যেদিন ইংরেজরা ভারতকে ২ ভাগ করে, ২টি রিপাবলিক তৈরি করে দিয়ে স্হানীয়দের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে, সেদিন কোন এলাকায় মানব সম্পদ, শিল্প-কারখানা, প্রাকৃতিক সম্পদ বেশী ছিলো? পুর্ব পাকিস্তানের ঢাকা ও ভারতের কলকাতার কথা ভাবেন: কলকাতার কি পরিমাণ মানুষ বৃটিশের অধীনে চাকুরীরত ছিলো? ঢাকা ও পুর্ব বাংলার জমিদার ও সার্থবান পরিবারের ছেলেমেয়েরা কোথায় পড়ালেখা করতো? পুর্ব পাকিস্তানের স্কুলগুলোতে কোন মুসলিম শিক্ষক ছিলো কিনা?
চট্টগ্রাম এলাকার লোকজন ( শ্রমিক ) কোথায় যেতেন চাকুরী খুঁজতে? চট্টগ্রামের মানুষ ঢাকা চিনতেন না, এরা যেতেন কলিকাতা, এলাহাবাদ, আহমেদাবাদ, জামসেদ পুর এবং রেংগুন।
পুর্ব পাকিস্তানে চাকুরীর যায়গা ছিলো পোর্ট ও রেলওয়ে; এর বাহিরে উল্লেখযোগ্য কিছুই ছিলো না। আমাদের গ্রামের মুসলমানদের মাঝে ২ জন লিখতে ও পড়তে জানতেন। আমাদের গ্রামের হিন্ষুদের মাঝে ২ জন হাইস্কুল ও ১ জন প্রাইমারী স্কুলে শিক্ষকতা করতেন, বাকী শিক্ষিত হিন্দুরা কলকাতায় বিবিধ চাকুরী ও ব্যবসা করতেন।
আমাদের গ্রামের ১০/১২ জন কলিকাতায় জাহাজ, জুটমিল ও সাবান কারখানায় চাকুরী করতেন; ১৯৬৫ সালে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধের ফলে এদের সবার চাকুরী চলে যায়; দেশে ফেরত আসার পর, আর জীবনে চাকুরী পাননি; এক সময় এদের জীবন ছিলো খুবই স্বচ্ছল; পরে এরা সবাই দরিদ্র হয়ে যায়। আমাদের পাশের গ্রামের ৬/৭ জন আসামে চা-বাগানে চাকুরী করতেন।
বৃটিশের শিল্পকারখানা, প্রশাসনের স্হাপনা ছিলো ভারতে। দেশ ভাগ হওয়ার সময়, কলিকাতার বেশীরভাগ মানুষ সংবাদপত্র পড়তে জানতেন। আমি যখন স্কুলে যাওয়া শুরু করেছিলাম, তখন থানা সার্কেল অফিসারের বাসায় ডাকযোগে আজাদী পত্রিকা আসতো; পুরো থানায় ১ কপি পত্রিকা আসতো। আমি হাইস্কুলে ভর্তি হওয়ার পর দেখি, ৮ জন শিক্ষকের মাঝে ২ জন মুসলিম: ১ জন ধর্ম ও সমাজবিদ্যা পড়াতেন, অন্য জন নীচের ক্লাশে ইংরেজী ও বাংলা পড়াতেন; অংক, বিজ্ঞান, ভুগোল সবই পড়তেন হিন্দু শিক্ষকগণ; এঁদের ৩ জন ছিলেন কলিকাতার গ্রেজুয়েট।