মানুষ যখন অনন্যোপায় হয়ে যায়, ক্ষুদার্থ থাকে তখন সে অপরাধী হয়ে চুরি, ছিনতাই অনেক কিছুই করে। ধর্মও শেষ উপায় হিসাবে ভিক্ষা করার অনুমতি দিয়েছে। আর রাষ্ট্রের বিচারবিভাগ যখন অকার্যকর হয়ে যায় তখন তার শাসনবিভাগ ক্রসফায়ার নামক শেষ উপায় খুঁজে বের করে। মনে আছে অপারেশন ক্লিন হার্টের সময় মানুষ কিন্তু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল, কিছুদিন আগে পর্যন্ত (কক্সবাজারের একরাম হত্যার আগে পর্যন্ত) ভালই বলছিল। কিন্তু যখন তার মৃত্যুর ঠিক পূর্বের অডিও ক্লিপস শুনলো তখন কি করে যেন সবার ভিতরে মনুষ্যত্ববোধটা নাড়া দিয়ে উঠল। আমরা কেন বুঝি না, ইয়াবা যেমন একজন মানুষকে ভিতরে ভিতরে শেষ করে দেয়... বিচারহীনতাও একটা রাষ্ট্রকে ভিতর থেকে শেষ করে দেয়। যারা ধুমায়ে ইয়াবা ব্যবসা করে বা করতো তারাও জানে ধরা পড়লে বড়জোর জেল হবে, ২/১ সপ্তাহ থেকে আবার জামিন নিয়ে বের হয়ে আসা যাবে। শুধু মাদক না, এই দেশের সব গডফাদার তাই মনে করে।
এই দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া, বিচার না হবার সংস্কৃতি দেশটাকে কান্সারের মত জেকে বসেছে। খালি চোখে দেখা হায় না, কিন্তু ভিতরে ভিতরে শেষ করে দিচ্ছে। আমরা জানি না কাউন্সিলর একরাম আসলেই অপরাধী নাকি নিরপরাধি... তবে তাকেও কেন রাষ্ট্র বিচারের মুখোমুখি করতে পারে না। মাদকের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে পারলে মাদকের বিরুদ্ধে আলাদা ট্রাইবুনাল করে দ্রুত বিচার কেন করা যাবে না... বিশ্বকাপে বাসার ছাদে পতাকা উড়ানো যাবে নাকি যাবে না এইসব ফালতু জিনিস নিয়ে আদালত ব্যস্ত থাকতে পারলে মাদক নিয়ে কেন নয়... নাকি ভয়, পাছে নিজেদের নামই যদি বের হয়ে যায়। সাগর রুনির ৪৮ ঘণ্টা আজও শেষ হয়নি। আসলে জেগে জেগে ঘুমালে তাকে জাগানো যায় না। সরকার যদি না চায় তাহলে মূল অপরাধী কোনদিনও ধরা পড়বে না। বাংলাদেশ মায়ানমার সীমান্ত মাত্র ২৭১ কিলোমিটার। যা মাদক আসে এই পথ ধরেই ঢুকে। টেকনাফ হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে পরে। এই অংশটুকু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না সরকার ?? আসলে করতে চায় না।
২০০৩ সালে থাইল্যান্ডে একই ধরনের যুদ্ধ ঘোষণা করে সেই দেশের সরকার। ৩ মাসে ২৮০০ মানুষ মারা যায়। human rights watch এর মতে যার অর্ধেকই রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। যার বিচার আজ পর্যন্ত হয় নি। রাষ্ট্র তার নিজের প্রশাসনের বিচার করে না। তনু হত্যার বিচার হয় নি, নারায়ণগঞ্জ ৭ খুনেরও কিছু হতো না যদি না লাশ অভাবে ভেসে উঠতো। এবারও হবে না। মাদকের বিরুদ্ধে নাকি যুদ্ধ চলছে দেশে, আর এই মধ্যে মাদক সম্রাট বদি ও তার সহযোগীদের ওমরাহ্ পালন কিন্তু সেটাই বলে... আয়নাবাজি মুভির মত গডফাদারদের রাষ্ট্র সুযোগ করে দেয়। আর আমরা?? আমরা বরং স্যাটেলাইট আর উন্নয়নশীল দেশের পরে আর কি নিয়ে ফুটানি করা যায় সেটা দেখার অপেক্ষায় থাকি।
সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা জুন, ২০১৮ রাত ১২:৫৩