somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

স্যান্ডিয়াগো পেরিয়ে বহুদূর এগিয়ে যাক বাংলা বর্ণমালা!

১৯ শে নভেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হাতে সময় মাত্র বিশ মিনিট! এর মধ্যেই এই স্যান্ডিয়াগো শহরের ওয়েস্টফিল্ড ইউটিসি থেকে প্রথম বাসটি ধরতে হবে। তারপর ফ্যাশান ভ্যালি থেকে আরেকটি বাস। সেটি ‘পাঠশালা’র কাছাকাছি পোৗছবে দুপুর ২টা ১৭ মিনিট। এমনিতে সাথে নেই কোন মোবাইল ফোন! তারপর আবার ১ মিনিট দেরি করলেই ওখান থেকে ভদ্রলোক আমাদের পিক করতে পারবেননা। কেননা তাকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ‘পাঠশালা’ খুলতে হবে। তবু ঠিক করলাম, যেভাবেই হোক যাবো। অতপর পাঠশালা কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় শেষ পর্যন্ত পৌছলাম গন্তব্যে।


দেওয়াল জুড়ে হাসছে ‘অ-আ-ক-খ’। সাথে ছোট্ট সোনামনিরাও। স্কুলের নামটাও বেশ ! ‘পাঠশালা’। কিন্তু, ক্লাসে ঢুকে একটু ভড়কে গেলাম। ২৪-২৫ বছরের এই যুবক শিশুদের চেয়ারে বসে কী করে! ভাবলাম হয়তো বাচ্চাদের পড়াবে। কিন্তু না। শিক্ষক তো আছেন’ই, বোর্ডে লিখছেন। পরে জানলাম এই যুবকও ছাত্র। ইউনিভার্সিটি থেকে গ্রাজুয়েশন করেছেন রিদোয়ান। কাজও করছেন। আফসোস কেবল ভালো করে শেখা হয়নি বাংলা।


রিদোয়ানের মতো আফসোস করতে চাইনা নওরিন, অয়ন, ওমরান, আয়রাহ, ইউসুফ, তাজরিনসহ আরো অনেকে। অন্তত দু-এক বছর অন্তর দেশে গিয়ে যদি নানু-দাদুর সাথে তাদের ভাষায় একটু কথা’ই বলতে না পারে তাহলে কি হয়!
দুপুর গড়িয়ে বিকেল নামলো। সমুদ্র থেকে ঠান্ডা বাতাশ বইছে। তাই রোদটাও মিষ্টি। স্কুলের বারান্দায় বসে কফিতে প্রথম চুমুক দিয়েই আঁতকে উঠলাম। উহফ! জিহ্বা পুড়ে গেছে। বুঝলাম আমার সামনে বসা এই বৃদ্ধা দাদুর গল্পে আমি পুরোই মগ্ন ছিলাম। নিজ চোখে দেখা ব্রিাটশ শাসন, পাকিস্তানী আমল, ভাষা আন্দোলন অতপর মুক্তিযুদ্ধের গল্প বলছিলেন তিনি। তার আমেরিকান আন্ডারগ্রাড নাতী সাদিবকে বাংলা শেখাতে নিয়ে এসেছেন এই ‘পাঠশালায়’।


ইংরেজি শব্দের শাসনে গড়া জিহব্া-স্বরযন্ত্র কে অনেক কষ্টে নিয়ন্ত্রণ করে যখন টুনটুনিরা হাট্টিমাটিম...টিম পড়ছিলো তখন গর্বে যেন বুকটা ভরে উঠলো। স্কুলের ৪ থেকে ৬ বছরের শিশুদের ক্লাসের নাম টুনটুনি। এরপর ৬ থেকে ৮ বছরের শিশুরা মেঘনা, ৮ থেকে ১০ বছরের শিশুদের নাম সুরমা এবং ১০ বছরের উপরে বয়সী শিক্ষার্থী যমুনা। তবে বয়স যা’ই হোক বাংলা জানার লেভেল অনুযায়ী যে কাউকে যেকোন ক্লাসে পড়তে হতে পারে। বর্তমানে পড়ছে ২১ জন শিক্ষার্থী। এর মধ্যে ভারতীয় বাঙালীও রয়েছে।

বাংলা ভাষা ও এর ইতিহাস যাতে নতুন প্রজন্মের কাছে দুর্বদ্ধ এক গল্প হয়ে না থাকে সেই প্রচেষ্টা থেকেই পাঠশালার এই উদ্দোগ। সারা সপ্তাহ অক্লান্ত পরিশ্রম করেও নিজেদের সাপ্তাহিক ছুটিটি বিসর্জন দিয়ে স্বেচ্ছায় যারা কাজ করে যাচ্ছেন তাঁদেরই একজন স্যান্ডিয়াগো স্টেট ইউনিভার্সির এ্যাসোসিয়েট প্রফেসর জহির চৌধুরী। মূলত তিনিই এটি সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করছেন। এছাড়া নিয়মিত কাজ করছেন আরাফাতুর রাব্বি, সারমিন এ্যানি, ফারহানা লুবনা, তাবাস্সুম কনিসহ আরো অনেকে। সহযোগিতা করছে স্যন্ডিয়াগোর বাংলাদেশী কমিউনিটি সংগঠন ‘অগ্রযাত্রা’। বিশেষ দিনে বিভিন্ন মেলা কিংবা অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের ভাষা ও সংষ্কৃতিতে তুলে ধরতেও কাজ করছে পাঠশালা পরিবার। কখনো বিদেশী শিশুদের শাড়ী পরিয়ে, কখনো মেহেদী রাঙিয়ে অথবা নাচে গানে বিশ্বের কাছে তুলে ধরছেন বাংলাদেশকে।


প্রফেসর জহির চৌধুরী জানান, পাঠশালার স্বপ্ন বহুদূর। ২০১২ সালে ৪টি রুম ভাড়া নিয়ে এটি যাত্রা শুরু করলেও অনন্ত পথ পাড়ি দিতে চাই পাঠশালা। বাংলাকে শুধু বাংলাদেশীদের মাঝে না, বরং তা অ-বাঙালিদের মাঝেও ছড়িয়ে দিতে চান তারা।

অগ্রযাত্রা পরিচালনা বোর্ডের সদস্য মইনুল খান বলেন, শুধু ভাষা নয়, আমাদের নতুন প্রজন্মেকে তাদের শেকড়ের সন্ধান দিতে আমরা পাঠশালা খুলেছি। আমাদের স্বপ্ন বহুদূর।

যুক্তরাষ্ট্রের সমুদ্র ঘেরা ক্যালিফোর্নিয়া স্টেটের এই ছোট্ট একটি শহরে হাজার খানেক বাংলাদেশীর মধ্যেও যে বাংলা ভাষা টিকিয়ে রাখার আন্দোলন চলছে, দেখে গর্ব হলো। ফেরার পথে মনে মনে বললাম, স্যান্ডিয়াগো পেরিয়ে আরো বহুদূর এগিয়ে যাক আমাদের প্রাণের বাংলাভাষা। অনন্তকাল ধরে নতুন প্রজন্মের সাথে মিশে থাক প্রিয় বর্ণমালা!

লাকমিনা জেসমিন সোমা
স্যান্ডিয়াগো, ক্যালিফোর্নিয়া, যুক্তরাষ্ট্র
১৯ নভেম্বর।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে নভেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৩:৩৪
১৩টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

৫০১–এর মুক্তিতে অনেকেই আলহামদুলিল্লাহ বলছে…

লিখেছেন বিচার মানি তালগাছ আমার, ০৩ রা মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০০



১. মামুনুল হক কোন সময় ৫০১-এ ধরা পড়েছিলেন? যে সময় অনেক মাদ্রাসা ছাত্র রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল। দেশ তখন উত্তাল। ঐ সময় তার মত পরিচিত একজন লোকের কীভাবে মাথায় আসলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঝিনুক ফোটা সাগর বেলায় কারো হাত না ধরে (ছবি ব্লগ)

লিখেছেন জুন, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৯

ঐ নীল নীলান্তে দূর দুরান্তে কিছু জানতে না জানতে শান্ত শান্ত মন অশান্ত হয়ে যায়। ১৯২৯ সালে রবার্ট মোস নামে এক ব্যাক্তি লং আইল্যান্ড এর বিস্তীর্ণ সমুদ্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

'চুরি তো চুরি, আবার সিনাজুরি'

লিখেছেন এমজেডএফ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৮


নীলসাধুকে চকলেট বিতরণের দায়িত্ব দিয়ে প্রবাসী ব্লগার সোহানীর যে তিক্ত অভিজ্ঞতা হয়েছিল তা বিলম্বে হলেও আমরা জেনেছি। যাদেরকে চকলেট দেওয়ার কথা ছিল তাদের একজনকেও তিনি চকলেট দেননি। এমতাবস্থায় প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বরাবর ব্লগ কর্তৃপক্ষ

লিখেছেন নীলসাধু, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২২

আমি ব্লগে নিয়মিত নই।
মাঝে মাঝে আসি। নিজের লেখা পোষ্ট করি আবার চলে যাই।
মাঝেমাঝে সহ ব্লগারদের পোষ্টে মন্তব্য করি
তাদের লেখা পড়ি।
এই ব্লগের কয়েকজন ব্লগার নিজ নিক ও ফেইক... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ অপেক্ষা

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০৩ রা মে, ২০২৪ রাত ১১:২৩



গরমের সময় ক্লাশ গুলো বেশ লম্বা মনে হয়, তার উপর সানোয়ার স্যারের ক্লাশ এমনিতেই লম্বা হয় । তার একটা মুদ্রা দোষ আছে প্যারা প্রতি একটা শব্দ তিনি করেন, ব্যাস... ...বাকিটুকু পড়ুন

×