গত ১৩ই মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুটি ছাত্র সংগঠনের সংঘর্ষে নিহত হন ছাত্রশিবির এর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শরীফুজ্জামান নোমানী। ঘটনার পরদিন জাতীয় দৈনিকগুলোতে রাজধানীর পান্থপথে অবস্থিত দেশের বৃহত্তম শপিংমল বসুন্ধরা সিটিতে সংগঠিত অগ্নিকান্ডটি হেড লাইনে আসাতে আমাদের সরকারী ছাত্রসংগঠন কতৃক এত বড় একটি বর্বর হত্যাকান্ড ও সন্ত্রাসের ঘটনা চাপা পড়ে যায়। পত্রিকাগুলো নির্লজ্জ ভাবে মুল খবরটি চেপে যায় এবং দায়সারা গোছের বিকৃত খবর পরিবেশন করে। পত্রিকায় প্রকাশিত বিভিন্ন ছবি দেখে ধারণা করা যায় সেদিন ছাত্রলীগের সোনার ছেলেরা অস্র সজ্জিত অবস্থায় প্রশাসন, পুলিশ ও র্যাবের সহযোগীতায় শিবিরকর্মীদের উপর নারকীয় হামলা চালায়। ছাত্রলীগ কর্মীরা শুধু হামলা ও খুন করেই শান্ত হয়নি, সাথে পুলিশকে সহযোগী শক্তি হিসাবে ব্যবহার করে শিবির কর্মীদের গণ গ্রেফতার চালিয়েছে। আমাদের ডটার অব পিস্ তাঁর সোনার ছেলেদের এই কীর্তিতে নিঃসন্দেহে খুব খুশী হয়েছেন। আবার যারা রাজনীতির নামে নোংরা নীতির মাধ্যমে জনগণকে ধোকা দিয়ে নিজেদের আখের গোছাতে ব্যস্ত তারাও হয়তঃ বিরোধীপক্ষের ছাত্রনেতার মৃত্যুতে খুশী হয়েছেন। সাধারণ শান্তিপ্রিয় মানুষ, যারা চান আমার সন্তান নিরাপদ ক্যাম্পাসে নিশ্চিন্ত মনে বিদ্যার্জন করে মানুষ হবে, তারা কি খুশী হয়েছেন? মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনিতো আমাদের সোনালী দিনের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন, জনগণ তা বিশ্বাসও করেছে। তাহলে কেন এই সন্ত্রাস, খুন? আমরা কবে দলমত নির্বিশেষে মিলেমিশে দেশ গড়ার কাজ নিয়োজিত হবো?সেদিন কি কখনই আসবেনা যেদিন আমাদের নবীনরা নিরাপদ ক্যাম্পাসে নিঃশংক চিত্তে পড়াশোনা করতে পারবে? বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়াতে সেশনজটের অভিশাপে পড়ে হাজারো ছাত্র-ছাত্রীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে, তাদের অন্তরের কান্না কি জাতীর নেতাদের হ্রদয়কে কখনো ষ্পর্শ করবেনা? আমাদের ডটার অব পিস(?) বিরোধীপক্ষকে হত্যা ও সন্ত্রাসের মাধ্যমে নির্মূল করে দেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান কি?
সরকারদলীয় সোনার ছেলেদের কল্যাণে দেশের অনেকগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে। এতে অবশ্য সরকার প্রধান ও তার মন্ত্রীদের তেমন কোন অসুবিধাই নেই। কারণ, তাদের সন্তানরা এই দেশের গরীব-দুখী অভাবী মানুষের ছেলেমেয়েদের সাথে এইখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পড়ালেখা করেন না। তারা করেন আমেরিকা ও ইউরোপের নামী-দামী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে। সুতরাং, এদেশের যদি সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যায়, আরো মায়ের বুক খালি হয়, তাহলে নেতাদের কিছুই যায় আসেনা। আজ পত্রিকায় পেলাম, সরকার দলীয় এম,পির লোকজন ইসলামীয়া চক্ষু হাসপাতাল দখলে নিয়েছেন, জবি ছাত্রলীগের কথামত এক ব্যাক্তকে টেন্ডার দেয়া হচ্ছে, ইডেনের অধ্যক্ষা ও পরীক্ষাকমিটির প্রধানকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে ছাত্রলীগ কর্মীদের ভর্তি বাণিজ্যে সহযোগিতা না করার কারণে, পটুয়াখালী বি,প্র, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের দুগ্রুপে হল দখল নিয়ে মারামারি হয়েছে ।
ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকারে শুরুটা দেখে আমরা শংকিত। ওয়ান এলেভেনের পরবর্তী পরিস্থিতিতে জন আকাংখা ছিলো দেশে সন্ত্রাস কমবে, মারামারি-খুনাখুনী হ্রাস পাবে, সহনশীল সুস্থ রাজনীতির চর্চা হবে। কিন্তু সার্বিক অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে, আমরা আগের মতই আছি, জন আকাংখাকে হ্রদয়ে ধারণ করতে না পারলে আখেরে কোন লাভ হবে কি?
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০০৯ সকাল ১১:২৯

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




