ক্রীকেটে আমাদের বাংলাদেশ হাটি হাটি করে অনেক দুর এগিয়েছে। ক্রীকেটের মাধ্যমেই এদেশের প্রচার প্রসার বহির্বিশ্বে কম হইনি বটে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ক্রীকেটই আমাদের যথেষ্ঠ্য সুনাম-সুখ্যাতী দিয়েছে।আশা করি আগামীতে আরো এগিয়ে যাবে। তবে এটিকে দেশের সামগ্রীক অবস্থার সাথে তাল মিলিয়ে এগিয়ে নেওয়া উচিত বলে মনে করি। আগামী ফেব্রুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত হবে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ(BPL)এর প্রথম আসর। দেশের বিভাগ-ওয়ারী ছয়টি দল অংশগ্রহন করবে এখানে। খুব আশার কথা হলেও নিরাশ না হয়ে পারিনি যখন দেখেছি বিদেশি খেলোয়ার আনার জন্য দলগুলির লক্ষ ডলারের নিলামের খেলা। লক্ষ লক্ষ ডলার খরচ করে যখন একটি দল বিদেশি খেলোয়ারের জন্য রিতিমতো ডাক তুলছে তখন বাংলাদেশ ব্যাংক টাকা ছাপিয়ে সরকারের টাকার চাহিদা মেটাচ্ছে (প্রথমআলো ১০ জানুয়ারী)।
এখন দেখা যাক বিপিএল নিলামের সার্বিক চিত্র।নিলামে সবচেয়ে বেশি দর পেয়েছেন পাকিস্তানের ক্রীকেটার শহিদ আফ্রিদি। সর্বোচ্চ ৭ লাখ ডলারে তাকে দলে নিয়েছে ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স। আগামী ১১ এপ্রিল থেকে পাওয়া যাবে তাকে। তবে তা-ও দুই ম্যাচের জন্য।
এর পরই আকর্ষণ ছিল ক্যারিবীয় ক্রিকেটার ক্রিস গেইলকে ঘিরে। রাজশাহী ও বরিশাল দর কষাকষিতে শেষ পর্যন্ত বরিশাল টেনে নেয় ৫.৫১ লাখ ডলার দিয়ে। গেইলকে ও প্রথম দুই ম্যাচে পেলেও পরে আর পাওয়া যাবে না বলে জানান দিলেন দলের কোচ সারওয়ার ইমরান।
এরপর রয়েছেন ক্যারিবীয় আরেক ক্রিকেটার মারলন স্যামুয়েলস। রাজশাহী তাকে কিনে নেয় ৩.৬০ লাখ ডলারে। একই দেশের কিরন পোলার্ডকেও কিনে নেয় ঢাকা তিন লাখ ডলার দিয়ে। তবে এর বাইরে আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছিলেন জাতীয় দলের ক্রিকেটার নাসির হোসেন। দর কষাকষিতে শেষ পর্যন্ত খুলনা কিনে নেয় সর্বোচ্চ দুই লাখ ডলার দিয়ে। এ ছাড়া স্থানীয় ক্রিকেটারদের মধ্যে আরো দুইজন রয়েছেন, যারা লক্ষাধিক ডলারের বিনিময়ে বিক্রীত হয়েছেন। তারা হলেন চট্টগ্রাম কিনেছে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদকে (১.৫ লাখ ডলার), একই দলে নিয়েছেন জহুরুলকে ১.১০ লাখ ডলার দিয়ে। বাকিরা সবাই রয়েছেন লাখের নিচে।কোন দল কত ব্যায়ে ক্রীকেটার কিনেছে। ঢাকা গ্ল্যাডিয়েটর্স কিনেছে প্রায় ১৭ লাখ ৫৫ হাজার ডলারের, চট্টগ্রাম কিংস কিনেছে প্রায় ৯ লাখ ৬৫ হাজার ডলারের, দুরন-রাজশাহী কিনেছে প্রায় ৯ লাখ ৫৫ হাজার ডলারের, খুলনা রয়েল বেঙ্গলস কিনেছে প্রায় ৯ লাখ ৫০ হাজার ডলারের, বরিশাল বার্নস কিনেছে প্রায় ১২ লাখ ৭৬ হাজার ডলারের এবং সিলেট রয়্যালস কিনেছে প্রায় ৮ লাখ ৫৫ হাজার ডলারের ক্রীকেটার। সর্বমোট দাড়ায় প্রায় ৬৭ লাখ ৫৬ হাজার ডলার যাহা প্রায় ৫৭ কোটি ৪২ লাখ ৬০ হাজার টাকার সমপরিমান । আরো আইকন ক্রীকেটার, কোচ, ম্যানেজার, আয়োজকসহ অন্যান্য খরচ মিলে কোটি কোটি টাকার ছড়াছড়ি হবে বলে বলে ধারনা করা হচ্ছে।এছাড়া ছয়টি বিভাগীয় দলের ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনতে গিয়ে দরপত্রে সর্বোচ্চ দর দিয়েছে এসকিউ স্পোর্টস। চট্টগ্রামের ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনতে তারা খরচ করেছে ১ দশমিক ২০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এ ছাড়া ওরিয়ন গ্রুপ খুলনার ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনেছে ১ দশমিক ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দিয়ে। ইউরোপা গ্রুপ ঢাকার জন্য দিচ্ছে ১ দশমিক ০৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, বরিশালের জন্য আলিফ গ্রুপ ১ দশমিক ০১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার, সিলেটের জন্য ওয়ালটন ১ দশমিক ০৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ও রাজশাহীর ফ্র্যাঞ্চাইজি কিনতে ডিজিটাল অটোকেয়ারের খরচ হচ্ছে ১ দশমিক ০৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
যেদেশে আজ ক্রীকেটের পিছনে মিলিয়ন মিলিয়ন ডলার খরচ হচ্ছে সেই দেশেই গরীব মানুষ পাচ্ছেনা দুবেলা দুমুঠো ভাত।খরচের অভাবে কৃষক না পারছে সঠিক সময়ে ফসল ফলাতে না পাচ্ছে প্রকৃত ফসলের মূল্য।অর্থের অভাবে বাড়ছে মানুষের মধ্যে অপরাধ প্রবনতা, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, প্রতারনাশ ইত্যাদি। কাজ নেই গ্রামে। বেকার জীবনের অবসান ঘটাতে কর্মহীন মানুষ ছুটছে শহরে। বিশেষ করে রাজধানীতে ভিড় জমাচ্ছে কাজের সন্ধানী মানুষ। কিন্তু হায়; সবার ভাগ্যে জুটছেনা কাজ। ভাগ্যবান কিছু মানুষ কাজ জোগাড় করতে পারলেও অনেকে নাম লেখাচ্ছেন ছিন্নমূলের খাতায়। কেউ কেউ জড়িয়ে পড়ছেন অপরাধ মূলক কর্মকাণ্ডে। আর শিশু ও বয়স্ক ছিন্নমূলরা ভেসে বেড়াচ্ছে রাস্তায় রাস্তায়। ক্ষুধার জ্বালা মেটাতে ডাস্টবিন থেকে কাকের সঙ্গে ভাগাভাগি করে খাবার খাওয়ার দৃশ্য দেখে এখন আর কেউ অবাক হয় না।
Click this link...
ডাস্টবিনে ফেলে দেয়া পচা, বিষাত্তপ্ত ও বর্জ্যমিশ্রিত খাবার দিয়ে ক্ষুধা নিবারণের চেষ্টা করছেন দারিদ্র্য আর অভাবে জর্জরিত এই মহিলা।
(দৈনিক নয়া দিগন্ত- ১৭-০৯-২০১১ প্রথম পাতা।)
পেটের দায়ে দিন দিন বাড়ছে শিশু শ্রমের সংখ্যা।
(সংগ্রীহিত)
দেশের অর্থনীতি এখন ধনীদের হাতের পুতুল। ধনীর টাকা ঘুরপাক খাচ্ছে ধনীদের সার্কেলে। অথচ টাকার অভাবে, দুর্নীতির দায়ে শুরু হচ্ছেনা পদ্মা সেতু। সরকার হা করে তাকিয়ে আছে বিশ্বব্যাংক, জাইকা, ইউরোপিয় ইউনিয়নসহ দাতাদের দিকে। একদিকে রিন করছে আর সুধের বোঝা চাপিয়ে দিচ্ছে দরিদ্র গোষ্ঠির উপর যারা দিন দিন হচ্ছে আরো গরীব। পাশাপাশি দরিদ্রগোষ্ঠি ধনীদের দারা হচ্ছে নিষ্পেশিত, হারাচ্ছে পুজি ও সহায়-সম্বল টুকরা জমি টুকুও। অথচ ক্রীকেটের কি বিলাস চলছে, চলছে মিলিয়ন ডলারের হলি খেলা। এমনতো হতে পারত বিপিএল এ বিদেশি খেলোয়াড় কমিয়ে নির্দিষ্ট সংখ্যা করে দেশি খেলোয়ারকে উন্নতির সুযোগ করে দেওয়া এবং বিপিএল থেকে অর্জিত অর্থের একটা অংশ দরিদ্র জনগোষ্ঠির উন্নয়ন অথবা দেশের কোন উন্নয়নে ব্যবহার করবে। তবেইতো উন্নতি হবে দেশের ক্রীকেটের, উন্নতি হবে দেশের সাথে সাথে বাড়বে দেশের পরিচিতি, সুনাম-সুখ্যাতী। তা নাহলে জাতীর এ ক্রীকেট বিলাস ধনী-দরিদ্র বৈষম্য বাড়াবে বৈকি কমাবেনা।