somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নাটক : তুই রাজাকার

২৪ শে মে, ২০০৮ রাত ১১:১১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

নাটক: তুই রাজাকার
রচনা: সবাক
টাইটেল ডিজাইন: সবাক
চরিত্র: *এলবার্ট মাইনু, * উইলিয়াম পিয়ার, *আবাঙ্গাল সুধীর, *হেনরি খিজিনী, *মি: বাঙ্গালী, *রেফারসন চৌধুরী *বালক, *বৃদ্ধ এবং আগুন্তক।

(একটি অন্ধকার মঞ্চ, কথা বলে যাচ্ছেন মি: বাঙ্গালী)
মি: বাঙ্গালী: সভ্যগণের জ্ঞাতার্থে বলছি, আজ আমরা প্রাপ্তবয়স্ক বিষয়াদি নিয়ে কথা বলবো, কেউ যদি অপ্রাপ্ত বয়স্ক থেকে থাকেন তবে...
এলবার্ট মাইনু: আমার সাথে আসা এলসেশিয়ানটির বয়স ২বছর ৬মাস। জাতিগত বিন্যাসে ওকি প্রাপ্তবয়স্ক?
মি: বাঙ্গালী: সাধুবাদ! হ্যাঁ তাড়াতাড়ি ওর নিকাহর ব্যবস্থা করেন।
উইলিয়াম ডিয়ার: বুঝতে হবে আমরাও মানুষ এবং আমাদেরও যৌন অনুভূতি আছে। আরও খেয়াল রাখতে হবে, আমরা সন্তান জন্মদানে সক্ষম। কালক্ষেপন না করে বিষয়বস্তু বলেন।
মি: বাঙ্গালী: আমরা যারা চিন্তাশীল তারা নিশ্চয় খেয়াল করছিযে, সারাদেশে যেভাবে যুদ্ধাপরাধী বিষয়টি নিয়ে বাড়াবাড়ি চলছে, তাতে করে আমাদেরকে আবার বাবাদের দেশে চলে যেতে হয় কি না? আমাদেরকে মহল্লার ছোট ছোট ছেলেরা "তুই রাজাকার" বলে গালি দেয়। কখনও কখনও কান কাটা রমজানও বলে। এ সংকটময় মূহুর্তে আমাদের কর্মপন্থা ঠিক করতে হবে। আমাদের খেয়াল রাখা বাঞ্চনীয় যে,তাড়াহুড়া করা যাবেনা, আসলে আমি বলতে চাচ্ছি যে, আমাদের হাত ঘড়িগুলো খুলে জানালা দিয়ে ফেলে দিচ্ছি না কেন?
এলবার্ট মাইনু: মি: হেনরী বুঝতে পারছি এখানে খুব গরম, আমাদের সহ্য ক্ষমতা বাড়াতে হবে। বুকের বোতাম লাগালে ভালো হতো, আপনার বুক আমাকে আকৃষ্ট করছে।
মি: বাঙ্গালী: আমরা মূল বিষয়ে আসি। সত্যি কথা বলতে কি, এমন বুক দেখে আমিও বেশ পুলকিত। আমি বলতে চাচ্ছি, আজ কার্ফ্যু রাত, সুতরাং আমরা ইচ্ছে করলেও বাইরে যেতে পারবো না। আবার যেহেতু বিদ্যুত নাই সেহেতু আজ আমরা বিশালাকারের একটি মোমবাতি জ্বালিয়ে আমাদের সভাকার্য পরিচালনা করবো। মোমবাতি শেষ হয়ার সাথে সাথে আমাদের সভার সমাপ্তি হবে।
(এই বলে মি: বাঙ্গালী: টেবিলে রাখা মোমটি জ্বালাবেন এবং মঞ্চ আলোকিত হবে)
আবাঙ্গাল সুধীর:আমার খুব স্ত্রীর কথা মনে পড়ছে।
মি: বাঙ্গালী: ছি: ওকথা বলতে নেই।
(এমন সময় এক বৃদ্ধ মঞ্চে প্রবেশ করবে।)
বৃদ্ধ: সুজিত! সুজিত!! আছস বাবা এখানে?
মি: বাঙ্গালী: কে? কে? আপনি?
বৃদ্ধ: আমি? আমি সুজিতের বাবা। মধ্যরাত হলো ছেলেটা বাড়ি ফিরে নাই। না না , আমি গেলাম। সুজিত... সুজিত...
এলবার্ট মাইনু: আমার ইদানিং একটা সমস্যা... কোমরে খুব ব্যাথা।
আবাঙ্গাল সুধীর: সবই ওপর ওয়ালার ইচ্ছা।
এলবার্ট মাইনু: দেখেন সুধীর আপনি আমাকে যথেষ্ট অপমান করেন।
(এমন সময় ১২/১৩ বছর বয়সী এক বালক মঞ্চে প্রবেশ করবে)
বালক: বাবা, বাবা...
মি: বাঙ্গালী: কে তুমি বালক?
বালক: না, মানে বাবা; বিকেলে আন্টির সাথে বেরিয়েছেন, এখনও .....
মি: বাঙ্গালী: কি নাম তোমার বাবার?
বালক: চৌধুরী সামী চৌধুরী
মি: বাঙ্গালী: সামী নেই, তবে আরেক চৌধুরী আছে, দেখতো উনি কি না?
বালক: আরে না!! বাবা ছাগলের মতো পান খায় না। এইটাতো ছাগল।
রেফারসন চৌধুরী: কিরে পিচ্ছি তুই এগুলা কি কস?
বালক: আমাকে পিচ্ছি বললে কেন? তুমি জান না পিচ্ছি একটা গালি?। তাহলে আমিও তোমাকে একটা গালি দিই? "তুই রাজাকার" (এই বলেই বালকটি দ্রুত চলে গেল।)
রেফারসন চৌধুরী: খালি বিরক্ত করে।
মি: বাঙ্গালী: চৌধুরী তোমার ডান কানটা না কাটা ছিল?
হেনরি খিজিনী: গত মাসে সিঙ্গাপুর গিয়ে সার্জারি করে এসেছেন। তবে কাজটি ভালো করেননি। পূণ্যের দাগ এভাবে....
( বিকট আওয়াজ করে এক ব্যক্তির মঞ্চে আগমন)
আগুন্তক: আমি জানতাম, এই কার্ফ্যু রাতে এখানে কিছু গর্দভ অযথা প্যাঁচালে মেতেছে।
মি: বাঙ্গালী: কে তুমি?
আগুন্তক: চুপ কর বেয়াদব!! জীবন্ত কিংবদন্তীকে তুমি বলতে তোর আত্মা কেঁপে উঠলনা?
মি: বাঙ্গালী: তুই চুপ কর। এই বদ্ধ পাগল.....
আগুন্তক: আমাকে পাগল বললি? তুই পাগল/ তুই লুইচ্ছা, তুই রাজাকার। তুই রাজাকার।
হেনরি খিজিনী: আচ্ছা ভাই, কথাগুলো মিথ্যা না। আমরাই রাজাকার, আমরাই লুইচ্ছা.... মাঝপথে থামিয়ে দিল এলবার্ট মাইনু।
এলবার্ট মাইনু: লুইচ্ছা শব্দটি আমার প্রিয় শব্দাবলীর একটি। সুতরাং কথাটি বলে আমার শোক বাড়িয়ে লাভ নেই। আচ্ছা মাতাল ভাই... আপনে তবে এখন কেটে পড়েন। আপনারে আমি চিনছি ৭১'রে স্ত্রী আর মেয়ে হারানো আরজ আলী না? ক্ষুরটা কিন্তু এখনও ছাড়ি নাই। এই ক্ষুর ৭১'এ লাগছে, তারপর আমাদের পোলাগুলোরে ট্রেনিং দিতে লাগছে। স্মৃতি হিসেবে সাথে সাথে রাখি, এখন কি কামে লাগামু?
আগুন্তক: না আমি যামুনা!! তুই আমাকে চিনিস নাই, আমি সেই ইতিহাস, যে পেরেক ঠুকেছিল তিতুমীরের বাঁশের কেল্লায়, নৌকা ভাড়া করে দিয়েছিল নবাব সিরাজেরে। মীরজাফরের বেঈমানী দেইখ্যা আমি বেহুশ হয়েছিলাম। সেই হুশ আইছিলো ১৯৭১এর ৭ই মার্চ রেসকোর্সের মাঠ কাঁপানো আহ্বানে, সাথে ছিলো একটা পুরিয়া, হেরোইনের পুরিয়া। তারপর কি জানি কি হইলো? বৌ... মেয়ে... কোথায়...হারিয়ে গেল, আবার বেহুশ। সে কি ঘুমরে...ঘুমের মাঝে কতো কিছু!! লালপরী নীলপরী, বৌ আর মেয়ের মতো। আমি জানি তারা পরী হয়ে গেছে। ৯০এর রাজপথের কাঁপুনিতে জেগে দেখি আমি স্মৃতিসৌধের পেছনে। চিনি নাই প্রথমে, পরে শুনলাম এইটা আমার মেয়ে আর বৌয়ের জন্য বানাইছে, তাই এখন ওখানে ঘুমোই। জেগেই বালিশের নিচে হাত দিয়া দেখি পুরিয়া ঠিকই আছে। ভাবছিলাম আমার দেশে এবার আর বেহুশ হওনের কাম নাই। এইবার আবার মানুষ হমু, কিন্তু বেহুশ হলাম আবার। আমার দোষ নাই। সব দোষ রাজাকারের। তাদের গাড়ীতে আমার মেয়ের সবুজ শাড়ী আর লাল ব্লাউজের টুকরা লাগলো ক্যামনে? আমার বৌয়ের লাশের উপর দিয়া সেই গাড়ি চলতে দেইখ্যা আর স্থির থাকতে পারি নাই। মরণের দশা হয়েছিল সেদিন। আবার সেই স্মৃতি সৌধের পেছনে। বেহুশ থাকলেও আমার গুরু আমাকে ঠিকই সব জানিয়ে ছিল। আইজ আবার জাগলাম। জেগে দেখি আমার পুরিয়া নাই। গুরু কইলো চৌধুরীর কাছে স্টক আছে। দে চৌধুরী দে! আমার পুরিয়া দে!! দে...রে... দে...!! আমার মাথা খারাপ করিস না। আমার বৌ মাইয়া ডাকতেছে, পুরিয়া দে!!!
এলবার্ট মাইনু: চৌধুরী তারে একটা পুরিয়া দিয়ে দাও।
রেফারসন চৌধুরী: সাথে নেইতো। হেনরির কাছে আছে।
হেনরি খিজনি: না আমারটা আমি দিমু না। তোর ঠেলা তুই সামলা।
এলবার্ট মাইনু: কেন দিবি না? দেখিস না কেমন গন্ডগোল?
হেনরি খিজনি: সারাজীবন রাজাকারি করলি, কত গন্ডগোল করলি, আর এইটা সামলাতে পারস না। দেনা ক্ষুরটা, আমিই সাইজ কইরা দিই।
এলবার্ট মাইনু: তুই আমাকে রাজাকার বললি? তুই কি? তুইও রাজাকার।
হেনরি খিজনি: পুরো মহল্লায় জিগাও আমারে কেও রাজাকার কয় নাকি? আমি অত কাঁচা না। কাম কইরা সাক্ষি রাখি না। তুই রাজাকার, তোরা রাজাকার। শালা শুয়োরের দল, শালীডা আমেরিকা থেকে আইছে, সকালেই কি ভাব জমাইয়া ফালাইছি, আর এখন বসে বসে নাটক করছি। ইসসসসরে কি জিনিস মিস করলাম।
মি: বাঙ্গালী: ঐ রাজাকারের বাচ্ছা, কয়দিন আগেই না আমাকে বাপ ডাকলি? এখন এত লাফাস কা।
হেনরি খিজনি: তুই ৭১রে পাকিগোরে ডাকস নাই?
মি: বাঙ্গালী: ওই শুয়োর, বাবারে বাবারে কইতে লজ্জা কি? এখনও বলি আমার আছে দুই বাবা, পরথম হইলো পাকি বাবা, তারপর হইলো আমার মায়ের স্বামী। বাবারে বাবা ডকবো, কিন্তু তুই আমারে রাজাকার কইলি ক্যান? তুইতো তোর বৌকে বাবাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। তুই রাজাকার তোর বাপ রাজাকার। তোর কানের কাটা এখনও দেখা যাচ্ছে।
আগুন্তক: ঐ রাজাকারের বাচ্ছারা তোরা থাম। আমার মনে হয় আবারও বেহুশ হইতাছি। চৌধুরী আমাকে তোরা স্মৃতিসৌধে পৌছিয়ে দিস। সাথে একটা পুরিয়া। যাওয়ার আগে একটা গালি দিয়া যাইতে চাই। শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। এবার বেহুশ হইলে আর নাও জাগতে পারি। মনের জ্বালাটা মিটিয়ে নিই। তোরা সবগুলা মন তদয়া শোন- আমার গালিটা হইলো "তুই রাজাকার", "তোরা রাজাকার" ইতিহাস লিখে রাখবে, শতাব্দীর সেরা গালি-"তুই রাজাকার"

এই পোস্টটি আমার শিবির বিষয়ক যত পোস্ট -এ সংরক্ষিত আছে।
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে ডিসেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৪২
৫১টি মন্তব্য ৫৩টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কিভাবে বুঝবেন ভুল নারীর পিছনে জীবন নষ্ট করছেন? - ফ্রি এটেনশন ও বেটা অরবিটাল এর আসল রহস্য

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪

ফ্রি এটেনশন না দেয়া এবং বেটা অরবিটার


(ভার্সিটির দ্বিতীয়-চতুর্থ বর্ষের ছেলেরা যেসব প্রবলেম নিয়ে টেক্সট দেয়, তার মধ্যে এই সমস্যা খুব বেশী থাকে। গত বছর থেকে এখন পর্যন্ত কমসে কম... ...বাকিটুকু পড়ুন

সম্পর্ক

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২


আমারা সম্পর্কে বাঁচি সম্পর্কে জড়িয়ে জীবন কে সুখ বা দুঃখে বিলীন করি । সম্পর্ক আছে বলে জীবনে এত গল্প সৃষ্টি হয় । কিন্তু
কিছু সম্পর্কে আপনি থাকতে চাইলেও থাকতে পারবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৭

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ০১ লা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৫১




ছবি-মেয়ে ও পাশের জন আমার ভাই এর ছোট ছেলে। আমার মেয়ে যেখাবে যাবে যা করবে ভাইপোরও তাই করতে হবে।


এখন সবখানে শুধু গাছ নিয়ে আলোচনা। ট্রেনিং আসছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×