somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

একরত্তি রাতের গল্প

৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:০৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



[এক]

একটা নির্মল শীতল হাওয়া এসে নাকে লাগতেই ঘুমটা ভেঙে গেলো। শীতলতা মুখ ছুঁয়ে চুলের বনে তার বিচরণ করে মনকে চনমনে করে তুললো নিমিষেই। চোখ মেলে তাকিয়ে দেখি আমাদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে সোমেশ্বরী নদীর সামনে। ব্রীজ পাড় হলেই সুসং পরগণায় যাবো পৌঁছে।

গত দুদিন থেকে চলছে শাস্ত্রকথন। এটা করতে হয়, ওটা করতে হয়। কতশত পুরুষ মিলে করে এসেছে এসব, তোমাকেও করতে হবে। অমান্য করলে শাস্ত্রকে অবজ্ঞা করা হয়। ঈশ্বর তাতে রুষ্ট হবেন। আচ্ছা ঈশ্বর কী অতো সহজেই রুষ্ট হন? শুনেছি তার ধৈর্য্যের শেষ নেই! এই মহাবিশ্বে আমার সামান্য ধৃষ্টতা তিনি তো মনেই রাখবেন না হয়তো।

যাকে বিয়ে করে নিয়ে এলাম তার নাম পৃথা। তার সাথে বিয়ের আগে আমার কোন কথাই হয়নি। দেখা বলতে, সে শুধু ছবিতে। ফটোগ্রাফার হবার সুবাদে আমার বেশকিছু ছবি তার হাত পর্যন্ত পৌঁছালেও আমার হাতে শুধু তার একখানা ছবিই এসেছিলো। আমাকে বলা হলো, যদি সরাসরি দেখা করতে চাও, সে ব্যবস্থা করে দেয়া যাবে। কিংবা অনলাইনেও কথা বলে নিতে পারো। আমার মন সায় দেয়নি। সরাসরি দেখব একবার ভেবেছিলাম কিন্তু সময়ের পর্যাপ্ততা না থাকায় সেটাও হয়নি। বন্ধুরা বললো, পাকা কথা হবার এক সপ্তাহ পর যেহেতু বিয়ে, সেহেতু তুই না হয় ছাদনাতলায় একেবারে বউয়ের মুখ দেখবি, তাছাড়া এতোকাল যে পুষ্পবাণ ছড়িয়ে বলেছিলি, হৃদয়টা মিলে গেলে রুপ-সৌন্দর্য্য সেখানে ম্রিয়মাণ! তুই না হয় বিশ্বাস আর অদৃষ্টতা নিয়েই বিয়ে করে নে। অগ্যতা ইচ্ছেকে জলাঞ্জলি দিয়ে বিয়ের যজ্ঞের জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম।

বিয়ে নামক মহাযজ্ঞ নিয়ে আমার এক সময় যা ভাবনা ছিলো, তা'র অপমৃত্যু ঘটেছিলো একদা প্রেম বাসনায় বর্ষিত হয়ে। এরপর সর্ম্পক রাখাই লাগবে, এমন সব ভাবনা থেকে সরে এসে নিজেকে টিকিয়ে রাখার যুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহন করেছিলাম। বাঙালী পুরুষের জীবনে নারী এলে নাকি জীবনের মোড় পাল্টে যায়। যদিও আমি যে অবস্থাতে ছিলাম তাতে কোনরূপ সমস্যা ছিলো না তবুও বন্ধু আর পরিজনের এবেলা-ওবেলার কথাবৃষ্টি থেকে নিজেকে বাঁচাতেই বিয়েতে রাজী হয়ে গেলাম। আমার শুধু একটাই নির্বিষ শর্ত ছিলো- পাত্রী আমি পছন্দ করতে পারবো না। কেননা আমি এমনই মানবিক যে, কারো মুখের উপর না বলতে পারি না। এর আগে বিয়ে নামক যে সকল কার্যকলাপে আমার উপস্থিতি ছিলো সবকটাতেই আমার মানবিকতা ছিলো দোষী।
অনেক দূরের পথ পেরিয়ে, বিভাগ পেরিয়ে, রাজা দীঘাপতিয়ার রাজ্যে বিয়ে ঠিক হলো আমার। বড় কোন আয়োজন করার ইচ্ছেকে একরকম ঝাপটে রাখা হলো কারণ কন্যা দায়গ্রস্ত পিতার কাছ থেকে আমি কোনরকম অর্থ, উপহার, অলঙ্কার সামগ্রী গ্রহন না করে অনেকের কাছে মানবিক দোষী বলে গৃহীত হয়ে মধ্যম আয়োজনেই স্থিমিত হলাম।

বিয়ের আগের দিন থেকে শাস্ত্র মানতে মানতে আমি একরম ক্লান্ত ছিলাম তারপর মাঝরাতে বিয়ে। ক্লান্ত শরীরে আমার আবার ঘুম একটু বেশীই পায়! ভেবেছিলাম বিয়ের কাজ শেষ হলে ঘুমিয়ে নেবো কিন্তু সে আশা জল হয়ে গেলো। ভোর রাতে বিয়ে শেষ হতেই বাকী সবাই ক্লান্তি ভরা চোখে উঠে দাঁড়িয়ে বাড়ির পথ ধরলো। সারাটি দিন ধরে অনেক শহর পেরিয়ে, অনেক কোলাহল ছুঁয়ে ঠিক সন্ধ্যের আগ মুহূর্তে সোমেশ্বরী নদীর সম্মুখে এসে যাত্রা প্রায় সমাপ্তিতে এলো।
বধূবরণ আর শাস্ত্রানুষ্ঠান শেষ হতে আর ঘন্টাখানেক সময় ফুরিয়ে যেতেই আমি ছুটলাম বাজারের ভীড়ে আগামীকাল প্রীতিভোজের আয়োজন করতে। কাজের ফাঁকে বার বার যে কথাটি মনে হতে লাগলো তা'হল যাকে বিয়ে করে আনলাম তার সাথে এখন পর্যন্ত কোন কথাই বলা হয়নি। সুযোগ যে মেলেনি তা নয়, কিন্তু আগ বাড়িয়ে অচেনা কারও সাথে কথা বলার মহৎগুনটি আমার নেই বলেই হয়তোবা তাছাড়া কন্যা নিজেও কথা বলার আগ্রহে মেঘছাপ দিয়ে রেখেছে। এতোদিনের পরিচিত সব মুখ ছেড়ে এসেছে বলেই হয়তো মুখে তার মেঘছাপ নয়তো বা নতুন মানুষগুলোকে ঠিক মনে ধরছে এমন সব কথাই হচ্ছিল চারপাশের সব কথাযন্ত্রদের কাছ থেকে। পরদিনের আয়োজন আর পরিবেশনের সুখফলের কাজে এদিন রাতেও ঘুম হলো না।

পরদিন সকাল এলো আধো বর্ষা আর অফলাইট রোদ নিয়ে। আমার নিজস্ব যে শোবার ঘর, সেটি আপাতত শাস্ত্রমতে যে বাবা-মাকে পেলাম উনার কন্যা মানে আমার বিবাহিত পরিণীতা আর তার সাথে আসা অতিথিদের দখলে। কিছুতেই সেখানে যাওয়া গেলো না। সারা দুপুর জুড়ে নানাবিদ ভাবনা নিয়ে আয়োজন শেষ করলাম। পরিবেশনে আর বাকী সবাই দায়িত্বে পালনে এসেই আমাকে মুক্তি দিলো।

এরপর সারাটি দিন-সন্ধ্যের শেষে রাত হয়ে এলে, প্রীতিভোজ আয়োজনের সমাপ্তি টেনে সবাই চলে গেলো নানা ধরনের বিবাহিতমার্কা উপদেশে দিয়ে। ঘুমঘরে ঢুকবার সময় ভাবছিলাম, এক জীবনে বিয়ে নিয়ে আমার উচ্ছাস না থাকলেও ভাবনায় ছিলো- যে আমাকে আমার সমস্ত দক্ষ-অদক্ষতা মেনে নিয়ে আমার পাশে আজীবন থাকার প্রত্যয় নিয়ে আমার হাত ধরবে, আমি আজীবন তা'র ভালাবাসা, তা'র নির্ভরতাকে ধরে রাখবো। যেহেতু তা'র সাথে এর আগে কোন কথাই হয়নি, তাই আজ সারারাত দুজনে নিজেদের গল্প বলে রাতের দীর্ঘ সাধনায় একটা নতুন সকাল শুরু করবো।





[দুই]

ঘুমঘরে ঢুকতেই আমাকে যে বিস্মিত হতে হবে সেটা ভাবতে পারিনি। কিন্তু কিছুটা বিস্মিত হতে হলো। বধূবেশে যাকে আশা করেছিলাম তিনি সে বেশে নেই। জিন্সপ্যান্ট আর টপস্ পড়ে হাতে স্মার্টফোন নিয়ে বিছানার পাশে যে পড়ার টেবিল সেখানে পা তুলে চেয়ারে হেলান দিয়ে নিবিষ্ট মনে স্মার্টফোন টিপছেন।
আমার পায়ের শব্দ পেয়ে বললেন, আসুন রয় বাবু। আপনার সাথে বিস্তর কথা আছে। আপনার জন্য বিস্তর কথা জমিয়ে রেখেছি। আপনি যে প্রায়শই উপস্থাপন করতেন, "অন্ধের হাতে তবুও বন্ধুক দেয়া যায়, প্রেমিকার হাতে নয়" সে ব্যপারে কথা বলবো।

আমি হেসে বললাম, আপনি তাহলে আমার ফেসবুক স্ট্যাটাসগুলোও পড়ে নিয়েছেন ইতোমধ্যে অথচ আমি আপনার কিছুই জানি না। এবার তিনি স্মার্টফোন থেকে মুখ না তুলেই বললেন, আপনার লেখা পড়লেই বোঝা যায় পৃথিবীর সমস্ত প্রেমিকার প্রতি আপনার একপ্রকার বিদ্বেষ। সে যাই হোক আপনার প্রতিও আমার কোন আগ্রহ নেই। বাবা–মা বললো, বিয়ে করে নে, তাই করেছি বলা যায়। এরপর আরও কয়েক মিনিট চললো তার অবিন্যস্ত কথাবার্তা।
চারপাশে প্রাকৃতিক নীরবতা তখন ক্রমশই প্রতীয়মান হতে শুরু করেছে। আমি পড়ার টেবিলটায় বসে পড়লাম। কথাগুলো শুনে আমার মাথায় একরকম যন্ত্রণা ভর করলো। চিরকাল যা আমি এড়িয়ে গেছি, সেই করুণা কী তবে আমার জীবনেই প্রতীয়মান হয়ে সামনে এসে দাঁড়াল। আমি কোন কথা না বলে শ্রোতার মুখায়ব নিয়ে ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম আপনার যা বলার, তা চলতে থাকুক।

কিছুক্ষণ থেমে সে পুনরায় খুব সংক্ষেপে তা'র অভিব্যক্তির পরিবেশন শুরু করলো। পরিবার যে সম্পর্কের বৈধতা দিতে চায় না, সে সম্পর্ক নিয়েই বাকী জীবনের ইতিহাস তৈরী করবে সে। জানি না কীভাবে সে জানতে পেরেছে আমি একজন মুক্তচিন্তার মানুষ সে কারণে একবাক্যেই বিয়ে নামক যজ্ঞের চারপাশে কোনরকম ভাবনা ছাড়াই আমার পায়ে পা মিলিয়ে পদচারণা করেছে। এখন যদি আমি তাকে হাসি মুখে মুক্তি দিই তবেই নিজেকে নিয়ে ভালোবাসার রাজপুত্তুরের সাথে ঘর বাঁধতে পারে।

তার কথা শোনার পর অনেকক্ষনাব্দি আমি বিবস হয়ে বসে রইলাম। এরপর ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখি রাত মধ্যরাতে যাবার প্রস্তুতি নিচ্ছে। কথার মাঝে পর-পর কয়েক পেয়ালা চা খেয়ে নিয়েছিলাম তারপরও কিছুতেই আমার ভাবনার ডালপালা মেলছিলো না। যৌবনাবন বয়সে মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম, জোর করে ধরে রাখার মাঝে কোন আনন্দ নেই, সম্পর্কের ময়দানে শান্তিবার্তাই হয় মেঘহীন এক আনন্দ!
আমি উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, কখন যাবেন? কেউ কি নিতে আসবে? তাছাড়া সকালে অন্য সবাই যখন জানতে চাইবে আপনার কথা? বিশেষ করে আপনার বাবা-মা যদি জানতে চায় আপনার অবস্থান! তাহলে?
-সে অলঙ্কার খুলে রাখতে রাখতে বললো, ভোর হতেই চলে যাবো, আর একটি সকালও আমি দেখতে চাই না এখানে। আমাকে আমার রাজপুত্তুর নিতে আসবে, সে ভাবনা আপনাকে ভাবতে হবে না। আপনি শুধু আমাকে রেলস্টেশন অবদি ছেড়ে দিয়ে আসুন। আর হ্যাঁ আপনার পরিবার নিয়ে আমার কোন ভাবনা নেই তাদের ম্যানেজ করতে আপনি ঠিক পারবেন। আমার বাবা-মা'কে সত্যিটাই বলবেন।



তার কথা শেষ হবার আগেই আমি ঘর থেকে বের হয়ে গেলাম। ঢুকলাম গিয়ে রান্না ঘরে নিদ্রাকক্ষের সাথেই যার অবস্থান। খুব যত্ন নিয়ে একটা বড় সাইজের মাছের টুকরো ও ডিম ভাজলাম। এক প্লেটে সাদাভাত আর বাটিতে টকসহ এসব নিয়ে তার সামনে রেখে বললাম ফ্রেশ হয়ে খেয়ে নিন, অনেকটা পথ যেতে হবে আপনাকে। সে শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো, হাত ব্যথা করছে আপনি আমাকে একটু খাইয়ে দিন।

ভোর রাতের দিকে ত্রিচক্রযানে যখন রেলস্টেশনের ওয়েটিংরুমে এসে বসেছি ততোক্ষণে সকাল হয়ে গেছে। গত কয়েক রাতের নির্ঘুম চোখ শুধু চাইছে হুশ হারিয়ে নিদ্রায় মগ্ন হয়ে যেতে কিন্তু সেটা সম্ভব হচ্ছে না। ট্রেনের টিকেট কেটে নিয়ে এসে দেখি তিনি নেই। যদিও এই অবস্থায় আমার বিস্মিত হবার কিছু নেই। যে মেয়ে নিজের জীবনকে প্রজাপ্রতির ডানায় ভাসিয়ে দিয়ে সুখী হয়ে যাবার অসুখে বিভোর, তাকে নিয়ে চিন্তার কিছু থাকে না। হয়তো তার রাজপুত্তুর এসে নিয়ে গিয়েছে তাকে কিংবা নিদেন পক্ষে ওয়াশরুমে গেছে।

ট্রেন ছাড়বার ক'মুহুর্ত আগে হঠাৎ সে এসে হাজির। আমার হাত থেকে পানির বোতল নিয়ে খেতে খেতে বললো, আপনাকে ধন্যবাদ দিয়ে বড়ো করবো না কারণ আমাকে বিদায় দিয়ে আপনি এমনিতেই মহান হয়ে যাবেন, যদিও সত্যিটা আপনাকে অনেক বেশীই বিচলিত করবে। প্রেমিকার হাতে বন্ধুকের গুলি থেকে যে বেঁচে গেলেন সেটাই বা কম কিসে।

আরও অনেক কথা হতো কিন্তু সময় যে বাড়ন্ত। তার রাজপুত্তুরের সাথে আমার পরিচয় করিয়ে দিলো। আমি উনাকে চা অফার না করে সোজা সিগারেট অফার করলাম। সিগারেটের ধোঁয়া উঠাতে উঠাতে মন মিশিয়ে দেখে নিলাম ওদের। দুজনের জুটি বেশ মানাবে। সত্যিকার অর্থে যদিও ছেলেটি রাজপুত্তুর নয়, তবুও সুন্দর।
কথা বন্ধ করে ওদের ট্রেনে উঠয়ে দিলাম। ট্রেন যখন ছাড়ছে তখন সূর্য উঁকি দিচ্ছে আকাশে। কারো বিদায়ে আমার কখনো কান্না পায়নি, কিন্তু তবুও কেন জানি কান্না পাচ্ছে আজ। জানালা দিয়ে গলা বাড়িয়ে সে বললো, ভালো থাকবেন আর গতরাতে যে পাগলামী করেছি তার জন্য ক্ষমা করে দেবেন।





[তিন]

দরজায় দুদ্দাড় শব্দের তান্ডবে মিষ্টি স্বপ্নমাখা ঘুমটা ভেঙে গেলো। বাইরে বেড়িয়ে দেখি পুলিস দাঁড়িয়ে আছে, তার সাথে সদ্য হারানো আমার বিবাহিত বউয়ের বাবা মাসহ আরও কয়েকজন। আসছি বলে, কলপাড়ে ঢুকে দাঁতে ব্রাশ ঘষতে-ঘষতে মনে করার চেষ্ঠা করলাম গত কয়েক ঘণ্টায় আমি কী কী করেছি। চারপাশের লোকের গুঞ্জরণে যতটুকু বুঝতে পারছি প্রথমবারের মতো আমাদের বাসায় পুলিশের আগমন জনতাকে অনেকখানি কৌতূহলী করেছে। অনেকেই ইতোমধ্যে কাহিনীতে রঙ ছড়াতে শুরু করে দিয়েছে।

প্রতিদিনকার মতো দীর্ঘ সময় ধরে ব্রাশ করা হলো না। বন্ধুরা সকালের ঘুম ছেড়ে এসে আমাকে পারিবারিক কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে দিলো। সবাই চোখ বড়বড় করে জানতে চাইছে একটা কথাই, তোর বউ কোথায়? আর আমিই বা কাল সারাদিন কোথায় ছিলাম। প্রথমে ভাবলাম আদি-অন্ত সব বলবো, পরে নিজেই নিজের মনকে গুছিয়ে ভাবলাম, আমি তো আদি অন্ত কিছু জানিই না। শুধু জানি আয়োজন করে যাকে শাস্ত্র মেনে বিয়ে করেছি সে আমাকে লোক দেখানো গ্রহণ করেছিলো, আমি তা'র কেউ নই।

চারপাশে সবার কথার উত্তর দেবো ভেবে যা বলতে চাইলাম, তা না বলে, শুধু বললাম, ঘুম ভেঙে দেখি বউ ঘরে নেই, দরজা খোলা। তারপর সারাটি দিন ধরে খুঁজেছি। বন্ধুরা জানতে চাইলো মোবাইল অফ কেন, হাতের ইশারায় বুঝিয়ে দিলাম কোথায় যে হারিয়ে গেছে জানি না। আসলে এতো লোকের সামনে মিথ্যে বলতে খুব খারাপ লাগছিলো। তার উপর শাস্ত্র মতে দু'দিন আগে যারা আমার পিতা-মাতা হয়েছেন, তাদের অশ্রুসজল চোখ দেখে বেশ মনখারাপ ভর করছিলো কিন্তু তাদের যন্ত্রণা যেন বেড়ে না যায় সে জন্য সত্যটা বললাম না। আরও অনেক কথার যুদ্ধ শেষে আমি পুলিসসহ অন্য সবাইকে বুঝিয়ে বললাম সে ফিরে আসবে। কিন্তু তারা কী বুঝলো কে জানে, আমাকে গাড়িতে উঠিয়ে থানা অভিমুখে নিয়ে চললো। যতক্ষণ পর্যন্ত আমার বিবাহিত স্ত্রীকে না পাওয়া যাচ্ছে ততোক্ষণ পর্যন্ত আমাকে থাকতে হবে কারাবন্দী। থানায় পৌঁছাতেই উৎসুক সাংবাদিক ও জনতা নানা রকম গল্প ছড়াতে লাগলো। নতুন বউকে মেরে গুম করে দিয়েছে, নয়তো বউ পালিয়েছে। সেই সাথে কন্যার বাবা-মা অশ্রুর সাথে বিলাপী ভঙ্গিমায় সাক্ষ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাদের মেয়ে এমন কাজ করতেই পারে না। অগ্যতা তার ফিরে আসা বা খোঁজ না পাওয়া পর্যন্ত আমি এখন চলমান আসামী।

আমার এ বিষয়টা আমার চারপাশের মানুষগুলোকে যতোটুকু যন্ত্রণা দিচ্ছিল আমাকে ঠিক ততোটা দিচ্ছিলো না। এদিকে দুপুর হয়ে বিকেল হতে হতে সন্ধ্যের কাছে সূর্য এসে দাঁড়িয়েছে। কারাগারের অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মনে মনে বলে উঠলাম, আচ্ছা যে তারাটি ঝরে যায় আকাশ কী তাকে মনে রাখে?



সমাপ্ত


সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ২০২২ সকাল ১১:০৮
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দাদার দাদা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৫৫

বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী।

আমার দাদার জন্মসাল আনুমানিক ১৯৫৮ সাল। যদি তার জন্মতারিখ ০১-০১-১৯৫৮ সাল হয় তাহলে আজ তার বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×