বাইবেলের নতুন নিয়মে (New Testament) ভবিষ্যদ্বাণী করা আছে যে, পৃথিবীর শেষ সময়ে (Last hour) Anti-Christ আবির্ভূত হবে। Anti-Christ- এর শাব্দিক অনুবাদ হোচ্ছে খৃষ্ট-বিরোধী। আমি মনে কোরি এই Anti-Christ-ই বিশ্বনবী বর্ণিত দাজ্জাল (Dajjal)। অবশ্য দাজ্জাল (Dajjal) শব্দের অর্থ যেমন বর্ত্তমানের ইহুদী-খৃষ্টান জড়বাদী যান্ত্রিক সভ্যতাকে নিখুঁত ও পরিপূর্ণভাবে বর্ণনা করে Anti-Christ শব্দটা ততটা করে না। দাজ্জাল (Dajjal) শব্দের অর্থ হোচ্ছে এমন একটি জিনিস যা এমন চাকচিক্যময় যে তা মানুষের মন মগজকে বিমোহিত কোরে ফেলে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে ঠিক তার বিপরীত, অর্থাৎ প্রতারক, বর্ত্তমান যান্ত্রিক সভ্যতার নিখুঁত বর্ণনা। এই আত্মাহীন সভ্যতার যান্ত্রিক প্রযুক্তির উৎপাদিত বিস্ময়কর সৃষ্ট বস্তু মানুষের মনকে ধাঁধিয়ে ফেলে, কিন্তু ভেতরে আত্মা নেই বোলে এর অনুসারীদের মানবেতর জীবে পরিণত করে।
বাইবেলের চার জায়গায় Anti-Christ (খৃষ্ট-বিরোধী বা জিশু-শত্রু) এর উল্লেখ আছে। আমি একটা একটা কোরে ওগুলোর উদ্ধৃতি দিচ্ছি। আল্লাহর রসুল বর্ণিত দাজ্জালের সাথে বাইবেল বর্ণিত Anti-Christ-এর সাদৃশ্য অত্যন্ত চিত্তাকর্ষক। এই উদ্ধৃতিগুলো দিচ্ছি New World Testament of the Holy Scriptures থেকে। Authorised of King James Version-এর সঙ্গে এর ভাষার কিছু পার্থক্য ছাড়া মূল বক্তব্যে কোন অমিল নেই।
1. Young children, it is the last hour, and, just as you have heard that Anti-Christ is coming even now there have come to be many Anti-Christs; from which fact we gain the knowledge that is the last hour(Acts: 1 Jo:18).
অর্থাৎ- তরুণ সন্তানগণ! এখন পৃথিবীর শেষ সময় এবং তোমরা শুনেছো যে খৃষ্ট-বিরোধী (জিশু-শত্রু) আসছে; ইতোমধ্যেই অনেক জিশু বিরোধী এসে গেছে যা থেকে আমরা জানতে পারছি যে এটাই শেষ সময় (আখেরী যমানা)।
বিশ্বনবীর বর্ণিত দাজ্জালের সঙ্গে এখানে দু’টি মিল পাচ্ছি। একটি দাজ্জালের আবির্ভাবের সময় অর্থাৎ আখেরী যমানা (Last hour) দ্বিতীয়টি বিশ্বনবী নির্দিষ্ট দাজ্জাল (Dajjal)কে ছাড়াও অন্যান্য যালেম, প্রতারক, মিথ্যাবাদীকে কখনো কখনো দাজ্জাল (Dajjal) বোলে অভিহিত কোরেছেন। যদিও আখেরী যমানার নির্দিষ্ট দাজ্জালের কথাও ভবিষ্যদ্বাণী কোরে গেছেন। বাইবেলে একাধিক Anti-Christ ইতোমধ্যেই এসে গেছে বলা হোয়েছে।
2. Who is the liar if it is not the one that denies that Jesus is the Chirst? This is the Anti-Christ, the one that denies the Father and the Son (Acts: 1 Jo 2:22).
অর্থাৎ- যে জিশুকে খৃষ্ট বোলে অস্বীকার করে সে যদি মিথ্যাবাদী না হয় হবে মিথ্যাবাদী আর কে? সেই হোচ্ছে খৃষ্ট-বিরোধী (জিশু-শত্রু) Anti-Christ যে পিতা (Father) এবং পুত্রকে (Son) অস্বীকার করে।
বিশ্বনবী দাজ্জাল (Dajjal)কে মিথ্যাবাদী বোলে বর্ণনা কোরেছেন এখানে বাইবেলে Anti-Christ সম্বন্ধে ঠিক সেই শব্দ ব্যবহার করা হোয়েছে- liar, মিথ্যাবাদী। বাইবেলে Anti-Christ কে মিথ্যাবাদী বলা হোয়েছে এই জন্য যে সে পিতা (God) ও পুত্রকে (Jesus) অস্বীকার কোরবে।
মনে রাখতে হবে খৃষ্টানরা তাদের বিকৃত আকীদায় ঈসাকে (আঃ) আল্লাহর ছেলে এবং উভয়কে একই সত্তা বোলে মনে করে। অর্থাৎ বাইবেলের কথায় বলা হোচ্ছে আল্লাহকে অস্বীকার কোরবে। মহানবী বোলেছেন দাজ্জাল (Dajjal) নিজেকে মানুষের রব বোলে ঘোষণা কোরবে ও মানবজাতিকে বোলবে তাকে রব বোলে স্বীকার কোরে নিতে- অর্থাৎ আল্লাহকে অস্বীকার কোরতে।
3. Every inspired expression that confesses Jesus Christ as having come in the flesh originates with God, but every inspired expression that does not confess Jesus does not originate with God. Furthermore, this is the Anti-Christ's (inspired expression) which you have heard was coming, and now it is already in the world (Acts: 1 Jo 4:2, 3).
অর্থাৎ- প্রত্যেক প্রত্যাদিষ্ট অভিব্যক্তি যেটা স্বীকার করে যে জিশুখৃষ্ট রক্ত-মাংসে আবির্ভূত হোয়েছেন সেটা ঈশ্বরের নিকট থেকে এসেছে, কিন্তু প্রত্যেক প্রত্যাদিষ্ট অভিব্যক্তি যেটা জিশুকে স্বীকার করেন না সেটা, ঈশ্বরের নিকট থেকে আসে নাই। অধিকন্তু, সেটাই হোচ্ছে জিশু বিরোধীর, Anti-Christ (প্রত্যাদিষ্ট অভিব্যক্তি) ভবিষ্যতে যার আগমন সম্বন্ধে তোমরা শুনেছো, এবং সে ইতোমধ্যেই পৃথিবীতে এসে গেছে।
বাইবেলের এই কথাগুলিতেও আমরা পাচ্ছি যে Anti-Christ ভবিষ্যতে আবির্ভূত হবে (which you have heard was coming) এবং সে জিশুকে অস্বীকার কোরবে। মহানবীর কথারই পুনরাবৃত্তি।
4. For many deceivers have gone forth in the world, persons not confessing Jesus Christ as coming in the flesh. This is the deceiver and the Anti-Christ (Acts: 2 Jo-7).
অর্থাৎ- অনেক প্রতারক পৃথিবীতে এসেছে জিশুখৃষ্ট রক্ত মাংসে আবির্ভূত হোয়েছেন এ কথা যারা স্বীকার করেন নাই। এরাই হোচ্ছে প্রতারক, জিশু বিরোধী (Anti-Christ)।
বাইবেলের এই কথাগুলো বিবেচনা করার সময় আমাদের মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর কেতাব বাইবেল (এনজিল) আর সে প্রকৃত বাইবেল নেই। মুসা (আঃ) যে হিব্রু ভাষায় কথা বোলেছেন সে ভাষাই নেই, বাইবেলও সে ভাষায় নেই। ঈসা (আঃ) যে এ্যারামাইক ভাষায় কথা বোলতেন, সেই এ্যারামাইক ভাষায় লিখিত বাইবেল (এনজিল) পৃথিবীর কোথাও নেই (গত শতাব্দিতে Gospel of Barnabas অর্থাৎ ঈসার (আঃ) ঘনিষ্ঠ সাহাবী বার্নাবাসের লিখিত বাইবেলটি তার কবর থেকে উদ্ধার করা হোয়েছে, তবে খৃষ্টান পুরোহিত সমাজ সেটিকে ধর্মগ্রন্থ হিসাবে স্বীকৃতি দেন নি কারণ এ বাইবেলটিতে ঈসার (আঃ) বক্তব্য মোটামুটি অবিকৃত অবস্থায় আছে, ফলে তা প্রচলিত বাইবেলগুলির সাথে বুনিয়াদি বিষয়গুলিতে সাংঘর্ষিক)। আদি বাইবেল প্রথমে গ্রীক ও পরে ল্যাটিন (রোমান) ও পরে বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হোয়ে অন্যরূপ ধারণ কোরেছে। বাইবেলের আদি একেশ্বরবাদ (তওহীদ) বিকৃত হোয়ে ত্রিত্ববাদে পরিণত হোয়েছে যেমন এবরাহীম (আঃ) তওহীদ ভিত্তিক মিল্লাতে এবরাহীম অর্থাৎ দীনে হানীফ ক্রমে বিকৃত হোয়ে আরবের পৌত্তলিকতায় পরিণত হোয়েছিলো। কাজেই Anti-Christ অর্থাৎ দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে বাইবেলের ভাষাও অবশ্যই বদলে গেছে। এতকিছু সত্ত্বেও বহু অনূদিত, বিকৃত বাইবেলেও চারবার উল্লেখ করা Anti-Christ সম্বন্ধে যে কয়টি বিষয় বলা হোয়েছে তার মধ্যে দাজ্জাল (Dajjal) সম্বন্ধে বিশ্বনবীর বর্ণনার সাদৃশ্য লক্ষণীয়।
ক) আল্লাহর রসুল বোলেছেন দাজ্জালের আবির্ভাব হবে আখেরী যমানায়। বাইবেল বোলছে Anti-Christ-এর আবির্ভাব হবে last hour-এ, অর্থাৎ আখেরী যমানায় (Acts: 1 Jo. 2:18, 4:3)।
খ) মহানবী বোলেছেন দাজ্জাল (Dajjal) আল্লাহকে অস্বীকার কোরে নিজে রব হবার দাবী কোরবে। বাইবেল বোলছে Anti-Christ পিতা (Father,God) ও পুত্রকে (Son,Jesus) অস্বীকার কোরবে (Acts: 1 Jo. 2:22, 4:3, 2 Jo 7)।
গ) বিশ্বনবী দাজ্জাল (Dajjal)কে প্রতারক বোলেছেন। বাইবেলও Anti-Christ কে Deceiver (প্রতারক) বোলছে (Acts 2 Jo 7)।
ঘ) আল্লাহর নবী দাজ্জাল (Dajjal)কে মিথ্যাবাদী (কায্যাব) বোলে আখ্যায়িত কোরেছেন। বাইবেলও Anti-Christ কে Liar (মিথ্যাবাদী) বোলছে (Acts: 1 Jo 2:22)।
এটি একটি বিরল ও নিষ্ঠুর পরিহাস যে, যে খৃষ্টানরা (যদিও তখনও তারা সম্পূর্ণ হয় নি, আংশিকভাবে জুডাই অর্থাৎ ইহুদী ধর্মেই আছে) বাইবেলে যে Anti-Christ-এর আবির্ভাব সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী কোরছেন এবং মানুষকে সে সম্বন্ধে সাবধান কোরে দিচ্ছেন, অথচ জানেন না তাদেরই কাজের ফলে Anti-Christ অর্থাৎ দাজ্জালের জন্ম হবে এবং তাদের ভবিষ্যৎ বংশধরেরাই হবে Anti-Christ এর প্রথম সারির অনুসারী।