বাংলা মাসগুলোর নাম আমার যে সব সময় এতো প্রিয় ছিলো তা না। কিন্তু যখন থেকে জানলাম যে, মাসগুলোর নাম এসেছে নক্ষত্রের নাম থেকে, তখন থেকেই নামগুলো প্রিয় হতে লাগলো। গুগলে তো আজকাল সবই পাওয়া যায়, তাও ভাবলাম, লিখি।
বৈশাখঃ
বাংলা বছরের প্রথম মাস । নক্ষত্রের নাম বিশাখা।আপাতদৃষ্টিতে একটি নক্ষত্র হলেও উইকিপিডিয়া বলছে α, β, γ and ι Librae নক্ষত্রগুলোকে একত্রে নাকি বিশাখা বলা হয়। Libra বা তুলা নক্ষত্রমন্ডলের অন্তর্গত।
জ্যৈষ্ঠঃ
নক্ষত্রের নাম জ্যেষ্ঠা। এটিও নাকি তিনটি নক্ষত্রের মিলিত নাম। নক্ষত্র তিনটি হচ্ছে α, σ, and τ Scorpionis । Scorpius বা বৃশ্চিক নক্ষত্রমন্ডলের অন্তর্গত।
আষাঢ়ঃ
নক্ষত্রের নাম উত্তরাষাঢ়া । দুটি নক্ষত্রের মিলিত নাম।, ζ and σ Sagittarii । Sagittarius বা ধনু রাশির অন্তর্গত । এই নক্ষত্রমন্ডলেই আছে আমাদের ছায়াপথের কেন্দ্র । Sagittarius A* নক্ষত্রটির অবস্থানের কাছেই লুকিয়ে আছে আমাদের গ্যালাক্সির কেন্দ্রের সুপার ম্যাসিভ কৃষ্ণগহবরটি।
শ্রাবণঃ
নক্ষত্রের নাম শ্রবণা। বৈজ্ঞানিক নাম α, β and γ Aquilae। মানে এটি তিনখানা নক্ষত্রের মিলিত নাম। ঈগল নক্ষত্রমন্ডল । α নক্ষত্রটি এতটাই উজ্জ্বল যে বাকি দুটি তার কাছে সম্পূর্ণ ম্লান। এই α নক্ষত্রটির কিন্তু আরও একটি মুখভরা নাম আছে। Altair.
Assassin's Creed খেলোয়াড়দের কি মাথার পেছনে একটু চুলকোচ্ছে?
বাকি দুটো যথাক্রমে Alshain ও Tarazed.
ভাদ্রঃ
নক্ষত্রের নাম পূর্বভাদ্রপদ। দুটি নক্ষত্রের মিলিত নাম। ওগুলো হচ্ছে α and β Pegasi (Markab ও Scheat). পেগাসাস নক্ষত্রমন্ডলের অন্তর্গত। পেগাসাসের বাংলা নাম জানি না। তবে নক্ষত্রগুলোর সাথে পরিচয় করিতে দেওয়াই এখানে মূল উদ্দেশ্য।
আশ্বিনঃ
নক্ষত্রের নাম অশ্বিনী। জোড়া তারা। এদের নাম β and γ Arietis . আছে Aries মেষ মন্ডলে । এটা নাকি আবার মিসরীয় দেবতা amon-ra এর সাথে সম্পর্কিত। বাবারে বাবাহ...... কত্ত প্যাঁচ ............
কার্তিকঃ
নক্ষত্রের নাম কৃত্তিকা। আধুনিক নাম Pleiades. এই প্রথম আমরা একটি একক নক্ষত্র পেলাম। নাকি?? বরং তার উল্টো । ছোটবেলায় নানু বাড়িতে আকাশে তারা দেখতে গিয়ে সাত ভাই চম্পার গল্প শুনেছিলাম। সেই সাত ভাই চম্পাই আমাদের কৃত্তিকা। যেন সাতটি নক্ষত্রের একটি গুচ্ছ। আছে Taurus বা বৃষ রাশিতে।
অগ্রহায়নঃ
নক্ষত্রের নাম মৃগশিরা। কি ?? মিলছে না? প্রাচীন মুনি- ঋষিরা একে অগ্রহায়নী ও ডাকতেন। আধুনিক নাম Lambda Orion. আছে ওরায়ন বা কালপুরুষ মন্ডলে।
পৌষঃ
নক্ষত্রের নাম পুষ্যা। কর্কট বা Cancer মন্ডলের অন্তর্গত γ, δ and θ Cancri তারকা তিনটি নিয়ে আমাদের পুষ্যা।
মাঘঃ
নক্ষত্রের নাম মঘা। হ্যারি পটারে Black পরিবারের নামকরণও করা হতো নক্ষত্রের নামানুসারে। Sirius এর ভাই Regulus। এই Regulusই আমাদের মঘা নক্ষত্রের আধুনিক নাম। এই প্রথম আমরা একটি একক নক্ষত্র পেলাম। Leo বা সিংহ মন্ডলের alpha তারকা এটি।
ফাল্গুনঃ
নক্ষত্রের নাম উত্তরফাল্গুনী । এর অবস্থানও সিংহ মন্ডলে । সিংহ মন্ডলের দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারকা এটি। মৌলিক নাম Denebola. দ্বিতীয় উজ্জ্বল তারকা বলে β Leonis ও ডাকা হয়।
চৈত্রঃ
নক্ষত্রের নাম চিত্রা। অন্য নাম Spica, অবস্থান Virgo বা কন্যা মন্ডলে। কন্যা মন্ডলের সবচেয়ে উজ্জ্বল বা alpha তারা এটি।
বাংলা বছর হিসাবের ইতিহাস খুব একটা নতুন নয়, আবার পুরনোও নয়। সম্রাট আকবরের সময় থেকে সৌরভিত্তিক এই বছর চলছে। এর আগে বেশ কিছুদিন হিজরী সন অনুসারে চলেছিলো শাসনকার্য। কিন্তু ফসলী হিসাব , ঋতু ইত্যাদির হিসাব মেলানোর জন্যই হিজরি চন্দ্রভিত্তিক বছর থেকে সৌরভিত্তিক এই বছর চালু করা হয়। প্রথমদিকে নাম ছিলো সম্ভবত তারিখ-ই-ইলাহি। সপ্তম শতাব্দীর প্রতাপশালী রাজা শশাঙ্কের সময় থেকে যে তারিখ গণনা শুরু হয় তাকে বলা হতো শকাব্দ। তারিখ-ই-ইলাহির মাসগুলোর প্রথমে আলাদা আলাদা নাম থাকলেও পরে কবে যে শকাব্দের মাসগুলর সাথে মিলিয়ে সংস্কার করা হয় তার ব্যপারে উইকিপিডিয়া আমায় বেশি কিছু বলতে পারেনি।
তবে আদি উৎস যাই হোক না কেন, যত সংস্কার , পরিবর্তন, পরিবর্ধন, পরিমার্জনের মধ্যে দিয়েই আসুক না কেন , আমাদের বাংলার প্রয়োজনে, বাঙ্গালির প্রয়োজনেই আজকের এই সাল গণনা। এটা আমাদেরই।
শুভ নববর্ষ।
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই এপ্রিল, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:৩০