সেপ্টেম্বরের ঊনিশ তারিখ।
আইন অনুষদের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থীদের অভিষেক।লন্ডন লিংকন ইনস ফিল্ড থেকে একজোড়া বাসে চেপে আমরা চলেছি উইন্ডসর কাম্বারল্যান্ড লজে।
বাসে পাশের সিটে বসা তরুণী উষ্ণ করমর্দনে ও কপোল ঘর্ষণে পরিচয় জানালো। রাশান এই তরুণীর নাম এলিসা।স্বীকার করতে দ্বিধা নেই, উছছ্ল সহপাঠীর এরূপ সম্ভাষণে অনভ্যস্ত আমি কিছুটা হচকচিয়ে গিয়েছিলাম। পুরো পথ জুড়ে একটা অচেনা ঘ্রাণ আমাকে স্হবির করে দিয়েছিলো, কথার ডালপালা খুব একটা গজায়নি।
ঘন্টা দেড়েক ভ্রমন শেষে চারপাশের চিত্র- বিচিত্র প্রকৃতি দেখতে দেখতে লজে পৌ্ঁছালাম। নাম না জানা বৃক্ষ , নব যৌবনা সবুজ গুল্ম, রঙিন ফুল, ফলভারে আনত সলাজ আপেল গাছ, বাগান বিলাসের পরিমিত বিন্যাস বেস্টিত সাবেক এ রাজকীয় ভিলাকে যেনো অভিমানী কিশোরীর মতো দেখালো। গোধূলির অনুজ্জ্বল আলোয় দূরাগত কূজন এখানকার প্রকৃতির অনুষঙ্গ। বনমোরগের চিৎকার, কাঠবিড়ালির চপলতা আর শুকনো পাতার মর্মর অপার্থিব পাহাড়ি বুনো পথের স্বাভাবিক ছন্দ।পাশ দিয়ে যাবার সময় এক জোড়া ময়ূর গ্রীবা উঁচু করে আমাদেরকে চেয়ে দেখলো। পথবেয়ে নামার সময় দূরবর্তি শীর্ণকায়া লেকটিকে "মক্তবের মেয়ে চুল খোলা আয়শা আাকতারের" হারিয়ে যাওয়া ফিতে বলে ভ্রম হয়েছিলো। আমি এ উপমার কথা এলিসাকে বহু কষ্টে বুঝিয়ে বলি। এলিসা হাসতে হাসতে বলে- তুমি আইনজ্ঞ না হয়ে লেখক হলে ভালো করবে। আমিও বলি- তোমার দেশের চেখভ ডাক্তার হয়েও লেখালেখি করতে পারলে, আমি লেখালেখির ভিন্ন ভূবনে কেনো বিচরণ করতে পারবনা। সহপাঠী মুগ্ধ দৃষ্টি মেলে উছছ্বাসী হয়ে উঠলো- তুমি চেখভকে চেনো! আমি চেখভের শহরের মেয়ে। ছোটগল্পের সম্রাট চেখভ আর আমাদের এলিসা একই আলো - বাতাসে বেড়ে উঠেছিল! অমর এই কথাশিল্পীর একই লতা, গুল্ম, পাইন বন আর সাগরের অলৌকিক ইশ্টিমার থেকে উঠে আসা এলিসাকে আমার বেশ আপনজন মনে হয়। আমাব কেমন যেনো ঘোর লেগে যায়।
স্বেচ্ছাসেবকের তাড়া। চেখভ, তার নগরী তাগানরগ, আ্যজব উপকূল আর এলিসাকে ঘিরে আমার কল্পিত হীরের সৌধ ভেঙে খানখান হয়ে যায়। একরাশ ক্লান্তি নিয়ে পানপাত্র হাতে নিই।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই জুন, ২০১২ রাত ৩:৩৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


