বিরাট ইসলামি জালসা, আনছার ভাইকে দরকার।
মসজিদের সাপ্তাহিক মুষ্টি তোলা, আনছার ভাইকে দরকার
কারো মেয়ের বিয়ের জন্য মানুষের কাছে হাতপাতা দরকার আনছার আছে।
সমাজপতিদের ছেলে-মেয়েরা কুকর্ম করে ধরা খেছে আনছার ভাইকে দিয়ে
সালিশের ডাক।
আনছার ভাই, এই সমাজেরই মানুষের এক প্রতিনিধি
তারুণ্যে ভরপুর আনছারের যখন পেশিতে শক্তি, রক্তগরম
হাতের কব্জিতে যখন জোড়-
আনছারভাই পাথর গুড়িয়ে মানুষের ইমারত গড়ে দিত।
শুধু কি তাই? নয় সদস্যের সংসার নামের রাষ্ট্রও চালাত আনছার ভাই; খুবই
সহজেই।

আজ আনছারের পেশি সংকুচিত, কব্জি দূর্বল, রক্তহীম হয়ে আসছে-
তাই সমাজপতিরা আনছারকে সমাজের গুরুত্বপূর্ণ বড় বড় কজে লাগায় ।
আনছারভাই ইচ্ছার বিরুদ্ধে, যা নয় তাই, মুখবুজে করে যাচ্ছে…

আনছার ভাইকে কিছু দিন হল আর দেখা যাচ্ছে না মসজিদের ওয়াক্ত
জামাতের কাতারে;
দেখা যায় না মসজিদের মুষ্টিতুলতে-
আনছার ভাই রোগে, শোকে, জড়ায় জীর্ন হয়ে শয্যাগত
অনেক করেছেন এ সমাজের জন্য, ধর্মের জন্য-
তাই আজ বেয়াড়া শরীরটা তার কথা শোনে না-
বিছানায় শুয়ে শুয়ে আনছার ভাই ভাবে – মসজিদের সভাপতি সাহেব তাকে
দেখতে আসবেন- নিশ্চয় ।
না হয় মাতব্বর সাহেব আসবেন…. হয়ত,
কেউ না এলে পড়শীরা দেখতে আসবেই।
নিয়তি লজ্জায়, দুঃখে রাগে, মিটি মিটি হাসে…
আনছার ভাইয়ের রোগ শয্যার পাশে কেউ এল না, খোঁজ খবরও নিল না ।

একদিন এই সংসারী-রাষ্ট্রপতির, মহান সামাজিক জীবের মহাপ্রয়ান ঘটল।

আনছার ভাইয়ের মৃত্যুতে রেকর্ডেড মৃত্যু সংবাদ মাইকিং করা হল না
এমনকি মসজিদের মাইকেও নয় !
যে আনছার মসজিদের উন্নতিকল্পে একদা বাড়ি বাড়ি গিয়ে মুষ্ঠি তুলত….
তার মৃত্যু সংবাদ…………… (ঘোষণা) হল না !
কানে-মুখে সবার কানে কানে আনছার ভাইয়ের মৃত্যু সংবাদ পৌছে গেল ।

তখন তথাকথিত সমাজপতি, মসজিদের সভাপতি আর পাড়ার ভাইদের দায়িত্ব
বেজায় বেড়ে গেল।
আনছার ভাইকে খুবই দ্রুত পুতে ফেলার ব্যবস্থা করার পবিত্র কাজে নেমে
পড়ল সবাই।
এর পরই সর্বাধিক পুত ও পবিত্র কাজটি করার জন্য এক মহান উদ্যোগের
জন্য সকলেই সন্ধায় মিলিত (সভায়) হল:
আনছার ভাইয়ের জিয়ারত হবে দুটি গরু একটি খাসি,
কেউ বলে একটি মহিষ, বিশ কেজি মুরগী হলেই চলবে।
মৃত্যু উপলক্ষে বিরাট ভূড়ি ভোজের বিশাল আয়োজন।
হায়রে সমাজব্যবস্থা, হায়রে ধর্ম, হায়রে মানবতা….
আনছার ভাইয়ের মৃত্যুতে ভোগের উৎসবে মেতে উঠছি আমরা
তার জীবদ্দশায় একফোটা হোমিও প্যাথি ঔষধের জন্য কুড়িটি টাকা,
একটু সহানুভুতি, একটু সুন্দর মুখের ভাষাও দেইনি…

আর আজ আনছারের মৃত্যু উৎসবে ভোগের কি অদ্ভুত আয়োজন !