somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দৃষ্টিপ্রদীপ

২৪ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৩:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

দীর্ঘদিন পর আমার পোস্টিং হলো ।সিনিয়র অভিনন্দন জানিয়ে বললেন- রয়াল ডিস্ট্র্রিকে রয়াল ডিউটি ।
কর্মস্হল নোয়াখালী আমার সন্নিহিত জেলা হলেও আমি এই প্রথম এখানে আসলাম।জেলা জজের পাথুরে মুখ ও রসকসহীন কথাবার্তায় আমার মনে হলো- ভদ্রলোক ক্রনিক পেটের পীড়ায় ভুগছেন ।প্রথামতো ডিসি সাহেবের সাথেও সৌজন্য সাক্ষাতে গেলাম। বেশ আমুদে লোক। কথাবার্তায় জানা গেলো- তিনি একজন কবি।আমার লেখালেখি নিয়েও বললাম। তিনি তার রচিত কাব্য উপহার দিয়ে বাংলোয় যাবার আমন্ত্রণ জানালেন।
একা সার্কিট হাউসে থাকি। মায়ের জন্যে মন কেমন কেমন করে। ঢাকার ব্যসত দিন ফেলে মফস্বলে নিসতরংগ জীবনে মানিয়ে নেয়ার চেষ্টা। আডডা আর বন্ধুদের খুব মিস করি এই শৃঙ্খলিত রুটিনে। এক অপরাহ্ণে পাচক রফিক
একগুচ্ছ পেয়ারা দিয়ে বললো- এগুলো ডিসি বাংলোর উপহার।আমি কপট ধমকে তাকে বললাম- আমরা কাঠবিড়ালি নাকি, অসময়ে খালিপেটে গয়ম (পেয়ারার নোয়াখালীর আঞ্চলিক অপভ্রংশ) খাবো?

সন্ধ্যায় ডিসি বাংলোয় দাওয়াতে গেলাম। সিনিয়র অফিসারদেরকে ডিঙিয়ে আমি গল্পে মত্ত হই ডিসি সাহেবের সাথে ।তার কবিতা পড়ে ও আলাপে বুঝলাম-তার কাব্যিক মন আছে, তবে স্বভাব কবি নন; তার লেখালেখিতে বাংলাকাব্যের কোনো হ্রাস- বৃদ্ধি ঘটবেনা।
আমার কাছ থেকে তিনি একটা টাটকা গল্প শুনতে চাইলেন।
আমি বললাম, এই গল্পটা যখন পড়ি তখন আমার বয়স ষোলো।গল্পের নাম, রচয়িতা কিছুই আজ মনে নেই।
ওদিকে খাবারের জন্যে তাড়া, অন্যান্য সহকর্মীদের কিছুটা উপেক্ষা করে ভদ্রলোক গল্প চালিয়ে যেতে বললেন।

আমি শুরু করলাম- দুলাভাইয়ের সাথে মেয়েটির হঠাৎ করে শারীরিক সম্পর্ক হয়ে গেলো। ধরা যাক, নায়িকার নাম তনু। এমন নয় যে, তাদের প্রেম হয়েছিলো বা এ মিলনের জন্যে তারা মুখিয়ে ছিলো, বরং তাদের মাঝে স্বাভাবিক খুনসুটি ছাড়া কোনো অসংগত সম্পর্কও ছিলোনা। । এমনও নয় যে, বোনজামাই আশরাফ খুব জোরাজুরি করেছে, বরং প্রান্তিক কিছুটা জড়তা ছাড়া তনুও ছিলো বেশ অংশকামী। এমনিতে আশরাফ নিষ্ঠাবান -দায়িত্বশীল স্বামী। আর, পিঠেপিঠি বড়বোন অনু বেশ রূপবতি বলেই হয়তো খানিকটা বোকা।সে স্বামী আশরাফ বলতে অজ্ঞান

সেদিন ছিলো ছুটির দিন।তনু দিন দুয়েক আগে বেড়াতে এসেছে।দুপুরে খেয়ে দেয়ে দুলাভাই ও শ্যালিকা আড্ডায় মেতেছে। গৃহস্বামিনী অনু গেছে বুটিকের কোর্সে।
তবু, অলস দুপুরে খানিকক্ষণ আগে ব্যাপারটা হয়ে গেছে। প্রথম মিলনের সুখাভূতি ও ঈষৎ অপরাধবোধ নিয়ে তনু শুয়েছিলো। কলিংবেলের আওয়াজে সে বাস্তবে ফিরে আসে। দরজা খুলতেই এক ঘোর কৃষ্ণবর্ণ দী্র্ঘ যুবা রোদ- চশমা খুলতে খুলতে বললো- দেখুন, ভাবী, শালা আশরাফকে সারপ্রাইজ দিতে খবর না দিয়েই চলে আসলাম। আমি প্রত্যয়। এক যুগ বিলেতে ছিলাম।পরশু দেশে ফিরেছি।
এই যুবককে দেখে তনুর মনে হয়, ইস, এই ছেলেটি যদি তার সর্বস্ব লুট করে নিতো! প্রত্যয়েরও তনুর গভীর চোখজোড়া দেখে ঘোর লেগে যায়।তার ভুল ভাঙলো যখন তনু বললো- আমি ভাবী নই, ভবিষ্যত!
প্রত্যয়র হো হো হাসির শব্দে আশরাফ এসে বললো- হতভাগা, এটা বিলেত পেয়েছো নাকি দিন দুপুরে অভিসার! পরক্ষণেই দুইবন্ধুর অশ্রুশিক্ত কোলাকুলি।

যা হোক। দুজনের ভালোলাগা থেকে পারিবারিক সম্মতিতে তনু ও প্রত্যয়ের বিয়ে। লন্ডনে বেশ আনন্দে তাদের দিনগুলো দ্রুত কাটতে থাকে। প্রথম কয়েক মাস তনু ব্যস্ত ব্যবসায়ী স্বামীর জন্যে শুয়ে -বসে দিন কাটাতো।গত কয়েক বছর ধরে সে নিজেও চাকুরি নিয়ে ব্যস্ত। স্বামী দিন দিন আরো কর্মমুখর হয়ে উঠে। বিশেষত বিশ্বমন্দার গ্রহণ প্রত্যয়ের গ্যাস-বিদ্যুত-পানির এ ক্ষুদ্র ব্যবসাতেও লেগেছে।অনেক সময় অভিবাসী হিসেবে প্রাপ্ত বৈষম্যগুলো বেশ মন খারাপ করে দেয়।দেশমাতার উপরও বেশ অভিমান হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক প্রত্যয় বেকারত্ব কাটাতে শিক্ষক পিতার পেনসনের টাকা ভেংগে বিলাতে পাড়ি জমায়। তারপর বেঁচে থাকার প্রয়াসে কতো "অড জব" করতে হয়েছে। তার এখনকার ব্যবসাও একধরণের দালালির মতো। এই ব্যবসাতেও তীব্র প্রতিযোগিত আর শঠতা।তনুও মাঝে মাঝে অসহিষ্ণু আচরণ করে, স্বামী বুড়িয়ে যাচ্ছে বলে অনুযোগ করে।তনুর মাঝে মাঝে মনে হয়, প্রত্যয় আগের মতো তাকে ভালোবাসে তো?

আজকাল কেমন যেনো একরাশ হতাশা প্রত্যয়কে চাবুক মারে।প্রত্যয়ের মাঝে মাঝে ইনসমনিয়া হয়। আজ তার এমনই ঘুমহারা রাত । তনুর নির্দেশনায় নির্দিষ্ট পরিমান মদ নিয়ে সে ক্ষুদে বারান্দায় বসে। টবের ঘ্র্রাণহীন নিষ্প্রাণ শাদা শাদা পুষপগুচ্ছ যেনো অট্টহাস্যে চেয়ে আছে। তনুর সকালে কাজে যাবার কথা, বেচারি হাই তুলতে তুলতে সুরাপাত্রে বরফকুচি মেশাতে থাকে। তনু কখনও মদ্যপান করেনা।তবু কাজুবাদামের পাত্র হাতে নিয়ে স্বামীকে সংগ দেয়। এক সময় জড়ানো স্বরে স্বামী বলে- প্রিয়ে, তোমার যে গভীর চোখজোড়া দেখে প্রথম তোমাকে ভালো লেগেছিলো, সেই দৃষ্টি আর কখনও দেখিনি কেনো?
তনুর আহবানে দুজন ভালোবাসার নদীতে নৌকা চালায়।তবু, এই রুটিন শারীরিক মিলন যেনো পানসে লাগে ক্লানত প্রত্যয়ের। একসময় ঘুমিয়ে পড়ে সে।তনু কিছুটা অতৃপ্তি নিয়ে জীবনের খেরোখাতায় চোখ বুলায়, কোনো হিসেব মেলেনা। বিয়ের দশ বছরেও তনু একটা বাচ্চা উপহার দিতে পারেনি।
তনুর আবার শুচিবাইয়ের বাতিক। সুগন্ধি সাবানের ফেনা মিশ্রিত ঈষৎ গরমজলে দীর্ঘক্ষণ নিজেকে ডুবিয়ে রাখে সে। চোখ বুঝে সে চলে যায় ব্যাটারি গলির নিপুন নিবাসে।আজ থেকে দশ বছর আগের কথা। এক শ্রাবণ- দুপুরে আশরাফ ভাইয়ের সাথে প্রথম ও একমাত্র্র মিলন পরবর্তি সেই আধো ভয় -আধো খুশির যে দৃষ্টিপ্রদীপ নিয়ে বিলেতফেরত প্রত্যয়ের দিকে প্রথম তাকিয়েছিলো সেই লগ্ন ও অনুভূতি সে আাজ কোথায় পাবে? ঈশ্বর খুব সম্ভবত সেই দৃষ্টি কোনো নারীকে একবারই দান করেন।তনু কী করে দ্বিতীয়বার সেই চোখের তারা জ্বালাবে? আজ রাত তার নির্ঘুম কাটবে।

আমার গল্প শুনে ডিসি সাহেব কিছুক্ষণ নিরব থেকে রাতের ভোজে আমন্ত্রণ জানালেন।খাবার ততক্ষণে কিছুটা জুড়িয়ে গেছে।তবু স্তাবকদল বললো- ঈষদুষ্ণ ভোজই অপূর্ব হয়েছে।
এখন মাঝে মাঝেই ডিসি সাহেবকে কল্পিত গলপ শোনাতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জুলাই, ২০১২ বিকাল ৪:৫০
৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৬

হাদি কি লড়াকু সৎ এবং নিবেদিত প্রাণ নেতা ?

জুলাই আন্দোলনে তিনি প্রথম সারির নেতা ছিলেন না , তাকে কেউ চিনতো না কয়েক মাস আগে ও ।

জুলাই জংগীদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩২

আগুন যখন প্রশ্নকে পোড়াতে আসে[

স্বাধীন সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধে রাষ্ট্রীয় ব্যর্থতা, মব-রাজনীতি ও এক ভয়ংকর নীরবতার ইতিহাস
চরম স্বৈরশাসন বা ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রেও সাধারণত সংবাদমাধ্যমের কার্যালয়ে আগুন দেওয়ার সাহস কেউ করে না। কারণ ক্ষমতা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ট্রাম্প ৩০ দেশের দুষ্ট আমেরিকান রাষ্ট্রদুত বদলায়ে দিচ্ছে!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:২৩



আইয়ুব পাকিস্তানকে ধ্বংস করার পর, বাংগালীদের লাথি খেয়ে সরেছে; জিয়া, কর্নেল তাহের ও জাসদের গণ বাহিনী আমাদের দেশকে নরক (১৯৭৫ সাল ) বানিয়ে নিজেরা নরকে গেছে। আমাদেরকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=হিংসা যে পুষো মনে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২২ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:৫৮


হাদী হাদী করে সবাই- ভালোবাসে হাদীরে,
হিংসায় পুড়ো - কোন গাধা গাধিরে,
জ্বলে পুড়ে ছাই হও, বল হাদী কেডা রে,
হাদী ছিল যোদ্ধা, সাহসী বেডা রে।

কত কও বদনাম, হাদী নাকি জঙ্গি,
ভেংচিয়ে রাগ মুখে,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিএনপিকেই নির্ধারণ করতে হবে তারা কোন পথে হাটবে?

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:০৫




অতি সাম্প্রতিক সময়ে তারেক রহমানের বক্তব্য ও বিএনপির অন্যান্য নেতাদের বক্তব্যের মধ্যে ইদানীং আওয়ামীসুরের অনুরণন পরিলক্ষিত হচ্ছে। বিএনপি এখন জামাতের মধ্যে ৭১ এর অপকর্ম খুঁজে পাচ্ছে! বিএনপি যখন জোট... ...বাকিটুকু পড়ুন

×