somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি: প্রয়োজনীয়তা ও প্রাথমিক ধারণা

২৭ শে মে, ২০১১ রাত ১২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



সারা বিশ্ব জুড়ে বিভিন্ন ধরণের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড আজ সমাজ সচেতন মানুষের জন্য বিশাল এক মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। খুন থেকে শুরু করে ধর্ষণ, চুরি-ডাকাতি, সন্ত্রাস, অবৈধভাবে কাউকে রক্তের সম্পর্কের ভাই-বোন হিসেবে চালিয়ে দেয়া, নিজ সন্তানকে অস্বীকার করা, ইত্যাদি অপরাধ প্রতিনিয়ত সংঘটিত হয়েই চলছে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপরাধীরা হাতেনাতে ধরা পড়ছে, আবার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই উপযুক্ত সাক্ষ্য-প্রমাণের অভাবে ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে। সেই সাথে গুরুত্বপূর্ণ জায়গাগুলোতে বিশ্বাসযোগ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করাও জরুরী হয়ে পড়েছে। অপরাধী সনাক্তকরণের জন্য অনেক আগে থেকেই বিভিন্ন দেশ ও সমাজ বিভিন্ন ধরণের পদ্ধতি প্রয়োগ করে আসছে। তবে অপরাধীরা নতুন নতুন কৌশল উদ্ভাবনের কারণে সনাতন পদ্ধতিগুলো প্রায় অকেজো হয়ে পড়েছে। এজন্য অপরাধী সনাক্তকরণ পদ্ধতিরও পরিবর্তন হচ্ছে।

অপরাধী সনাক্তকরণের আধুনিক পদ্ধতিগুলোর মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি অন্যতম। বিজ্ঞানের যে শাখায় মানুষের ভৌতিক গুণাবলীর উপর ভিত্তি করে মানুষকে সনাক্ত করা হয় তাকে বায়োমেট্রিক্স বলা হয়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি হচ্ছে বায়োমেট্রিক্স এর একটি শাখা। ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তিতে আঙ্গুলের ছাপের উপর ভিত্তি করে অপরাধীকে সনাক্ত করা হয়। মানুষের চলনভঙ্গী, মুখমন্ডল, স্বাক্ষর, ইত্যাদি ফীচার সময়ের সাথে পরিবর্তন হতে পারে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে পরিবর্তন বা নকল করা হতে পারে বিধায় অপরাধী সনাক্তকরণে এগুলোর উপর নির্ভর করা যায় না। অন্যদিকে প্রত্যেক মানুষের ফিঙ্গারপ্রিন্ট সম্পূর্ণ ইউনিক এবং সারা জীবন ধরে অপরিবর্তিত থাকার কারণে অন্য যে কোনো ফীচার-ভিত্তিক প্রযুক্তির চেয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট-ভিত্তিক প্রযুক্তি তুলনামূলকভাবে নির্ভুল ও কার্যকরী। প্রতিটি ব্যক্তির ফিঙ্গারপ্রিন্ট এতটাই স্বাতন্ত্র্য যে, দেখা গেছে দুটি যমজ শিশু একই ডিএনএ প্রোফাইল নিয়ে জন্মালেও ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে তাদের আলাদা করা যায়। অপরাধী সনাক্তকরণ ছাড়াও কারো প্রকৃত পরিচয় নিশ্চিত করতে এবং অফিস-আদালতের প্রবেশপথে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়।

এ পর্যন্ত যা বোঝা গেল তা হচ্ছে পৃথিবীতে অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে এবং অপরাধীদেরকে সনাক্তকরণের জন্য বিভিন্ন পদ্ধতি প্রয়োগ করা হচ্ছে, যেগুলোর মধ্যে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি একটি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অপরাধীরা অপরাধ করে পালিয়ে যাওয়ার পর তাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট কী করে সংগ্রহ করা হয়। অপরাধী যেহেতু কোনো-না-কোনো কিছুর (সাধারণত মেটাল, গ্লাস বা প্লাস্টিক এর তৈরী কিছু) উপর তার হাত রাখবেই সেহেতু সেখান থেকেই ফিঙ্গারপ্রিন্ট যোগাড় করা যায়। ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহের জন্য কিছু প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়। এক্ষেত্রে কিছু কেমিক্যাল ব্যবহার করা হয় যা দিয়ে ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ ও পরে নক্সা পরিস্ফুট করা হয়। সম্প্রতি স্কটিশ গবেষকরা কাপড় থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট পাওয়ার সহজ একটি উপায় উদ্ভাবন করেছেন। ডান্ডি-এর গবেষকরা সোনা এবং দস্তা ব্যবহার করে কাপড় থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট তুলে আনার এই পদ্ধতি বের করেছেন। তবে এই লেখাতে ধরে নেয়া হচ্ছে যে আমাদের কাছে অপরাধীদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট আছে। সেক্ষেত্রে প্রকৃত অপরাধীকে সনাক্ত করা যাবে কী করে।

ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি যেভাবে কাজ করে: প্রথমে কোনো অপরাধ সংঘটিত হওয়ার পর ঘটনাস্থল থেকে অপরাধীর ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ করা হয়। তারপর ইতোমধ্যে ডাটাবেজে সংরক্ষণ করা জানা ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে ঘটনাস্থলে প্রাপ্ত অজানা ফিঙ্গারপ্রিন্টের তুলনা বা ম্যাচ করা হয়। ডাটাবেজে সংরক্ষিত কারো ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে যদি ঘটনাস্থল থেকে সংগৃহীত ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচ করে তাহলে তাকে অপরাধী হিসেবে দোষী সাব্যস্ত করা হয় কিংবা ম্যাচিং-এর উপর নির্ভর করে আরো কিছু তথ্য-প্রমাণ দেখা হয়। তবে ডাটাবেজের মধ্যে অপরাধী সনাক্ত করা না গেলে আরো অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। এজন্য উন্নত বিশ্বের দেশগুলোতেই মূলত ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিং মূলত তিনভাবে করা হয়: খালি চোখে দেখে ম্যাচিং, যেখানে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশী; ম্যাগনিফাইয়িং গ্ল্যাস দিয়ে দেখে ম্যাচিং; ও কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ম্যাচিং।

কম্পিউটার প্রযুক্তি ব্যবহার করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিং একটি প্রক্রিয়া যেখানে একটি ফিঙ্গারপ্রিন্ট ইমেজকে স্ক্যান করে ডাটাবেজে সংরক্ষিত অনেক ফিঙ্গারপ্রিন্টের সাথে তুলনা করে দেখা হয় কোনো প্রকার ম্যাচ আছে কি-না। ইমেজ ম্যাচিং প্রক্রিয়াকে কোরিলেশন (Correlation) বলা হয়। Matched filter ব্যবহার করে দুটি ইমেজের মধ্যে কোরিলেশন বের করা যায়, যেটি ম্যাটল্যাবে (MATLAB হচ্ছে সিগনাল প্রসেসিং ফিল্ডে সর্বাধিক ব্যবহৃত টুল) সহজেই করা যায় বিধায় বিস্তারিত লিখা হচ্ছে না। আগ্রহী পাঠক নীচের ভিডিও থেকে ফিঙ্গারপ্রিন্ট ম্যাচিং এর উপর একটা ধারণা পেতে পারেন।





অপরাধী শনাক্তকরণে ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি একটি আধুনিক ও অনেক ক্ষেত্রেই কার্যকর পদ্ধতি হলেও অপরাধীদের কৌশলের কারণে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই প্রযুক্তিও অনেকটা অকার্যকর হয়ে পড়েছে। কেনোনা অপরাধীরা অপরাধের প্রমাণ নষ্ট করতে বিভিন্ন ধরণের কৌশলের আশ্রয় নিয়ে থাকে। এজন্য বিজ্ঞানীরা ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট এর উপর গুরুত্ব দেয়া শুরু করেছেন, যেহেতু এখন পর্যন্ত মানুষের স্বতন্ত্র ডিএনএ প্রোফাইল পরিবর্তনের কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কার হয়নি৷ ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট হচ্ছে দু’টি জীবের ডিএনএ ধারাকে তুলনা বা ম্যাচ করার একটি পদ্ধতি৷ দেহের যে কোনো নমুনা থেকে ডিএনএ সংগ্রহ করে ফিঙ্গারপ্রিন্ট তৈরি করা হয়৷ সন্তানের পিতা-মাতা সনাক্তকরণ, ধর্ষক ও খুনি চিহ্নিতকরণ, জন্মগত রোগ নির্ণয়, ইমিগ্রেশনে সত্যতা যাচাই সহ বিভিন্ন অপরাধীদের সনাক্ত করতে ডিএনএ ফিঙ্গারপ্রিন্ট একটি অত্যাধুনিক প্রযুক্তি৷ প্রত্যেক মানুষের ক্ষেত্রে ডিএনএ’র কিছু ইউনিক প্যাটার্ন রয়েছে বলেই ব্যাপারটি সম্ভব হচ্ছে। অপরাধীর দেহের যে কোনো কোষ, রক্ত, থুথু, বীর্য, শুক্র, চামড়া, চুল ইত্যাদির ডিএনএ টেস্ট করে সনাক্ত করা যায়৷ মৃতদেহ বা কঙ্কাল থেকে ডিএনএ নিয়েও এসব করা যায়।

এমনকি বিজ্ঞানীদের মতে প্রতিটি মানুষের বিপাকীয় কার্যক্রমের ধরণও পুরোপুরি আলাদা। সম্প্রতি লন্ডন ইম্পেরিয়াল কলেজের চিকিৎসকরা এক গবেষণায় দেখতে পান, মানব দেহ যে প্রক্রিয়ায় খাদ্য থেকে পুষ্টি গ্রহণ করে তা একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম। এ কারণে তাদের মূত্রের নমুনায় মেটাবলাইটস নামের রাসায়নিক উপাদানটিও হয় আলাদা ধরণের। বিজ্ঞানীরা মানব দেহের এই স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের নাম দিয়েছেন মেটাবলিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট বা বিপাকীয় পরিচয় চিহ্ন। ফলে অদূর ভবিষ্যতে মেটাবলিক ফিঙ্গারপ্রিন্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করেও কিছু কিছু সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। এছাড়াও অপরাধী সনাক্তকরণে চোখের স্ক্যান এবং ভয়েস ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়েও কাজ হচ্ছে।

[কৃতজ্ঞতা স্বীকার: বাংলা নিউজ পেপার এবং ব্লগের কিছু লেখা]

পড়ুন: ফোরিয়ার ট্র্যান্সফর্ম নিয়ে একটি সংক্ষিপ্ত টিউটরিয়াল
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই জানুয়ারি, ২০১৩ দুপুর ১:১৩
৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×