somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লিবারেলদের কন্ট্রোভার্সিয়াল অস্ত্র- বাক্বারাহ ২:২৫৬

০৭ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

উদাহরণ ১:
"ভাই, নামাজ পড়বেন না ? চলেন।"
"আরেহ, মনের নামাজই বড় নামাজ, ধর্মে কোন জোরাজুরি নাই।"

উদাহরণ ২:
"আপু, বাইরে যাচ্ছো, কিন্তু তমার ড্রেস তো সতর ঢাকা না গুনাহ হবে তো। "
"আরেহ, মনের পর্দাই বড় পর্দা, ধর্মে কোন জোরাজুরি নাই।"

উদাহরণ ৩:
"ভাই, বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক তো ইসলামে নিষেধ। অনেক বড় গুণাহ।"
"আরেহ, প্রেমই সত্যি, প্রেমই শক্তি। তাছাড়া, ধর্মে কোন জোরাজুরি নাই।"

উদাহরণ ৪:
"ভাই, আমাদেরকে তো অন্য ধর্মাবলম্বীদের উপাসনার সময় সেখানে যাইতে নিষেধ করা হইছে।"
"আরেহ, ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। আর, ধর্মে কোন জোরাজুরি নাই।"

উদাহরণ ৫:
"এই মোল্লারা লোভী, কুরবানী দিয়া অনেক টাকা নষ্ট হয়।"
"ভাই, সামর্থ্যবানদের জন্য কুরবানী করা তো ইবাদত। হুকুম আছে।।"
"আরেহ, গরীবদের দান করলেই হবে। ধর্মে কোন জোরাজুরি নাই।"

এরকম অসংখ্য উদাহরণ পাওয়া যাবে, যারা ইসলামকে ঢিলা করতে করতে এমন অবস্থায় নিয়ে যেতে চায়, যেখানে সব আমলই কোন রকম যেন নফল বলে বিবেচিত হয়। নামাজ পড়ি না, ঈমান আছে টাইপ এসকল ব্যক্তিদের একটা গো-টু উক্তি হলো, ধর্মে কোন জোরাজুরি নাই। এদের মধ্যে বিরাট একটা সংখ্যা হলো, নিসুদ (নিজ সুবিধাবাদী দল), আরেকটা অংশ হইলো স্রেফ ছুপা ইসলামবিদ্বেষী। মানুষকে ভুলভাল বুঝায়ে সুঝায়ে বরকত্তাদের দিয়ে দেওয়া প্লানমাফিক ইসলামকে প্যাকেট করে ঘরের ভেতরে ঢুকাই দেওয়ার ইবাদাতে মশগুল। মহান শয়তানের পাশের চেয়ারটা তাদের জন্য বরাদ্দ হোক।

কিন্তু এই আয়াতের অর্থ কি ? অবশ্যই বড় বড় তাফসীরকারকদের কিতাব থেকে এই আয়াতের অনেক নিগূড় অর্থ , অনেক ফযীলত খুজে পাওয়া যাবে। কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে, কুরআন কেবলমাত্র মুসলিমদের উদ্দেশ্যে কথা বলে না। কুরআন অমুসলিমদের উদ্দেশ্যেও কথা বলে। আর যারা অমুসলিম, তারা বেশিরভাগই আমাদের বড় বড় উলামাগণকে এতোটা দাম দেয়য় না যে, তাফসীর পড়তে বসে যাবে। তাছাড়া যখন প্রথম কুরআন নাযিল হচ্ছিলো, তখন কিন্তু এমনভাবেই নাযিল হচ্ছিলো যে, মুসলিমেরা তিলাওয়াত করবে, এগুলো কুফফারদের কাণে ঢুকবে, তারা সেই শব্দ গুলো নিয়েই চিন্তা করবে। খুব কমই উদাহরণ আছে যে, বিদ্বেষপূর্ণ কুরাইশী এলিটরা মুসলিমদের এসে জিজ্ঞাসা করছে , এই আয়াতের ব্যাখ্যা কি? বরং টারা যা শুনোলও, ঐটা নিয়ে চিন্তা করাই হয়তো তাদের জন্য যথেষ্ট নসীহাহ/উপদেশ ছিলো। কুরআনের এই গুণ কালক্রমে কমে যায় নাই। একই আছে। কাজেই যখন কেউ নিউট্রাল মনোভাব নিয়ে একটা আয়াত পড়বেন , ব্যাসিক কমন সেন্স দিয়েই এর মূল অর্থ বুঝতে পারা সম্ভব। কিন্তু আমরা দেখেছি, কিভাবে অনেক সময় কনটেক্সট এর বাইরে থেকে কোন একটা বক্তব্যের অংশবিশেষ নিয়ে বক্তব্যকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভুলভাবে উপস্থাপন করা যায়, বক্তব্যের বা বক্তার ব্যপারে একটা মথ্যা ছবি অংকন করা যায়। ধর্মে জোরাজুরি নাই এর ক্ষেত্রে এই জিনিস একেবারে পাইকারি হারে ঘটেছে।

ধর্মের জোরাজুরি নাই, এইটা কোন আয়াত না, বরং একটা আয়াতের একটা অংশবিশেষ মাত্র। আমাদের বহুল পরিচিত যে আয়াতুল কুরসি (সূরা বাক্বারাহ, আয়াত ২৫৫), তার পরের আয়াতই এটি। আমরা আয়াত ২৫৬ ও ২৫৭ এর অর্থটা দেখি।

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম
আয়াত ২৫৬: ধর্মের জন্য কোন জোর-জবরদস্তি নেই। নিশ্চয় সুপথ প্রকাশ্যভাবে কুপথ থেকে পৃথক হয়েছে। সুতরাং যে তাগূতকে (অর্থাৎ, আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য বাতিল উপাস্যসমূহকে) অস্বীকার করবে ও আল্লাহকে বিশ্বাস করবে, নিশ্চয় সে এমন এক শক্ত হাতল ধরবে, যা কখনো ভাঙ্গার নয়। আর আল্লাহ সর্বশ্রোতা, মহাজ্ঞানী।
আয়াত ২৫৭: আল্লাহ তাদের অভিভাবক যারা বিশ্বাস করে (মু’মিন)। তিনি তাদেরকে (কুফরীর) অন্ধকার থেকে (ঈমানের) আলোকে নিয়ে যান। আর যারা সত্য প্রত্যাখ্যান করে, তাদের অভিভাবক হল তাগূত (শয়তান সহ অন্যান্য উপাস্য)। এরা তাদেরকে (ঈমানের) আলোক থেকে (কুফরীর) অন্ধকারে নিয়ে যায়। এরাই দোযখের অধিবাসী, সেখানে তারা চিরকাল থাকবে।

প্রকাশ্য দিবালোকের মতন স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে, এখানে ধর্মে কোন জবরদস্তি নেই দিয়ে মূলত সত্য পথ ও মিথ্যা পথের পার্থক্য নিয়ে কথা হচ্ছে। আল্লাহ্‌ পাক বলছেন যে, সত্যা পথ মিথ্যা থেকে আলাদা হয়ে গেছে। ধর্মে কোন জোরাজুরি নাই, যার খুশি সত্য গ্রহণ করুক, যার খুশি মিথ্যা গ্রহণ করুক। তারপর আল্লাহ্‌ পাক বললেন, সত্য গ্রহণ করলে কি হবে আর মিথ্যা গ্রহণ করলে কি হবে। কিন্তু আপনার পথ আপনিই বেছে নিবেন। আর সাথে যে পথের শেষে যে ফলাফল অপেক্ষা করছে, সেটাও আপনিই বেছে নিলেন। কিন্তু যখন বেছে নিলেন, তখন সেই পথকে আর নিজের মতন করে ডিফাইন করতে পারবেন না। পথ আগে থেকেই তৈরি হয়ে আছে। সেই পথে চলা লাগবে। আপনার যে শক্তি আছে, সেই শক্তি অনুযায়ী আপনি আস্তে আস্তে এগোবেন, নয়তো দ্রুততার সাথে এগোবেন । আপনার শারীরিক আর মানসিক শক্তির উপর এটা নির্ভর করবে। কিন্তু ইসলামের মধ্যে পানি ঢেলে ফরযকে নফল, হালালকে হারাম আর হারামকে হালাল বানানোর অস্থ্র এই আয়াত নয়।

ইসলাম পালন কি কষ্টের? অবশ্যই কষ্ট আছে, কিন্তু মূলত নির্ভর করে আপনার মানসিকতার উপর। যদি আপনি সত্য পথকে নিজে থেকে বেছে নিয়ে থাকেন, তাহলে যে কষ্ট সেগুলো কদিনের সহজেই সয়ে যায়। সূর্যোদয়ের আগে ঘুম থেকে ওঠা, ঠান্ডা পানিতে ওযু করা, নিজের কষ্টার্জিত অর্থ থেকে গরীবদের দান করা, রোযারমাসে একটা লম্বা সময় কিছু পানাহার করতে না পারা, অবশ্যই এগুলো কষ্টের। কিন্তু আপনার আমার বাপ-দাদারা সূর্য ওঠার আগেই কিন্তু গরু নিয়ে ক্ষেত চষতে যেতেন। অনেক যায়গাতেই জেলেরা রাত জেগে মাছ ধরে। সেগুলো যেমন সয়ে যায়, তেমনি ফজরের নামাজও সয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ্‌। তাছাড়া চারপাশে কুফফারদের মৌজ-মাস্তির যে নোংরা প্রদর্শনী, তা মূলত মানবজাতির জৈবিকতাকে প্রমোট করে মানুষকে নিজেদের দলে ভিড়ানোর ধান্দা। অতঃপর দাসত্বের শৃঙ্খলে বন্দী করা। রোযাকে আমরা এতোদিন ভাবতাম, পানাহার থেকে বিরত থেকে গরীবদের কষ্ট বোঝার পথ। কিন্তু আজকের জমানায় দেখা যাচ্ছে, রোযা এই পশ্চিমা সেক্যুবাদীদের জৈবিকতার মিছিলের সামনেও ঢালস্বরূপ কাজ করে। নগ্নতা , র‍্যাডিকাল ক্যাপিটালিজম, হিপোক্রিটিকাল রাইটিয়াসনেস , সব কিছুর সামনেই রোজা ঢাল স্বরূপ। কেননা রোযা রাখলে আমরা সিম্পলি এই কাজগুলো করতে পারবো না। তা সে ফরয রোজাই হোক, আর নফল রোজাই হোক।

জিহাদ আমাদের উপর ফরয। ফিলিস্তিনের জিহাদও যেরকম ফরয, তেমনি নিজের ভাইকে , নিজেকে তাগুতের সামনে, শয়তানের গোষ্ঠীর আক্রমনের সামনে নিজেকে ডিফেন্ড করাও ফরয। আল্লাহ্‌ পাক আমাদেরকে এই পশত্ববাদীদের আক্রমণ থেকে রক্ষা করুন। এদের ব্রেইনওয়াশিং থেকেও নিজেকে রক্ষা করুন। সত্যকে আঁকড়ে ধরার তাওফীক দান করুন, আমীন।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই মার্চ, ২০২৫ রাত ১১:৩১
৯টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মানুষের টাকা দিয়ে ইসলামি ব্যাংকগুলো কি জুয়া খেলে?

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:০৫



ইসলামি শরিয়া ভিত্তিক দেশের পাঁচ পাঁচটি ইসলামি ব্যাংকের আজ বেহাল দশা, তারা গ্রাহকের টাকা ফেরৎ দিতে পারছে না। সবগুলো ব্যাংকই এখন দেউলিয়ার পথে, বাধ্য হয়ে সরকার এই পাঁচ... ...বাকিটুকু পড়ুন

বি ডি আর বিদ্রোহ ও পিলখান হত্যাকান্ডের কিছু অপ্রাকাশিত সত্যঃ (পর্ব ০২)

লিখেছেন মেহেদী আনোয়ার, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১:৪৭

বিডিআর এর ডিজি নিহত হয় সকাল সাড়ে দশটায়। ভারতীয় টিভি চ্যানেল 'চব্বিশ ঘন্টা' বিস্ময়করভাবে অতি অল্পসময়ের মধ্যে বিডিআর ডিজি ও তার স্ত্রী নিহত হবার সংবাদপ্রচার করে সকাল এগারটায়। ভারতের আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগ কি শিখিয়েছে?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১০:০৬






অপমান, অপদস্থ থেকে বাঁচার উপায় শিখাইনি? ওস্তাদ মগা শ্যামী পাহাড়ে বসেও এসবের সমাধান করতে পারে, আপনি সামান্য অসুস্থতার জন্যও ব্লগে মিলাদ দেননি, দোয়া করেছেন কার জন্য? খালেদা জিয়ার জন্য এয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৮

ওরা দেশের শত্রু; শত্রু দেশের মানুষেরও...

অন্তর্জাল থেকে নেওয়া সূর্যোদয়ের ছবিটি এআই দ্বারা উন্নত করা হয়েছে।

ইসলামের পবিত্র আলো ওদের চোখে যেন চিরন্তন গাত্রদাহের কারণ। এই মাটি আর মানুষের উন্নয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×