somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

Visit to Pantheon of Rome

১০ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ভোরবেলা যখন রোমে নামলাম, অনুভূতিটা যতটা মোহনীয়, মায়াবী হবে বলে আশা করেছিলাম, ততটা হয়নি। একেতো ভেনিস থেকে ৫ ঘন্টা ট্রেন জার্নি করে মাত্র নেমেছি, তার উপর সময় ভোর ছটা। পুরো রোম তখন ঘুমুচ্ছে। শরীর টানতে পারছিলাম না, টলতে টলতে চলছি । হোটেলটাকে খুব বেশি মিস করছিলাম , একটা বিছানা দরকার, একটু ঘুমুনো দরকার, কতকি যে দেখছি, কিচ্ছু ভালো লাগছে না, একটু ঘুমানো লাগ……… আমার ঘুমকাতুরে চোখদুটো হঠাত করেই জ্বলজ্বল করতে লাগলো , দাঁড়িয়ে আছে, The Pantheon of Rome



গলি ঘুপচিতে ঘুরতে ঘুরতে কি করে যেন পৌঁছে গেছি, ঠিক টের পাইনি। অবশ্য আমার ক্ষেত্রে এরকম মাঝে মধ্যেই হয়। ভোরের সূর্যের আলোটাকে কেমন যেন হঠাত সুন্দর মনে হতে লাগলো, আকাশের নীলটাকে আরও একটু গভীর মনে হলো, ,তার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে একটি দালান, যেটা সম্ভবত রোমের এখনও অক্ষয়ভাবে দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন নিদর্শনগুলোর মধ্যে সবচেয়ে পুরনো।

রোমান রিপাব্লিকের যুগের নয়, বরং সাম্রাজ্যবাদী (ইম্পেরিয়াল) রোমের একেবারের গোড়ার দিকের স্থাপত্য এটি। অন্তত তাই মনে করা হতো প্রথমদিকে। পত্তন করেছিলেন সম্রাট অগাস্টাসের সময়ে এক রোমান জেনারেল, মারকুস আগ্রিপ্পা (Marcus Agrippa)। পরে অবশ্য আরও গভীর বৈজ্ঞানিক গবেষনা প্রমাণ করে যে, এটি আগ্রিপ্পার বানানো প্যানথিওন নয়, বরং আগ্রিপ্পার বানানো প্যানথিওনের পুড়ে যাওয়া ধ্বংসস্তূপের উপর আরও প্রায় দুশ বছর পর ১২৬ সালের দিকে সম্রাট এড্রিয়ানের (Hadrian) পুনঃনির্মিত দালান এটি ।

আগ্রিপ্পা হয়তো এটীকে প্যানথিওন নাম দেননি। হয়তো ছিলো অন্য কিছু। কিন্তু এটা প্রাইভেট প্রোপার্টি হওয়ায় সাধারণ জনগণের প্রবেশাধিকার ছিলো না এখানে। তাই অতি সহজেই এর প্রকৃত নাম, আসল উদ্দেশ্য হারিয়ে যায়। বরং পরবর্তীতে লোকমুখে প্যানথিওন নামটি সম্ভবত প্রচলিত হয়।

সেযুগের দাঁড়িয়ে থাকা একমাত্র নিদর্শন এটি, এর কারণ হচ্ছে এই দালানটির ক্রমাগত ব্যবহার। যদিও প্যাগান রোমানদের নিদর্শনগুলিকে খ্রিষ্টান রোমানরা ঘৃণার চোখেই দেখতো, কিন্তু এই বিশেষ দালানটিকে চার্চের মর্যাদা দেওয়া হয়। আর তাই ক্রমাগত ব্যবহার ও সংস্কার হতে থাকা এই নিদর্শণটি আজ আমাদের মাঝে দাঁড়িয়ে আছে।

কিছুক্ষন লাইনে দাঁড়াতে হলো। অল্প কিছুক্ষন। কোভিড ভ্যাকসিনেশন সার্টিফিকেট চেক করে অবশেষে ভেতরে ঢোকার অনুমতি দেওয়া হলো।

এই দালানগুলোর বিশালতা আসলে সহজে অনুমান করা যায় না। দূর থেকে দেখলে আমাদের দেশের মুঘল আমলের মসজিদগুলোর মতন মন হয়তো হতে পারে, কিন্তু ডানে বামে তাকালেই দেখা যাবে না, প্যানথিওনের প্রধান ফটকটিই আশেপাশের চার-পাঁচ তলা দালানগুলোর সাথে টেক্কা দিয়ে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আর ভেতরের Dome টি তো আরও উঁচু। আইনে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কিছু করার না থাকায় স্তম্ভ গুলো গুণছিলাম। ১৬ টি বৃত্তাকার আর চারটি চৌকোণাকার প্রস্থচ্ছেদের স্তম্ভের ওপর ভর করে দাঁড়িয়ে আছে ফটকটি।

বিশালাকায় দরজাটির ভেতরের দোকার পর যে চাকচিক্য দেখা যায় তার কোনতার ইতিহাসই হয়তো এতোটা পুরনো নয়। কেননা, কোন এক বাইজেন্টাইন সম্রাট কন্সটান্টিনোপলের জৌলুস বাড়ানোর জন্য রোম লুট করেছিলেন, বাদ যায়নি প্যানথিওনের ব্রোঞ্জের টাইল আর মূর্তিগুলোও। অষ্টাদশ সতাব্দীতে Pope Urban VIII নাকি সেগুলো গলিয়ে ফেলেন। এর কিছু অংশ তিনি দিয়েছিলেন কীর্তিমান ভাস্কর Bernini কে, যা দিয়ে Bernini গড়েন তাঁর জগদ্বিখ্যাত baldacchino , যা দেখতে হলে টাইবার নদী পেড়িয়ে আপনাকে যেতে হবে ভ্যাটিকান সিটিতে, সেন্ট পিটারের ব্যাসিলিকায়।

ফিরে আসি প্যানথিওনে। ভেতরে ঢুকেই আমার নজরে আসে বিশাল গম্বুজটি। সম্ভবত ইটের তৈরি সবচেয়ে বড় গম্বুজ এটি। ইন্টারনেট বলে, গম্বুজটি সম্পূর্ণ অর্ধবৃত্তাকার, আর গম্বুজের নিচের সিলিন্ডার আকৃতির অংশটির উচ্চতাও গম্বুজের ব্যাসার্ধের সমান। আমার যখন কিছু খুব ভালো লাগে, তখন অনেকক্ষণ ধরে তা উপভোগ করার চেষ্টা করি। প্যানথিওন এমনই একটা জায়গা। মাথার ঠিক উপরের বৃত্তাকার খোলা অংশটির নিচে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। দেখার চেষ্টা করলাম সময়ের সাথে সাথে কিভাবে গম্বুজের গায়ে পড়া সূর্যের আলোকরশ্মির অবস্থান পরিবর্তন হয়। কিন্তু পাঁচ দশ মিনিট ধরে একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে উপরের দিকে তাকিয়ে থাকাটা খুব বেশি আকর্ষনীয় হলেও আর বেশি প্রলম্বিত করাটা সমীচীন বোধ করলাম না বিধায় এবার ভূপৃষ্ঠের নিকটবর্তী আকর্ষন গুলোর দিকে দৃষ্টিপাত করলাম।



অনেকেই বলেন, প্যানথিওনের আসল প্রবেশদ্বার আজকের মতন উত্তরমুখী ছিলো না, বরং দক্ষিনমুখী ছিলো। পেছনদিকে গেলে কিছু স্থাপত্য দেখা গেলেও খুব বেশি কিছু বোঝা যায় না। তবে দক্ষিনমুখী হলে প্রধান ফটক দিকে সূর্যালোক প্রবেশ করতো, আর তার সৌন্দর্য যে কতটা মোহনীয় তা আমি চোখ বুঝলেই অনেকটা আঁচ করতে পারি।

সারাক্ষণ চোখ বুঁজে থাকলে নতুন সৌন্দর্য যে চোখে ঢুকবে না, তাই চোখ খুলে এবারে বেড়িয়ে আসি। বাইরে লাইন এক্ষনে অনেক লম্বা, প্যানথিওনের সামনের যে পানির ফোয়ারা তার তিনদিক জড়িয়ে বিশাল লম্বা লাইন। ফোয়ারার মাঝে দাঁড় করানো এক ওবেলিস্ক। গায়ের খোদাই গুলো দেখলেই বুঝতে পারবেন, এটা খাঁটি মিসরীয় হায়ারগ্লিফিক। ঘেঁটে দেখলাম, এর নাম, Macuteo Obelisk। সেই প্রাচীন মিসরে কোন এক ঝলমলে রৌদ্রজ্জ্বল দিনে দাঁড় করানো হয়েছিলো এটিকে, আদেশদাতা ছিলেন Ramsis II. জ্বি, ঠিকই দেখছেন। ফারাও দ্বিতীয় রামেসিসের নিদর্শন এটি, আর সে হিসেবে এর বয়স খোদ প্যানথিওনের চেয়েও দেড়-দু গুণ বেশি। অথচ সে দাঁড়িয়ে আছে, নীরবে, জৌলুশহীন , হয়তো আজ থেকে আরও চার হাজার বছর পরে বহির্জাগতিক মানুষের কলোনী থেকে মানুষেরা রোমের ধ্বংসাবশেষ দেখতে আসবে, তারাও প্যানথিওন দেখবে, কিন্তু তাদের মধ্য হয়তো মাত্র একজনই লক্ষ্য করবে আরও পুরনো কালের সাক্ষী এক পায়ে দাঁড়িয়ে এই একাকী ওবেলিস্ককে……………

সর্বশেষ এডিট : ১০ ই অক্টোবর, ২০২১ রাত ২:০১
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। মুক্তিযোদ্ধা

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১



মুক্তিযুদ্ধের সঠিক তালিকা প্রণয়ন ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেছেন, ‘দেশের প্রতিটি উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই বাছাই কমিটি রয়েছে। তারা স্থানীয়ভাবে যাচাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতীয় রাজাকাররা বাংলাদেশর উৎসব গুলোকে সনাতানাইজেশনের চেষ্টা করছে কেন?

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সম্প্রতি প্রতিবছর ঈদ, ১লা বৈশাখ, স্বাধীনতা দিবস, বিজয় দিবস, শহীদ দিবস এলে জঙ্গি রাজাকাররা হাউকাউ করে কেন? শিরোনামে মোহাম্মদ গোফরানের একটি লেখা চোখে পড়েছে, যে পোস্টে তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×