somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টিউটরিয়াল

২৪ শে মে, ২০১১ রাত ১০:৩৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিজ্ঞানের ছাত্ররা সাধারণভাবে এবং গণিতের ছাত্ররা বিশেষভাবে “ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম (Fourier Transform)” নামে একটি ট্র্যান্সফর্ম এর নাম শুনে থাকবেন। অনেকেই হয়ত ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম এর সূত্র ব্যবহার করে অংক কষেছেন কিন্তু এর তাৎপর্য ও ব্যবহার সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা নাই। ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম একটি অত্যন্ত পাওয়ারফুল টুল এবং এর ব্যবহার ব্যাপক। এই লেখাতে ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম এর ব্যবহার এবং তাৎপর্য সম্পর্কে সংক্ষেপে কিছু ধারণা দেয়া হবে।

যে কোনো সিগনালকে টাইম এবং ফ্রীকোয়েন্সি উভয় ডোমেইনেই বিশ্লেষণ করা যায়। একটি সিগনালকে টাইম ডোমেইনে উপস্থাপন করে সময়ের সাথে সেই সিগনালের বিস্তার সম্পর্কে জানা যায়। অনুরূপভাবে, একই সিগনালকে ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইনে উপস্থাপন করে ফ্রীকোয়েন্সির সাথে সিগনালের বিস্তার সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। তবে বাস্তব প্রয়োগের উপর ভিত্তি করে সিগনালকে টাইম ডোমেইনের চেয়ে ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইনে বিশ্লেষণ অনেক দিক দিয়েই সুবিধাজনক। যেমন একটি সিগনালকে টাইম ডোমেইনের চেয়ে ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইনে সাধারণত সহজবোধ্য দেখায়। এছাড়াও সিগনালের ভৌতিক গুণাবলী প্রায়ই ফ্রীকোয়েন্সির উপর নির্ভর করে।

কোনো সিগনালকে টাইম ডোমেইন থেকে ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইনে পরিবর্তন করার জন্য ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম ব্যবহৃত হয়। গাণিতিকভাবে ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্মকে নিচের সমীকরণ দ্বারা উপস্থাপন করা হয়,



যেখানে x(t) হচ্ছে টাইম ডোমেইন সিগনাল এবং e^(-i2πft) হচ্ছে মাদার বা বেসিস ফাংশন। ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম এর ইনভার্স ট্র্যান্সফর্মও আছে; যা দিয়ে ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইন থেকে টাইম ডোমেইনে সিগনালকে পরিবর্তন করা যায়।

ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম যেভাবে কাজ করে: উপরের সমীকরণে মাদার ফাংশন এর মধ্যে f হচ্ছে ফ্রীকোয়েন্সি। একটি ফ্রীকোয়েন্সি ব্যান্ডের মধ্যে প্রত্যেক ফ্রীকোয়েন্সির জন্য টাইম ফাংশনটির পুরো ব্যাপ্তিকালের ইন্টিগ্রেশন করা হলে তার একটি মান পাওয়া যায়। এভাবে একটি সিগনালকে টাইম ডোমেইন থেকে ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইনে পরিবর্তন হয়। ধরা যাক, টাইম ডোমেইন সিগনাল x(t)-তে একটি নির্দিষ্ট ফ্রীকোয়েন্সি আছে। এই সিগনালের ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম করার পর দেখা যাবে সেই নির্দিষ্ট ফ্রীকোয়েন্সিতে ইন্টিগ্রেশনের মান অনেক বড় এবং অন্যান্য ফ্রীকোয়েন্সিতে ইন্টিগ্রেশনের মান শূন্য কিংবা বাস্তবে শূন্যের কাছাকাছি। এই ফলাফল থেকে বলা যেতে পারে যে, সিগনালটিতে একটি নির্দিষ্ট মানের ফ্রীকোয়েন্সি আছে।

এবার একটি বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টাকে গাণিতিকভাবে ব্যাখ্যা করা যাক। আমরা যে বিদ্যুৎ ব্যবহার করি সেটি হচ্ছে একটি ইলেকট্রিক্যাল সিগনাল (Sine wave or sinusoidal signal) এবং এর ফ্রীকোয়েন্সি ৫০ হার্টজ (Hertz)। হার্টজ হচ্ছে ফ্রীকোয়েন্সির একক। ৫০ হার্টজ মানে প্রতি সেকেন্ডে ৫০টি কম্পন সম্পন্ন করাকে বুঝায়। এই ইলেকট্রিক্যাল সিগনালকে গাণিতিক সমীকরণের সাহায্যে লিখা যায়,



যেখানে A হচ্ছে সিগনালের বিস্তার এবং f হচ্ছে ফ্রীকোয়েন্সি বা কম্পাঙ্ক, এক্ষেত্রে ৫০ হার্টজ। এই সমীকরণ থেকে x(t) এর মান প্রথম সমীকরণে বসিয়ে দিয়ে ইন্টিগ্রেট করা হলে নিম্নের সমাধান পাওয়া যাবে, যেখানে δ হচ্ছে ডেলটা ফাংশন যার মান মূলবিন্দু ছাড়া সর্বত্র শূন্য।



এবার দুটি সহজ উদাহরণের সাহায্যে ব্যাপারটাকে চিত্রের সাহায্যে দেখা যাক। চিত্র-১ এ দুটি উইন্ডো দেখা যাচ্ছে। উপরের উইন্ডোতে ৫০ হার্টজ ফ্রীকোয়েন্সির একটি সাইন ওয়েভকে টাইম ডোমেইনে উপস্থাপন করা হয়েছে (Time vs. Amplitude), আর নিচের উইন্ডোতে একই সিগনালের ফ্রীকোয়েন্সি স্পেকট্রাম (Frequency spectrum) দেখানো হয়েছে (Frequency vs. Amplitude)। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে টাইম ডোমেইন চিত্র থেকে সিগনালের ফ্রীকোয়েন্সি নির্ণয় করা সহজ নয়। অথচ ফ্রীকোয়েন্সি স্পেকট্রাম থেকে খুব সহজেই বোঝা যাচ্ছে যে এই সিগনালের ফ্রীকোয়েন্সি ৫০ হার্টজ, যেহেতু একমাত্র ৫০ হার্টজ ফ্রীকোয়েন্সিতেই একটি পীক বা চূড়া দেখা যাচ্ছে।



চিত্র-১: ৫০ হার্টজ ফ্রীকোয়েন্সির একটি সাইন ওয়েভকে টাইম ডোমেইন ও ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইনে উপস্থাপন।

উপরের চিত্রে ৫০ হার্টজ ফ্রীকোয়েন্সির একটিমাত্র সিগনাল দেখানো হয়েছে। এমনও হতে পারে যে, একটি জটিল সিগনালের মধ্যে একাধিক ফ্রীকোয়েন্সি কম্পোনেন্ট থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে টাইম ডোমেইনে বিশ্লেষণ করে ফ্রীকোয়েন্সি কম্পোনেন্টগুলো জানা প্রায় অসম্ভব। চিত্র-২ এ উপরের উইন্ডোতে ১০০, ২৫০, ও ৪০০ হার্টজ ফ্রীকোয়েন্সির তিনটি সাইন ওয়েভের সমন্বয়ে একটি জটিল সিগনাল আছে, আর নিচের উইন্ডোতে একই সিগনালের ফ্রীকোয়েন্সি স্পেকট্রাম দেখানো হয়েছে। এই ধরণের জটিল সিগনালের ক্ষেত্রে টাইম ডোমেইন চিত্র থেকে সিগনালের ফ্রীকোয়েন্সি নির্ণয় করা সম্ভব নয়। অথচ ফ্রীকোয়েন্সি স্পেকট্রাম থেকে খুব সহজেই তিনটি আলাদা ফ্রীকোয়েন্সির সিগনাল পৃথক করা যাচ্ছে; তিনটি চূড়া তিনটি আলাদা সিগনাল নির্দেশ করে।



চিত্র-২: ১০০, ২৫০, ও ৪০০ হার্টজ ফ্রীকোয়েন্সির তিনটি সাইন ওয়েভের সমন্বয়ে একটি জটিল সিগনালকে টাইম ডোমেইন ও ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইনে উপস্থাপন।

উপরে যে দুটি উদাহরণ দেয়া হয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে সিগনালের ফ্রীকোয়েন্সি কন্টেন্ট সময়ের সাথে পরিবর্তন হয় না, যাকে স্টেশনারি সিগনাল বলা হয়। স্টেশনারি সিগনাল বিশ্লেষণের ক্ষেত্রে ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম সবচেয়ে ভাল টুল হিসেবে কাজ করে। তবে স্টেশনারি সিগনাল ছাড়াও বাস্তবে এমন কিছু সিগনাল আছে যেগুলোর ফ্রীকোয়েন্সি কন্টেন্ট সময়ের সাথে পরিবর্তন হয়, যাকে নন-স্টেশনারি সিগনাল বলা হয় (যেমন: human speech, music, economic time series, etc.)। নন-স্টেশনারি সিগনালের ক্ষেত্রে ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম কাজ করে না, যেহেতু একটি সিগনালকে ফ্রীকোয়েন্সি ডোমেইনে পরিবর্তন করার পর টাইম ইনফরমেশন হারিয়ে যায়। ফলে নন-স্টেশনারি সিগনাল বিশ্লেষণের জন্য জয়েন্ট টাইম-ফ্রীকোয়েন্সি তথা 2D (Two-dimensional) ট্র্যান্সফর্মেশন টুল ব্যবহার করতে হয়।

পড়ুন: ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তির প্রয়োজনীয়তা ও প্রাথমিক ধারণা
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১০
১৮টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×