রাজনীতিতে শেষ কথা বলে কিছু নেই। বহুল প্রচলিত এই বাক্যটি জানি। কিছুটা মানিও। আর বই-পুস্তক কিংবা পত্র-পত্রিকা পড়ে প্রতিনিয়তই তার প্রমাণ পাই। ‘বাংলাদেশ’ নামটির যে ইতিহাস তাতেও দেখেছি- রাজনীতির শুরু আছে, শেষ নেই! রাজনীতিকের মৃত্যু আছে। রাজনীতির নেই। সেই সাথে বোধয় মৃত্যু নেই অপরাজনীতিরও।
জীবন-মৃত্যু, রাজনীতি-অপরাজনীতির এইসব সমীকরণের উর্ধ্বে যিনি, তিনি বঙ্গবন্ধু। কারন, তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী। তিনি বেঁচে আছেন, থাকবেন। বেঁচে থাকবেন রাজনীতিতে। বেঁচে থাকবেন বাঙালির রক্তে। বিশ্ববাসীর বিস্ময়ে। এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু, অস্বাভাবিক হলো- যখন প্রচলিত স্বস্তা রাজনীতি (অপরাজনীতি) গ্রাস করতে চাই বঙ্গবন্ধুকে।
যারা সকাল-বিকাল কয়েকটি লাইন আওড়াতে থাকেন। বলেন, ‘নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে চিনতে হবে, তাঁর আদর্শ হৃদয়ে ধারন করতে হবে…ইত্যাদি ইত্যাদি’। তারা কি একবারও ভাবেন না, অন্তত জাতির পিতার রক্তের সাথে রাজনীতি (অপরাজনীতি) চলে না! চেতনা বিক্রি চলে না।
হ্যাঁ, আমরা তো জানতেই চাই। তবে, সত্য ইতহাসকে জানতে চাই। হোক তা নিষ্ঠুর, নির্মম কিংবা অপ্রিয় সত্য। তবু মিথ্যা, বানোয়াট ও রাজনীতির রাজনৈতিক ইতিহাস জেনে আমাদের চলবে ন! সাতচল্লিশ থেকে বায়ান্ন; বায়ান্ন থেকে ঊনসত্তর অথবা একাত্তর থেকে পঁচাত্তর; প্রতিটি অধ্যায় জানতে চাই। আমরা ১৭ মার্চ ১৯২০’এ জন্ম নেওয়া একজন মহানায়কের ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ এ চলে যাওয়া পযর্ন্ত সবটুকু জানতে চাই। জানতে চাই তার পরের ইতিহাস। গতকাল-আজ।
হে চেতনার ফেরিওয়ালা, আপনারা কি আমাদের সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন? বলতে পারবেন, মৃত্যু যমের সামনে দাড়িয়ে বঙ্গবন্ধু সেদিন কেন আপনাদের কাউকে পাশে পাননি? বিশ্ব মানচিত্রে যিনি আপনার আমার পরিচয় দিয়ে গেলেন তাঁর চলে যাওয়াকে ষড়যন্ত্র বলেই খালাস? তবে কী ছিল সেই ষড়যন্ত্র, জানতে চাই। ঠান্ডা মাথায় মেনে নিলেন এতগুলো মানুষের, এতগুলো বাহিনীর, এতগুলো সংস্থার ব্যর্থতা? সেদিন কেন নেমে এলেন না রাস্তায়? গুলি খাওয়ার ভয়ে? চেতনার ফেরিওয়ালারা, বঙ্গবন্ধুর কাছে আপনারা এই শিক্ষা পেয়েছিলেন? আপনাদের জন্য তরুণ প্রজন্মের করুনা হয়। কেন বিশ্বাসঘাতকদের জায়গা হলো আপনার পার্লামেন্টে? কেন ব্যর্থ কুলাঙ্গারদের এখনও পরিচয় মেলে বীর সেনা নামে? কেন বঙ্গবন্ধুর স্বঘোষিত খুনিরা এখনো সারাবিশ্বের দাত দেখিয়ে বেড়ায়? পাকিস্তানিদের গাড়ীতে কেন লাল-সবুজের পতাকা ওড়ে? আমরা জানতে চাই। সঠিক ইতিহাসই জানতে চাই।
পুনশ্চ: গত পঁনের দিন পেশাগত কারণে বঙ্গবন্ধু হত্যা নিয়ে স্টোরি করতে গিয়ে নতুন করে অনেক কিছু জানলাম। বই-পুস্তক পড়ে এতদিন যা জেনেছি তার চেয়ে ভিন্ন কিছু। আর পত্র-পত্রিকা ও ক্যামেরার সামনে ওনারা যা কিছু বলেন তার চেয়েও আরো কঠিন ও অপ্রিয় কিছু সত্য আছে; যা চা খেতে খেতে, গল্পের ছলে হাসতে হাসতে বলে ফেলেন। আর আমরাও জেনে ফেলি! বড় দুঃসহ, বড় নির্মম সে সত্য!
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই আগস্ট, ২০১৭ দুপুর ২:৩৭