somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বুকের ভেতর মৃত নদী

০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১:০৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



শ্রাবণীর খুব ইচ্ছা ছিল তার একটি বিশুদ্ধ ভালবাসার সম্পর্ক থাকবে।একদম ডিস্টিল ওয়াটারের মত বিশুদ্ধ।এই ঝোড়ো হাওয়া আর অঝোর বৃষ্টির রাতে পড়ার মত একটি বই খুঁজতে গিয়ে পুরনো নীল ডাইরিটা হাতে পড়ে গেল।দু এক পাতা ওল্টাতে গিয়ে পুরনো স্মৃতিরা ভীড় করে আসতে লাগল।শ্রাবণী ভাবছিল,তার জীবনের গল্পগুলো সাজালে একটি সার্থক মহা কাব্য হয়ে যায় কিংবা কয়েকটি উপন্যাস কিংবা অসংখ্য ছোটগল্প।

ব্যালকনিতে লাগানো বেলী আর মাধবীলতা গাছে এবার প্রচুর ফুল এসেছে।ফুলের গন্ধের সাথে বৃষ্টি মিশে মন উদাস করা ভেজা ভেজা সুবাস ছড়াচ্ছে।শ্রাবণী ভাবল আজ রাতটা নাহয় নীল ডাইরির পাতা উল্টেই কেটে যাক!ভুলতে চাওয়া সময়গুলো নাহয় একটু ফিরে দেখা হোক।তাতে যদি বাঁধ ভাঙা নদীর মত আবেগ এসে তাকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়,যদি চোখে জল নামে তাতেই বা কি?কেউ তো আর দেখছে না,কাওকে জবাবদিহি করারও কিছু নেই।

শ্রাবণীর ফেলে আসা দিনগুলো ছিল এমন--

এক
সারাদিনের প্রচন্ড রোদের শেষে যখন সন্ধ্যা নামে তখন কখনো কখনো শীতল হাওয়া বয়ে যায় কিন্ত মাটি তখনও তাপ ছড়াতে থাকে।জুন মাসের এমনই এক সন্ধ্যায় তুষার হঠাৎ করে শ্রাবণীকে অদ্ভুত
এক কথা বলে বসল।তাকে বলল- তুমি চাইলে আমার পার্ট টাইম গার্লফ্রেন্ড হতে পারো।

তুষারের সাথে শ্রাবণীর সম্পর্ক বন্ধুর মত।একই ক্যাম্পাসে থাকলেও পরিচয় হয়েছিল ফেসবুকে। মাসদুয়েক আগে এক অনুষ্ঠানে প্রথম দেখা হয়েছিল,এরপর কিছুদিন আড্ডা দিয়েছে।এরই মধ্য এমন প্রস্তাব শ্রাবণী মোটেও আশা করেনি।তাছাড়া পার্টটাইম গার্লফ্রেন্ড আবার কি জিনিস?গার্লফ্রেন্ড হলে পুরো হবে নয়ত একেবারেই নয়। অবশ্য তুষারের পক্ষে এমন হেয়ালিপূর্ন কথা বলা খুবই স্বাভাবিক। শ্রাবণী শুধু হেসে বলেছিল প্রস্তাব দিলে অফিসিয়াল ভাবে দিতে হবে, তারপর আসবে ভেবে দেখার কথা।

সেদিন রাতে শ্রাবণীর কাছে একটা ই-মেইল আসলো। তাতে শুধু লেখা- 'Join my world'. শ্রাবণী চিন্তায় পড়ে গেল।শ্রাবণী জীবনসঙ্গী হিসেবে যেমন ছেলে চায় তুষার ঠিক তেমন নয়।ভেতরের ব্যাপার শ্রাবণী এখনো ঠিক জানে না কিন্ত বাহ্যিক দিক থেকে শ্রাবণীর সাথে তুষারকে মোটেও মানায় না। শ্রাবণী চিরকাল বেশ সুঠাম গড়নের ছিল,এখন মেদ জমার কারনে তাকে বেশ বড়সড় দেখায়।লম্বাতেও সে বেশিরভাগ মেয়ের চেয়েই বেশি।অন্যদিকে তুষার ভীষণ রোগা।উচ্চতা শ্রাবণীর চেয়ে এক দুই ইঞ্চি বেশি হতে পারে।অথচ শ্রাবণীর লম্বা ছেলে পছন্দ।


শ্রাবণী এটা জানে বাহ্যিক দিকটাই প্রধান নয় কিন্ত তারা দুজন একসাথে রাস্তায় ঘুরে বেড়ালে মানুষ বলতেও পারে যে হাতির সাথে মশা ঘুরে বেড়াচ্ছে।তবে তুষারের যে জিনিসটা শ্রাবণীর ভাল লাগে সেটা হচ্ছে তুষারের বুদ্ধিমত্তা। তারসাথে কথা বলে শ্রাবণী বুঝেছে এই ছেলেটির মাথায় বুদ্ধি আছে এবং তার বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ আছে তাই সে অনেক বিষয়ে জ্ঞান রাখে।শ্রাবণী নিজেও অনেকটা এমন আর এমন মানুষের প্রতি সে আগ্রহবোধ করে।গবেট ধরনের মানুষকে শ্রাবণী একদমই সহ্য করতে পারে না।

তবে ভাল করে না জেনে শ্রাবণী কোনো সম্পর্কে জড়াতে চায়না।তার আসলে একটা বন্ধুত্ব দরকার ছিল।একজন বা একাধিক বন্ধুর একটা সার্কেল।যাদের সাথে আড্ডা দেয়া যাবে,ঘুরেফিরে বেড়ানো যাবে।তুষারের সাথে কয়েকদিন কথা বলে শ্রাবণীর মনের ইচ্ছা কিছুটা মিটেছিল। কিন্তু কোনো সম্পর্কে জড়ানোর মত ইচ্ছা এখন তার নেই।

কয়েকদিন যায় তুষারের সাথে শ্রাবণীর কথা হয় কিন্ত সেই প্রসঙ্গে কথা হয় না।আসলে শ্রাবণীর ক্লাসে সহপাঠীদের মধ্যে কয়েকমাস ধরে বেশ গন্ডগোল চলছে।তুচ্ছ কিছু বিষয়কে কেন্দ্র করে দুই দলে ভাগ হয়ে গেছে অনেকেই।যারা কোনো দলেই সমর্থন দিচ্ছে না তারা আবার আলাদা হয়ে গেছে।এই টানাটানিতে কোনো দলকে সমর্থন না করে শ্রাবণী অনেকটাই একা হয়ে পড়েছে।

তার খুব মনে হচ্ছিল ভাল কিছু বন্ধু দরকার।তুষারের সাথে কথা বললে তার সময়টা বেশ ভাল কাটে।কেমন যেন মুক্ত আকাশের সাথে তুলনা করা যায় ব্যাপারটা।শ্রাবণী চিরকাল খুব জ্ঞানপিপাসু। বইয়ের প্রতি তার মারাত্মক ঝোঁক।শুধু একাডেমিক বিষয় নয় অন্যান্য অনেক বিষয়ে জানতে তার খুব ভাল লাগে।ছোট থেকেই নানা রকম গল্পের বই পড়ে সে অনেক বিষয়ে জেনেছে কিন্ত তার বন্ধুদের মধ্যে এতদিন তেমন কাওকে পায়নি যার সাথে এসব নিয়ে আলোচনা করা যায়। তুষার একমাত্র ব্যাতিক্রম। শ্রাবণী বিজ্ঞানের ছাত্রী। তবে তার কাছে দুঃখজনক হলেও মনে হয়েছে যে তার সহপাঠীরা শুধু সিজিপিএর ব্যাপারে আগ্রহী কিন্ত জানার ব্যাপারে না।তারা না বিষয়ভিত্তিক আলোচনায় অংশ নিতে চায়, না তারা পড়াশোনার গভীরে যেতে চায়।তাদের মধ্যে বিজ্ঞানমনস্কতার ও বেশ অভাব।তুষার পুরোপুরি বিজ্ঞানের ছাত্র না হলেও তার সাথে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বলা যায়।

সব মিলিয়ে আলাপচারিতার ব্যাপারটা খুব ভাল যায় তুষারের সাথে।তাই কিছুদিন পর তুষার যখন আবার সেই প্রসঙ্গটা তুলল তখন শ্রাবণী খুব চিন্তায় পড়ে গেল।সে বুঝতে পারছিল যে হয় তাকে সম্মতি দিতে হবে নয়ত তুষারের সাথে মেলামেশা করা ছেড়ে দিতে হবে।

তুষারের সাথে শ্রাবণীর স্বপ্নের পুরুষের কোনো মিলই নেই,তবে তার সাথে কথা বলতে ভাল লাগে।তাই শ্রাবণী ঠিক তুষারের মত হেয়ালি করেই উত্তর দিল পার্ট টাইম গার্লফ্রেন্ড হলেও হওয়া যায় কিন্ত তার চেয়ে বেশি সম্ভব না।

চলবে--
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০২০ রাত ১:০৫
৮টি মন্তব্য ৮টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। গানডুদের গল্প

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:২৮




তীব্র দাবদাহের কারণে দুবছর আগে আকাশে ড্রোন পাঠিয়ে চীন কৃত্রিম বৃষ্টি নামিয়েছিলো। চীনের খরা কবলিত শিচুয়ান প্রদেশে এই বৃষ্টিপাত চলেছিলো টানা ৪ ঘন্টাব্যাপী। চীনে কৃত্রিম বৃষ্টি নামানোর প্রক্রিয়া সেবারই প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×