somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গহীনে............ (২)

২১ শে জুন, ২০১৬ রাত ২:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল বেলায় জাম্মুকে হারিয়ে মনটা খারাপ হয়ে গেছে নবুদার। হাজার হোক, নিজের ছেলে। তাই যখনই টের পাওয়া গেল যে জাম্মু সাথে নেই তখনই নবুদা স্থির করলো যে তারা ফিরে যাবে। এমনিতে যে ফিরে যাচ্ছিল না তা নয়। গত দুদিন ধরে তারা শুধু এগিয়েই গেছে। আজ থেকে এমনিতেই ফিরতি অভিযান শুরু করার ইচ্ছা ছিল তার। হয়তোবা ফেরার সময়ও দুদিন সময়ই নিত। কারন এই অভিযানের মূল লক্ষ্যই ছিল নতুনদের শেখানো। এক দুমাস পর পরই এমন শিকারের আয়োজন করা হয়। বনের মাঝে কিছুটা জায়গা সাফ করে চাষের ব্যবস্থা করা হয়েছে বটে কিন্তু এ মাটি বড় কঠিনহৃদয়। তাতে চাষ দেয়া অনেক সোজা কিন্তু যতই চাষ দাও না কেন, সে ফসল সেইহারে দেয় না। তাই শিকারের ওপরেও কিছুটা ঝুকতে হয় এদের।

দ্রুত নদীতে এসে তীর ঘেঁষে ছোটা শুরু করলো তারা। আকাল রাতে বড় বড় দুটো হরিণ খাওয়া হয়েছে। পেট ভর্তি, শরীরেও জোর আছে। তাই এই কর্দমাক্ত তীর ঘেষ ছুটতেও তাদের খুব একটা কষ্ট হচ্ছে না। কুয়াশা এখনো কাটেনি। তারা ছুটছে।

যখন তারা পৌঁছল তখন ভর দুপুর। আশা করেছিলো নদীর পাড়ে জাম্মুর কোন চিহ্ন পাবে। কিন্তু কোন চিহ্নই পাওয়া যায়নি। অগত্যা সবচেয়ে খারাপ সম্ভাবনাটাকেই ধরে নিয়ে মন খারাপ করে বসতিতে প্রবেশ করলো ওরা।

ওদের বসতিটা খুব বেশি বড় না। ঝুপড়ি ধরণের ঘর। গায়ে গায়ে লাগানো। একেবারে মাঝখানে গোত্রপতির ঘর। এখন গোত্রপতি আছেন নবুদার বড়ভাই হাম্মুরা । আশির ওপর বয়স। জ্ঞানী লোক, ঠিক তেমনি শক্তিমানও বটে । এত বয়স হবার পরেও মনে হয় এখনো সারা গ্রামের ভেতর সবচেয়ে বিচক্ষণ যোদ্ধাও তিনি। গোত্রপতির ঘরের চারপাশে এক স্তর ঘর। তার বাইরে আরেক স্তর। ওপর থেকে দেখলে মনে হবে একটা বড় আয়তক্ষেত্রের ভেতর আরেকটি ছোট আয়তক্ষেত্র ।আর তার ভেতর একটি মাত্র ঘর। শ তিনেক লোকের বসবাস। শিশুর সংখ্যাই প্রায় একশ। মাঝে মধ্যেই মড়ক না লাগলে সংখ্যাটা আরেকটু বেশি হতে পারতো।

মন খারাপ নবুদার । স্ত্রীকে সে কি জবাব দেবে ? কিন্তু কোথায় তার স্ত্রী? কোথায় বড়ভাই? কোথায় সবাই? পুরো গ্রাম খাঁ খাঁ করছে। গ্রামের মাঝে শুধু দাঁড়িয়ে আটাশজন লোক। জাম্মু হারিয়ে না গেলে ঊনত্রিশজন হতো। এই ঊনত্রিশজনই শিকারে বেড়িয়েছিল দুদিন আগে। কেউ কিছুই বুঝতে পারছে না। প্রতিটা ঘির তন্ন তন্ন করে খোঁজা হয়েছে। একটা মানুষও নেই। ঘরে রান্না করা খাবার আছে। রাতের রান্না। শুধু মানুষ গুলোই নেই। তাহলে কি রাঘুরা আক্রমন করলো? কিন্তু আক্রমণ করলে তো মারামারি হবে, রক্তপাত হবে। কিছুই নেই। যেন বাতাসে উবে গেছে মানুষগুলো।
বাইরে বেরিয়ে নদীর পারে এল সবাই। যদি ঘাটে কোন সূত্র মেলে। একটু আগে তো জাম্মুর চিন্তায় সবাই এতটাই বিভোর ছিল যে কিছু খেয়ালই করেনি। বসতি থেকে বেরিয়ে ঘাটের দিকে আসতেই দেখা গেল একটা ভেলা এসে থামছে। তাতে এক ভালুকের মতন বিশালদেহী মানুষ আর সাথে জাম্মু।

দেখেই বোঝা যাচ্ছে লোকটা বিদেশী। তাহলে কি বিদেশীরাই আক্রমণ করলো আমাদের ? তাদের কি এমন কোন জাদুর শক্তি আছে যে পুরো একটা গোত্রকে গায়েব করে দিলো? এত ভেবে লাভ নেই। পুরো আটাশজনই নবুদার নেতৃত্বে গিয়ে ঘিরে ধরলো লোকটাকে। সামনে এসে দাড়ালো জাম্মু।

“বাবা, ইনি বিদেশী। আমাকে বাগ আর কুমিড়ের সাথে লড়াই করে বাঁচিয়েছেন।”

“এর লোকেরা আমাদের এখানে আক্রমণ করেছিল। একজন মানুষও নেই।”
কেঁপে উঠলো জাম্মু। কি বলছে তার বাবা? একজনও নেই? সবাই মারা গেছে?
“বাবা,সবাইকে কি............”
“নাহ। কোন রক্তপাতের চিহ্ন নেই। সবাই যেন গায়েব হয়ে গেছে। ”
এবার সুন্দর মোলায়েম ভাষায় কথা বল্লো বিদেশী লোকটি।
“আপনি সম্ভবত এদের নেতা। আপনি ভুল করছেন আমার কোন লোক নেই। আমি বিদেশী। এই জঙ্গলে আমি একা একাই গত কমাস ধরে ঘুরছি। ”
“আপনি যে মিথ্যা বলছেন না তার প্রমাণ কি?”
“জাম্মুর কাছ থেকে আমি শুনেছি আপনারা শিকারে বেড়িয়েছিলেন এবং এও শুনেছি , যে, ও নেই দেখলে আপনারা এখানে ফেরত আসবেন। আমি আক্রমণকারী হলে কি একা ত্রিশজন লোকের মোকাবেলা করতে আসতাম? ”
কথাটা খুব একটা খারাপ বলেনি লোকটা। কিন্তু একে কি পুরাপুরি বিশ্বাস করা যায়?
“আপনি যদি আমাদের ক্ষতি না করে থাকেন তাহলে আপনার কোন ভয় নেই। কিন্তু আপনি বুঝতেই পারছেন এই মুহুর্তে আপনাকে পুরোপুরি বিশ্বাস করা আমাদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমরা আপনার হাত বেঁধে রাখতে চাই।”
“অবশ্যই। কোন সমস্যা নেই।” বলেই মোলায়েম একটা হাসি দিলেন সেই বিদেশী।
লোকটার হাত বেঁধে রেখে তারা খোঁজাখুঁজি শুরু করলো নদীর ঘাটে। স্পষ্ট বোঝা গেল বড় বড় অনেকগুলো নৌকা এসেছিল ঘাটে। তাহলে নৌকাতে করেই নিয়ে যাওয়া হয়েছে এদের। নবুদাদের দখলে থাকা খাঁড়িগুলোর দিকে অনেকদিন থেকেই নজর রাঘুদের। এত সুন্দর খাঁড়ি আশেপাশে আর নেই। অনেক পরিমাণে মাছের জোগান দেয় ওগুলো। তাই খাড়িগুলো নিয়ে রাঘুদের সাথে বেশ কবার যুদ্ধও হয়েছে। প্রতিবারই পরাজিত হয়েছে ওরা। শেষ যুদ্ধটা হয়েছে বছর পাঁচেক আগে। ওরা ওদের সক্ষম পুরুষদের প্রায় অর্ধেকের মতন খুইয়েছিল সে যুদ্ধে। এই পাচ বছরে আবার আক্রমণ করার মতন এত লোক কি আদৌ যোগাড় করা সম্ভব তাদের পক্ষে? আর যদি করেই থাকে যার দ্বারা তারা প্রায় দুশোর বেশি লোককে ধরে নিয়ে গিয়ে থাকে তাহলে এর পরিকারের উপায় কি? মাত্র ত্রিশজন নিয়ে আক্রমণ করাটা হবে আত্মহত্যার শামিল।

দলের বয়স্ক বিচক্ষণ লোকদের নিয়ে পরামর্শে বসলো নবুদা। এরকম বিপজ্জনক অবস্থায় এসব সিদ্ধান্ত একা নিতে রাজি নয় সে।
“নবুদা, এখানে এভাবে বসা থাকা নিরাপদ হবে না। যারা দুশো লোককে নিয়ে যেতে পারে, তারা আবার এলে আমাদের মতন ত্রিশজনের যে কিছুই করার থাকবে না তা তুমি বুঝতেই পারছো। আমার পরামর্শ, আমরা অস্ত্র নিয়ে সবাই যাবো। তারপর এক দুজন গিয়ে রাঘুদের ওপর নজরদারি করবে। বাকিরা দূরে লুকিয়ে থাকবে।” কথাগুলো বল্লো বগা। বগার বয়সও সত্তর ছুঁইছুঁই। হাম্মুরার একান্ত বন্ধু। তার আরেকতা পরিচয় হলো সে আগের গোত্রপতির ছেলে। সে যদি দয়ালু বিচক্ষণ আর জ্ঞানী না হতো তাহলে জেদ করে নিজেই গোত্রপতি হতে চাইতো। কিন্তু সে তা নয়। হাম্মুরার যোগ্যতা দেখে সে নিজেই হাম্মুরাকে গোত্রপতি নির্বাচনের জন্য আবেদন জানিয়েছিল সবার কাছে। আর তাদের বন্ধুত্ব সেই শৈশব থেকেই।
“কথাটা ঠিকই বলেছেন বগাজী। আপাতত আর কিছুই করার দেখছি না। কিন্তু অস্ত্র বলতে এখন তো আছে শুধু এই বর্শাগুলো। যুদ্ধের প্সত্র কোথায় থাকে সে তো গোত্রপতি ছাড়া কেউ জানে না।”
হাসলেন বগা। “তা ঠিক। কিন্তু একজন গোত্রপতির ছেলে আর একজন গোত্রপতির বিশেষ বন্ধু হিসেবে আমারো কিন্তু কিছু জ্ঞান আছে।”
অবাক নবুদা। ভাগ্য যে এই দিক দিয়ে কিছুটা সুপ্রসন্ন হলো তা বলা চলে। কারণ তাদের মতন অস্ত্র এ অঞ্চলে আর কারো নেই। সেই অস্ত্র হাতে আসারও আছে অনেক বড় ইতিহাস।
চলে গেলেন বগা। ঘনটা খানেক পর ফিরে এলেন। টানতে টানতে নিয়ে এসেছেন তিনটে বড় বড় বস্তা। আসলেই আগেকার বুড়োগুলোর মতন করে নতুন ছেলেপুলে গুলো হচ্ছে না। বগা, হাম্মুরা এরা চলে গেলে কে নেবে এদের স্থান? ভাবলো নবুদা।
“কিন্তু এই বিদেশীকে কি করা?”
জাম্মুকে ডাকলেন বগা। “জাম্মু, বলতো, এই বিদেশীর সাথে তোমার কি করে দেখা হলো?”
যা যা ঘটেছে সব বললো জাম্মু। সব শুনে বগা বললো, “বিদেশীকে আমাদের সাথে নেয়া উচিত। যদি সে আমাদের শত্রু প্রমাণিত না হয় তাহলে তাকে আমরা বন্ধু হিসেবে নিতে পারি। আর যদি সে আমাদের জন্য লড়তে রাজি হয় তাহলে তাকে আমাদের পাঁচজনের সমান ধরতে পারো। তার শক্তি আমাদের কাজে লাগবে।”
যুদ্ধসাজে সজ্জিত হয়ে তলোয়ার হাতে বাইরে এল নবুদা। “বিদেশী, আমরা আমাদের লোকদের খুজতে যাচ্ছি। আমরা চাই আপনিও আমাদের সাথে আসুন। কিন্তু দয়া করে আমাদের মনে সন্দেহ সৃষ্টির মতন কিছুই করবেন না। ” নবুদার সাজসজ্জার দিকে ভালো করে দেখলো সেই বিদেশী। কি যেন খচখচ করছে মনে। কিন্তু এই মুহুর্তে যে তার এদের পক্ষে থাকা উচিত তা নিয়ে তার মনে কোন সন্দেহই নেই। “অবশ্যই। আমি আপনাদের পক্ষেই আছি।”
“আপনার নাম কি, হে বিদেশী? ”
“আমার নাম খসরু। ”

পড়ন্ত বিকেল। রঘুদের গ্রামে যেতে প্রায় আধা দিন লাগার কথা। বড় দুটো নৌকা করে রওনা হলো ত্রিশজন লোক। তার মধ্যে খসরু সহ পঁচিশজনের মতন যুদ্ধে সক্ষম পুরুষ। পাঁচজন শিশু। যদিও এরা শিশুদের কখনো যুদ্ধে নেয় না কিন্তু এখানে কিছুই করার নেই। কারণ তাদের তো রেখে যাবার জায়গা নেই। জোয়ার শুরু হয়ে গেছে। এখন নৌকা নিয়ে ভেতরে ঢুকতে সহজ হবে।

নৌকাগুলোতে পাল তোলার ব্যবস্থা থাকলেও এই মুহুর্তে পাল এবং মাস্তুল দুইই খুলে রাখা হয়েছে। কেননা এই যাত্রাটা হচ্ছে নদী দিয়ে। রঘুদের গ্রামে যেতে অনেক সংকীর্ণ খালের মধ্য দিয়ে যেতে হবে। সেখানে পাল তো কাজে আসবেই না বরং গাছপালার ডালে আটকে মাস্তুলটাও সমস্যা করতে পারে। প্রতি নৌকাতে পসবাই দুই সারিতে বসেছে। এক নৌকার সামনে নবুদা আরেক নৌকার সামনে বগা । প্রতি নৌকায় বারোজন করে দাড় বাইছে। খুব আস্তেও না যে পৌঁছতে দেরি হয়ে যায় , আর খুব দ্রুতও না যে সবাই হাঁপিয়ে ওঠে। রাতের বেলা চাদের আলোয় নদীতে সব দেখা যাচ্ছিল। মশালের কোন দরকার ছিলনা। এটা একটা ভালো দিক যে মশাল জ্বাললে অনেক দূর থেকে মানুষের উপস্থিতি টের পেয়ে যেত রঘুরা।

ভোরের আলো ফোটার আগেই অনেক কটা সরু খালের জাল পেড়িয়ে একটা বড়সড় নদীতে এসে পড়লো ওরা। নিজেদের পছন্দমতন একটা জায়গা খুঁজে নিয়ে থামলো নৌকা দুটো। এখানে একটা বড় গাছ নদীর উপর ঝুকে আছে। দুটো নৌকা অনায়াসে স্থান করে নিতে পারবে। ভর দুপুরেও এই গাছ ভেদ করে রোদ পড়বে না। কাজেই নদীতে পাশ দিয়ে কেউ চলে গেলেও টের পাবে না যে এখানে কেউ ঘাপটি মেরে পরে আছে। রঘুদের গ্রামে গিয়ে নজরদারি করার জন্য দুজন লোককে বাছাই করলো নবুদা। এর একজন সাবু। বয়স ত্রিশের কোঠায়। সে বগার ভাতিজা। আরেকজন মকু। বয়স ষোলো কি সতেরো হবে। নবুদার বড় ছেলে, জাম্মুর বড়ভাই কুবার বন্ধু সে। অল্প বয়সেই সে ভালো একজন গুপ্তচর হবার যোগ্যতা দেখিয়েছে। নিশব্দে চলাফেরা, গাছে গাছে বাঁদরের মতন ঝুলে ঝুলে চলা এসবে তার মতন পটু এই মুহুর্তে আর কেউই নেই। এখন সময় এসেছে ওর যোগ্যতাকে আসলে কাজে লাগানোর। সাবু আর মকু রওনা হলো। বাকিরা চুপচাপ। সবাই শ্বাস প্রশ্বাসও চালাচ্ছে অনেক ধীরে ধীরে। যেন আওয়াজ না হয়। চলে গেলো ওরা। বাকিরা ওদের অপেক্ষায়।

যে জায়গাটাতে ওরা নৌকা ভিড়িয়েছিল তা রঘুদের গ্রাম থেকে আধমাইলের মতন দূরে। ভোরের আলো ফুটি ফুটি করছে। ওদের যেতে ঘণ্টা খানেকের মতন লাগা উচিত। কিন্তু মিনিট দশেকের মধ্যেই ওরা দৌড়াতে দৌড়াতে ফিরে এল। ভয়ে কাঁপছে।

“কি হয়েছে?” চেঁচিয়ে উঠলো নবুদা।
“রঘুরাও যুদ্ধের সাজে সেজেছে। এদিকেই আসছে। ”
“সবাই চুপ করে বসে থাকো। কেউ নড়বে না। একেবারে দম বন্ধ করে রাখো ।” সবার প্রতি নির্দেশ বগার।
“ওরা মনে হয় নদীতে করে আমাদের গ্রামের দিকে যাবে। আমরা যে এখানে আছি তা ওরা এখনো জানে না। ওরা চলে যাওয়ার পর আমরা ওদের গ্রামে ঢুকবো।”
সবাই ঘাপটি মেরে পরে রইলো। বেশ কিছুক্ষন পর রঘুদের দুটো নৌকা পাশ দিয়ে চলে গেল। অড়া বেশ চিৎকার করতে করতে যাচ্ছে। ওরা সরে যাবার পর সবাই নৌকা থেকে নামলো কাদা মাটিতে । সবাই । রঘুরাই ওদের আক্রমণ করেছিলো বলিএ মনে হচ্ছে। লোকদের ধরে এনে যখন জানতে পারলো যে আরো লোক রয়ে গেছে তখন বাকিদের ধরে আনার জন্য আবারো নৌকা ভাসিয়েছে। আপাতত সমস্ত ঘটনাকে এভাবেই দেখছে নবুদা। তাই বগার সাথে আলোচনা করে সে খসরুর হাতে বাঁধন খুলে দিলো। তাকে তার তলোয়ার ফেরত দেয়া হলো। যদিও ওটা বয়ে আনতে দুজন যুবকের দরকার হয়েছে।

“গতবারের যুদ্ধে অনেক মানুষ হারিয়েছে রঘুরা। নৌকা দুটোতে করে প্রায় পঞ্চাশজন যোদ্ধা গেছে। আর পঞ্চাশের বেশি পুরুষ থাকার কথা না। আমাদের কিছুটা আশা এখনো আছে যদি না আর কেউ ওদের সাথে হাত মিলিয়ে থাকে। মকু, সাবু। তোমরা আবার এগিয়ে যাও । আমরা পেছনে আসছি।” বললো নবুদা। ঘন বনের মধ্যে হারিয়ে গেল ওরা দুজন। আস্তে আস্তে চলা শুরু করলো বাকিরাও। ঘণ্টা খানেকের কিছু বেশিসময় নিলো ওরা। ওরা গ্রামের কাছে আসতেই এগিয়ে এলো মকু আর সাবু।
“বগাজী, নবুদা, গ্রাম ফাকা কেউ কোথাও নেই। গ্রামের মধ্যে কাটা ফসলের স্তুপ। মনে হয় ওরা মাত্র ফসল কেটে রেখেই রওনা দিয়েছে। ” জানালো মকু।
“কিন্তু তাহলে ওদের বাকি লোক কই? কম্পক্ষে শ’দেড়েক লোক তো থাকার কথা। তার সাথে আমাদের দুশো লোক। গেল কোথায়? ” বললো নবুদা।
“আমার মনে হয় আমাদের সবার গিয়ে খজ শুরু করা উচিত যেকোন কিছু খটকা লাগলেই যেন সবাই আমাকে খবর দেয়।”
গ্রামে ঢুকলো সবাই। এখানেও একই অবস্থা। মানুষগুলো যেন বাতাসে উবে গেছে। চিহ্নগুলো দেখে বোঝা যাচ্ছে যে কাল রাতে ফসল নিয়ে এসে পৌঁছায় লোকগুলো। এসেই তারাও দেখে যে সমস্ত মানুষ গায়েব। বগারা যেমন রঘুদের সন্দেহ করেছে, তেমনি রঘুরাও বগাদের সন্দেহ করে ওদের গ্রামের দিকে গেছে। কিন্তু তাহলে আসলে কারা দায়ী? এই তিনশোর বেশি মানুষই বা কোথায়? কেউই কিছু ভেবে পাচ্ছে না।
এরমধ্যে জম্মুই আবিষ্কার করলো জিনিসটা। একটা ছোট শিশি। কাচের। তার গায়ে কি যেন লেখা। শিশিটা মাটিতে পড়েছিল। কাদার মধ্যে কারো পায়ের চাপে গেঁথে যায় ওটা। কিন্তু পরে কেউ আর খেয়াল করেনি। শিশিটা খুব বেশি অস্বাভাবিক না। কিন্তু এর গায়ের লেখাটা ঠিক চিনতে পারছে না জাম্মু। নিয়ে এলো নবুদার কাছে। নবুদা বগা সবাই দেখলো। দেখলো খসরুও। সবার মুখে একটা “কি ঘটছে আসলে” ভাবে দেখা গেলেও একমাত্র খসরুর চোখেই একটা ভয়ের লক্ষণ ফুতে উঠলো। সে জানে। এটা এখানে থাকার কথা না। মোটেই থাকার কথা না। তাহলে কি সবার অলক্ষ্যে ওদের নোংরা হাত এই পর্যন্ত পৌছে গেছে?.....................

সর্বশেষ এডিট : ২১ শে জুন, ২০১৬ ভোর ৪:০৮
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে মুক্তিযোদ্ধাদের মুমিনী চেহারা ও পোশাক দেখে শান্তি পেলাম

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৯:৫৮



স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানে স্টেজে উঠেছেন বত্রিশ মুক্তিযোদ্ধা তাঁদের চব্বিশ জনের দাঁড়ি, টুপি ও পাজামা-পাঞ্জাবী ছিলো। এমন দৃশ্য দেখে আত্মায় খুব শান্তি পেলাম। মনে হলো আমাদের মুক্তিযোদ্ধা আমাদের মুমিনদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দুই টাকার জ্ঞানী বনাম তিনশো মিলিয়নের জ্ঞানী!

লিখেছেন সাহাদাত উদরাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:৫৯

বিশ্বের নামীদামী অমুসলিমদের মুসলিম হয়ে যাওয়াটা আমার কাছে তেমন কোন বিষয় মনে হত না বা বলা চলে এদের নিয়ে আমার কোন আগ্রহ ছিল না। কিন্তু আজ অষ্ট্রেলিয়ার বিখ্যাত ডিজাইনার মিঃ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×