দুপুর ২টার বেশ আগেই ‘রাঞ্চো বার্নার্ডো’ পাবলিক লাইব্রেরীতে পৌছে গেলাম। বাংলাদেশী হিসেবে সময়-জ্ঞান নিয়ে যে বদ-অভ্যাস আছে সেটি ঘুচানোর চেষ্টা করছি। এখানে এসে অনেকখানি কাটিয়ে উঠতেও পেরেছি। যাই হোক, সময় মতোই একে একে ভরে উঠলো লাইব্রেরীর ‘কমিউনিটি মিটিং হল’। সবাই যখন অধীর আগ্রহে, ঠিক তখনই শুরু করলেন স্যান্ডিয়াগোতে বাংলাদেশীদের সংগঠন ‘অগ্রযাত্রা’র বোর্ড অব ডিরেক্টর’র সদস্য মইনুল খান। সংগঠনের উদ্দোগে তার ঘোষণার মধ্য দিয়ে শুরু হলো বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতার স্বপ্ন দিয়ে গড়া এ চলচ্চিত্রের প্রদর্শনী। সৌভাগ্যবশত আমি ছিলাম ওই ১০ জনেরই একজন। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশী, আমেরিকান ছাড়াও কলকাতা থেকে আসা দর্শক-শোতারাও উপস্থিত ছিলেন।
এখানে একটু না বললেই নয়, স্যান্ডিয়াগোতে এসে যখন আমার প্রাণের ভাষা আর মাটির মানুষের সান্নিধ্য না পেয়ে মনটা বিষিয়ে উঠছিল তখনই ভার্চুয়াল জগৎ দিয়ে (ফেসবুক) স্যান্ডিয়াগোর বাংলা স্কুল ‘পাঠশালা’র মাধ্যমে বাংলাদেশীদের সাথে পরিচয়। তারপর তার শেকড়-‘অগ্রযাত্রা’র মাধ্যমে আস্তে আস্তে বাংলাদেশ নামক এই চীর সবুজ গাছের দেশ বিদেশে ছড়িয়ে থাকা ডাল-পালার ছায়ায় প্রাণের মানুষ গুলোর সাথে মিশে যাওয়া।
বাংলাদেশের ৫টি চলচ্চিত্র নিয়ে গত সেপ্টেম্বরে আমেরিকায় পাড়ি জমিয়েছিলাম। আমরা এখনো দেশের বিভিন্ন পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিষয়ক শিক্ষার্থী। আমেরিকা সরকারের অর্থায়নে ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়া স্যান্ডিয়াগো (ইউসিএসডি)’র একজন প্রফেসর, রবার্ট এ. হুপারের গবেষণা কার্যক্রমের এর আওতায় সম্প্রতি এগুলো নির্মাণের সুযোগ পাই।
বাংলাদেশে বিরাজমান প্ররিস্থিতিতে ‘টিভি সাংবাদিকতা ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে কীভাবে শান্তি ও সহনশীলতা প্রতিষ্ঠা করা যায়’ পূর্ব নির্ধারিত এই বিষয়টিতে আলোকপাত করেই দুটি ডকুমেন্টারি ও তিনটি ডকুড্রামা বানিয়েছি আমরা। এর পটভূমিতে স্থান পেয়েছে দেশের ইতিহাসে ঘটে যাওয়া জঙ্গিবাদ, সাম্প্রদায়িক হামলা, আদিবাসীদের ভাষা সমস্যা এবং সাম্প্রতিককালে শাহবাগ আন্দোলনসহ দৈনন্দিন জীবনে শান্তি-সহনশীলতা বিষয়ক বিভিন্ন আলোচিত বিষয়াবলি। প্রদর্শনী শেষে দর্শকদের বিভিন্ন মন্তব্য ও প্রশ্নের উত্তর দেওয়া হয়।
অগ্রযাত্রা বোর্ড অব ডিরেক্টরের আরেক সদস্য, মাহমুদ হোসেন তার বক্তব্যের মধ্য দিয়ে তিন ঘন্টা ব্যাপি অনুষ্ঠানের আনুষ্ঠানিক সমাপ্তি ঘোষনা করেন। তিনি বলেন,‘তোমরা তরুণেরা দেশের স্বপ্ন নিয়ে যে পথে হাটছ আমরা ‘অগ্রযাত্রা’র মাধ্যমে তাতে সামিল হওয়ার চেষ্টা করলাম। এ আমাদের এক প্রকার বিবেকের দায়বন্ধতা।’
তবে হ্যাঁ, এখানেই শেষ নয়! মাহমুদ হোসেনর নান্দনিক বাসায় প্রফেসর হুপার সহ বাংলাদেশীদের সাথে জাকজমকপূর্ণ ডিনারের স্বাদ কিন্তু সত্যিই ভোলার নয়। খাবারের গন্ধ যেন এখনো হাতে লেগে আছে। গল্প-গুজব-আড্ডার সাথে সুস্বাদু এমন সব খাবার আর পুরনো দিনের সুরেলা বাংলা গান...উহফ! সে কি ভোলা যায়!
লাকমিনা জেসমিন সোমা
স্যান্ডিয়াগো, ক্যালিফোর্ণিয়া
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ বিকাল ৪:২৩