somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইসলামী রাজনীতি/ইসলামী রাষ্ট্র বিহীন ইসলাম কোন ইসলামই নয় : পর্ব-৩৪ - দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্ব

২৪ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ ভোর ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এক ॥

আল্লাহর রসুল বোলেছেন- আদমের সৃষ্টি থেকে নিয়ে শেষদিন (অর্থাৎ কেয়ামত) পর্যন্ত যা কিছু ঘোটেছে ও ঘোটবে তার মধ্যে দাজ্জালের চেয়ে বড় আর কিছু ঘোটবে না। [এমরান বিন হোসায়েন (রাঃ) থেকে মোসলেম]


অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হাদীস, কারণ দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্বের কথা বোঝাতে যেয়ে বিশ্বনবী শব্দ ব্যবহার কোরেছেন ‘আকবর’, অতি বড়। আরও গুরুত্বপূর্ণ এই জন্য যে আদমের (আঃ) সৃষ্টি থেকে কেয়ামত অর্থাৎ মানবজাতির সৃষ্টি থেকে শেষ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে সর্ববৃহৎ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হওয়াটা কম কথা নয়, নিঃসন্দেহে বলা যায় সাংঘাতিক, কারণ মানবজাতির জীবনে নুহের (আঃ) সময়ে মহাপ্লাবনে সমস্ত পৃথিবী ডুবে যেয়ে মানবজাতিসহ সব প্রাণী, পশুপক্ষী ধ্বংস হোয়ে গিয়েছিলো। দু’টি বিশ্বযুদ্ধে অল্প সময়ের মধ্যে কমপক্ষে চৌদ্দ কোটি মানব হতাহত হোয়েছে, ইতিহাসের আগে আরও অমন সর্বনাশা বিপর্যয় হয়তো হোয়েছে। অথচ মহানবী বোলছেন, ও সব কিছুর চেয়েও সাংঘাতিক ব্যাপার হবে দাজ্জালের আবির্ভাব। মানবজাতির অতীতে কি কি ঘটনা ঘোটেছে তা আল্লাহ তাঁর রসুলকে জানিয়ে দিয়েছেন, কোরানই তার প্রমাণ আর ভবিষ্যতে কি কি ঘোটবে তাও যে তাঁর রসুল জানতেন তার প্রমাণ দাজ্জাল (Dajjal) ও অন্যান্য বহু ব্যাপার সম্বন্ধে তাঁর ভবিষ্যদ্বাণী। দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্বের কথা বলার সময় অতীতে নুহের (আঃ) মহাপ্লাবনের কথা বা ভবিষ্যতে বিশ্বযুদ্ধের কথা তাঁর মনে ছিলো না এ কথা অসম্ভব। কারণ তিনি সাধারণ লোক ছিলেন না। তিনি ছিলেন আল্লাহর রসুল, তাঁর প্রতিটি কথা, প্রতিটি শব্দ ভেবেচিন্তে বলা। কাজেই এ এক সাংঘাতিক ভবিষ্যদ্বাণী এবং এমন মানুষের ভবিষ্যদ্বাণী যা অব্যর্থ, মিথ্যা হোতেই পারেনা। অথচ এমন গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার সম্বন্ধে আমরা বেখেয়াল, উদাসীন কিন্তু এর চেয়ে তুচ্ছ হাজারও বিষয় নিয়ে তুলকালাম কোরছি। এবার দেখা যাক দাজ্জাল (Dajjal) অর্থাৎ জড়বাদী, যান্ত্রিক ইহুদী-খৃষ্টান সভ্যতার (Materialistic, Technological Judeo-Christian Civilization) আবির্ভাব মানবজাতির জীবনে সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে বিপজ্জনক ঘটনা কেন? এর গুরুত্ব ঠিকভাবে বুঝতে গেলে আমাদের আদমের (আঃ) অর্থাৎ মানবজাতির সৃষ্টির সময়ে ফিরে যেতে হবে।

মহাকাশ, সেই মহাকাশে অগণ্য ছায়াপথ (Galaxy), নীহারিকা (Nebula), অসংখ্য সূর্য্য, চাঁদ, গ্রহ, এক কথায় এই মহাবিশ্ব আজ পর্যন্ত যার শেষ পাওয়া যায়নি, তা শুধু ‘কুন’ আদেশ দিয়ে সৃষ্টি করার পর আল্লাহর ইচ্ছা হোল এমন একটি সৃষ্টি করার যার মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকবে। এই বিপুল, বিরাট মহাবিশ্বের প্রতি অণু-পরমাণু তাঁর বেঁধে দেওয়া নিয়মে চোলছে, ঐ নিয়ম থেকে একটি চুলের কোটি ভাগের এক ভাগও সরে যাবার ক্ষমতা বা শক্তি কারো নেই, সে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি কাউকে আল্লাহ দেন নি। এ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি তিনি তাঁর মালায়েকদেরও দেন নি; যে মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতার ওপর যে কাজের দায়িত্ব দিয়েছেন তা থেকে এক পরমাণু পরিমাণও ভ্রষ্ট হবার শক্তি তাদের দেন নি। এবার তাঁর ইচ্ছা হোল তাঁর নিজের স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি তাঁর কোন সৃষ্ট জীবকে দিয়ে দেখা ঐ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নিয়ে সে কি করে (কোরান- সুরা দাহর, আয়াত ২, ৩)। তাই আল্লাহ সৃষ্টি কোরলেন আদমকে (আঃ)। যেহেতু এর দেহের ভেতর তিনি তাঁর নিজের আত্মা স্থাপন কোরবেন, সেই সম্মানে আদমের দেহ তিনি তৈরি কোরলেন ‘কুন’ আদেশ দিয়ে নয়, তাঁর নিজের হাতে (কোরান- সুরা সা’দ, আয়াত ৭৫)। তারপর তার দেহের মধ্যে আল্লাহ তাঁর নিজের আত্মা থেকে ফুঁকে (প্রবেশ কোরিয়ে) দিলেন (কোরান- সুরা হেজর, আয়াত ২৯; সুরা সাজদা, আয়াত ৯; সুরা সা’দ, আয়াত ৭২)। আল্লাহ তাঁর নিজের আত্মা, যেটাকে তিনি বোলছেন আমার আত্মা, সেটা থেকে আদমের মধ্যে ফুঁকে দেওয়া অর্থ আল্লাহর কাদেরিয়াত অর্থাৎ যা ইচ্ছা তা করার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিসহ আল্লাহর সমস্ত সিফত, গুণ, চরিত্র আদমের মধ্যে চোলে আসা। আল্লাহর রূহ্‌ আদমের অর্থাৎ মানুষের ভেতরে চোলে আসার সঙ্গে সঙ্গে সে অন্যান্য সমস্ত সৃষ্ট জিনিসের চেয়ে বহু ঊর্দ্ধে উঠে গেলো, কারণ তার মধ্যে তখন স্বয়ং আল্লাহর সমস্ত সিফত্‌সহ স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি এসে গেলো যা আর কোন সৃষ্টির মধ্যে নেই। সে হোয়ে গেলো আশরাফুল মাখলুকাত, সমস্ত সৃষ্টির মধ্যে সর্বোচ্চ সম্মানিত। স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিসহ আল্লাহর রূহ্‌ যে তিনি মানবের দেহের ভেতর স্থাপন কোরলেন এটাই হোল মানুষের কাছে তাঁর আমানত, যে আমানত মানুষ ছাড়া আর কারো কাছে নেই (কোরান- সুরা আহযাব, আয়াত ৭২)।

স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি নিয়ে মানুষ কি করে সে পরীক্ষা কোরতে গেলে অবশ্যই একটি বিরুদ্ধশক্তি প্রয়োজন, না হোলে পরীক্ষাই অর্থহীন, খালি মাঠে গোল দিলে তো আর পরীক্ষা হয় না, তাই আল্লাহ দাঁড় করালেন এবলিসকে। তাকে শক্তি দিলেন মানুষের দেহমনের মধ্যে ঢুকে কুপরামর্শ দিয়ে তাকে প্রভাবিত ও পথভ্রষ্ট করার। আল্লাহ যখন আদমকে সৃষ্টি করার সিদ্ধান্ত নিলেন তখন এবলিস মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতাদের মধ্যে একজন। আদম অর্থাৎ আল্লাহর খলীফা মানুষ সৃষ্টির ব্যাপারে মালায়েকদের মতামত জানতে চাইলে এবলিসসহ তারা সবাই বোলেছিলো- কেন আদম সৃষ্টি কোরতে চাও? আমরাইতো তোমার গুণকীর্ত্তণের জন্য যথেষ্ট, তোমার এ সৃষ্টিতো ফাসাদ (অত্যাচার, অবিচার, অশান্তি) আর সাফাকুদ্দিমা (যুদ্ধ, মারামারি, রক্তপাত) কোরবে (কোরান- সুরা বাকারা, আয়াত ৩০)। এখানে প্রশ্ন আসে- আল্লাহ তখনও আদমকে সৃষ্টিই করেননি। শুধু বোলেছেন সৃষ্টি কোরতে চাই, এটুকু শুনেই মালায়েকরা কি কোরে বললো, সৃষ্টি করার পর এই নতুন সৃষ্টিটি কি কোরবে? এর জবাব হোচ্ছে আল্লাহ যদি শুধু এইটুকু বোলতেন যে আমি আদম নামে একটি জীব সৃষ্টি কোরতে চাই তবে মালায়েকরা কিছুই বোলতো না। কিম্বা হয়তো বলতো প্রভু! তুমি লক্ষ কোটি সৃষ্টি কোরেছো, আরও একটি কোরবে, এতে আমাদের কী বলার আছে? তোমার ইচ্ছা হোলে করো। কিন্তু আল্লাহ তা বলেন নি, তিনি বোলেছিলেন আমি পৃথিবীতে আমার খলিফা সৃষ্টি কোরতে চাই (কোরান- সুরা বাকারা, আয়াত ৩০)। এই খলিফা শব্দ থেকেই মালায়েকরা বুঝে গেল যে এই নতুন সৃষ্টিটি তাদের মত স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিবিহীন একটি সৃষ্টি হবে না কারণ খলীফা অর্থ প্রতিনিধি, এবং প্রতিনিধি অর্থ হোল যার প্রতিনিধি তার শক্তি তার মধ্যে অবশ্যই থাকা, কমই হোক, বেশীই হোক। তারা বুঝলো এই নতুন সৃষ্টি আদমের অর্থাৎ আল্লাহর প্রতিনিধির মধ্যে থাকবে আল্লাহর সিফত্‌, আল্লাহর গুণসমূহ যার মধ্যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি অন্তর্ভুক্ত। স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি থাকা অর্থই হোচ্ছে আল্লাহর দেখানো পথ, হেদায়াহ মানা বা সেটা না মেনে নিজের ইচ্ছামত পথে চলার শক্তি। আর আল্লাহর দেখানো পথে না চোলে নিজের তৈরী পথে চলার অবশ্যম্ভাবী ফল হবে ফাসাদ (সমাজের মধ্যে অন্যায়, অত্যাচার, অবিচার, অশান্তি) এবং সাফাকুদ্দিমা (যুদ্ধ, মারামারি, হত্যা, রক্তপাত) তাই মালায়েকরা আদমকে সৃষ্টির আগেই সে কথা বোলতে পেরেছিলো।

অতি সংক্ষেপে এর পরের ঘটনাগুলি হোচ্ছে এই যে, আদমের (আঃ) অর্থাৎ মানুষের দেহ নিজ হাতে তৈরী কোরে তার দেহের ভেতরে আল্লাহর নিজের রূহ্‌, আত্ম থেকে ফুঁকে দিয়ে আল্লাহ মালায়েকদের আদেশ কোরলেন আদম অর্থাৎ মানুষকে সাজ্‌দা কোরতে (কোরান- সুরা বাকারা, আয়াত ৩৪; সুরা আ’রাফ, আয়াত ১১)। এবলিস অস্বীকার কোরলো ও আল্লাহকে বোললো আমরা মালায়েকরা বোলেছিলাম তোমার এই নতুন সৃষ্টি এই আদম, তোমার এই খলীফা পৃথিবীতে অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার আর যুদ্ধ, মারামারি, রক্তপাত কোরবে। আমাদের এই কথা যে সত্য তা প্রমাণ কোরে দেখাবো। আল্লাহ এবলিসের অর্থাৎ শয়তানের এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরলেন, কারণ তাঁর খলীফা সৃষ্টির উদ্দেশ্যই ছিলো তাই পরীক্ষা করা যে তাঁর স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিধর খলীফা কোন্‌ পথে চলে তা দেখা। এবলিসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরে তিনি এই নতুন খেলার নিয়মকানুন, শর্ত্ত ইত্যাদি নির্দিষ্ট কোরে দিলেন। সেগুলো হোল মোটামুটি এই:-


ক)এবলিসকে অনুমতি ও শক্তি দেওয়া গেলো যে সে আল্লাহর খলীফা আদমের দেহে, মন-মগজে, শিরা-উপশিরায় প্রবেশ কোরতে পারবে ও তাকে বুদ্ধি পরামর্শ দিতে পারবে।


খ) আল্লাহ যুগে যুগে পৃথিবীর প্রতি জনপদে তাঁর নবী-রসুলদের পাঠিয়ে মানুষকে হেদায়াহ অর্থাৎ পথ প্রদর্শন কোরবেন (কোরান- সুরা উনুস, আয়াত ৪৭; সুরা নহ্‌ল, আয়াত ৩৬; সুরা রা’দ, আয়াত ৭)। সে হেদায়াহ হোল তওহীদ, জীবনের সর্বস্তরে, সর্ব অঙ্গনে এক আল্লাহ ছাড়া আর কারো আইন-কানুন, আদেশ-নিষেধ অস্বীকার করা এবং একমাত্র তাঁরই আদেশ-নিষেধ পালন করা।

এরপর বনি আদমের সম্মুখে সমষ্টিগত জীবন পরিচালনার জন্য দু’টি মাত্র পথ খোলা রোইলো। হয় আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার কোরে নবী-রসুলদের মাধ্যমে প্রেরিত আল্লাহর দেয়া জীবন-বিধানকে (দীন) সমষ্টিগত জীবনে প্রতিষ্ঠা কোরে সেই মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা অথবা এবলিসের পরামর্শ মেনে নিয়ে স্রষ্টার সার্বভৌমত্ব অস্বীকার কোরে নিজেদের অর্থাৎ মানুষের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠা কোরে নিজেরাই আইন-কানুন তৈরী কোরে সেই মোতাবেক সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা করা। তৃতীয় কোন পথ রোইলো না।

এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার অসীম জ্ঞানের তুলনায় অতি সামান্য জ্ঞানের অধিকারী বনি আদমকে পরিস্থিতি ভালো কোরে বুঝে নেবার জন্য আল্লাহ তাদের জানিয়ে দিলেন যে- ঐ দুই পথের মধ্যে যে বা যারা তাঁর সার্বভৌমত্বকে (Sovereignty) স্বীকার কোরে নিয়ে নবী-রসুলদের মাধ্যমে পাঠানো আইন-কানুন,আদেশ-নিষেধকে তাদের সমষ্টিগত

জীবনে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ কোরবে তাদের তিনি গ্রহণ কোরবেন, ব্যক্তিগত সমস্ত অপরাধ, গোনাহ মাফ কোরে তাদের জান্নাতে স্থান দেবেন। এই প্রতিশ্রুতি সমস্ত কোরানে ও সহিহ হাদীসে ছড়িয়ে আছে। এটাকে আরও পরিষ্কার কোরে বুঝিয়ে দেবার জন্য আল্লাহর রসুল তাঁর বিশিষ্ট সাহাবা আবু যরকে (রাঃ) বোললেন- যে লোক মৃত্যু পর্যন্ত আল্লাহর তওহীদের ওপর অটল থাকবে সে ব্যভিচারী ও চোর হোলেও জান্নাতে প্রবেশ কোরবে (হাদীস- আবুযর গেফারী (রাঃ) থেকে বোখারী ও মোসলেম)।

এ ছাড়াও তিনি বহুবার বহুভাবে এ কথা পরিষ্কার কোরে দিয়েছেন যে- আল্লাহর সার্বভৌমত্বে, সেরাতুল মুস্তাকীমে অর্থাৎ তওহীদে যে অটল থাকবে, বিচ্যুত হবে না, তার পৃথিবী ভর্ত্তি গোনাহও তাকে জান্নাত থেকে ফেরাতে পারবে না। এ ব্যাপারে বোখারী, মোসলেমসহ অসংখ্য হাদীস পেশ করা যায়। আল্লাহর নবী বোলেছেন- বান্দাদের সাথে আল্লাহর চুক্তি (Contract) হোচ্ছে যে তারা আল্লাহ ছাড়া আর কাউকে মানবে না, তাহোলেই আল্লাহ তাদের কোন শাস্তি দেবেন না (জান্নাতে প্রবেশ করাবেন); (হাদীস- মো’য়াজ (রাঃ) থেকে বোখারী, মোসলেম)।

তিনি আরও বোলেছেন- যে হৃদয়ে বিশ্বাস করে যে আল্লাহ ছাড়া কোন এলাহ নেই এবং মোহাম্মদ (দঃ) তাঁর রসুল, আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম হারাম কোরে দেবেন (হাদীস- ওবায়দাহ বিন সোয়ামেত (রাঃ) ও আনাস (রাঃ) থেকে বোখারী, মোসলেম)। আল্লাহর রসুল আরও বোলেছেন- জান্নাতের চাবী হোচ্ছে তওহীদ (হাদীস- মু’য়ায বিন জাবাল (রাঃ) থেকে আহমদ)। এখানে মনে রাখতে হবে যে এই তওহীদ বর্ত্তমানের ব্যক্তিজীবনের আংশিক তওহীদ নয়, এ তওহীদ সার্বিক জীবনের তওহীদ অর্থাৎ রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, শিক্ষা ইত্যাদি মানব জীবনের সর্ব অঙ্গনের তওহীদ অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্ব।

এই তওহীদের বিপরীতে শেরক ও কুফর সম্বন্ধে আল্লাহ বোলেছেন আমার ইচ্ছা হোলে আমি মানুষের সমস্ত গোনাহ, অপরাধ ক্ষমা কোরে দেবো, কিন্তু শেরক ও কুফর ক্ষমা কোরবোনা। কুফর হোচ্ছে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে সরাসরি অস্বীকার কোরে মানুষের সমষ্টিগত জীবনের জন্য আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি তৈরী কোরে সেই মোতাবেক জীবন পরিচালনা করা, আর শেরক হোল আল্লাহকে আংশিকভাবে স্বীকার কোরে ও আংশিকভাবে অস্বীকার কোরে জীবনের কোনও কোনও ক্ষেত্রে, বিষয়ে নিজেদের ইচ্ছামত আইন-কানুন বা নিয়ম-পদ্ধতি তৈরী কোরে সেইমত চলা। জীবনের যে কোন একটি মাত্র অঙ্গনেও আল্লাহর আইনের বদলে অন্য কোন আইন মানা শেরক। আল্লাহ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হোয়েছেন যে তিনি শেরক (তাকে আংশিকভাবে অস্বীকার করা) ও কুফর (তাকে সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করা) কখনও ক্ষমা কোরবেন না (কোরান- সুরা নেসা, আয়াত ৪৮, ১১৬ ও সুরা মোহাম্মদ, আয়াত ৩৪)।

তাহোলে দেখা যাচ্ছে যে যারা সমষ্টিগত ও সার্বিক জীবনে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব যে সত্যিকারভাবে স্বীকার কোরে নিলো তারা তওহীদ গ্রহণ কোরলো, সেরাতুল মুস্তাকীমে যাত্রা শুরু কোরলো, দীনুল কাইয়্যেমাতে কায়েম হোল- তারা পৃথিবীপূর্ণ ব্যক্তিগত গোনাহ নিয়েও আল্লাহর সামনে হাযির হোলে আল্লাহ সব ক্ষমা কোরে তাদের জান্নাত দেবেন (হাদীস- আবুযর (রাঃ) থেকে তিরমিযি, তিবরানী ও বায়হাকী)। অন্যদিকে ঐ তওহীদে যারা নেই অর্থাৎ সমষ্টিগত ও সার্বিক জীবনে যারা আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করে নাই, বা আংশিকভাবে কোরেছে, তারা ব্যক্তিজীবনে যত সওয়াব ও পুণ্যের কাজই করুক আল্লাহ তা গ্রহণ কোরবেন না, তাদের জাহান্নামে দেবেন। অর্থাৎ সমষ্টিগত ও সার্বিক তওহীদ ব্যক্তিগত জীবনের সৎকাজ, তাকওয়ার পূর্বশর্ত্ত, ওটা না থাকলে পৃথিবীপূর্ণ নেক কাজ, সারারাত্রির নামায, সারা বছরের রোযা নিষ্ফল (কোরান- সুরা আনআম, আয়াত ৮৮, এবং সুরা যুমার, আয়াত ৬৫ ও হাদীস)।

আল্লাহর খলিফা আদমকে (আঃ) তৈরী করার বিরুদ্ধে এবলিস ও মালায়েকদের যে যুক্তি ছিলো তা হোল এই যে, আদম অর্থাৎ মানুষ পৃথিবীতে ফাসাদ (অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, অশান্তি) ও সাফাকুদ্দিমা (রক্তপাত অর্থাৎ যুদ্ধ, মারামারি, হত্যা) কোরবে (কোরান- সুরা বাকারা, আয়াত ৩০)। এবলিস ও মালায়েকরা এ কথা বলে নি যে মানুষ নামায পড়বে না, রোযা রাখবে না, যাকাহ দেবে না, হজ্ব কোরবে না, তারা চুরি, ডাকাতি ব্যভিচার কোরবে, মদ খাবে, জুয়া খেলবে। তারা যে দু’টো কারণ বোলেছিলো সে দু’টোই সমষ্টিগত প্রশ্ন, ব্যক্তিগত নয় এবং একটু চিন্তা কোরলেই দেখা যায় যে মানুষ সৃষ্টির সময় থেকে এই দু’টি সমষ্টিগত সমস্যাই আজ পর্যন্ত চোলে আসছে এবং আজও এর সমাধান করা যায়নি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর লীগ অব নেশন্‌স্‌ (League of Nations) তৈরী কোরেও নয় এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর জাতিসংঘ (United Nations) গঠন কোরেও নয়। কারণ সোজা- আল্লাহ মানুষকে অতি অল্প জ্ঞান দিয়েছেন, সে সৃষ্টির সমস্ত রহস্য জানে না; সৃষ্টির কেন, তার নিজের দেহ ও মন কেমন কোরে কাজ করে তাও সে ভালো কোরে বোঝে না। কাজেই মানুষের পক্ষে এটা অসম্ভব যে সে এমন একটা জীবন-বিধান, জীবন-ব্যবস্থা, সংবিধান তৈরী কোরবে যেটা মেনে চোললে তার সমষ্টিগত জীবনে ফাসাদ আর সাফাকুদ্দিমা না থাকে। এর একমাত্র সমাধান হোচ্ছে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব স্বীকার কোরে নবী-রসুলদের মাধ্যমে প্রেরিত জীবন-বিধান (দীন) সমষ্টিগত ও সার্বিক জীবনে প্রতিষ্ঠা ও প্রয়োগ করা।

সর্বশক্তিমান আল্লাহ এবলিসের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ কোরে যখন তাকে মানুষের দেহ-মনের মধ্যে, মস্তিষ্কের মধ্যে প্রবেশ কোরে মানুষকে প্রভাবিত ও প্ররোচিত (ওয়াসওয়াসা) করার অনুমতি দিলেন তখন এবলিস আল্লাহকে বললো- আমি তোমার সেরাতুল মুস্তাকীমের ওপর তাদের (আদম সন্তানের) জন্য ওঁৎ পেতে থাকবো। সেখান থেকে আমি তাদের ওপর সম্মুখ থেকে, পেছন থেকে, ডান থেকে, বাম থেকে আক্রমণ কোরবো (সেরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত করার জন্য); (কোরান- সুরা আ’রাফ, আয়াত ১৬-১৭)। আদম সৃষ্টির বিরুদ্ধে যুক্তির মধ্যে যেমন এবলিস নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাহ ও অন্যান্য এবাদত করা থেকে মানুষকে বিরত রাখার চেষ্টার কথা বলে নি, মানুষকে গোনাহে লিপ্ত করার চেষ্টার কথা বলে নি, আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করার সময়ও এবলিস ওগুলোর কোন কথাই বললো না, বললো আদমকে তোমার দেয়া সেরাতুল মুস্তাকীমের সহজ সরল রাস্তায় আমি ওঁৎ পেতে বোসে থাকবো, তোমার সৃষ্ট আদম, বনি-আদম যখন ও পথে চোলবে তখন আমি তার সম্মুখ থেকে, পেছন থেকে, ডাইনে থেকে, বামে থেকে অর্থাৎ চারদিক থেকে তাকে আক্রমণ (Ambush) কোরবো তাকে তোমার ঐ সহজসরল পথ থেকে বিচ্যুত করার জন্য। তাহোলে দেখা যাচ্ছে বনি আদমকে নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাহ ইত্যাদি এবাদত থেকে বিরত করা বা গোনাহে লিপ্ত করাই এবলিসের লক্ষ্য নয়, তার লক্ষ্য হোচ্ছে মানুষকে সেরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত করা। সুতরাং সেরাতুল মুস্তাকীম নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাতের চেয়ে বা গোনাহ থেকে বেঁচে থাকার চেয়ে অনেক বেশী প্রয়োজনীয়, অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।

কী এই সেরাতুল মুস্তাকীম? কী এই সহজসরল পথ? এর নাম সহজসরল কেন? এর পরিষ্কার জবাব হোচ্ছে- তওহীদ, সর্বব্যাপী তওহীদ, জীবনের সর্ব অঙ্গনের (Facet), সর্ব বিভাগের তওহীদ। সামগ্রিক জীবনের কোন অঙ্গনে আল্লাহর দেয়া আইন-কানুন (শরিয়াহ) ছাড়া আর কাউকে, কোন কিছুকে না মানা, এই সহজসরল কথা। এই জন্যই আল্লাহর রসুল আল্লাহর ঐ নীতিকে (সুন্নাতাল্লাহ) ব্যাখ্যা কোরে বোলেছেন যে, যাদের ঐ সেরাতুল মুস্তাকীম অর্থাৎ তওহীদ থেকে এবলিস বিচ্যুত কোরতে পারবে না তারা জীবনে যত বড় গোনাহই করুক, এমন কি এই দীনে যে দু’টি মহাপাপের শাস্তি সর্বোচ্চ, অর্থাৎ ব্যভিচার ও চুরি, সে দু’টি কোরলেও আল্লাহ তা মাফ কোরে তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। ঐ সঙ্গে বিশ্বনবী মাটিতে একটি সরল রেখা টেনে বোললেন- এই হোচ্ছে আল্লাহর রাস্তা, সেরাতুল মুস্তাকীম। তারপর তিনি ঐ সোজা রেখা থেকে দুই দিকে কতগুলি রেখা টেনে বোললেন- এগুলি ঐ সমস্ত রাস্তা যে রাস্তায় যাবার জন্য শয়তান ডাকতে থাকবে। এই বোলে তিনি কোরান থেকে পড়লেন- “নিশ্চয়ই এই হোচ্ছে আমার (আল্লাহর) সহজ, সরল পথ। এই পথে চলো, অন্যান্য পথে চোল না। কারণ ঐ সব পথ তোমাদের আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত কোরে দেবে” (হাদীস- আব্দুলাহ বিন মাসুদ (রাঃ) থেকে আহমদ, নেসায়ী, মেশকাত)।

পেছনে বোলে এসেছি মালায়েকরা (এবলিস যাদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিলো) মানুষ সৃষ্টির বিরুদ্ধে যে দু’টি যুক্তি আল্লাহর কাছে পেশ কোরেছিলো, অর্থাৎ ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা দু’টোই সমষ্টিগত বিষয়, ব্যক্তিগত নয়। ফাসাদ শব্দের মধ্যে সামাজিক, রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি সর্বরকমের অন্যায়, অত্যাচার, অশান্তি এসে যায়। আর সাফাকুদ্দিমা অর্থাৎ রক্তপাত শব্দের মধ্যে মারামারি, সংঘর্ষ, ছোট বড় যুদ্ধ, মহাযুদ্ধ সব এসে যায়। অর্থাৎ এবলিস আল্লাহকে যে চ্যালেঞ্জ দিলো তার পরিষ্কার অর্থ হোল, ‘তোমার খলীফা অর্থাৎ বনি-আদম, মানবজাতিকে আমি ফাসাদ আর সাফাকুদ্দিমায় পতিত করাবো এবং তা করাতে গেলে আমাকে মানুষকে তোমার এবাদত করা থেকে, নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাহ ও অন্যান্য সওয়াবের কাজ থেকে বিরত করার কোন প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র তাকে সেরাতুল মুস্তাকীম, তোমার তওহীদ, তোমার সার্বভৌমত্ব থেকে বিচ্যুত কোরতে পারলেই তো সে অবশ্যম্ভাবীভাবে ফাসাদ আর সাফাকুদ্দিমায় পতিত হবে, আর তা হোলেই তো আমার কেল্লা ফতেহ হোয়ে গেল। তোমার সার্বভৌমত্ব থেকে বিচ্যুত করার পর সে যত খুশি নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাহ কোরতে থাকুক আমার কোন আপত্তি নেই, কারণ আমার চ্যালেঞ্জে তো আমি জিতে গেলাম। এই জন্যই এবলিস কখনো আল্লাহকে এ চ্যালেঞ্জ দেয় নি যে, আদমকে এবাদত থেকে বিরত করাবার, বা গোনাহে লিপ্ত করাবার চেষ্টা কোরবে, সে চ্যালেঞ্জ দিয়েছে সেরাতুল মুস্তাকীমের, তওহীদের, সহজ-সরল রাস্তা থেকে আদমকে বিচ্যুত করাবার। এর বিপরীতে আল্লাহ ঘোষণা দিয়ে দিলেন- আমার তওহীদকে, আমার সার্বভৌমত্বকে যে বা যারা স্বীকার কোরে নেবে, তা থেকে বিচ্যুত হবে না তারা কত এবাদত কোরেছে, তারা কত গোনাহ কোরেছে, কিছুই আমি দেখবো না, তাদের জান্নাতে প্রবেশ করাবো, তারা ব্যভিচার ও চুরি কোরলেও (আবু যর (রাঃ) থেকে বোখারী, মোসলেম এবং আরও অসংখ্য হাদীস, ও কোরান)। সেই সঙ্গে তিনি এও বোলেছেন যে বা যারা শেরক কোরবে অর্থাৎ আমার সর্বব্যাপী তওহীদের কোথাও অন্যকে এতটুকু স্থান দেবে তাকে বা তাদেরকে আমি ক্ষমা কোরবো না, তাদের জাহান্নামে স্থান দেবো। তারা যত ভালো আমলই করুক আমি তা গ্রহণ কোরবো না (কোরান- সুরা যুমার, আয়াত ৬৪-৬৬)।

আপাতদৃষ্টিতে আল্লাহর এই চরমপন্থী মনোভাব কেন? কারণ আছে। মানুষ সমষ্টিগত জীবনে যে সংবিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, নিয়ম-পদ্ধতি স্বীকার কোরে তা মেনে চলে তার প্রভাব অতি শক্তিশালী, তা ব্যক্তি জীবনের কাজকর্মকে দারুণভাবে প্রভাবিত করে, নিয়ন্ত্রণ করে। ব্যক্তিগত জীবন-পদ্ধতি যদি সমষ্টিগত জীবন-ব্যবস্থা থেকে ভিন্ন হয় তবে সমষ্টিগত জীবনের বৃহত্তর প্রভাবে ও চাপে ব্যক্তিগত জীবন-পদ্ধতি ক্রমে দুর্বল হোতে হোতে বিলীন হোয়ে যাবে। আর যদি ব্যক্তিগত জীবন-পদ্ধতি সমষ্টিগত জীবন-ব্যবস্থার বিপরীত হয় তবে উভয়ের মধ্যে সংঘর্ষ হবে এবং সে সংঘর্ষে ব্যক্তিগত জীবন-পদ্ধতি অবশ্যই পরাজিত হবে। জোনাকী পোকার নিজের দেহের আলোকে তার ব্যক্তিগত কিছুটা কাজ হোতে পারে কিন্তু তা রাতের অন্ধকার দূর কোরতে পারে না।

দ্বিতীয় কারণ হোল, যদি মানবজাতিকে একটি অন্যায়, অবিচার, অত্যাচার, অশান্তিহীন জীবন যাপন কোরতে হয়, অর্থাৎ যে জীবনে ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা নেই তবে তাকে অবশ্যই এমন একটি সংবিধান ও ঐ সংবিধান নিঃসৃত আইন-কানুন, দণ্ডবিধি প্রণয়ন কোরতে হবে যা নিখুঁত ও নির্ভুল। মানবজাতির পক্ষে তা সম্ভব নয়, কারণ তার জ্ঞানের পরিধি ছোট, সীমিত। আইন-কানুন ও দণ্ডবিধির ভিত্তি হোচ্ছে মানুষের মনস্তত্ব। বর্ত্তমান পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনোবিদ, মনোবিজ্ঞানীরা বোলছেন- আমরা মানুষের বিশাল মনস্তত্বের শুধু দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছি। কাজেই মানুষের পক্ষে ঐ রকম একটি নির্ভুল ও নিখুঁত সংবিধান, জীবন-ব্যবস্থা তৈরী করা সম্ভব নয়। তাই আল্লাহ মানুষকে বোলেছেন- আমার সার্বভৌমত্ব মেনে নাও, আমিই বিশাল সৃষ্টির স্রষ্টা, তোমাদের দেহ ও মনেরও স্রষ্টা, তাই আমি জানি কেমন সংবিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি মেনে চোললে তোমরা ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমাহীন সমাজে বাস কোরতে পারবে, শান্তিতে (এসলামে) বাস কোরতে পারবে। আর যদি আমারই দেয়া স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার কোরে আমার সার্বভৌমত্ব অস্বীকার কোরে নিজেরা সার্বভৌম হোয়ে সংবিধান, আইন-কানুন ও দণ্ডবিধি, অর্থনীতি তৈরী কোরে তাই মেনে চলো তবে এবলিস যে ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমায় তোমাদের ফেলবে বোলেছিলো তোমরা তাতেই পতিত হবে, তাহোলে সে আমাকে যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো তাতে সে জয়ী হবে, আমি পরাজিত হবো। আমি সর্বশক্তিমান, আমি ইচ্ছা কোরলেই সমস্ত পৃথিবীর মানুষ এই মুহুর্ত্তেই আমার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার কোরে নেবে (কোরান- সুরা আনআম, আয়াত ৩৫, সুরা ইউনুস, আয়াত ৯৯)। কিন্তু আমি তা কোরবো না, আমি দেখতে চাই আমার দেয়া স্বাধীন ইচ্ছাশক্তি ব্যবহার কোরে তোমরা কী করো। সার্বিক জীবনে আমার সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার কোরে তোমরা যত সওয়াবের কাজই কর, যত এবাদতই কর, যত তাকওয়াই কর সমস্ত আমি ধুলা-ময়লার মত ছুঁড়ে ছিটিয়ে ফেলে দেবো (কোরান- সুরা ফোরকান, আয়াত ২৩)।

আদম (আঃ) থেকে মোহাম্মদ (দঃ) পর্যন্ত হাজার হাজার (হয়ত লক্ষ লক্ষ) বছর ধরে মানুষের প্রতি জনপদে আল্লাহ তাঁর প্রেরিতদের, নবী-রসুলদের পাঠিয়ে আসছেন (কোরান- সুরা রা’দ, আয়াত ৭, সুরা ইউনুস, আয়াত ৪৭, সুরা নহ্‌ল, আয়াত ৩৬)। সময় ও স্থানভেদে আইন-কানুন তফাৎ হোয়েছে, কিন্তু মূল ভিত্তি সব সময় ঐ এক কথা- তওহীদ, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব। কারণ সার্বভৌমত্ব তাঁর না হোলে সংবিধানও তাঁর হবে না এবং সংবিধান নিঃসৃত আইন-কানুন, দণ্ডবিধিও তাঁর হবে না এবং তা না হোলেই তা হোতে হবে মানুষের সার্বভৌমত্বের ওপর এবং পরিণতি হবে সেই ফাসাদ ও সাফাকুদ্দিমা। আর আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে স্বীকার কোরে নিলেই সংবিধান হবে তাঁর বাণী (পূর্বে অন্যান্য কেতাব, বর্ত্তমানে কোরান), আর তা থেকে নিঃসৃত আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, দীন। যুগে যুগে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে একের পর এক নবী ও রসুলদের আল্লাহ পাঠিয়েছেন, তারা এসে ঐ একই বাণী প্রচার কোরেছেন, তওহীদ, সেরাতুল মুস্তাকীম, দীনুল কাইয়্যেমা, শাশ্বত-চিরন্তন, সনাতন ধর্ম। নবী রসুলরা চলে গেলে শয়তানের প্ররোচনায় তাঁদের উম্মাহ তাদের দীনকে বিকৃত কোরে ফেলেছে। তাদের মধ্যে একটা পুরোহিত শ্রেণী গজিয়েছে, যারা সারা জীবন ঐ দীন নিয়েই ব্যস্ত থেকেছে। শরিয়াহ’র বিধানগুলোকে নানাভাবে বিশ্লেষণ কোরে কোরে নতুন নতুন ফতোয়া বের কোরেছে ও তা জনসাধারণকে শিখিয়েছে। সহজ সরল পথ সেরাতুল মুস্তাকীমকে এক দুর্বোধ্য, জটিল বিষয়ে পরিণত কোরে জাতিকে মূল লক্ষ্য থেকেই বিচ্যুত কোরে ফেলেছে। তারা আল্লাহর কেতাবে যোগ-বিয়োগ কোরে তাদের স্বার্থের পরিপন্থী আদেশ নির্দেশগুলিকে বদলিয়ে স্বার্থের অনুকূলে নিয়ে এসেছে। কঠিন আদেশগুলি, যেগুলি পালন কোরতে গেলে ক্ষতি হয়, ত্যাগের, কোরবানীর প্রয়োজন হয় সেগুলিকে বাদ দিয়ে সহজ কাজগুলিকে প্রাধান্য দিয়েছে। এমনি কোরে বিকৃতি যখন এমন পর্যায়ে চোলে গেছে যে, সে দীন পালন কোরলে উপকারের চেয়ে অপকারই বেশী হোয়ে দাঁড়িয়েছে তখন সেটাকে শুধরিয়ে ভারসাম্যে ফিরিয়ে নেবার জন্য রহমানুর রহিম আল্লাহ আবার তাঁর নবী-রসুল পাঠিয়েছেন।

এইখানে একটি অতি প্রয়োজনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ কথা মনে রাখতে হবে, কারণ আদম (আঃ) থেকে কেয়ামত পর্যন্ত, অর্থাৎ মানবজাতির জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়ের মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব সবচেয়ে বৃহৎ, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা কেন, এই প্রশ্নের সঙ্গে এটা জড়িত। কথাটা হোচ্ছে এই : পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে, বিভিন্ন সময়ে প্রতি জনপদে আল্লাহ প্রেরিত নবী-রসুলদের আসা, তাঁদের চলে যাবার পর দীনকে বিকৃত করা, সে বিকৃতি শোধরাতে আবার নবী-রসুলদের আসা- এই নিরবচ্ছিন্ন ধারাবাহিকতার মধ্যে একটি বিষয় দৃঢ় ও অপরিবর্ত্তনীয়ভাবে চোলে এসেছে। সেটা হোচ্ছে- মানবজাতি তার জীবন-ব্যবস্থার আইন-কানুনের উৎস হিসাবে কখনই স্রষ্টাকে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার করে নাই, আল্লাহকে এলাহ হিসাবে কখনও অস্বীকার করে নাই। আল্লাহর দেয়া দীনকে, আইন-কানুন দণ্ডবিধিগুলিকে নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে ব্যবহার করার জন্য, অন্যকে শোষণ করার জন্য দুমড়িয়ে, মুচড়িয়ে বিকৃত কোরে ফেলেছে। কিন্তু ঐ বিকৃত রূপরেখাকেও ধর্মের অনুশাসন বোলেই চালাতে হোয়েছে। সার্বভৌম হিসাবে আল্লাহকে অস্বীকার কোরে সার্বভৌমত্ব নিজেদের হাতে কখনই তুলে নেয়া হয় নি, নেবার চেষ্টাও করা হয় নি। কথাটা আরও একটু পরিষ্কার করা দরকার কারণ দাজ্জাল (Dajjal) এত গুরুত্বপূর্ণ কেন যে তাকে আল্লাহর শেষ রসুল মানবজাতির জন্ম থেকে শেষ পর্যন্তসম্পূর্ণ সময়টার মধ্যে সবচেয়ে বড় ঘটনা বোলে বর্ণনা কোরেছেন। এই যে বোললাম যে মানুষ কখনই আল্লাহকে এলাহ হিসাবে অস্বীকার করে নাই- এ কথাটার একটু ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। ধর্মের অনুশাসন বোলে হুকুম চালালেও ক্রমশ বিকৃতি এমন পর্যায়ে চোলে গেছে যে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব শুধু মুখে স্বীকৃতি দিলেও কার্য্যতঃ সার্বভৌমত্ব মানুষের হাতে চোলে গেছে। যেমন - ফেরাউন নিজেকে ‘রা’ অর্থাৎ সূর্য্যের উপাসক বোলে প্রচার কোরলেও সে নিজেই সার্বভৌম হোয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে ফেরাউনের এই সার্বভৌমত্ব ছিলো কার্য্যতঃ, আনুষ্ঠানিকভাবে নয়, সে তার সার্বভৌমত্ব সূর্য্য দেবতা ‘রা’- এর নামে চালাতো। দ্বিতীয়তঃ তার ঐ সার্বভৌমত্ব (উলুহিয়াহ্‌) সীমিত ছিলো মিশরে, পৃথিবীময় নয়। দাজ্জালের অর্থাৎ মানুষের এই সার্বভৌমত্ব কার্য্যতঃ ও আনুষ্ঠানিক উভয়ই এবং পৃথিবীময়, তাই এটা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ঘটনা।

দু’টি উদাহরণ দিচ্ছি: আল্লাহর নবী মুসার (আঃ) দীনকে পুরোহিত শ্রেণী, রাব্বাই, সাদ্দুসাই ও ফারিসীরা যখন চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে ও নিজেদের স্বার্থের অনুকূলে ব্যবহার কোরে বিকৃত কোরে ফেললো, তখন সেটাকে শোধরাতে, ওটাকে নতুন জীবন দিতে আল্লাহ পাঠালেন তাঁর অন্য নবী ঈসাকে (আঃ)। ইহুদীদের ঐ আলেম শ্রেণী, রাব্বাই-সাদ্দুসাইরা আল্লাহর কেতাব তওরাত পড়াশোনা কোরেছেন সারা জীবন, তওরাতের আইন-কানুনের ওপর কঠোর গবেষণা কোরেছেন, তারা কখনোই আল্লাহর সার্বভৌমত্ব অস্বীকার করেন নাই, তাঁর কেতাব তওরাতকেও অস্বীকার করেন নাই। তওরাতের আইন-কানুনগুলিকে তারা অতিবিশ্লেষণ কোরে বিকৃত কোরে ফেলেছিলেন, কিন্তু ঐ বিকৃত আইনগুলিকে তাদেরকে তওরাতের আইন বোলেই চালাতে হোয়েছে। রাব্বাই-সাদ্দুসাইরা এ কথা বোলতে পারেন নি, বা বলেন নি যে তওরাতের আইন-কানুন অচল হোয়ে গেছে, তাই আমরা আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি এসব নতুন কোরে তৈরী কোরছি। এই উপমহাদেশের হাজার হাজার বছরের ইতিহাসও তাই। মনু অর্থাৎ নুহের (আঃ) মাধ্যমে আল্লাহ যে শরিয়াহ অর্থাৎ আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি, রাষ্ট্রনীতি ইত্যাদি পাঠিয়েছিলেন পরবর্ত্তীতে তা পুরোহিত শ্রেণী তাদের কায়েমী স্বার্থের জন্য বিকৃত কোরে ফেললেও তা ঐ মনুসংহিতার নামেই অর্থাৎ আল্লাহর দেয়া আইন বোলেই চালাতে হোয়েছে। ক্ষত্রিয় রাজারা দেশ জাতি শাসন কোরতেন কিন্তু আইন ও আইনের ব্যাখ্যা দিতেন পুরোহিতরা শাস্ত্র দেখে দেখে, রাজাদের সাধ্য ছিলো না তা অস্বীকার কোরে নিজেরা আইন তৈরী কোরে নেবার। তা কোরতে গেলে বা শাস্ত্র লংঘন কোরতে গেলে তৎক্ষণাৎ মাৎস্যন্যায় (বিদ্রোহ কোরে রাজাকে হত্যা) হোয়ে যেতো। এমনকি যাদের মধ্যে আল্লাহর শেষ ও শ্রেষ্ঠ নবী আবির্ভূত হোলেন, যাদের আমরা মোশরেক ও কাফের বোলে জানি তারাও আল্লাহকে বিশ্বাস কোরতো, তাঁকে সমস্ত সৃষ্টির স্রষ্টা বোলে জানতো।

এ কথার সাক্ষ্য স্বয়ং আল্লাহ দিচ্ছেন। তিনি তাঁর রসুলকে বোলছেন- তুমি যদি তাদের (আরবের অধিবাসীদের) জিজ্ঞাসা কর আসমান ও যমীন কে সৃষ্টি কোরেছেন? তবে তারা অবশ্যই জবাব দেবে সেই সর্বশক্তিমান মহাজ্ঞানী (আল্লাহ); (কোরান- সুরা যুখরুফ, আয়াত ৯)। অন্যত্র বোলছেন- তুমি যদি তাদের প্রশ্ন কর- আকাশ ও পৃথিবী কে সৃষ্টি কোরেছেন এবং কে সূর্য্য ও চাঁদকে তাদের (কর্ত্তব্য কাজে) নিয়োজিত ও নিয়ন্ত্রণ কোরছেন? তবে তারা অবশ্যই বোলবে, আল্লাহ (কোরান- সুরা আন্‌কাবুত, আয়াত ৬১)। আল্লাহ আবার বোলছেন- যদি তুমি তাদের জিজ্ঞাসা কর- মাটি (পানির অভাবে শুকিয়ে যেয়ে) মরে যাবার পর আকাশ থেকে পানি বর্ষণ কোরে কে তাকে আবার পুনর্জীবন দান করেন? তবে তারা অবশ্যই বোলবে- আল্লাহ (কোরান- সুরা আন্‌কাবুত, আয়াত ৬৩)। তিনি আবার বোলছেন তাঁর রসুলকে- যদি তাদের প্রশ্ন করকে এই মহাকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টি কোরেছেন? তবে তারা অবশ্যই জবাব দেবে- আল্লাহ (কোরান- সুরা লোকমান, আয়াত ২৫)। আল্লাহর শেষ রসুল যখন আরবের তথা পৃথিবীর মোশরেক ও কাফেরদের তওহীদের, আল্লাহর সার্বভৌমত্বের দিকে ডাক দিয়েছিলেন তখন তারা বোলেছিলো- আমরা কি আল্লাহকে বিশ্বাস কোরি না? অবশ্যই বিশ্বাস কোরি, আমরা হুবাল, লাত, মান্নাতকে পূজা কোরি তো শুধু এই জন্য যে তারা আল্লাহর কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ কোরবে (কোরান- সুরা ইউনুস, আয়াত ১৮)। আমরা কি কাবাকে আল্লাহর ঘর বোলে বিশ্বাস কোরি না? অবশ্যই কোরি। আমরা কি আমাদের সন্তানদের নাম আব্দুলাহ রাখি না? আমরা প্রতি কাজ কি আল্লাহর নাম নিয়ে শুরু কোরি না? নিশ্চয়ই কোরি। তাহোলে তুমি আমাদের আবার কোন তওহীদ শেখাতে চাও? মোটকথা আদম (আঃ) থেকে নিয়ে মানবজাতি কখনই আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে আনুষ্ঠানিকভাবে অস্বীকার কোরে সার্বভৌমত্বকে নিজেদের হাতে তুলে নেয় নি। কিন্তু সৃষ্টির প্রথম থেকে এটাই ছিলো এবলিসের ঘোষিত লক্ষ্য। যখন সে আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো যে তোমার খলীফাকে আমি তোমার সেরাতুল মুস্তাকীম থেকে বিচ্যুত কোরবো, তখন সে এ কথাই বুঝিয়েছিলো যে সে তাকে আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে অস্বীকার করাবে, তাঁর সর্বব্যাপী তওহীদকে অস্বীকার করাবে।

যুগে যুগে পৃথিবীর প্রতি জনপদে নবী-রসুল পাঠিয়ে মানুষকে হেদায়াহ্‌, পথ-প্রদর্শনের প্রক্রিয়ায় আল্লাহ বনি-এসরাঈলীদের মধ্যে পাঠালেন তাঁর নবী মুসাকে (আঃ)। যে কয়েকজন নবী আল্লাহর কাছ থেকে শরিয়াহ নিয়ে এসেছেন মুসা (আঃ) তাঁদের অন্যতম। শরিয়াহ হোল সমষ্টিগত ও ব্যক্তিগত জীবন পরিচালনার জন্য নিয়ম-পদ্ধতি, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি। অর্থাৎ মানব জীবন পরিচালনার জন্য যা কিছু প্রয়োজন সবই শরিয়াহ’র অন্তর্ভুক্ত। মুসা (আঃ) পৃথিবী থেকে চোলে যাবার পর বনি-এসরাঈলীদের মধ্যে সেই সব বিকৃতি এসে গেলো যেগুলি পূর্ববর্ত্তী সব জাতির মধ্যে এসেছে। মুসার (আঃ) উম্মতের মধ্যে একটি পুরোহিত শ্রেণী গজালো যারা শরিয়াহ’র আইন-কানুন গুলির চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে কোরে নতুন নতুন ফতোয়া আবিষ্কার কোরে তা জনসাধারণের ওপর চাপাতে থাকলো। ক্রমে ক্রমে এমন অবস্থা দাঁড়ালো যে, দীনের আসল উদ্দেশ্যই তাদের সামনে থেকে লোপ পেয়ে পুংখানুপুংখভাবে শরিয়াহ পালনই তাদের মুখ্য লক্ষ্য হোয়ে দাঁড়ালো।

দীনের এই বিকৃতির শাস্তি হিসাবে আল্লাহ বনি এসরাঈল জাতিকে দেবদেবী পূজক ইউরোপীয় রোমানদের দাসে পরিণত কোরে দিয়েছিলেন, যেমন একই কারণে পরবর্ত্তীতে মোসলেম নামে পরিচিত জাতিটাকে ইউরোপের বিভিন্ন খৃষ্টান জাতিগুলির দাসে পরিণত কোরে দিয়েছেন। ঈসা (আঃ) যখন বনি-এসরাঈলীদের মধ্যে আবির্ভূত হোলেন তখন তারা দেব-দেবী পূজারী (Pagan) রোমানদের দাস। এই নতুন নবী ঈসা (আঃ) তাঁর সঙ্গে কোন শরিয়াহ আনলেন না কারণ তাঁর পূর্ববর্ত্তী মুসার (আঃ) শরিয়াহ তখনও মোটামুটি অবিকৃত ছিলো। ঈসা (আঃ) বনি-এসরাঈল জাতিকে যা যা বোললেন তার মধ্যে প্রধান প্রধান বিষয় হোল:-


(ক) আমি মুসার শরিয়াহ (আইন-কানুন, Law of Moses) বাতিল কোরতে আসি নাই, বরং ওটাকে সত্যায়ন ও সমর্থন কোরতে এসেছি। এই কথা বোলে ঈসা (আঃ) বুঝাচ্ছেন যে তিনি মুসার (আঃ) শরিয়াহতে কোন হস্তক্ষেপ কোরতে আসেন নি, দীনের আত্মাকে বাদ দেওয়ায় ঐ শরিয়াহ প্রাণহীন হোয়ে গেছে, কাজেই সেই প্রাণকে অর্থাৎ ভারসাম্যকে আবার যথাস্থানে প্রতিষ্ঠার জন্যই তিনি প্রেরিত হোয়েছেন।


(খ) শুধুমাত্র এসরাঈলের পথভ্রষ্ট মেষগুলি ছাড়া অন্য কারো জন্য আমাকে পাঠানো হয় নাই (বাইবেল- নিউ টেস্টামেন্ট, ম্যাথু ১৫:২৪)। এ কথা বোলে ঈসা (আঃ) তাঁর উপর আল্লাহর দেয়া দায়িত্বের সীমার কথা পরিষ্কার কোরে দিলেন। পরে আরও পরিষ্কার কোরলেন যখন তিনি তাঁর প্রধান বারজন শিষ্যকে প্রচার কাজে চারিদিকে পাঠিয়ে দিলেন। তাদের তিনি নির্দেশ দিয়ে দিলেন তোমরা অন্য কোন জাতির মধ্যে যাবে না, স্যামারিয়ানদের কোন নগরীতে, শহরে প্রবেশ কোরবে না। তোমরা শুধুমাত্র এসরাঈলী সমাজের পথভ্রষ্ট মেষগুলির কাছে যেতে থাকবে (বাইবেল- নিউ টেস্টামেন্ট, ম্যাথু ১০:৬)।

আল্লাহর প্রত্যেক নবীকেই তাঁর পূর্ববর্ত্তী নবীর উম্মাহর পুরোহিত শ্রেণী প্রচণ্ডভাবে বাধা দিয়েছে, সর্বতোভাবে তাঁর বিরোধিতা কোরেছে। কোন নবীই এর ব্যতিক্রম নন। কারণ-


প্রথমতঃ পূর্ববর্ত্তী নবীর দীনের বিকৃত রূপটাকেই পুরোহিত শ্রেণী প্রকৃত দীন বোলে বিশ্বাস কোরতো। নতুন নবী যখন ঐ বিকৃত রূপের বিরুদ্ধে কথা বোলেছেন তখন তারা মনে কোরেছে- ঐ লোক পথভ্রষ্ট।


দ্বিতীয়তঃ দীন সম্বন্ধে তাদের জ্ঞানের অহংকার। সারা জীবন ধর্ম বিষয়ক ব্যাপার নিয়ে গবেষণা পড়াশোনা কোরে তাদের মধ্যে জ্ঞানের প্রচণ্ড অহংকার জন্ম নিয়েছে। পক্ষান্তরে নবী আবির্ভূত হোয়েছেন প্রায় প্রতিক্ষেত্রে নিরক্ষর হোয়ে, কিন্তু আল্লাহ থেকে সরাসরি জ্ঞানপ্রাপ্ত হোয়ে। কাজেই পুরোহিত শ্রেণী, আলেমরা ঐ নিরক্ষর মানুষের কথা মানতে রাজি হয় নি।


তৃতীয়তঃ ঐ পুরোহিত শ্রেণী আল্লাহর দেয়া কেতাবের বিকৃত ব্যাখ্যা কোরে কেতাবের আয়াত বিক্রী কোরে অর্থ উপার্জন করা হারামকে (কোরান- বাকারা ১৭৪, ইয়াসীন ২০-২১) (নিষিদ্ধ) জায়েজ কোরে নিয়েছে তা নতুন নবী অবশ্যই বিরোধিতা কোরেছেন। পুরোহিত শ্রেণীর পক্ষে তা মেনে নেওয়া অসম্ভবও ছিলো; কারণ তা মেনে নিলে তাদের অবৈধ রুজি-রোজগার বন্ধ হোয়ে যায়।


চতুর্থতঃ পুরোহিত শ্রেণী দেখেছে যে- এই লোককে স্বীকার কোরে নিলে সমাজের সম্মানিত প্রভাবশালী স্থান থেকে তাদের পতন, এক কথায় কায়েমী স্বার্থের অবসান। এইসব কারণে এক নবীর উম্মাহর পুরোহিত শ্রেণী কখনও নতুন নবীকে স্বীকার কোরে নেয় নি। সব সময় নতুন নবীকে স্বীকার কোরে নিয়েছে সাধারণ জনগণের মধ্য থেকে মানুষ। ঈসার (আঃ) ক্ষেত্রেও এর ব্যতিক্রম হোল না। মুসার (আঃ) ধর্মেও পুরোহিত শ্রেণী রাব্বাই, সাদ্দুসাই, ফারিসীরা, অর্থাৎ আলেম শ্রেণী একযোগে উঠে পোড়ে লেগে গেলো নতুন নবী ঈসার (আঃ) প্রচণ্ড বিরোধিতায়। এই বিরোধিতায় তারা সাহায্য নিলো তাদের শাসক রোমানদের। রোমানরা প্রথমে ইহুদীদের ভেতর ধর্ম নিয়ে বিবাদে জড়িয়ে পোড়তে চায় নি, কিন্তু পুরোহিত শ্রেণী ঈসাকে (আঃ) রোমানদের শাসনের ও প্রভুত্বের পক্ষে এক বিপজ্জনক শক্তি হিসেবে উপস্থাপিত কোরলো ও অনেক চেষ্টার পর তাদের বিশ্বাস করাতে সমর্থ হোলো। এরপর রোমানদের দিয়ে ঈসাকে (আঃ) মৃত্যুদণ্ড দিয়ে যখন তা কার্য্যকরী করার জন্য তাঁকে ক্রুশে ওঠাবার বন্দোবস্ত কোরলো তখন আল্লাহ মালায়েক অর্থাৎ ফেরেশতাদের দিয়ে সশরীরে তাঁকে আসমানে উঠিয়ে নিলেন এবং ঈসার (আঃ) যে শিষ্য বিশ্বাসঘাতকতা কোরে তাঁকে আলেম ও রোমানদের হাতে ধোরিয়ে দিয়েছিলো তার দেহ ও চেহারা একদম ঈসার (আঃ) মত কোরে দিলেন, তারা ঈসা (আঃ) মনে কোরে তাকেই ক্রুশে উঠিয়ে হত্যা কোরলো।

আল্লাহর নবী ঈসা (আঃ) মাত্র তিন বছর বনি-এসরাঈলীদের হেদায়াত করার সময় পেয়েছিলেন। এই তিন বছরের অক্লান্ত চেষ্টার ফলে ৭২ জন, মতান্তরে ১২০ জন ইহুদী তাদের ভুল বুঝতে পেরে ঈসার (আঃ) শিষ্যত্ব গ্রহণ কোরেছিলো। আল্লাহ ঈসাকে (আঃ) আসমানে উঠিয়ে নেয়া ও ঈসার (আঃ) চেহারার জুডাস্‌ ইস্‌কারিয়াসকে ঈসা (আঃ) মনে কোরে ক্রুশে উঠিয়ে প্রাণদণ্ড দেয়ার পর ঈসার (আঃ) ঐ ৭২ বা ১২০ জন আসহাব প্রাণভয়ে নানাদিকে ছড়িয়ে ও লুকিয়ে গেলেন, কেউ একেবারে দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেলেন। যারা প্যালেস্টাইনে রোয়ে গেলেন তারা গোপনে ঈসার (আঃ) দেখানো পথে চোললেও প্রকাশ্যে নিজেদের রাব্বাই, সাদ্দুসাই ও ফারিসীদের মতের সমর্থন দিয়ে প্রাণ বাঁচানো ছাড়া তাদের আর কোন উপায় রোইলো না। এর কিছুদিন পর পল নামে একজন ইহুদী ঈসার (আঃ) ওপর ঈমান আনলেন। ইনি সত্যিই ঈসাকে (আঃ) বিশ্বাস কোরেছিলেন কিনা তা সন্দেহের বিষয় কারণ তার পরবর্ত্তী কাজকর্ম গভীরভাবে বিশ্লেষণ কোরলে মনে হয় যে, ঈসার (আঃ) শিষ্যদের মধ্যে ঢুকে তাদের সত্যপথ থেকে বিচ্যুত কোরে দেয়াই ছিলো তার উদ্দেশ্য।

ঈসা (আঃ) খৃষ্টান ধর্ম বোলে নতুন ধর্ম প্রচার করার জন্য আসেন নি, সে চেষ্টাও কখনও করেন নি। ইহুদীদের ধর্ম, অর্থাৎ মুসার (আঃ) মাধ্যমে প্রেরিত জুডাই (প্রকৃতপক্ষে সেই তওহীদ, এসলাম) ধর্ম পুরোহিতদের হস্তক্ষেপের ফলে ভারসাম্য হারিয়ে যে বিকৃতির মধ্যে পতিত হোয়েছিলো সেই বিকৃতি থেকে সেটাকে উদ্ধার করার জন্য এসেছিলেন ঈসা (আঃ)। ঠিক যেমন বুদ্ধ (আঃ) প্রেরিত হোয়েছিলেন তদানীন্তন বৈদিক, সনাতন ধর্মের বিকৃতিকে শোধরাবার জন্য। পল ঈসার (আঃ) শিষ্যদের মধ্যে ঢুকে যে কয়টি পরিবর্ত্তনের চেষ্টা কোরলেন তার মধ্যে সর্বপ্রধানটি হোচ্ছে ঈসার (আঃ) শিক্ষাকে বনি এসরাঈলীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে এটাকে বাইরে অ-ইহুদীদেও মধ্যে প্রচার করা ও তাদের ঈসার (আঃ) শিষ্যত্ব গ্রহণ কোরতে আহ্বান করা। পল যখন ঈসার (আঃ) শিষ্যদের তাদের নবীর শিক্ষার বিরোধী এই প্রস্তাব দিলেন তখন তারা কেউ জেরুসালেমে ছিলেন না, ইহুদী আলেমদের ভয়ে তারা স্বদেশ থেকে গ্রীসে, এবং উত্তর-সিরিয়ার বিভিন্ন শহরে নগরে পালিয়ে গিয়েছিলেন। কিছুসংখ্যক শিষ্য-সাহাবা প্রাণ বাঁচাতে এন্টিয়ক শহরে চলে গিয়েছিলেন যাদের মধ্যে ঈসার (আঃ) বারজন প্রধান শিষ্যদের অন্যতম বারনাবাসও ছিলেন। এদের কাছে পল যখন তার ঐ প্রস্তাব দিলেন তখন তারা ভয়ানক ভয় পেয়ে গেলেন কারণ এ প্রস্তাব তাদের শিক্ষক ঈসার (আঃ) শিক্ষার সম্পূর্ণ বিপরীত। বিশেষ কোরে বাধা দিলেন বিশিষ্ট সাহাবা বারনাবাস। কিন্তু সে বাধা সত্ত্বেও পল সাহাবাদের মত বদলাতে সমর্থ হোলেন। বোধহয় কারণ এই ছিলো যে ব্যর্থ, পরাজিত ও প্রাণভয়ে পলায়নকারী শিষ্যরা উপলব্ধি কোরলেন যে, বনি এসরাঈলীদের মধ্যে ঈসার (আঃ) শিক্ষা প্রচার অসম্ভব। যেখানে ঈসা (আঃ) নিজে ব্যর্থ হোয়ে গেছেন সেখানে শিষ্যরা হতাশ হবেন তাতে আশ্চর্য্য হবার কিছু নেই। তারা বুঝলেন ঈসার (আঃ) নীতি বিসর্জন দিয়ে বাইরে অ-ইহুদীদের মধ্যে প্রচার না কোরলে ঐ শ’খানেক শিষ্যের পর পৃথিবীতে ঈসার (আঃ) শিক্ষা লুপ্ত হোয়ে যাবে। একে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে অ-ইহুদীদের মধ্যে প্রচার করা ছাড়া আর উপায় নেই। তারা বুঝলেন না বা বুঝলেও পাশ কাটিয়ে গেলেন যে ঈসা (আঃ) ও কাজ কোরতে নির্দিষ্টভাবে নিষেধ কোরে গেছেন কারণ জুডাই ধর্ম ও তার সংস্কার দু’টোই শুধুমাত্র বনি-এসরাঈলীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ। ওর বাইরে ওটা সম্পূর্ণ অচল।

আমাদের বিশেষ কোরে মনে রাখতে হবে যে ইহুদীদের ধর্ম অর্থাৎ জুডাই ধর্ম গোত্রিয় ধর্ম, শুধুমাত্র বনি-এসরাঈলীদের জন্য। ঈসাকে (আঃ) আল্লাহ পাঠিয়েছিলেন সীমিত দায়িত্ব দিয়ে, শুধু পথভ্রষ্ট বনি-এসরাঈলীদের হেদায়াত কোরতে। ঈসা (আঃ) নিজে ছিলেন মুসার (আঃ) ধর্মের অনুসারী, তাঁর প্রত্যেক শিষ্যও ছিলেন ইহুদী, বনি-এসরাঈল। মতভেদ শুধু ছিলো রাব্বাই, সাদ্দুসাই ও ফারিসীদের অর্থাৎ আলেম শ্রেণীর সাথে, আদর্শগত, আকীদাগত। পল ঈসার (আঃ) ঘোর বিরোধী ও তাঁকে নির্যাতনকারীদের প্রথম সারির একজন ছিলেন এটা বড় কথা নয়, কারণ পৃথিবীতে বহু উদাহরণ আছে যেখানে ঘোর বিরোধী নিজের ভুল বুঝতে পেরে পরে অকৃত্রিম, দৃঢ় সমর্থক হোয়ে গেছেন। ওমর বিন খাত্তাব (রাঃ), খালেদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ), একরামা বিন আবু জাহেল (রাঃ) তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। বড় কথা হোল এই যে, পল ঈসার (আঃ) সঙ্গে থেকে সরাসরি তাঁর কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করেন নি, তাঁর সাহচর্য্য পান নি। কাজেই ঈসার (আঃ) প্রকৃত শিক্ষা ও তার মর্ম তিনি পান নি, অথচ ঈসা (আঃ) পৃথিবী থেকে চোলে যাবার বেশ পরে, যারা সর্বক্ষণ ঈসার (আঃ) সাহচর্য্যে থেকে ছিলেন, তাঁর কাছ থেকে সরাসরি শিক্ষা পেয়েছিলেন তাদের চেয়ে বড় প্রবক্তায় পরিণত হোয়ে দাঁড়ালেন এবং তিনি যে শিক্ষা প্রচার আরম্ভ কোরলেন তা ঈসার (আঃ) শিক্ষা থেকে শুধু বহু দুরে নয়, প্রধান প্রধান ব্যাপারে একেবারে বিপরীত। যা হোক, পলের দলের ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে ভ্রমণ ও প্রচারের ফলে অ-ইহুদীদের মধ্য থেকে অনেক লোক ঈসার (আঃ) ওপর বিশ্বাস এনে পলের নেতৃত্বে তার শিষ্যদের উপদেশ মতে চোলতে চেষ্টা আরম্ভ কোরলো। তখন কিন্তু আর ঈসার (আঃ) শিক্ষা অবিকৃত নেই। পল তার সুবিধা ও ইচ্ছামত ঈসার (আঃ) শিক্ষাকে যোগ-বিয়োগ কোরে এমন অবস্থায় নিয়ে গেছেন যে সেটা আর তখন ইহুদীদের অর্থাৎ মুসার (আঃ) ধর্মও নয়, কিম্বা মুসার (আঃ) ধর্মের বিকৃতি শুধরিয়ে সেটাকে ঈসা (আঃ) যে ভারসাম্যে ফিরিয়ে আনতে চেষ্টা কোরেছিলেন সেটাও নয়, পলের হাতে পোড়ে সেটা এক নতুন ধর্মের রূপ নিয়েছে। বর্ত্তমানে খৃষ্টান ধর্মের অনেক পণ্ডিতরাই বোলছেন যে আমরা আজ যে খৃষ্টধর্ম দেখি এটাকে খৃষ্টধর্ম (Christainity) না বোলে পলিয় ধর্ম (Paulinity) বলা উচিত। যা হোক ঐসব কারণে ঈসার (আঃ) শিক্ষার ঐ বিকৃত রূপটাকে একটা নতুন নাম দেয়া দরকার হোয়ে পড়লো। মুসার (আঃ) ধর্ম অর্থাৎ জুডাই (ইহুদী) ধর্মের গলদ ও বিকৃতি সংস্কার কোরে সেটাকেই আবার পুনর্জীবন দেবার চেষ্টাকে মূল ইহুদী ধর্ম থেকে বিচ্ছিন্ন কোরে- একটি নতুন ধর্মই সৃষ্টি করা হোল এবং এই নতুন ধর্মের নাম দেয়া হোল খৃষ্টধর্ম। পল কর্ত্তৃক এই যে নতুন নামে নতুন একটি ধর্ম চালু করা হোল এটা কিন্তু ঈসার (আঃ) দেশে হোল না, কারণ ইহুদী পুরোহিতরা ঈসা (আঃ) ও তাঁর শিক্ষাকে প্রত্যাখ্যান কোরেছে ও তাঁর অনুসারীদের দেশ থেকে বহিষ্কার কোরে দিয়েছে। প্যালেস্টাইনে তখন ঈসার (আঃ) কোন অনুসারী নেই, থাকলেও গোপনে, ব্যক্তিগতভাবে। সুতরাং এই নতুন ধর্মের পত্তন করা হোল জেরুসালেম নয়, প্যালেস্টাইনে নয়, বাইরে এন্টিয়ক (Antioch) নগরে (বাইবেল, নিউ টেস্টামেন্ট, এক্ট ১১:২৬)। আরও পরিহাসের ব্যাপার হোল এই যে, যে ঈসার (আঃ) নামে এই ধর্মের সূত্রপাত করা হোল সেই ঈসা (আঃ) তাঁর জীবনেও ‘খৃষ্টধর্ম’ বোলে কোন ধর্মের নামই শোনেন নি।

পল ও তার অনুসারীরা যখন এই নতুন ধর্ম ইউরোপে প্রচার আরম্ভ কোরলেন তখন ইউরোপীয়ানরা নানা রকম দেব-দেবীর, ভূত-পেত্নীর পূজা কোরতো। ভূমধ্যসাগরের অপর পারেই ছিলো একেশ্বরবাদী জুডাই ধর্ম, অর্থাৎ মুসার (আঃ) মাধ্যমে প্রেরিত জীবন-বিধান। কিন্তু তা তারা গ্রহণ করে নি, কারণ ওটা সীমিত ছিলো শুধু বনি-এসরাঈলীদের মধ্যে; ইহুদীরাই তাদের ধর্মকে বাইরের কাউকে গ্রহণ কোরতে দিতোনা-তারা জানতো যে ও ধর্ম শুধু তাদের গোত্রিয় ধর্ম। যে জন্য ঈসা (আঃ) তা নিজেও অ-ইহুদীদের মধ্যে প্রচার করেন নি, তাঁর শিষ্যদেরও তা কোরতে নিষেধ কোরে দিয়েছিলেন। এখন পল যখন ঐ ধর্মের একটা বিকৃত রূপ ইউরোপীয়ানদের সামনে উপস্থাপিত কোরে তা গ্রহণ কোরতে বোললেন তখন তারা দেখলো যে ঐ বিকৃত রূপটাও তাদের দেব-দেবী, ভূত-পেত্নী পূজার চেয়ে অনেক ভালো, অনেক উন্নত। এছাড়াও অন্যান্য কারণে পলের এই ‘ধর্ম’ সম্পূর্ণ ইউরোপে গৃহীত হোল। ইউরোপে এই ধর্ম সার্বিকভাবে গৃহীত হবার পর এক বুনিয়াদী সমস্যা দেখা দিলো। মুসা (আঃ) ছিলেন বনি এসরাঈলীদের জন্য জীবন-বিধান অর্থাৎ দীনের বাহক, যে দীন শরিয়াহ অর্থাৎ সমষ্টিগত জীবনের রাজনৈতিক, আর্থ-সামাজিক, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি ইত্যাদি এবং ব্যক্তিগত জীবনের আত্মশুদ্ধির-প্রক্রিয়ার ভারসাম্যযুক্ত (ওয়াসাতা) ব্যবস্থা। ঐ দীনের আত্মার দিকটাকে পরিত্যাগ কোরে ওটার শরিয়াতের চুলচেরা বিশ্লেষণ কোরে সেটাকেই পালন করার আতিশয্যকেই ধর্ম পালন মনে করার বিরুদ্ধে প্রেরিত হোলেন ঈসা (আঃ)। তিনি বোললেন- আমি মুসার (আঃ) শরিয়াহ (Law of Moses) বাতিল কোরতে প্রেরিত হই নি, বরং সেটাকে সত্যায়ন, স্বীকৃতি দিতে এসেছি। কিন্তু তোমরা যে আত্মার দিকটাকে পরিত্যাগ কোরেছো সেটাকেই পুনঃপ্রতিষ্ঠা কোরতে এসেছি। সুতরাং ঈসার (আঃ) শিক্ষার মধ্যে বিন্দুমাত্র জাতীয় শরিয়াহ নেই, আছে শুধু ব্যক্তিগতভাবে আত্মশুদ্ধির প্রক্রিয়া। পল ও তার সাঙ্গপাঙ্গদের প্রচারে ইউরোপ এই একতরফা, ভারসাম্যহীন ধর্ম গ্রহণ কোরলো ও তা তাদের জাতীয় জীবনে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা কোরলো। কারণ পেছনে বোলে এসেছি যে, মানুষ কখনই সার্বভৌমত্ব নিজের হাতে নিয়ে আইন-কানুন তৈরী কোরে- সেই মোতাবেক সমষ্টিগত জীবন যাপনের চেষ্টা করে নি। খৃষ্টধর্ম গ্রহণ কোরে ইউরোপ খৃষ্টধর্মমতেই সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা করার চেষ্টা কোরলো। রোমে আসীন পোপ সমগ্র ইউরোপের জীবন-ব্যবস্থার পথ নির্দেশ দিতে আরম্ভ কোরলেন।

আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, রাষ্ট্র ব্যবস্থা, অর্থনীতি, রাজনীতিহীন একটি ব্যবস্থা দিয়ে একটি সমষ্টিগত জীবন পরিচালনা অসম্ভব এটা সাধারণ জ্ঞান। অথচ পোপ ও ইউরোপীয় রাজারা সেই ব্যর্থ চেষ্টাই কোরলেন কারণ ধর্মীয় আদেশ-নিষেধ বাদ দিয়ে অর্থাৎ আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান কোরে নিজেরা সার্বভৌম হোয়ে নতুন সংবিধান, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি প্রণয়ন কোরে নেয়া তখনও মানুষের কাছে অচিন্ত্যনীয় ব্যাপার ছিলো। এই চেষ্টা কোরতে যেয়ে প্রতিপদে ইহলৌকিক ও পারলৌকিক জীবনের ব্যাপারে সংঘাত আরম্ভ হোল এবং ক্রমশ তা এক প্রকট সমস্যারূপে দেখা দিলো। এই সংঘাতের দীর্ঘ ও বিস্তৃত বিবরণে না যেয়ে শুধু এটুকু বোললেই চোলবে যে এই সংঘাত এক সময়ে এমন পর্যায়ে যেয়ে পৌঁছালো যে ইউরোপীয় রাজা ও সমাজ নেতাদের সামনে দু’টো পথ খোলা রোইলো- হয় এই ধর্ম বা জীবন-ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ ত্যাগ কোরতে হবে, আর নইলে এটাকে নির্বাসন দিতে হবে মানুষের ব্যক্তিগত জীবনের সংকীর্ণ পরিধির সীমাবদ্ধতার মধ্যে, যেখান থেকে এটা রাষ্ট্রীয়, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে কোন প্রভাব বিস্তার না কোরতে পারে। যেহেতু ধর্মকে মানুষের সার্বিক জীবন থেকে বিদায় দেয়া অর্থাৎ সমস্ত ইউরোপের মানুষকে নাস্তিক বানিয়ে দেয়া সম্ভব নয়, তাই শেষ পর্যন্ত ইউরোপীয় রাষ্ট্র ও সমাজ নেতারা দ্বিতীয় পথটাকে গ্রহণ কোরলেন এবং অষ্টম হেনরীর রাজত্বকালে ১৫৩৭ খৃষ্টাব্দে ইংল্যান্ডে প্রথম আনুষ্ঠানিকভাবে এই কাজ অর্থাৎ খৃষ্টান ধর্মকে মানুষের সার্বিক জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন কোরে ব্যক্তিগত জীবনে নির্বাসিত করা হোল, দাজ্জালের জন্ম হোল। ইংল্যান্ডের পরে ক্রমে ক্রমে সমস্ত খৃষ্টান জগৎ এই নীতি গ্রহণ ও প্রয়োগে বাধ্য হোল। এর পর থেকে খৃষ্টান জগতের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষা, আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, এক কথায় জাতীয় জীবনে এই মহাবিশ্বের স্রষ্টার আর কোন কর্ত্তৃত্ব রোইলো না। এর পর ইউরোপীয় খৃষ্টানরা ক্রমেই বস্তুবাদী (Materialistic) হোয়ে পোড়তে শুরু কোরলো। এটা একটা পরিহাস (Irony) যে, যে জাতির সকল লোক এমন একটি ধর্ম গ্রহণ কোরলো যে ধর্মের মূলমন্ত্রই হোচ্ছে আত্মশুদ্ধি, কেউ এক গালে চড় দিলে তাকে অন্য গাল পেতে দাও, জোর কোরে গায়ের কোট খুলে নিলে তাকে আলখেল্লাটাও দিয়ে দাও, সেই জাতি একটি কঠোর বস্তুবাদী সভ্যতার জন্ম দেবে। কিন্তু তাই হোল কারণ পেছনে যেমন বোলে এসেছি, সমষ্টিগতভাবে মানুষ যেটা গ্রহণ ও প্রয়োগ করে সেটার প্রভাবই প্রবল ও শক্তিশালী হোয়ে দাঁড়ায়, ব্যক্তি সেখানে গৌণ ও দুর্বল হোয়ে যায়। খৃষ্টধর্মকে জাতীয় জীবন থেকে ব্যক্তি জীবনে নির্বাসিত কোরে আশা করা যেতো যে জাতীয় জীবনে ধর্মের মূল্যবোধ বিসর্জন দিলেও ব্যক্তি জীবনে ধর্মের প্রভাবে মানুষ পাপ ও অপরাধহীন হবে- কিন্তু কার্য্যক্ষেত্রে তাও হোলো না, যে কোন পরিসংখ্যান বোলে দেবে যে পাশ্চাত্যে, খুন, জখম, ডাকাতি, হাইজ্যাক, বোমাবাজি, ধর্ষণ, ব্যভিচার ইত্যাদি প্রতিদিন ধাই ধাই কোরে বাড়ছে। কারণ সমষ্টিগত বৃহত্তর জীবনের চাপে ব্যক্তি তার নিজস্ব চরিত্র বেশী দিন ধোরে রাখতে পারে না। বিশেষ কোরে যদি জাতীয় জীবনের আইন-কানুন, দণ্ডবিধি, অর্থনীতি ইত্যাদি মানুষের তৈরী করা অর্থাৎ ত্রুটিপূর্ণ হয়। সমষ্টিগত জীবনে এই বস্তুবাদ নিয়ে ইউরোপীয় খৃষ্টানরা গত ৪৭৪ বছরে ক্রমে ক্রমে যান্ত্রিক প্রযুক্তিগত বিজ্ঞান চর্চা কোরে প্রচণ্ড শক্তিশালী হোয়ে উঠলো ও বর্ত্তমানে এই শক্তিবলে সমস্ত পৃথিবীর কর্মকাণ্ড নিয়ন্ত্রণ কোরছে। দাজ্জাল (Dajjal) এখন পূর্ণবয়ষ্ক, যুবক।

দাজ্জালের অর্থাৎ জুডিও খৃষ্টান বস্তুবাদী সভ্যতার আবির্ভাব মানুষ সৃষ্টির সময় থেকে পৃথিবীর ধ্বংস পর্যন্ত সমস্ত ঘটনার মধ্যে সর্ববৃহৎ ঘটনা, নুহের (আঃ) সময়ের মহাপ্লাবনে মানবজাতি ধ্বংস হোয়ে যাবার চেয়েও বড় ঘটনা এই জন্য যে, আল্লাহ যে উদ্দেশ্যে মানুষ, তাঁর খলীফা সৃষ্টি কোরেছিলেন- অর্থাৎ পরীক্ষা কোরে দেখা যে স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিবিশিষ্ট এই সৃষ্টিটি তার স্রষ্টার সার্বভৌমত্বকে সম্মান কোরে স্রষ্টার দেয়া জীবন-বিধান, দীন মোতাবেক জীবন যাপন করে, নাকি সে তার স্বাধীন ইচ্ছাশক্তিকে অপব্যবহার কোরে স্রষ্টার সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান কোরে নিজের জীবন-বিধান নিজেই তৈরী কোরে সেই মোতাবেক তার সমষ্টিগত জীবন যাপন করে। আদম (আঃ) থেকে শুরু কোরে চিরদিন স্রষ্টার সার্বভৌমত্বকে স্বীকার কোরে চলার পর ইহুদীদের জুডাই ধর্মের সংস্কারের ঈসার (আঃ) প্রচেষ্টার বিকৃত রূপটাকে ইউরোপের সমষ্টিগত জীবনে প্রয়োগের ব্যর্থতার ফলে যখন ঐ দীনকে সমষ্টিগত জীবন থেকে ব্যক্তিগত জীবনে নির্বাসিত করা হোল তখন মানবের সমষ্টিগত জীবনে প্রথমবারের মত স্রষ্টার সার্বভৌমত্বকে প্রত্যাখ্যান করা হোল। এই প্রথম এবলিস মানুষকে, বনি-আদমকে তওহীদ থেকে, সেরাতুল মুস্তাকীম থেকে (যে সেরাতুল মুস্তাকীমের ওপর ওঁৎ পেতে বসে থেকে সে আল্লাহর খলীফা বনি আদমের ওপর আক্রমণ চালাবে বোলে আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলো; (কোরান- সুরা আ’রাফ, আয়াত ১৬, ১৭)) দীনুল কাইয়্যেমা অর্থাৎ সনাতন ধর্ম থেকে বিচ্যুত কোরতে সমর্থ হোল। এটা আদম, আল্লাহর খলীফা, প্রতিনিধি সৃষ্টি করার মৌলিক প্রশ্ন, আল্লাহকে দেয়া এবলিসের চ্যালেঞ্জের মৌলিক প্রশ্ন, এই চ্যালেঞ্জে এটাই এবলিসের প্রথম বিজয় তাই দাজ্জালের জন্ম ও আবির্ভাব আদম (আঃ) থেকে কেয়ামত পর্যন্তমানুষের জীবনের সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা।



দুই ॥

আল্লাহর রসুল বোলেছেন- নুহ (আঃ) থেকে শুরু কোরে আল্লাহর এমন কোন নবী হন নি যিনি তাঁর উম্মাহকে, অনুসারীদেরকে দাজ্জাল (Dajjal) সম্পর্কে সাবধান ও সতর্ক কোরে যান নি। আমিও তোমাদের দাজ্জাল (Dajjal) সম্পর্কে সাবধান কোরছি। [আবু ওবায়দা বিন যাররাহ (রাঃ) থেকে তিরমিযি, আবু দাউদ]


এখানে লক্ষ্য করার বিষয় হোচ্ছে এই যে, দাজ্জালের আবির্ভাব মানবজাতির জীবনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও বড় ঘটনা হবার কথায় মহানবী বোললেন, আদম (আঃ) থেকে কেয়ামত পর্যন্ত, কিন্তু সতর্কবাণী দেবার কথায় বোললেন, আদমের (আঃ) বহু পরে নুহ (আঃ) থেকে তাঁর পরবর্ত্তী নবীদের ও তাঁদের উম্মাহদের। অর্থাৎ আদম (আঃ) থেকে নুহের (আঃ) আগে পর্যন্ত যে সব নবী-রসুল (আঃ) এসেছেন তারা তাঁদের উম্মাহদের দাজ্জাল (Dajjal) সম্পর্কে সতর্ক করেন নি। ধরে নেয়া যায় যে, প্রয়োজন ছিলো না, নইলে তারা অবশ্যই তা কোরতেন। প্রশ্ন হোচ্ছে নুহের (আঃ) আগে পর্যন্ত দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে মানুষকে সতর্ক করার প্রয়োজন কেন ছিলো না এবং নুহের (আঃ) সময় থেকে সেটার প্রয়োজন কেন আরম্ভ হোল?

এ প্রশ্নের উত্তর আল্লাহই জানেন, তবে আমি যা বুঝি তা হোচ্ছে এই যে, মানবজাতির ইতিহাসকে দুইটি প্রধান ভাগে বা পর্বে ভাগ করা যায়। প্রথম ভাগটি আদম (আঃ) থেকে নুহের (আঃ) ঠিক আগে পর্যন্ত এবং দ্বিতীয় ভাগটি নুহ (আঃ) থেকে শুরু কোরে আজও চোলছে। নুহের (আঃ) সময়ে মহাপ্লাবন হোয়ে মানুষসহ সমস্ত পৃথিবীর প্রাণী ধ্বংস হোয়ে যেয়ে নুহ (আঃ) থেকে মানবজাতি আবার আরম্ভ হওয়ায় নুহের (আঃ) এক নাম আদমে সানী অর্থাৎ দ্বিতীয় আদম। নুহ (আঃ) থেকে বনি আদমের, মানুষ জাতির জীবনের, ইতিহাসের দ্বিতীয় অধ্যায়, পর্ব আরম্ভ হোল। কোরানে আমরা আদমের (আঃ) পর থেকে নুহ (আঃ) পর্যন্ত কোন নবী-রসুলের নাম পাই না। কিন্তু তার মানে এ নয় যে, ঐ সময়ের মধ্যে কোন নবী রসুল আল্লাহ পৃথিবীতে পাঠান নি; অবশ্যই তিনি পাঠিয়েছেন এবং বহু সংখ্যায় পাঠিয়েছেন। কারণ এক লাখ চব্বিশ হাজার, মতান্তরে দুই লাখ চব্বিশ হাজার নবী-রসুলের মধ্যে কোরানে আমরা নাম পাই মাত্র জনাত্রিশেক। বাকিরা কোথায়? কবে এসেছেন? কোরানে আল্লাহও বোলেছেন- আমি পৃথিবীর প্রতি জনপদে, লোকালয়ে আমার নবী পাঠিয়েছি (কোরান- সুরা ইউনুস, আয়াত ৪৭, সুরা নহ্‌ল, আয়াত ৩৬, সুরা রা’দ, আয়াত ৭)। এও বোলেছেন- তাদের (পূর্ববর্ত্তী নবীরসুলদের) কতকের সম্বন্ধে তোমাকে [মোহাম্মদকে (দঃ)] জানালাম, কতকের সম্বন্ধে জানালাম না (কোরান- সুরা মো’মেন, আয়াত ৭৮)। এই যে মাত্র ত্রিশ জনের মত নবী-রসুলদের নাম আল্লাহ তাঁর শেষ নবীর মাধ্যমে আমাদের জানালেন, তারা সবাই নুহের (আঃ) পর, তাঁর আগের নয়। তার মানে নুহের (আঃ) আগে মানবজাতির মধ্যে বিরাট সংখ্যার নবী-রসুল প্রেরিত হোয়েছেন যাদের নাম এবং কে পৃথিবীর কোথায়, কোন্‌ জাতি, কোন্‌ জনপদে প্রেরিত হোয়েছেন তা আমাদের জানা নেই।

হিন্দু শাস্ত্রে (প্রকৃতপক্ষে হিন্দু বোলে কোন ধর্ম বা হিন্দু শাস্ত্র বোলে কোন শাস্ত্র পৃথিবীতে নেই। বেদ, উপনিষদ, গীতায়, পুরাণে কোথাও হিন্দু শব্দই নেই। শব্দটি এশিয়া মাইনর, খুব সম্ভব তুর্কী দেশ থেকে এসেছে সিন্ধু শব্দের অপভ্রংশ হিসাবে। উপমহাদেশে প্রচলিত এই ধর্মের প্রকৃত নাম সনাতন ধর্ম, কোরানে যেটাকে বলা হোয়েছে দীনুল কাইয়্যেমা, শাশ্বত, চিরন্তন ধর্ম, অর্থাৎ তওহীদ (কোরান- সুরা রূম, আয়াত ৪৩, সুরা বাইয়্যেনা, আয়াত ৫))। মানবজাতির জীবনের আয়ুষ্কালকে চারটি ভাগে ভাগ করা হোয়েছে এবং ভাগগুলিকে এক একটি যুগ বলা হোয়েছে। প্রথম যুগের নাম সত্য যুগ, দ্বিতীয় যুগের নাম ত্রেতা যুগ, তৃতীয় যুগের নাম দ্বাপর যুগ ও চতুর্থ যুগের নাম কলি যুগ এবং তার পরই অর্থাৎ কলি যুগ শেষ হোলেই মহাপ্রলয় অর্থাৎ কেয়ামত হোয়ে মানুষ, পৃথিবী সবই শেষ হোয়ে যাবে। ঐ ধর্মমতে সত্যযুগে সত্য ও মিথ্যার সংঘর্ষ হোলে শতকরা একশ’ বারই সত্য জয়ী হতো, মিথ্যা পরাজিত হতো; ত্রেতা যুগে সত্য ও মিথ্যার সংঘর্ষ হোলে শতকরা পঞ্চাশবার সত্য জয়ী এবং শতকরা পঞ্চাশবার মিথ্যা জয়ী হতো, দ্বাপর যুগে ঐ রকম সংঘর্ষ হোলে মিথ্যা শতকরা পঁচাত্তর বার জয়ী, সত্য পঁচিশবার জয়ী ও শেষ কলিযুগে সত্য-মিথ্যার সংঘর্ষে মিথ্যা শতকরা একশ’ বারই জয়ী ও সত্য একশ’ বারই পরাজিত হবে। এটা একটা চিত্তাকর্ষক ব্যাপার যে, হিন্দু ধর্মের আবাসভূমি এই ভারত উপমহাদেশ থেকে বহু দুরে গ্রীক ও রোমানদের প্রাচীন ধর্মেও মানবজাতির আয়ুষ্কালকে চার ভাগে ভাগ করা হোয়েছে। প্রথমটি স্বর্ণ যুগ, দ্বিতীয়টি রৌপ্য যুগ, তৃতীয়টি তাম্র যুগ ও শেষটি লৌহ যুগ। মোটামুটি হিন্দু ধর্মের বিভাগের অনুরূপ। এসলাম ধর্মে ঠিক অমন পরিষ্কার যুগ বিভাগ না থাকলেও বর্ত্তমান সময় যে শেষ যুগ অর্থাৎ আখেরী যমানা তা সর্বত্র গৃহীত এবং মহানবীর বিভিন্ন হাদীস দিয়ে সমর্থিত। সনাতন ধর্মমতে সত্য যুগে মানুষের আয়ু ছিলো এক লক্ষ বছর, ত্রেতা যুগে দশ হাজার বছর, দ্বাপরে দুই হাজার এবং কলি যুগে অর্থাৎ বর্ত্তমানে একশ’ বিশ বছর। মনে হয় এটা গড়পড়তা আয়ু ছিলো না, ঊর্দ্ধতম আয়ু ছিলো কারণ বর্ত্তমান কলি যুগে মানুষ ঊর্দ্ধতম একশ’ বিশ বছরের মত বাঁচে দেখা যাচ্ছে।

যা হোক, এখন প্রশ্ন হোচ্ছে নুহ (আঃ) কোন্‌ যুগের নবী ছিলেন? কতকগুলি কারণ থেকে আমার মনে হয় তিনি দ্বাপর যুগে জন্মেছিলেন। কোরানে আল্লাহ বোলেছেন- নুহ নয়শ’ পঞ্চাশ বছর তাঁর জাতির মধ্যে ছিলেন (কোরান- সুরা আন্‌কাবুত, আয়াত ১৪)। আল্লাহ এখানে শব্দ ব্যবহার কোরেছেন ‘নাকেশ’ অর্থাৎ তাঁর জাতির মধ্যে ছিলেন। এখানে স্পষ্ট নয় যে নুহ (আঃ) তাঁর জাতির মধ্যে মোট সাড়ে নয়শ’ বছর ছিলেন, নাকি নবুয়াত পাবার পর সাড়ে নয়শ’ বছর তাঁর জাতির মধ্যে তওহীদ প্রচার কোরে ব্যর্থ হোয়েছিলেন। যদি ধোরে নেই যে, তিনি তওহীদ প্রচার কোরেছেন সাড়ে নয়শ’ বছর তবে অন্তত আরও চার পাঁচশ’ বছর ওর সাথে যোগ কোরতে হবে, কারণ অবশ্যই তিনি জন্মের সঙ্গে সঙ্গে নবুয়াত পান নি, একটা পরিণত বয়সে পেয়েছেন; অর্থাৎ এই দাঁড়ায় যে, মহাপ্লাবনের সময় তাঁর বয়স ছিলো চৌদ্দশ’ বা পনেরশ’ বছর। তারপর মহাপ্লাবনের পর তাঁর মুষ্টিমেয় অনুসারীদের মাঝেও তিনি বেশ কিছুকাল বেঁচেছিলেন। অর্থাৎ মোট দু’হাজার বছরের কাছাকাছি। আর যদি ধরে নেই যে, তিনি তাঁর জাতির মধ্যে মোট সাড়ে নয়শ’ বছর ছিলেন এবং তারপর মহাপ্লাবন হোল, তাহোলেও তিনি প্লাবনোত্তর যে সময়টা তাঁর অনুসারীদের মধ্যে কাটালেন সেটা যদি তিন, চার বা পাঁচশ’ বছর হোয়ে থাকে তা হোলেও সেই দু’হাজার বছরের কাছাকাছিই যাচ্ছে। দ্বাপর যুগের মানুষের ঊর্দ্ধতম আয়ু ছিলো দেড় দু’হাজার বছর। তাই আমি নুহকে (আঃ) দ্বাপর যুগের নবী মনে কোরি।

এবার আসা যাক দাজ্জালের আবির্ভাবের ও সে সম্বন্ধে সতর্কীকরণের কাজ নুহ (আঃ) থেকে আরম্ভ হবার কারণে। এর কারণ হোল সত্য ও ত্রেতা যুগে দাজ্জালের জন্মের সম্ভাবনাই ছিলো না। কারণ সত্য ও মিথ্যার যুদ্ধে সত্য যুগে শতকরা একশ’ বার ও ত্রেতা যুগে শতকরা পঞ্চাশ বারই সত্যের যেখানে জয় হতো সেখানে দাজ্জালের জন্মের সম্ভাবনা (Potentiality) ছিলো না। কারণ মূলতঃ দাজ্জাল (Dajjal) হোচ্ছে চাকচিক্যময় প্রতারক যাকে আল্লাহর রসুল কায্‌যাব অর্থাৎ মিথ্যা, মিথ্যাবাদী বোলে আমাদের সঙ্গে পরিচয় কোরিয়ে দিয়েছেন। দ্বাপর যুগে অর্থাৎ নুহের (আঃ) সময় থেকে আরম্ভ হোল দাজ্জালের মত একটি মিথ্যার আবির্ভাবের সম্ভাবনা, কারণ এই যুগে সত্য ও মিথ্যার দ্বন্দ্বে জয় পরাজয়ের অনুপাত হোয়ে দাঁড়ালো শতকরা পঁচাত্তর বার মিথ্যার জয়। তাই নুহ (আঃ) থেকেই আরম্ভ হোল প্রত্যেক নবীর দাজ্জালের আবির্ভাব সম্বন্ধে সতর্কবাণী, যদিও প্রকৃতপক্ষে দাজ্জালের জন্ম হবে ঘোর কলিযুগে, বর্ত্তমানে, তবুও যেহেতু শতকরা পঁচাত্তর ভাগ মিথ্যার জয়ের সময় আরম্ভ হোল দ্বাপর যুগ থেকে, কাজেই তখন থেকেই নবী রসুলদের সতর্কবাণীও শুরু হোল।

বিশ্বনবীর যেসব হাদীসে আমরা দাজ্জালের বন্দী হোয়ে থাকার ও যথাসময়ে প্রকাশ হবার কথা পাই সেগুলির প্রকৃত অর্থ এটাই; তখনকার দিনের মানুষকে রূপক অর্থে বলা। কোন অজানা দ্বীপে দাজ্জাল (Dajjal) শৃংখলিত হোয়ে থাকাটা তার ঐ সম্ভাবনার (Potentiality) কথাই রূপকভাবে বর্ণিত। আদম (আঃ) থেকে কেয়ামত পর্যন্ত অর্থাৎ মানবজাতির সম্পূর্ণ আয়ুষ্কালের মধ্যে সর্ববৃহৎ ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হোলেও দাজ্জাল (Dajjal) সম্পর্কে সাবধানবাণী আদমের (আঃ) অনেক পরে নুহ (আঃ) থেকে আরম্ভ কেন হোল তার কারণ এই। অর্থাৎ নুহের (আঃ) আগে সত্য ও ত্রেতা যুগে দাজ্জালের মত এতবড় মিথ্যার প্রকাশ ও তার পৃথিবীকে পদানত করার কোন সম্ভাবনা (Potentiality) ছিলো না।

এখানে বিভিন্ন হাদীসে বর্ণিত ইবনে সাইয়াদ (রাঃ) সম্বন্ধে কয়েকটি কথা বলা প্রয়োজন, কারণ প্রকৃত ব্যাপার বুঝতে না পেরে একে অনর্থক অতি গুরুত্ব দেয়া হোয়েছে, এমনকি মেশকাতে একটি পুরো অধ্যায়ই ইবনে সাইয়াদের ওপর দেয়া হোয়েছে, অথচ এটা এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাই নয়।

ব্যাপারটা এই: বিশ্বনবীর সময় মদীনায় এক ইহুদী পরিবারে এক শিশু জন্ম নেয়। শিশুটি বোধহয় কিছুটা অস্বাভাবিক ছিলো, কারণ এ খবর মহানবীর কাছে পৌঁছলে তিনি তাকে দেখতে যান। কিন্তু একে সেই নির্দিষ্ট দাজ্জাল (Dajjal) বোলে আল্লাহর রসুল অবশ্যই মনে করেন নি। যেখানে তিনি জানেন যে, প্রকৃত দাজ্জাল (Dajjal) তাঁর বহু পরে মাহ্‌দী (আঃ) ও ঈসার (আঃ) সময় আবির্ভূত হবে এবং ঈসার (আঃ) হাতে ধ্বংস হবে সেখানে তিনি তাঁর নিজের পবিত্র উপস্থিতির সময় মদীনায় কাউকে সেই নির্দিষ্ট দাজ্জাল (Dajjal) বোলে মনে কোরবেন কেমন কোরে? তাছাড়া তিনি তো নিজেই বোলেছেন যে দাজ্জাল (Dajjal) মক্কায় এবং মদীনায় প্রবেশ কোরতে পারবে না (হাদীস- বোখারী এবং মোসলেম) অথচ ইবনে সাইয়াদ (রাঃ) জন্মেছেনই মদীনায় এবং মক্কাতেও গেছেন হজ্ব কোরতে। তাছাড়া ইবনে সাইয়াদ (রাঃ) মোসলেম হোয়েছিলেন এবং তার দাজ্জাল (Dajjal) হওয়ার সম্বন্ধে নিজেই বোলেছেন- আল্লাহর রসুল কি বলেন নি যে, দাজ্জালের কোন সন্তান হবে না, অথচ আমার সন্তান আছে; তিনি কি বলেন নি যে, দাজ্জাল (Dajjal) কাফের হবে আর আমি মোসলেম (হাদীস- আবু সাইদ খুদরী (রাঃ) থেকে মোসলেম)। মোট কথা মদীনার আবু সাইয়াদ (রাঃ) দাজ্জাল (Dajjal) ছিলেন না এবং তার দাজ্জাল (Dajjal) হবার কোন সম্ভাবনাই ছিলো না। যে ঈসার (আঃ) হাতে মৃত্যুর কথা বিশ্বনবী ভবিষ্যদ্বাণী কোরে গেছেন, সেই ঈসার (আঃ) বহু পূর্বেই ইবনে সাইয়াদের (রাঃ) স্বাভাবিক মৃত্যু হোয়েছে। কখনো কখনো আল্লাহর রসুল নবুয়াতের মিথ্যা দাবিদার ও অত্যাচারী শাসকদের দাজ্জাল (Dajjal) বোলে অভিহিত কোরেছেন, কিন্তু তা আখেরী যমানার সেই নির্দিষ্ট দাজ্জাল (Dajjal) নয় যার সম্বন্ধে নবী রসুলরা মানবজাতিকে সতর্ক ও সাবধান কোরে এসেছেন। অথচ বুঝতে না পেরে ইবনে সাইয়াদকে (রাঃ) সেই প্রকৃত দাজ্জাল (Dajjal) বোলে চিহ্নিত করার চেষ্টায় হাদীসে একটি পুরো অধ্যায়ই যোগ করা হোয়েছে। আমি এর কোন গুরুত্ব দেই না, কারণ প্রকৃত দাজ্জাল (Dajjal)কে আমি আল্লাহ ও তাঁর রসুলের দয়ায় চিহ্নিত কোরতে পেরেছি।

বিশ্বনবীর সময় মানুষ যে বর্ত্তমানের জুডিও-খৃষ্টান যান্ত্রিক সভ্যতার মত আত্মাহীন একটি মহাশক্তি সম্বন্ধে ধারণা কোরতে অসমর্থ ছিলো, যে জন্য তাঁকে এ সম্বন্ধে রূপক (Alligorically) বর্ণনা কোরতে হোয়েছে, তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ এই ইবনে সাইয়াদের (রাঃ) ঘটনা ও ওটাকে এত গুরুত্ব দেয়া।



তিন ॥

আল্লাহর রসুল দাজ্জালের ফেত্‌না থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন। [আয়েশা (রাঃ) থেকে বোখারী]


এই হাদীসটিকে আমি দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্বের ব্যাপারে একটি উল্লেখযোগ্য হাদীস বোলে মনে কোরি। কারণ লক্ষ্য কোরতে হবে, আল্লাহর কাছে আশ্রয় কে চাইছেন। তিনি আর কেউ নন, তিনি সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, সমগ্র মানবজাতির পথ প্রদর্শক, আল্লাহর কয়েক লক্ষ নবী-রসুলের (আঃ) নেতা, মাকামে মাহ্‌মুদায় যে একটি মাত্র মানুষকে আল্লাহ স্থান দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, মানুষ জাতির মুকুটমণি মোহাম্মদ বিন আবদ আল্লাহ (দঃ)। এই মানুষ যখন কোন ফেত্‌না অর্থাৎ বিপদ, সংকট, অশান্তি, গোলযোগ থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করেন তবে সে ফেত্‌না কত বড় ফেত্‌না সেটা বোঝাবার জন্য যুক্তি-তর্কের প্রয়োজন করে না। এখানে আমি আবার বোলছি, আল্লাহর রসুল দাজ্জালের আবির্ভাবকে যে গুরুত্ব দিয়ে গেছেন আমাদের আলেম বোলে পরিচিত শ্রেণীটি তার লক্ষ ভাগের এক ভাগও দেননি। যে ভয়াবহ ফেত্‌না থেকে আল্লাহর সর্বশ্রেষ্ঠ নবী আল্লাহর কাছে আশ্রয় চেয়েছেন, আল্লাহর সার্বভৌমত্বকে, রবুবিয়াতকে প্রত্যাখ্যান কোরে সমস্ত মানব জাতিকে দিয়ে নিজেকে রব, প্রভু বোলে স্বীকার কোরিয়েছে, সেই দাজ্জালের চেয়ে এই শ্রেণীর কাছে দাড়ি, টুপি এবং অন্যান্য অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারগুলি অনেক বেশী প্রয়োজনীয়, গুরুত্বপূর্ণ। কারণও আছে। আকীদার বিকৃতির জন্য এই দীনুল এসলামের লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, এর অস্তিত্বের কারণ এদের সামনে থেকে অদৃশ্য হোয়ে যেয়ে অন্য লক্ষ্য, অন্য উদ্দেশ্য এসে স্থান কোরে নিয়েছে। সুতরাং অবশ্যম্ভাবীরূপে তাদের অগ্রাধিকারের (Priority) ধারণাও বিকৃত হোয়ে গেছে। তাই তাদের কাছে প্রকৃত তওহীদ ও তওহীদ প্রতিষ্ঠার জেহাদের চেয়ে দাড়ি, টুপি, মোছ, পাজামার গুরুত্ব বেশী। এদের অগ্রাধিকারের ধারণা (আকীদা) সেই প্রতিবেশীদের মত যারা কপালে ডাকাতের গুলী লেগে নিহত গৃহস্বামীর মৃতদেহ দেখে বোলেছিলেন- ইস্‌! অল্পের জন্য চোখটা বেঁচে গেছে। যাক্‌, এখানে ও বিষয় আলোচনার নয়, এখানে শুধু দাজ্জালের আবির্ভাবের গুরুত্বের কথা (এ বিষয়ে পাঠকের কৌতুহল হোলে তাকে আমার লেখা “এ ইসলাম ইসলামই নয়” বইটি পড়তে অনুরোধ কোরছি)। আল্লাহর কাছে দাজ্জালের ফেত্‌না থেকে বিশ্বনবীর আশ্রয় প্রার্থনা বুঝিয়ে দেয় যে, দাজ্জালের আবির্ভাব কত বড় ঘটনা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×