somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

দৃঢ় প্রতিজ্ঞ সোহেল
একবার যখন দেহ থেকে বা’র হ’য়ে যাব আবার কি ফিরে আসবো না আমি পৃথিবীতে? আবার যেন ফিরে আসি কোনো এক শীতের রাতে একটা হিম কমলালেবুর করুণ মাংস নিয়ে। কোনো এক পরিচিত মুমূর্ষুর বিছানার কিনারে”

কৃতজ্ঞতা স্বীকার কেনো জরুরি?

২৯ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ১২:১৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন। আপনি বাজার থেকে হরহামেশাই অনেক ভালো ভালো টাটকা ফসল কিনছেন। ঘরে নিয়ে ফিরছেন। রান্না করার পরে স্বাদমতো খেয়েও ফেলছেন। কিন্তু একবার কখনো ভেবে দেখেছেন কি? এই পণ্য টি উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত কত মানুষের কত শ্রম , মেধা ও সময় ও স্পর্শ জড়িয়ে আছে? আপনি কি কখনো ভেবে দেখেছেন একজন কৃষকের কথা? একজন শ্রমিকের কথা? একজন খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের কথা? যে মানুষ টি দিনের পর দিন পরিশ্রম করে ফসল ফলায়। আপনি কি জানেন? “ দ্যা বেস্ট” / সব থেকে টাটকা, সব থেকে ভালো এবং সব সব থেকে সুস্বাদু খাবার টি সে আপনার জন্য পাঠিয়ে দেয়?
আপনি কি জানেন? যে চাষিকে দিয়ে এতো সুন্দর সুন্দর সুগন্ধি ধান উৎপাদন করিয়ে নেয় বিভিন্ন বহুজাতিক কোম্পানিগুলো তার পরিশ্রমের মূল্য তারা কতটুকু তাদেরকে দেয়?।
আপনিতো বাজারে গেলে সুন্দর সুন্দর চাউল কেনেন। একবার কি কখনো ভেবে দেখেছেন? ৷ এই ধান টার উৎপাদন থেকে বিপণন পর্যন্ত কতটি ধাপ পেরোতে হয়? কত মানুষের কষ্ট, মেধা , সময়, শ্রম ও ভালোবাসা জড়িয়ে আছে?। কত কষ্টে মানুষকে বুক দিয়ে আগলে রাখতে এই ইতিহাসকে? এই ঐতিহ্যকে? এমনও তো হতে পারে এই চাউল এর মূল উৎপাদক অর্থাৎ “ ধান উৎপাদনকারী” খেটে খাওয়া কৃষকটি তার তার ধানের প্রকৃত মূল্য না পেয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাজার থেকে বাড়ি ফিরেছে! আপনি হয়তো তার দেখা পাবেন না। কিংবা তাদের কাছ থেকে আপনাকে আড়ালে রাখার রাজনীতি নিত্যদিন চলতেই থাকবে। শুধু, খাবারটি খাওয়ার আগে মন থেকে তাদেরকে স্বরণ করুন। তাদের প্রতি একটুখানি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন। হয়তো এর মাধ্যমে উনার অর্থনৈতিক কোন উপকার সাধিত হবে না। তবে, আপনার ভেতরের গহীন থেকে নিসৃত তরঙ্গ সমস্ত প্রকৃতিতে যে ঢেউ জাগাবে, কে জানে! হয়তো সেই তরঙ্গের সাথেই যুক্ত থেকে সকল প্রাণ ও প্রকৃতি কে আগলে রাখতে অসংখ্য প্রাণ তরঙ্গটির প্রগতি নিশ্চিত করবে। গৌতম বুদ্ধের মতে, “When you realize how perfect everything is you will tilt your head back and laugh at the sky.”
কি বলতে বলতে কোথায় চলে গেলাম তাই না?আচ্ছা, আরেকটু বলি, ধরুন, আপনি বাজার থেকে একটি ছাগল কিনে বাড়িতে ফিরলেন। ভাবলেন,কোরবানি করবেন। বাজারে চলমান অর্থ দিয়েই কি আপনার সকল দায় থেকে মুক্তি পেয়ে গেছেন বলে আপনি ভেবে ফেলতে চান?

আপনি কি জানেন? এই ছাগল পালনের জন্য হয়তো কত গৃহিণীকে দিনের পর দিন নিজের সন্তানের মতো করে সেই ছাগল গুলোকে লালন পালন করতে হয়? কত সুন্দর সুন্দর সৃতি জড়িয়ে থাকে ওর সাথে?( গরু, মহিষ, ভেড়া কিংবা শুকর, সকলের প্রতি একই কথা প্রযোজ্য)

অথচ, নিজ ছেলেটার পড়াশোনার খরচ জোগাবার জন্য যখন সেই মাহেন্দ্রক্ষণ চলে আসে। যখন বিক্রির জন্য বাজারে তুলতে হয় ছাগলটিকে কিংবা কশাই আসে বাড়িতে, তখন আপনি কি জানেন? সেই গৃহিণী টি সেই অকৃত্রিম ও অকৃপণ মানুষটি ডুকরে কেঁদে ওঠে? এতো দিনের স্পর্শ ও এতো দিনের সম্পৃক্ততা তাকে গভীরভাবে তাড়িত করে। ভেতর থেকে ক্ষত-বিক্ষত করে দেয়?।

আবার, পর্যাপ্ত পরিমাণ অর্থ যখন সে পায় না, তখন তার হৃদয়ের গহীনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়, ” তার” মূল্য” এই পৃথিবীতে কিভাবে পরিশোধ করা যায়! তা আমি এখনো জানি না । দয়া করে, সেই ক্ষতটির কথা খেয়াল রেখে তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করুন।

আচ্ছা। ধরুন, আপনি প্রচুর ক্ষুধার্ত। রেস্টুরেন্টে আপনার প্রিয় খাবারটি অর্ডার দিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরেই আপনার সামনে সেই খাবারটি এসে গেলো। এবার কি করবেন? হয়তোবা তড়িঘড়ি শুরু করবেন? নাকি, কাহলিল জিবরান তার কবিতায় যেভাবে কপাটকে আলতোভাবে স্পর্শ করলে, তার আগমনী ঘোষণার স্বাগত সঙ্গীত শুনতে পায় সবাই, আপনিও সেভাবে খাবার টিকে আলতো করে ছুঁয়ে দেখে আলিঙ্গনে আলিঙ্গনে মুগ্ধ করে দেবেন? জিবরানের ভাষায়,
“ কোমল আঙুলে আমি আলতোভাবে জানালার কপাটগুলো স্পর্শ করি, এবং আমার আগমনী ঘোষণার স্বাগত সঙ্গীত শুনতে পায় সবাই
শুধুমাত্র যাদের আছে অনুভূতি কেবল তারাই বুঝতে পারে।“

তামিল ভাষায় রচিত গ্রন্থ “কুরাল”-এ এক কবি ও দার্শনিক আজ থেকে ১,২০০ বছর আগে দৈনন্দিন জীবনে কৃতজ্ঞতাবোধের গুরুত্ব নিয়ে উল্লেখ করেছেন। সেখানে একটি অংশে তিনি বলেন, “একজন মানুষ চেষ্টা করলে তাঁর সমস্ত পাপ ধুয়ে ফেলতে পারে। কিন্তু অকৃতজ্ঞতা মহাপাপ, যার থেকে আজ অবধি কেউ মুক্তি পায়নি।” (রিডিংস ফ্রম তিরুক্কুরাল, জি এন দাস, পৃঃ ৩২) ।
ইসলাম ধর্মেও স্পষ্ট করে কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার কথা বলা হয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের বেদ -পুরাণ আদি তেও কৃতজ্ঞতা বোধের কথাটি স্পষ্ট করে বলা হয়েছে। অর্থাৎ, প্রকৃতির সকল জীবের ও জড়ের প্রতি কৃতজ্ঞতা স্বীকার করার বিধান সকল ধর্মেই রয়েছে।
তবে, হ্যাঁ। এই “কৃতজ্ঞতা” ও কৃতজ্ঞতাবোধ” নিয়ে যতটুকু জানা কি়ংবা জানানো দরকার,তার কোনটায় আসলে ঠিকমতো হচ্ছে না। এ জন্য হয়তো প্রকৃতির অসংখ্য অভিমান মানব জাতীকে কলঙ্কের দিকেই ঠেলে দিচ্ছে। কাহলিল জিবরান এর ভাষায়,
“ প্রতি ভোরে আমি তাকে উচ্চস্বরে ডাকি,যখন প্রকৃতি হেসে উঠে,
কিন্তু শুনতে পায় না,
অপরিমিতি তার আসক্ত চোখকে বোঝাই করে দিয়েছে গভীর নিদ্রা রোগে।“ ( সৌভাগ্যের সঙ্গীত, কাহলিল জিবরান, ২৫)

উত্তর আমেরিকার সমসাময়িক দার্শনিক ডাঃ উমা মাইসোরকারের মতে, “আমাদের সবসময় সব কিছুর জন্যে কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ, কিন্তু কখনই অন্যের কাছ থেকে কৃতজ্ঞতা আশা করা উচিৎ না। নিঃস্বার্থ সেবাই আমাদের মূল ধর্ম।

গ্রিক দার্শনিক সিসেরো বলেছেন, “কৃতজ্ঞতাবোধ হল সর্বশ্রেষ্ঠ নীতি।” সুতরাং, কৃতজ্ঞ থাকুন, প্রাণ ও প্রকৃতিকে ভালোবাসুন। নিজে ভালো থাকুন এবং অন্যকে ভালো রাখার জন্য কাজ করুন। পড়ার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
চলবে......
৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×