[গল্প হিসেবে নেয়ার অনুরোধ থাকলো]
তো, ঈসা (আ) কে হত্যার চেষ্টা করে জেরুজালেমের ইহুদীরা, খুব সম্ভবত ৩০-৩৩ সালের দিকে। আল্লাহপাক তাঁকে আমাদের মধ্য থেকে তুলে নেন। ইহূদীদের মধ্যে তাঁর গুরুত্ব মনে হয়না খুব বেশি ছিলো। কেননা, সেসময় পুরো এলাকা ছিলো বিদ্রোহপ্রবণ। লোকেরা মসীহের অপেক্ষা করছে। একেকজন নতুন নেতা উঠছে, মানুষ ভাবছে, এই লোক মসীহ হতে পারে, লোকেরা তার সাথে যোগ দিচ্ছে, বিদ্রোহ করছে, রোমানরা এসে বিদ্রোহ দমন করছে, মানুষ মারছে হাজারে হাজারে।
এর মধ্যে নতুন একজন আসলেন, ঈসা (আ), কিন্তু এসে দেখি নিয়মকানুনের কথা বলেন। যুদ্ধের কথা না, সৈন্য সংগ্রহের কথা না, রোমানদের বিরুদ্ধে বিশাল বিশাল বক্তৃতা দিচ্ছেন না , রাবাঈদের “ধর্মব্যবসা”র বংশোদ্ধার করছেন, তাওরাতের তাফসীর যারা করতো তাদের গিয়ে নাকি ঝাড়ি ঝুড়ি দিলেন । তারা তো যুদ্ধ করার জন্য প্রস্তুত, মসীহ এসে খালি কোপাবেন আর কোপাবেন, কিন্তু এ কেমন মসীহ? পছন্দ হইলো না এলিট ইহুদীদের। এলিট হুজুরেরা তার পিছে লাগলো। তারা ঈসা (আ)কে নবী মনে করতো না, মসীহ তো না ই। আমরা অনেকেই জানি না, আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ অনেক নবীকেই তারা নবী মনে করে না, যেমন দাঊদ আর সুলাইমান (আ) কে নবী না মেনে মূলত রাজা মনে করে, আবার ঈসা , ইয়াহইয়া (জন দ্যা ব্যাপ্টিস্ট) আর যাকারিয়া (আ)দের কাউকেই তারা নবী মনে করতো না, বরং রাবাঈ মনে করতো। এজন্যই যখন ঈসা (আ) তাদের রাবাঈদের মনগড়া তাফসীর আর মনগড়া আইন-কানুন-ফতোয়ার বিরুদ্ধে বলতেন, তারা জিজ্ঞাসা করতো, তোমার ইজাজাহ কই ? `ইজাজাহ হইলো, একজন রাবাঈ যে শিক্ষকের আন্ডারে থেকে তোরাহ বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় শিক্ষা সমাপ্ত করেছেন, তাঁকে শিক্ষকতার রাবাঈ হিসেবে একটা অনুমতিপত্র তথা সার্টিফিকেট দেওয়া হতো, তা। কিন্তু ঈসা (আ) এর সার্টিফিকেট তো আল্লাহর পক্ষ থেকে। আল্লাহই তাঁকে তোরাহ শিক্ষা দিয়েছিলেন, তোরাহর আসল অর্থ আর ব্যাখ্যা শিখিয়েছিলেন, সেগুলো রাবাঈদের হাজার বছরের ট্রেডিশনের বিরুদ্ধে যাচ্ছিলো, এতে তাদের সমস্যা ছিলো। তারপর তো তারা যা করার করলো…… আল্লাহ পাক ঈসা (আ)কে আমাদের মধ্য থেকে সরিয়ে নিলেন। এরপর থেকেই কিছু অদ্ভূত ঘটনা ঘটতে শুরু করে।
সেকেন্ড টেম্পলের কিছু ডিস্টিংক্ট সেকশন ছিলো। বাইরের কোর্টইয়ার্ড,যা কিনা জেন্টাইল তথা গোয় তথা উম্মীয়িনদের জন্য নির্দিষ্ট ছিলো। এরা হলো বনী-ইজরাঈল এর বহির্ভূত লোকজন, মানে আপনি, আমি ট্রাম্প, শেখ হাসিনা, শেখ মুজিব সবাই। এর পরের ভেতরের অংশও একটা কোর্টইয়ার্ড, ইহূদী মহিলারা কেবল এই জায়গা পর্যন্তই আসতে পারতেন। তারপরের অংশ কোর্ট অফ ইজরাঈল,এই অংশে ইহুদী পুরুষেরা ইবাদতের জন্য ঢুকতেন। এর পরের কোর্টইয়ার্ড ছিলো পুরোহিতদের জন্য। পুরোহিতেরা এখানে কুরবানী করতেন। ইহূদীদের টেম্পল নিয়ে তোরজোড় করার আরও একটা কারণ এই কুরবানী। তারা ওই জায়গা ছাড়া অন্য কোথাও কুরবানী দিতে পারে না। আর সেই কুরবানী করতে না পারা তাদের ধর্মকে বিশালভাবে অপুর্ন রেখেছে। অর্থোডক্সরা সেকেন্ড টেম্পলের ধ্বংসকে আল্লাহর পক্ষ থেকে সাইন হিসেবেই দেখেন। কেননা তারা যতবার লাইন ক্রস করেছে, ততবারই আল্লাহপাক নবী রাসূলদের (আ) পাঠায়ে সতর্ক করেছেন, আর তাতেও কাজ না হলে, তারপর টেম্পল ধ্বংস করে দিয়ে তাদেরকে নির্বাসিত করেছেন, যেমন নেবুচাদনেজারের আক্রমণের পর ব্যাবীলনীয় নির্বাসন। মানে, ইহূদীদের কাছে এই রিফিউজি হওয়াটারও ধর্মীয় তাৎপর্য আছে। এটা দুনিয়ার অন্য যেকোন রিফিউজি ক্রাইসিসের মতন কেবল পলিটিকাল আর হিউম্যানিটারিয়ান ক্রাইসিস না। এটা ডিভাইন ইন্টারভেনশন। এইজন্যেই অর্থোডক্স মত হলো, মসীহ আসার আগে তারা সেখানে ফেরত যেতে পারবে না। আর আজকের জায়োনবাদী আলট্রা অর্থোডক্স শ্রেণী আসলে নতুন আবিষ্কার। হাসিনাকে জান্নাতী মা বলার মতন আলেম তো আমাদের মধ্যেও ছিলো, ইহুদীদের খালি দোষ দিয়া কি লাভ। এরা কোন হিসাব কিতাবের ধার ধারে নাই, জোর করে ব্যাক করছে।
যাই হোক, তারপর ছিলো মূল দালান, এর ভেতরের প্রথমাংশকে বলে হাইকাল, আর একেবারে ভেতরের অংশ হলো হোলি অফ হোলিস। হিব্রুতে বলে “কোডেশ হাকোডাশিম” আশা করি “কোডেশ” এর সাথে আমাদের ব্যবহার করা নাম “আল কুদস” এর মিলটা লক্ষ্য করতে পারছেন, একই শব্দ কিন্তু। তো, পুরোহিতদের কোর্ট থেকে ভেতরের অংশে সাধারণ মানুষের আসা বন্ধ। মূল দালানের ভেতরেও কেবল হাইকাল অংশে পুরোহিতেরা ঢুকতে পারতেন। কিন্তু হোলি অফ হোলিস এর ভেতরে পুরোহিতদেরও প্রবেশাধিকার ছিলো না। কেবল টেম্পলের হাই-প্রিস্ট বছরে একদিন ঢুকতে পারতেন। সেটা হলো ইওম কিপূরের দিন। ইওম কিপুরের দিন হলো ব্যাসিকালি পুরো গোত্রের জন্য তওবাহর দিন। তারা নানান রিচুয়ালের মধ্য দিয়ে তওবাহ করে । এর শুরু হয়েছিলো, মূসা (আ) এর সময়ে। বনী ইজরাঈল যখন স্বর্ণের বাছুর পূজা করে পাপ করলো, তখন মূসা (আ) এসে তাদের মূল ব্যক্তিবর্গকে শাস্তি দেন, আর বাকিরা তওবাহ করে। ইয়ম কিপুর সেই তওবাহর দিন।
এখন আসি মূল ঘটনায়। এই যে মূল দালান, যার ভেতরে হাইকাল আর হোলি অফ হোলিস অবস্থিত, এর দরজা ছিলো অত্যন্ত বড় আর ভারী, অনেক সুন্দর ডিজাইন করা। তার থেকে বড় কথা হলো এই দরজার বিশেষ গুরুত্ব আছে। এটা এতোটাই ভারী ছিলো যে, অনেক শক্তি লাগতো এটা খুলতে বা বন্ধ করতে । অথচ সেই ৩০ সালের পর থেকে একাধিকবার এই দরজা আপনা থেকেই খুলে যায়। অনেক রাবাঈদের কাছে এটা কোন বিরাট ঘটনার আভাস হিসেবে মনে হতে লাগলো। বিশেষ করে, ইহুদীদের বিশ্বাস মতে, এই হোলি অফ হোলিস এ আল্লাহর একটা প্রেজেন্স ছিলো, যাকে বলা হতো “শেকিনাহ”। তাদের কাছে এর খুব বেশি ব্যাখ্যা না পাওয়া গেলেও, ইসলামি সিলসিলায় আমরা সাকিনাহ বলতে আল্লাহর এক বিশেষ রহমতকে বুঝি। ইহুদীদের বিশ্বাসের সাথে আমাদের এখানে খুব বেশি পার্থক্য নেই। হয়তো সেখানে আল্লাহর স্পেশাল রাহমাহ নাযিল হতো, এটাকে ডিভাইন প্রেজেন্স বলাই যায়। কিন্তু ইহুদীরা ভুলেও মনে করতো না যে সেখানে আল্লাহপাক স্বয়ং অবস্থান করেন। কেননা মূসা (আ) এর সময় একবার আল্লাহকে দেখতে চাওয়ার পর তাদের শিক্ষা হয়ে গেছে। আল্লাহর নূরের ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র অংশই যেখানে একটা পাহাড় নিতে পারেনি……… তো যে দরজা সাধারণ পরিবেশের থেকে হাইকাল আর হোলি অফ হোলিস এর পবিত্রতাকে আড়াল করে রাখবে,সেই দরজা যখন খুলে যেতে থাকে, তখন কি হতে পারে ? এই টেম্পলে যে এতোকাল আল্লাহর দ্বীনের সেন্ট্রাল অংশ হিসেবে পরিগণিত হচ্ছিলো, এর গুরুত্ব কি কোনভাবে কমে যাচ্ছে ? শেকিনাহ তথা সেই ডিভাইন প্রেজেন্স কি আর এই টেম্পলে থাকছে না ? তাই কি আর একে আলাদা করে রাখার কোন দরকার নাই ?
তারপর, এই যে দালান, এর ভেতরে ছিলো একটা মেনোরাহ। ইহূদীদের সাথে সম্পর্কিত যে সাতটা শাখাওয়ালা মোমবাতিদান, সেটাই মেনোরাহ। এটা থাকতো মূল দালানের ভেতরে হাইকাল অংশে। ইহূদীদের স্ক্রিপচারে একে অনেক সময় Western Lamp তথা পশ্চিমা বাতি হিসেবে ডাকা হয়। ইহূদীদের বিশ্বাসের একটা অংশ হলো, এই পশ্চিমা বাতিটা আল্লাহর হুকুমে অলোকিকভাবে সর্বদা প্রজ্জ্বলিত থাকবে। থাকতোও তাই। কিন্তু আমাদের উল্লেখিত সময়কালের মধ্যে এই বাতি বার বার নিভে যেতে থাকে। পুরোহিতেরা নিশ্চিত করতো যে যথেষ্ট তেল দেওয়া আছে কিনা, আর কোন সমস্যা আছে কিনা। কিন্তু এটাকে প্রজ্জ্বলিত রাখা একরকম সমস্যার কাজ হয়ে দাঁড়ায়। এই শিখা ছিলো আল্লাহর চিরন্তন নূরের একটা রূপক। কিন্তু এই লাইট যখন বারবার নিভে যেতে থাকে তখন পুরোহিতদের কপালে চিন্তার ভাজ দেখা যায়, আল্লাহর নূর কি তাদের দিক থেকে রহমতের দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে ?
এখানেই শেষ না, আরও আছে। ইওম কিপুরের দিন ইজরাঈল তওবাহ করতো কিভাবে ? দুটো ছাগল আনা হতো। এর মধ্যে একটাকে আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করা হবে। আরেকটা ছাগলকে বন-জঙ্গলে ছেড়ে দেওয়া হবে। সেটা সমগ্র ইজরাঈলের পাপ বহন করবে। টেম্পলের হাই প্রিস্ট একটা লটারি করতেন। এই লটারির মাধ্যমে নির্ধারিত হতো, কোন ছাগলটা কুরবানী হবে আর কোনটা পাপবাহী স্কেপগোট হবে। তো এই লটারির সময় সাধারণত পাপবাহী ছাগলের লটারীটা হাইপ্রিস্টের ডানহাতে উঠতো, আর এটা ছিলো ভালো লক্ষণ যে, তওবাহ কবুল হবে সম্ভবত, সব ঠিকঠাকমতন চলছে। কিন্তু আমাদের বিবেচ্য সময়কালে এই লটারীটা বারবার বাম হাতে উঠতে থাকে……রাবাঈদের মাথায় হাত, তাহলে কি বনী ইজরাঈলের তওবাহ কবুল হচ্ছে না ?তাদের কি কোন ভুল হচ্ছিলো ? নাকি তারা ক্ষমার অযোগ্য কোন পাপ করে ফেলেছে ?
এই একই সময়ে, এই স্কেপগোটের শিং এর মধ্যে একটা স্কারলেট রঙ এর ফিতা বাঁধা হতো। একই রকম আরেকটা ফিতা বাঁধা হতো টেম্পলের দরজায়। তারপর সেই ছাগলকে তো বনে-মাঠে-প্রান্তরে বা পাথুরে মরু অঞ্ছলে ছেড়ে দেওয়া হতো। চলতে চলতে কোনভাবে ছাগলটা মারা যেতো। তো এই তওবাহ কবুল হলে অলৌকিকভাবে দরজায় বাঁধা স্কারলেট ফিতেটা সাদা হয়ে যেতো, এটাই ছিলো ট্রেডিশন। কিন্তু আমাদের আলোচ্য সময়কালে এই স্কারলেট ফিতে আর কখনো সাদা হত না। তাহলে কি আর বনী ইজরাঈলের তওবাহ আসলেই কবুল হচ্ছে না ?
এ ছাড়াও আরও অনেক ঘটনাই ঘটত। যেমন হোলি অফ হোলিস এর ভেতর থেকে নানা রকম আওয়াজ শোনা যেত, পুরোহিতেরা শুনে বুঝতে পারতেন না, আসলে কি হচ্ছে ? তারা মনে করতেন, তাদের উপর কোন আযাব-বিপদ আসার লক্ষণ এগুলো। যেখানে এর একটা ঘটনাই বিশাল আলোড়ন তৈরি করতে পারে, সেখানে এতসব ঘটনা সব একসাথে বারবার ঘটতে থাকা বিরাট কোন বিপদের আভাস দিচ্ছিলো। বিশেষ করে টেম্পল থেকে শেকিনাহর চলে যাওয়াটা একটা বিরাট ব্যপার ছিলো। আমাদের জন্য আল্লাহপাক অঙ্ক কিছুই সহজ করেছেন, তাই আমরা এসবের সিগনিফিকেন্স বুঝতে পারি না। মনে করেন, আমাদের উপর শর্ত দেওয়া থাকতো যে, যতদিন কাবাঘর থাকবে ততদিন মুসলিমরা সঠিক পথের উপর আছে। হাজার বছর পর হঠাৎ একদিন দেখা গেলো, মক্কায় আর কাবাঘর নাই। গায়েব। আমাদের মধ্যে এই অবস্থা অবশ্যই আলোড়ন তৈরি করতো, আর ইহুদীদের ব্যপারটাও সেম।
কেন? আমি প্রথমেই বলেছি, এটাকে গল্প হিসেবে নেবেন, কেননা ইহুদীদের অনেক লেখাই পুরো বিশ্বাস করা যায় না। অনেক প্রোপাগান্ডা আছে। এমনকিয়ামাদের বাংলা ওয়াজ যারা করে আর নানান আজীব আজীব গল্প বলে, এগুলোর বেশিরভাগই কুরআন হাদীসে পাবেন না। পাবেন তাফসীর গ্রন্থে, যেগুলো মূলত ইজরাঈলী নানান লেখনী থেকে ধার করে আনা। আমাদের মধ্যে রিতি আছে, আমরা থিওলজি আর আইনকানুন ওদের থেকে ধার করি না। কিন্তু ওদের কিতাবে যদি এমন কিছু থাকে যা কুরআন ও হাদীসের সাথে সাংঘর্ষিক না, সেগুলো বর্ণণা করা যেতে পারে, কিন্তু মনে রাখতে হবে, লেখায় সমস্যা থাকার চান্সও আছে। সেই আলোকেই এই বিপদহীন গল্পগুলোকে অনেক সময়ই তাফসীর গ্রন্থে স্থান দেওয়া হয়েছে। কিন্তু আলোচ্য ঘটনাগুলোর ব্যপারে আমার কাছে মনে হয়েছে, নিজের খেয়ে নিজের পরে কেউ নিজেরে খারাপ বলতে চাইবে না। তাই এই লেখাগুলো তাদের থেকে গ্রহণ করেছি।
আরও অনেক ছোট খাট ঘটনা আছে যেগুলো ইহুদীরা বেশি গুরুত্ব দেয়না, কিন্তু খৃস্টানরা এগুলো বর্ণণা করে ঈসা (আ) এর খোদায়ী দাবী করতে বসে যায়। আমার কাছে মনে হয়েছে এখানে কনফ্লিস্ট অফ ইন্টারেস্ট আছে। তাই সেগুলো লিখিনি। উদাহরণ দেই, তারা একটা ঘটনা বলে যেখানে বলা হয়েছে, শেকিনাহ আর ওই টেম্পলে নাই, বরং জেরুজালেম থেকে বের হয়ে গেছে। এটার খ্রিস্টান ইন্টারপ্রিটেশন হইলো, যেহেতু যীশু আমাদের সব পাপ গ্রহণ করে মারা গেছেন, অতএব শেকিনাহ আর দরকার নাই। কেননা, পাপ তো মোচন হয়েই গেছে। এলা সবাই ফেরেশতা। আর ইহুদী আর ইসলামী পার্সপেকটিভ থেকে দেখলে এর ইন্টারপ্রিটেশন হবে, আল্লাহর যে সীলমোহর বা chosenness তা আর ইহুদীদের মধ্যে নাই, তারা আর নির্বাচিত উম্মত নয়। অথবা, আরেকটু ইহুদীপন্থী হইলে বলা যায়, আল্লাহর সাথে তাদের যে ডিপ্লোম্যাটিক সম্পর্ক ছিলো তাতে কোন কারণে একটা গ্যাপ পড়ে গেছে।
তারা হয়তো মাথা চুলকায়ে খুঁজে বের করতে পারে নাই, সমস্যা কোন জায়গায়। কিন্তু মুসলিমদের বিশ্বাস, তারা আল্লাহর কাছ থেকে যে নিয়ামত আসার প্রতীক্ষায় ছিলো, সেই মসীহ ঈসা (আ) যখন আসলেন, তারা তাঁকে পরিত্যাগ করলো। এর আগেও শত শত নবীদের হত্যা করে তারা শাস্তি পেয়েছে, প্রথম টেম্পল ধ্বংস হয়েছে, তাদের নির্বাসন দেওয়া হয়েছে। এবারও তারা একই ভুল করলো। তাও যার তার সাথে না, শ্রেষ্ঠ পাঁচজন রাসূলের একজনের সাথে। তাদের যে ওয়াদা ছিলো, মসীহ আসলে মানতে হবে, তাঁকে মানে নাই। হত্যা করার একেবারে শেষ ধাপ পর্যন্ত তারা গেছে। আল্লাহ ঈসা (আ)কে বাঁচালেন , কিন্তু ইহুদীরা কিছু না কিছু তো করেছে অন্তত মানুষকে বিশ্বাস করানোর জন্য যে ঈসা (আ) ক্রুশে মারা গেছেন। কিন্তু কেন ক্রুশে ? তাঁকে কোন লোকাল গুন্ডা লাগায়ে খুন করে ফেললে সমস্যা কি ছিলো ? আসলে ইহুদীদের একটা বিশ্বাস হলো, ক্রুশে মৃত্যু একটা অভিশপ্ত মৃত্যু । মানে, যে ক্রুশে মারা গেলো, সে অভিশপ্ত। তাই তারা ঈসা (আ)কে ক্রুশবিদ্ধ করেই মারতে চায় যেন মানুষকে বোঝাতে পারে, দেখো, এ মসীহ হইলে তো আল্লাহ বাচাইতো, এই অভিশপ্ত মৃত্যু তো হইতো না। ব্যাসিক্যালি আল্লাহকে চ্যালেঞ্জ করলো যে, তার ঈসা (আ) কে ক্রুশে মেরে তাঁর “মসীহত্ব” কে মিথ্যা প্রমাণ করে দেখাবে। কিন্তু আল্লাহও চ্যালেঞ্জ প্রহণ করলেন, ঈসা (আ) কে রক্ষা করলেন। কিন্তু কেন তখনই অলৌকিকতা দেখায়ে ঈসা (আ)কে সত্য প্রমান করলেন না ?
এটার ব্যাপারে আলেম ওলামারা ভালো জানেন। কিন্তু যেহেতু শরীয়তের হুকুম আহকামের বিধান না, পাঠক হিসেবে একটা মতামত আমারও চলেই আসে। আর তা হলো, ওই সময়কার বনী ইজরাঈল হয়তো যোগ্য ছিলো না। এর আগেও এমন ঘটনা ঘটেছে। আল্লাহ যখন বনী ইজরাঈলকে হুকুম দিলেন, মূসা (আ) এর সাথে যুদ্ধ করতে, আল্লাহ অলৌকিকভাবে সাহায্য করবেন, তারা শহরের দরজা দিয়ে ঢুকলেই আল্লাহ তাদের বিজয় দেবেন, কিন্তু তারা ভয় পেয়ে বলেছিলো, ” আমরা বসলাম, তুমি আর তোমার আল্লাহ গিয়ে যুদ্ধ করো।“ , কুরআনে আছে, হুদাই বিষেদগার করার জন্য বলছি না। আল্লাহ চাইলে তখন মূসা (আ) কে একলা পাঠায়ে শহর জয় করে তাদের দেখায়ে দিতে পারতেন , কিন্তু দেন নাই। আল্লাহ তাদের নির্বাসিত করলেন চল্লিশ বছরের জন্য, তাদের জন্য সেই প্রমিজড ল্যান্ড চল্লিশ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়ে গেলো, এমনকি এদের এই ফাতরামির কারণে মুসা (আ) পর্যন্ত প্রমিজড ল্যান্ডে ঢুকতে পারেন নাই। চল্লিশ বছর পর যখন নতুন জেনারেশন আসলো, তারা আল্লাহর সেই মদদ পাওয়ার উপযুক্ত ছিলো। তাই ইউশা ইবন নূন (আ) এর আন্ডারে যুদ্ধ করে তারা জেরিকো শহর দখল করে। আল্লাহ অনুপযুক্তদের হাতে জেরিকো দিলেন না, উপযুক্তদের জন্য ধরে রাখলেন। আল্লাহপাক রাসূলুল্লাহ (স) কে অনেক মুজেজা দিয়েছেন। চাইলেই রাসূলুল্লাহ (স)কে একচ্ছত্র বিজয় দিয়ে মক্কাতেই ইসলামের রাজত্ব কায়েম করতে পারতেন। কিন্তু আল্লাহ পাক করলেন না। বরং মদীনাবাসীরা, যারা উপযুক্ত ছিলো, আল্লাহ তাদেরকে আল্লাহর পথে সংগ্রাম করার মর্যাদা দিতে চাইলেন, আর মর্যাদা দিলেন। হয়তো তখনকার ইহুদীরা এতোটাই অনুপযুক্ত ছিলো যে, আল্লাহ তাদেরকে ঈসা মসীহ (আ) এর বিশ্বজয়ের সাফল্য দেখতে দিলেন না। বরং ঈসা (আ)কে উপযুক্ত মানুষদের জন্য তুলে রাখলেন। এই উপযুক্ত কি খালি আমরা ? না। অনেক ইহুদী খৃস্টানও থাকবে, তারা ঈসা (আ) কে দেখে তাঁর উপর ঈমান আনবে। আরেকদল থাকবে যারা দাজ্জালের পরাজয়ের পর তাদের ভুল বুঝতে পারবে, ঈসা (আ) কে প্রতিশ্রুত মসীহ হিসেবে মেনে নেবে, তাঁর তখনকার হুকুম তথা ইসলামী শরীয়াহ মেনে চলবে। হ্যাঁ, ইসলামী শরীয়াহ। কেননা, মূসা (আ) এর শরীয়াহর অনেক গুরুত্বপূর্ন দিক পরিবর্তন করা হয়েছিলো ঈসা (আ) এর মাধ্যমে। রাসূলুল্লাহ (স) আসার আগ পর্যন্ত সেটাই অ্যাকটিভ শরীয়াহ, মানে, ঈসা (আ) এর করে দেওয়া মডিফাইড শরীয়াহ, মূসা (আ) এর টা না। তেমনি রাসূলুল্লাহ (স) এর আনা শরীয়াহ এখনকার জন্য। ঈসা (আ) এর মডিফাইড ট্রাঞ্জিশনাল শরীয়াহও এখন ইনঅ্যাকটিভ । ঈসা (আ) এসে কারেন্ট শরীয়াহই মানবেন, তবে অবশ্যই পরিবর্তন হবে। আজকে আমাদের মধ্যে যে এতো ভাগযোগ, নানান মাজহাব, নানান স্কুল অফ থট, ইমাম মাহদী আসার পরই সব ক্যানসেল হয়ে এক হয়ে যাবে। আজকে এত ভাগ কারণ আমাদের মধ্যে কোন আনডিজপুটেড লিডার নাই, যারে দেখে আমরা বলতে পারব, আমি নিশ্চিত, এই লোকই সব জানে। বরং আমরা আমাদের মধ্যেকার সর্বোচ্চ কোয়ালিটির যারা আলেম, তাদের জ্ঞানের উপর নির্ভর করি, যে, এই লোকের চিন্তা ভাবনা আমাদেরকে সঠিক পজিশনের সবচেয়ে কাছাকাছি নিয়ে যাবে। কিন্তু ইমাম মাহদী তো আল্লাহর পক্ষ থেকে বিশেষ হিদায়াহ প্রাপ্ত, তিনি যখন আমাদের ইমাম, তিনি যেটা বলবেন, সেটাই মাযহাব। আর তারপর তো ঈসা (আ), উনার জ্ঞান প্রজ্ঞা আর হিদায়াতের লেভেল নিয়ে তো কিছু বলার অপেক্ষা নাই, সরাসরি আল্লাহর পক্ষ থেকে জ্ঞান পেয়েছেন, ইসলামের কোন আইনের সঠিক ব্যাখ্যা কি, তা জানেন। উনি যেভাবে বলবেন, সেটাই তখন ফতোয়া, আমাদের আর মাযহাব, শিয়া সুন্নী এসব চিন্তা করতে হবে না সেসময়।
যাই হোক, তো, এতসব বিরাট বিরাট সাইনের শেষটা কি ?এই শেষটা আমরা সবাই জানি। ৬৯-৭০ সালের দিকে একটা বিরাট বিদ্রোহ হয়, “দ্যা গ্রেট জিউইশ রিভোল্ট” তথা “ইহুদী মহাবিদ্রোহ”, রোমান ক্ষমতা থেকে জেরুজালেমকে মুক্ত করার জন্য। কিন্তু রোমানরা বিজয়ী হয়ে জেরুজালেম দখল করে ইহুদীদেরকে জেরুজালেম থেকে বের করে দেয়, সেকেন্ড টেম্পল সম্পুর্ণ ধ্বংস করে দেয়, সেটাকে ময়লার ডাম্পিং গ্রাউন্ড হিসেবে ব্যবহার করতে শুরু করে।
আর ৬৩২ ঈসায়ী সালে উমর ইবন খাত্তাব (রা) এর নেতৃত্বে আমরা জেরুজালেমে প্রবেশ করি, সেই ময়লার স্তূপকে পরিষ্কার করে সেখানে আবার আল্লাহর নাম নেওয়া চালু করি, নামাজ চালু করি, আর ইহুদীদেরকে জেরুজালেমে ফেরত আনি।
মনে রাখবেন, মা দেখতে খারাপ হলেও মা। বাবা গরীব হলেও বাবা। আর ইসলামের প্রথম প্রায় চৌদ্দ থেকে সাড়ে চৌদ্দ বছর জেরুজালেমের সেই ময়লা দুর্গন্ধযুক্ত ঢিবিই ছিলো আমাদের প্রথম কিবলা। যাকে আল্লাহ সম্মান দেন, তাঁকে কেউ অসম্মান করতে পারে না।
“তারা তাদের মুখের ফুঁৎকারে আল্লাহর নূরকে নিভিয়ে দিতে চায়, কিন্তু আল্লাহ তাঁর নূরকে পরিপূর্ণ করবেনই যদিও কাফিররা (তা) অপছন্দ করে ।” [সূরা সফ ৬১ আয়াত ৮]
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা মার্চ, ২০২৫ দুপুর ২:২৭

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


