somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামী রাজনীতি/ইসলামী রাষ্ট্র বিহীন ইসলাম কোন ইসলামই নয় : পর্ব-১৯ - ভৌগলিক রাষ্ট্র ব্যবস্থা (Nation States)

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৪:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আল্লাহ(Allah) আদম (আঃ)-হাওয়া জোড়া থেকে মানুষ জাতি সৃষ্টি কোরলেন (কোরান- সূরা আন-নিসা ১, সূরা আয্-যুমার ৬)। বংশবৃদ্ধি কোরতে কোরতে মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়লো, তাদের মধ্যে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হোয়ে একে অপরের অপরিচিত হোয়ে পড়লো। আবহাওয়ার প্রভাবে তাদের গায়ের রং চেহারা পর্য্যন্ত বদলে গেলো। ক্রমে ক্রমে তাদের ভাষাও বদলে গেলো। তারা এ কথাও ভুলে গেলো যে তারা একই দম্পতির ছেলেমেয়ে একই জাতি। আল্লাহ(Allah) কিন্তু ঐ বিচ্ছিন্ন জনপদ গুলিতে জাতিতে, গোষ্ঠীতে তার প্রেরিতদের পাঠিয়ে তাদের জীবন-বিধান দ্বীন, দিয়ে চলেছেন ক্রমাগত। মানুষের বিবর্তন হোয়ে চলেছে, তারা মানসিকতায়, বুদ্ধিতে, শিক্ষায় এগিয়ে চলেছে, এটা ওটা আবিষ্কার কোরতে লেগেছে। এদিকে সংখ্যায় বেড়েই চলেছে এবং বাড়ার দরুণ ঐ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীগুলো আবার একে অপরের সংস্পর্শে আসতে লেগেছে। তারপর চৌদ্দশ বছর আগে মানুষ জ্ঞান-বুদ্ধি-যোগাযোগ-বিবেক-কৃষ্টি ইত্যাদি এক কথায় বিবর্তনের এমন একটা বিন্দুতে পৌছলো যখন সে সমগ্র মানব জাতির জন্য একটি মাত্র জীবন-বিধান গ্রহণ করার জন্য উপযুক্ত, তৈরী হোয়েছে। এটা সেই মহান স্রষ্টার মহা পরিকল্পনারই একটি অংশ, যে পরিকল্পনা তিনি তার প্রতিনিধি মানুষ সৃষ্টির সিদ্ধান্ত নেয়ার সময়ই কোরেছিলেন। মানুষ বিবর্তনের এই বিন্দুতে পৌছামাত্র আল্লাহ(Allah) পাঠালেন মোহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহকে (দঃ)। পূর্ববর্তী প্রেরিতদের (আঃ) মত তার মাধ্যমেও আল্লাহ(Allah) পাঠালেন সেই দ্বীনুল কাইয়্যেমা-সেরাতুল মুস্তাকীম। কিন্তু ঐ সেরাতুল মুস্তাকীমকে ভিত্তি কোরে যে সংবিধান এলো সেটা এবার এলো সমস্ত মানব জাতির জন্য (কোরান- সূরা আত-তাকনীর- ২৭)। আগের মত নির্দিষ্ট কোন জাতি বা গোষ্ঠীর জন্য নয়। এর পরিষ্কার অর্থ হলো এই যে আল্লাহ(Allah) চান যে বিভক্ত বিচ্ছিন্ন মানব জাতি নিজেদের ভেদাভেদ ভুলে আবার একটি মাত্র জাতিতে পরিণত হোক। কারণ, তারা আসলে গোড়ায় একই মা-বাপের সন্তান, একই জাতি। স্বাভাবিক কারণে তারা বিচ্ছিন্ন হোয়ে গিয়েছিলো কিন্তু এখন আবার সময় এসেছে এক হোয়ে শান্তিতে বসবাস করার। নতুন সংবিধানে তিনি বোললেন, "হে মানব জাতি! আমি তোমাদের একটি মাত্র পুরুষ ও একটি মাত্র স্ত্রী থেকে সৃষ্টি কোরেছি। জাতি গোষ্ঠীতে তোমাদের পরিণত কোরেছি যাতে তোমরা নিজেদের চিনতে পার। তোমাদের মধ্যে যে যত বেশী ন্যায়-অন্যায় সম্পর্কে সতর্ক আল্লাহ(Allah)র চোখে সে তত বেশী সম্মানিত। নিশ্চয়ই আল্লাহ(Allah) সব কিছুই জানেন। সব কিছুরই খবর রাখেন (কোরান- সূরা আল-হুজরাত- ১৩)। এখানে আল্লাহ(Allah) তিনটি কথা মানুষকে বোলেছেন। ক) মানুষকে তিনি মাত্র একটি দম্পতি থেকে সৃষ্টি কোরেছেন অর্থাৎ সমস্ত মানব জাতি একই বংশের একই রক্তের; সুতরাং একই জাতি। খ) দেহের গঠনে, চামড়ার রংয়ে, ভাষায় ইত্যাদিতে যে বিভক্তি এ শুধু পরিচয়ের জন্য, তার বেশী কিছুই নয়। এই কথাটা একটু পরিষ্কার করা দরকার। একটি লোকের কয়েকটি সন্তান আছে। সন্তানরা কেউ কালো, কেউ ফর্সা, কেউ বাদামী, কেউ লম্বা, কেউ খাটো, কেউ মোটা, কেউ পাতলা। এদের প্রত্যেকের আলাদা আলাদা নাম রাখা হয়। কেন? নিশ্চয়ই পরিচিতির জন্য। আল্লাহ(Allah) বোলছেন ‘মানব জাতিকে শুধু ঐ পরিচিতির জন্যই বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীতে, গায়ের রংয়ে, ভাষায় ইত্যাদি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। ঐ লোকটির সন্তানদের মতই তারাও ভাই-বোন, একই জাতি। অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) মানুষে মানুষে ভেদাভেদ-বৈষম্য মিটিয়ে দিচ্ছেন। গ) মানুষে মানুষে তফাতের একটি মাত্র সংজ্ঞা দিলেন, সেটি হলো ন্যায়-অন্যায়। ভালো-মন্দ দেখে যে যত সতর্ক ভাবে চলবে কাজ কোরবে- অর্থাৎ যে যত বেশী উন্নত চরিত্রের- সে তত বেশী আল্লাহ(Allah)র কাছে সম্মানিত। এক কথায় আল্লাহ(Allah) বোলছেন মানুষ এক জাতি, কেউ কারু চেয়ে বড় নয়, ছোট নয়, সব সমান। ছোট-বড়র একটি মাত্র মাপকাঠি, সেটি হলো ন্যায়-অন্যায়ের মাপকাঠি। সেখানে চামড়ার রংয়ের, ভাষার, কোন দেশে কার জন্ম বা বাস এসবের কোন স্থান নেই। এবং ঐ ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা হোচ্ছে সেটা, যেটা আল্লাহ(Allah) তার সংবিধান কোরানে দিয়ে দিয়েছেন। এই আয়াতটি ছাড়াও আল্লাহ(Allah) কোরানের বিভিন্ন স্থানে বোলেছেন একই আদম-হাওয়া থেকে সৃষ্ট বোলে সমস্ত মানব জাতি এক জাতি। সুতরাং এ কথা পরিষ্কার হোয়ে যাচ্ছে যে, ভৌগলিক বা গায়ের রং, ভাষা ইত্যাদি ভিত্তিক জাতি বা রাষ্ট্র আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন-ব্যবস্থার সরাসরি পরিপন্থী, উল্টো। একটা হোচ্ছে আদর্শের ওপর ভিত্তি কোরে, যে আদর্শ হোচ্ছে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, মোহাম্মাদুর রসুলাল্লাহ', অন্যগুলি হোচ্ছে মানুষের খেয়ালখুশী মত পৃথিবীর বুকের ওপর লাইন টেনে সীমান্ত সৃষ্টি কোরে গায়ের রংয়ের ওপর বা ভাষার ওপর ভিত্তি কোরে। দু'টো একত্রে চলতে পারে না- অসম্ভব, একথা বুঝতে পণ্ডিত হবার দরকার নেই।

ভূগোল, চামড়ার রং, ভাষা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি কোরে সৃষ্ট জাতি বা রাষ্ট্র যে শেষ ইসলামের(Islam) বিরুদ্ধে তার আরও কারণ আছে। শেষ নবী (দঃ) সমগ্র মানব জাতির জন্য প্রেরিত হোয়েছেন অর্থাৎ তার নবুয়ত সমস্ত পৃথিবী পরিব্যাপ্ত। তার উম্মাহর ব্যর্থতার জন্য তার নবুয়ত সমস্ত মানব জাতিকে এর অন্তর্ভুক্ত কোরতে পারেনি, যদিও সেইটাই ছিলো উম্মতে মোহাম্মদীর ওপর অর্পিত সর্ব প্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দায়িত্ব। যেখানে সমস্ত মানব জাতিকেই বিশ্ব-নবীর (দঃ) উম্মাহয় পরিণত করার জন্য তাকে পাঠান হোয়েছে সেখানে স্থান, রং ভাষা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি কোরে মানব জাতিকে অর্থাৎ তার উম্মাহকে বহু ভাগে বিচ্ছিন্ন কোরে দেয়ার অনুমতি থাকতে পারে না কারণ তাহলে উম্মাহকে বিভক্ত কোরে দেয়া হয়। যেখানে এই শেষ জাতির-উম্মতে মোহাম্মদীর- ঐক্য অটুট রাখতে আল্লাহ(Allah) কোরানে বহু বার তাকীদ দিয়েছেন; তাঁর রসুল (দঃ) বহু ভাবে সতর্ক কোরেছেন। ঐক্য নষ্ট হবার সামান্যতম কারণ দেখলে যখন তাঁর পবিত্র চেহারা রাগে লাল হেয়ে যেতো সেখানে ঐ ঐক্য ধ্বংসকারী ব্যবস্থাকে আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) কোনক্রমেই অনুমতি দিতে পারেন না, এটা সাধারণ জ্ঞান, সুতরাং এটা হারাম। এ ছাড়াও আরও গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। ভূগোল, চামড়ার রং, ভাষা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি করা জাতিগুলি প্রত্যেকটি নিজেদের ছাড়া বাকী মানব গোষ্ঠী থেকে আলাদা, স্বতন্ত্র ভাবে দেখে; স্বভাবতই, কারণ ঐ সব জাতিগুলির প্রত্যেকটির জাতীয় স্বার্থ বিভিন্ন সুতরাং সংঘর্ষমুখী। এই সংঘর্ষের প্রবণতা সব চেয়ে বেশী প্রতিবেশী দেশগুলির মধ্যে, একথা যে কোন সময়ে পৃথিবীর রাজনৈতিক ও সামরিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইতিহাস লক্ষ্য কোরলেই পরিস্ফুট হোয়ে উঠবে। কারণ ঐ একই। 'মানুষ এক জাতি' আল্লাহ(Allah)র এই কথা অস্বীকার কোরে পৃথিবীর বুকের ওপর খেয়াল খুশী মত দাগ দিয়ে, লাইন টেনে, চামড়ার রংয়ের ওপর ভাষার ওপর ভিত্তি কোরে মানুষে মানুষে বিভেদ সৃষ্টি কোরে চিরস্থায়ী সংঘাত-সংঘর্ষ-রক্তপাত ও যুদ্ধের ব্যবস্থা করা। যতদিন এই কৃত্রিম ব্যবস্থা পৃথিবীতে চালু থাকবে, ততদিন মানুষে-মানুষে, জাতিতে-জাতিতে অশান্তি, যুদ্ধ রক্তপাত কেউ বন্ধ কোরতে পারবেন না। শত লীগ অব নেশনসও (League of Nations) নয়, শত জাতিসংঘ ও (United Nations) নয়। মালয়েকরা মানুষ তৈরীর বিরুদ্ধে যে যুক্তি দিয়েছিলেন; ইবলিশ মানুষকে দিয়ে যা করাবে বোলে চ্যালঞ্জ দিয়েছে- অর্থাৎ সেই ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা- অশান্তি, অন্যায়, রক্তপাত ও যুদ্ধ যাতে চলতে থাকে সেজন্য শয়তানের হাতে যত অস্ত্র আছে তার মধ্যে অন্যতম প্রধান অস্ত্র হোচ্ছে এই ভূগোল, চামড়ার রং, ভাষা ইত্যাদির ওপর ভিত্তি কোরে জাতি ও রাষ্ট্রে মানব জাতিকে বিভক্ত করা। এবং এই জন্যই এই ব্যবস্থা শেষ ইসলামে কঠোর ভাবে নিষিদ্ধ। এই ব্যবস্থা মানুষ জাতির কত অশান্তি, অন্যায়, অবিচার, রক্তপাত, যুদ্ধ, অশ্রু ও ভগ্ন হৃদয়ের কারণ হোয়েছে হোচ্ছে তা সমুদ্রের মত সীমাহীন।

পৃথিবী নামের এই গ্রহটি মানব জাতির জন্য, বনি আদমের জন্য। এর বুকের ওপর মনগড়া লাইন টেনে এই বনি আদমকে বহু ভাগে বিভক্ত কোরে চিরস্থায়ী সংঘর্ষের, দ্বন্দ্বের বন্দোবস্ত করার অনুমতি স্রষ্টা দেননি। তিনি বোলেছেন সমস্ত মানব জাতি এক জাতি, একই আদম-হাওয়ার সন্তান। স্রষ্টার সেই বাণী উপেক্ষা কোরে অহংকারী মানুষ যে ভৌগোলিক রাষ্ট্র (Nation State ) স্থাপন করলো তার পরিণতি হোয়েছে সীমাহীন অন্যায়, ফাসাদ আর রক্তপাত। এ ছাড়া হোয়েছে পৃথিবীর জনসংখ্যাকে কৃত্রিম সীমান্তের মধ্যে আটকিয়ে রেখে শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থার সৃষ্টি করা। ফল হোয়েছে এই যে পৃথিবীর কোথাও ছোট ভৌগোলিক রাষ্ট্রে অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে মানুষ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে চরম দুর্দশাগ্রস্থ হয়ে অনাহারে কু-শিক্ষায় অশিক্ষায় ধুকে মোরছে। অন্যদিকে অল্প জনসংখ্যার রাষ্ট্র পৃথিবীর বিরাট এলাকা দখল কোরে সেটার প্রাকৃতিক সম্পদ রাজার হালে ভোগ কোরছে। বর্তমানে তুলনামূলক ভাবে অল্প জনসংখ্যার কিন্তু বিরাট ভূ-ভাগ অধিকারী এমন রাষ্ট্র আছে যেখানে যে প্রচুর খাদ্য সামগ্রী উৎপাদন হয় তার একটা বিরাট অংশ জাহাজে কোরে নিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিতে হয়। অন্যদিকে বহু ছোট অথচ অতিরিক্ত জনসংখ্যার রাষ্ট্র আছে যে রাষ্ট্রের মানুষ হাজার হাজারে না খেয়ে মরে যাচ্ছে। এর চেয়ে বড় অন্যায় এর চেয়ে বড় যুলুম আর কি হতে পারে? ঐ ছোট ছোট রাষ্ট্রগুলির চারদিক দিয়ে কৃত্রিম সীমান্ত রেখা টেনে মানুষকে ওর মধ্যে আটকে রাখা হোয়েছে, অবরুদ্ধ কোরে রাখা হোয়েছে। কৃষি কাজ কোরে মানুষের জন্য খাদ্য ফলানোর জন্য এদের প্রতি জনের জন্য কয়েক বিঘা জমি ও ভাগে পড়ে না, অন্যদিকে ঐ বড় বড় রাষ্ট্রগুলিতে প্রতি জনের ভাগে লক্ষ লক্ষ একর পড়ে এবং তারপরও লক্ষ লক্ষ বর্গমাইল অনাবাদি পড়ে থাকে চাষ করার মানুষের অভাবে। কৃষি ছাড়াও অর্থনীতির অন্যান্য দিক দিয়ে ভৌগোলিক রাষ্ট্র একই রকমের অন্যায় ও যুলুমের প্রত্যক্ষ কারণ। এক ভৌগোলিক রাষ্ট্র চূড়ান্ত ধনী, অন্যটি দারিদ্রের নিম্নতম পর্য্যায়ে নেমে পশু জীবন যাপন কোরছে। একটি তার বিরাট সম্পদ সীমান্তের ভেতর আটকে রাখছে, তাদের রাষ্ট্রের মানুষ বাদ দেন কুকুর-বেড়াল যে মানের জীবন যাপন করে তা ঐ দরিদ্র রাষ্ট্রের মানুষগুলি স্বপ্নেও দেখতে পারে না। এই মহা অন্যায়, মহা যুলুম বন্ধ কোরতেই আল্লাহ(Allah) ভৌগোলিক গায়ের রং, ভাষা ইত্যাদি মানুষে মানুষে যত রকমের প্রভেদ হোতে পারে সব কিছুকে নিষিদ্ধ কোরে দিয়েছেন। এ ব্যাপারে আল্লাহ(Allah)র দেয়া জীবন ব্যবস্থার-দ্বীনের নীতি হলো পৃথিবীর বুকে কোন সীমান্ত-রেখা থাকবে না, চামড়ার রং ভাষা, গোত্র, গোষ্ঠী, কোন কিছুরই বিভেদ থাকবে না মানুষে মানুষে, কারণ সমস্ত পৃথিবীর মানুষ এক জাতি। দ্বীনের এই নীতি স্বীকার কোরে নিলে মানুষ পৃথিবীর সর্বত্র ছড়িয়ে যাবে। কোথাও জনসংখ্যার অস্বাভাবিক চাপ, কোথাও, জনহীনতা থাকবে না। পৃথিবীর এক জায়গায় প্রাচুর্য, অন্য জায়াগায় দারিদ্র্য থাকবে না। এক বালতি পানি মাটিতে ঢেলে দিলে যেমন পানি চারিদিকে ছড়িয়ে যেয়ে নিজের সমতলত্ব খুঁজে নেয়, সমান হোয়ে যায়, পানি কোথাও উঁচু কোথাও নিচু হোয়ে থাকে না, তেমনি জনসংখ্যা এবং সম্পদ পৃথিবীময় ছড়িয়ে যেয়ে সমান হোয়ে যাবে। অথচ মানুষ সীমান্তের বাঁধ দিয়ে মানুষের স্বাভাবিক স্রোতকে আটকিয়ে এক জায়গায় অতিরিক্ত জনসংখ্যা অন্য জায়গায় জনশূন্যতা, এক জায়গায় সম্পদের প্রাচুর্য অন্য জায়গায় কঠিন দারিদ্র্যের চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত কোরে রেখেছে। এই চরম অন্যায়-ব্যবস্থা শেষ ইসলামে অস্বীকার করা হোয়েছে। কিন্তু মানুষের গড়া রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক ব্যবস্থা, আইন-দণ্ডবিধি ইত্যাদির সঙ্গে এই শেরক ব্যবস্থাও পৃথিবীর ‘মুসলিম(Muslim)' জাতি গ্রহণ কোরেছে এবং কোরেও নামায-রোযা-হজ্জ-যাকাত-টুপি-পাগড়ী-নফল এবাদত-তসবিহ ইত্যাদি হাজার রকমের কাজ কোরে নিজেদের মহা মুসলিম(Muslim) মনে কোরছে আর পর জীবনে জান্নাতের আশা কোরছে। তারা ভুলে গেছে যে নফল এবাদত না কোরলেও রহমানুর রহীম আল্লাহ(Allah) জান্নাত দিতে পারেন। কিন্তু শেরক ও কুফরকে ক্ষমা না করা হোচ্ছে তার অঙ্গীকার এবং তিনি কখনও তার অঙ্গীকার ভঙ্গ করেন না, কোরবেন না।

পাশ্চাত্যের শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষিত ও ইসলামের(Islam) প্রকৃত আকীদা সম্বন্ধে অজ্ঞ এক শ্রেণীর লোক ঐ ভৌগোলিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে ইসলামিক রূপ দেবার চেষ্টায় একটি হাদীস খুব ব্যবহার করেন। সেটা হলো “স্বদেশকে ভালবাসা ঈমানের অঙ্গ"। হাদীসটি কতখানি সঠিক তা জানা নেই। তবুও ধোরে নিচ্ছি এটা সহীহ। সহীহ হোলেও এটা প্রমাণ করে না যে ইসলাম(Islam) ভৌগোলিক রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেয়। এ রকম আরো বহু কিছু এ দ্বীনে আছে যা আপাতঃ দৃষ্টিতে এর ভিত্তির বিরোধী কিন্তু আসলে বিরোধী নয় এবং অনেক ক্ষেত্রে পরিপূরক। এরা তো বহু খুঁজে একটি মাত্র হাদীস বের কোরেছেন যাকে ভৌগোলিক রাষ্ট্রের পক্ষে ব্যবহার করা যায়। আমি এখানে অন্য এমন একটি ব্যাপার পেশ কোরছি যা বহু হাদীসে আছে। সেটা হলো বাপ-মার অনুগত হওয়া সর্ব অবস্থায় তাদের আদেশ-নিষেধ শোনা, তাদের অতি সম্মান করা ইত্যাদি। এ নির্দেশ শুধু হাদীসেই নেই কোরানে স্বয়ং আল্লাহ(Allah) দিয়েছেন এবং হাদীসে মহানবী (দঃ) বহু বার বোলেছেন। অবাধ্য সন্তানের এবাদত আল্লাহ(Allah) গ্রহণ করেন না। "মায়ের পায়ের নীচে সন্তানের জান্নাত"(হাদীস- মুয়াওয়াইয়াহ বিন জহেমাহ (রাঃ) থেকে- আহমদ, নিসায়ী বাইহাকী, মেশকাত) এরকম অনেক হাদীস পেশ করা যায়। সব এখানে উল্লেখ কোরতে গেলে শুধু বই বড় করা ছাড়া আর কিছু হবে না, কারণ এ ব্যাপারে কারুরই মতভেদ নেই। এখন প্রশ্ন হলো যে মায়ের পায়ের তলে সন্তানের জান্নাত, সেই মা মুসলিম(Muslim) সন্তানকে ইসলামের(Islam) আকীদার বিপরীত কোন আদেশ কোরলে তাও পালন করা জায়েজ কি-না? নিঃসংশয়ে বলা যায় অবশ্যই নয়। অর্থাৎ আল্লাহ(Allah) ও রসুল বিশ্বাসী মো'মেন মা-বাপের আদেশ পালন কোরবে, সেটা তার "ঈমানের অঙ্গ"। কিন্তু সে আদেশ সীমিত! যখন তা দ্বীনের নীতির বিরুদ্ধে হবে তখন আর সেটার কোন মূল্য নেই (কোরান-সূরা আল-আনকাবুত-৮, সূরা আল লোকমান- ১৪, ১৫) মুসলিম(Muslim) যেমন অন্য মানুষের চেয়ে তার পরিবার পরিজনকে ভালবাসে-তেমনি তার জন্মস্থান ইত্যাদিকে ভালবাসবে এটাই স্বাভাবিক। তার মানে অবশ্যই এই নয় যে ইসলামের(Islam) অন্যতম মূলনীতির বিরোধী ভৌগলিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে স্বীকার করা। বিশ্বনবীর (দঃ) নিজের দেশপ্রেম কি ছিলোনা? নিশ্চয়ই ছিলো। কারণ, মক্কা থেকে হিজরত করার সময় তার পবিত্র অশ্রু আমরা ইতিহাসে দেখেছি, কিন্তু জন্মভূমির ভালবাসা তাকে দ্বীনের জন্য জন্মভূমি ত্যাগ করা থেকে বিরত কোরতে পারেনি। পরে মক্কা তার অধিকারে আসলেও তিনি আর তার জন্মভূমিতে ফিরে যাননি। যদিও এর এক কারণ হলো এই যে, মদীনাবাসীদের সঙ্গে তার অঙ্গীকার। কিন্তু অন্যতম কারণ এই যে, মুসলিম(Muslim) ভৌগোলিক রাষ্ট্রে বিশ্বাসী নয়, সমস্ত দুনিয়া তার কাছে এক। সমস্ত আরবে ইসলাম(Islam) প্রতিষ্ঠিত হবার পর তার সামান্য ইচ্ছা পূরণের জন্য যখন লক্ষ প্রাণ নিজেদের কোরবানী করার জন্য উদগ্রীব তখন যদি তিনি তার অঙ্গীকারের মুক্তি চাইতেন তবে মদীনার আনসাররা তা নিশ্চয়ই প্রত্যাখ্যান করতেন না। ইসলাম(Islam) প্রচারের প্রথম দিকে যারা শেষনবীর (দঃ) নবুয়তের ওপর ঈমান এনে মুসলিম(Muslim) হোয়েছিলেন তাদের বাপ-মা আপ্রাণ চেষ্টা কোরেছেন তাদের আবার অবিশ্বাসে ফিরিয়ে নিতে। আল্লাহ(Allah) ও রসুল (দঃ) বাপ-মার আদেশ শোনার ও তামিল করার যে বারবার আদেশ দিয়েছেন তা যুক্তি হিসাবে ব্যবহার কোরে তারা কি আবার মোশরেক ও কাফের হোয়ে গিয়েছিলেন? যান নি। কারণ তাদের আকীদা সঠিক ছিলো। কোনটা বেশী গুরুত্বপূর্ণ কোনটা নয় সে জ্ঞান (Priority of values) তাদের স্বয়ং বিশ্বনবীর (দঃ) কাছ থেকে শেখা। তাই তারা তাদের নেতার সাথে চিরদিনের জন্য জন্মভূমিও ইসলামের(Islam) জন্য ত্যাগ কোরেছিলেন। "দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ" এই হাদীসটিকে অসৎ উদ্দেশ্যে মুসলিমের আকীদাকে বিকৃত, সংহতি ও ঐক্যকে ধ্বংস করার জন্য ব্যবহার করা হয়। তাই যে সমস্ত অন্যায় (যুলুম) ধ্বংস করার জন্য বিশ্বনবী (দঃ) প্রেরিত হোয়েছেন তার একটার ওপর ঈমান আনার জন্য ঐ একমাত্র হাদীসটির এত বহুল প্রচার।

আল্লাহ(Allah)র রসুলের (দঃ) সময় বর্তমানের মত ভৌগোলিক রাষ্ট্র (Nation state) এবং তার সুনির্দিষ্ট সীমান্ত-রেখা ছিলো না। মানুষে মানুষে ভেদাভেদের ভিত্তি ছিলো বর্ণ-গোত্র-ভাষা-বংশ ইত্যাদি। তাতে পরে যোগ হলো ভৌগোলিক রাষ্ট্র। যোগ করলো ইউরোপের খ্রীস্টান জাতিগুলি এবং তাদের গোলাম হোয়ে থেকে তাদের শিক্ষায় শিক্ষিত হোয়ে মুসলীমসহ প্রাচ্যের অন্যান্য জাতিগুলিও ঐ ভৌগোলিক রাষ্ট্র ব্যবস্থাকে গ্রহণ কোরেছে। কিন্তু আল্লাহ(Allah) বোলছেন সমগ্র মানব জাতি একটি মাত্র দম্পত্তি থেকে উদ্ভুত হোয়েছে, কাজেই তারা একজাতি। শেষ ইসলাম(Islam) সমস্ত রকম ভেদাভেদ মিটিয়ে দিয়ে মানব জাতিকে ওয়াহদানিয়াতের, তাওহীদের ছত্রছায়ায় নিয়ে আসার জন্য এসেছে। তাই বিশ্বনবী (দঃ)বোলেছেন-"সে আমাদের কেউ নয় যে গোত্রের (এখানে গোত্রের অর্থে বংশ, ভাষা, বর্ণ উপজাতি, ভৌগোলিক রাষ্ট্র ইত্যাদি মানুষে মানুষে বিভেদের যত প্রকার কারণ হোতে পারে সব) কারণে ডাকে, সে আমাদের কেউ নয় যে গোত্রের কারণে যুদ্ধ করে, সে আমাদের কেউ নয়, যে গোত্রের কারণে প্রাণ দেয় (হাদীস- যোবায়ের বিন মুতেম (রাঃ) থেকে আবু দাউদ, মেশকাত)।" আল্লাহ(Allah)র রসুল (দঃ) যখন বলেন, "আমাদের কেউ নয়" তখন অবশ্যই সে বা তারা মোমেনও নয় মুসলিম(Muslim)ও নয়। উম্মতে মোহাম্মদী তো নয়ই
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×