফল!”

ও-য়া-ও! বন্ধুর এমন দাঁতভাঙ্গা ঝাড়ির যে কী জবাব দেব বুঝতে পারছি না! তার বেশীরভাগ কথাবার্তাই মাথার উপর দিয়ে গেছে! কেউ কি এ যাত্রা থেকে রক্ষা করতে পারবেন?

Theist vs. Atheist Debate: Does God Not Exist?





সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:৩২
৯টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×