আজিজ সুপারের কোলাহল ছেড়ে মনিপুরি পাড়ার নিরিবিলি পরিবেশে বাসা খুঁজতে এলাম। আমাদের ব্যাচেলর স্টাটাস ও গায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের গন্ধ শুঁকে শ্মশ্রুমন্ডিত সুদর্শন প্রৌঢ় বাড়িওয়ালা বাড়ি ভাড়া দিতে অনীহা জানালেন।রম্যলেখক শরীফ বললো-সব ব্যাচেলর কিন্তূ খারাপ না, যেমন আমরা।একরাশ হাসি ছাড়িয়ে বাড়িওয়ালা বললেন-ইন্টারেস্টিং! বাড়িভাড়া হয়ে গেলো।
আমাদের ফুটফরমায়েশ খাটার জন্যে মহসিন হল থেকে বয় এসেছে। আমি সাহিত্যের টাটকা প্রভাষক সবুরকে বলি-এটা কী তোর ঘেঁটুপুত্র।
মতলব নিবাসি কিশোরের নাম হান্নান।বিপত্তি বাঁধলো যখন সদ্য বিরহী শাখাওয়াত সিগারেট আনতে হান্নান বলে ডাক দিলো। পাশের কক্ষ থেকে অধুনাবিলুপ্ত কুমিল্লা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতপূ্র্ব অধ্যাপক তরুণ ব্যাংকার অতি পড়ুয়া হান্নান বই হাতে হন্তদন্ত হয়ে বের হলো।বাসার অধিবাসীদের সিদ্ধান্তে ভুড়িভোজ হলো ব্যাংকার হান্নানের অর্থায়নে।বয় হান্নানের নতুন নামকরণ হলো ইমন চৌধুরী।বেশ সপ্রতীভ কিশোর অবসরে জাফর ইকবালের কল্পকাহিনি পড়ে- বিজ্ঞানী সফদর আলী ও জং বাহাদুরের কাণ্ড -কারখানা পড়ে আর হাসে। হূমায়ূন আহমেদের রাজকুমারি সূবর্ণরেখা ও বোকা দৈত্যের জন্য তার অশ্রু ঝরে। আলপিনে প্রকাশিত আমাদের শরীফ শহীদুল্লার লেখা বারবার পড়ে। তাকে দেখলে ইমনের বিস্ময় আর হাসি বাধা মানেনা। আমার দ্য ডেইলি স্টারে প্রকাশিত লেখা পড়তে পারেনা বলে তার বেশ আফসোস।
সে বাজার করে, জামা কাপড় ধুয়ে ইস্ত্রি করে। সিগারেট, কোক আনে।রাধুনী মহিলাকে তাড়া দেয়। আমাদের অনুরোধে গান গায়। কখনও নিচতলার বাসার তরুণী ঝিয়ের সাথে খুনসুটিতে মেতে উঠে। একদিন ঘর্মাক্ত কলরবে অভ্যর্থনা কক্ষে এসে বললো-ওই ঝিকে তার স্যারদের পরিচয় জানিয়ে দিয়েছে। মেয়েটি তাদের গৃহস্বামী ওয়াসার ইন্জিনিয়ার জানালে, হান্নানও না দমে বললো-তার স্যারদের একজন হাইকোর্টের উকিল,আরেক স্যার প্রথম আলোর সাংবাদিক, অন্যজন গোয়েন্দা। অন্যদের ব্যাপারে কী কী বলেছে তা বলার মাঝখানে মিতবাক বুলবুল তাকে থামালো-কিরে, গোয়েন্দা কে? ইমন আত্মবিশ্বাসের সাথে বললো-কেনো, শাহীন স্যার গোয়েন্দা সংস্হা সিআইএ এর লোক না?আমরা তার অজ্ঞতা উপভোগ করি। উল্লেখ্য, প্রেমবিলাসি শাহীন এমবিএ শেষ করে সিএ হবার স্বপ্নে বিভোর হয়ে সেই সময় সারারাত পড়তো।
মাঝে মাঝে কেউ ভুল করে ইমনকে তার সাবেক নাম হান্নান নামে ডাক দিতো, অতি পড়ুয়া ব্যাংকার হান্নান জিআরই বই হাতে ছুটে আসতো। আমি ইমনের বাঁদরামিতে আতিষ্ঠ হয়ে নতুন নাম দিলাম-জং বাহাদুর।আমাদের প্রফেসর আবদুর রাজ্জাকরূপী সবুর ফাউস্ট হাতে বের হয়ে বললো- সে"ই আমাদের কেস্টা।
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা জুন, ২০১২ ভোর ৬:৩৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


