somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাকাত

২৫ শে জানুয়ারি, ২০১২ দুপুর ২:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

>
ধন-সম্পদের যে নির্ধারিত অংশ শরীয়াতের বিধান মোতাবেক আল্লাহর পথে ব্যয় করা মানুষের উপর ফরজ করা হয়েছে তাকেই যাকাত বলে (ইসলামী বিশ্বকোষ, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ২১ খন্ড ৪৭৫ পৃঃ) । প্রত্যেক সামর্থবান মুসলিমের জন্য যাকাত হচ্ছে একান্ত কর্তব্য ও ফরজ । সমাজের ধনী ও সচ্ছল লোকদের বাড়তি সম্পদের একটি নির্দিষ্ট অংশ নিয়মিত আদায় করে দরিদ্র ও বঞ্চিত লোকদের মধ্যে যথাযথ বন্টন করাই কর্মসুচির প্রধান বৈশিষ্ট্য । এ যাকাতের কথা পবিত্র কুআনে কোন কোন মতে ৩২ বার এবং অধিকাংশের মতে ৮২ বার উল্লেখ রয়েছে । পবিত্র কুরআন বলে-তোমাদের বন্ধুতো একমাত্র আল্লাহ তাঁর রাসুল এবং মুমিন বান্দা যারা নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং বিনম্র (সুরা মায়েদার আয়াত ৫৫)
যাকাত আদিকাল থেকেই প্রচলিত ছিল
কারূনের ধ্বংস এসেছিল যাকাত প্রদান না করে কার্পণ্য করার কারণে, ইয়াহুদী বণী ইসরাঈল হতে গৃহিত প্রতিশ্রুতিতে মহান আল্লাহ বলেনঃ তোমরা সালাত কায়েম করবে এবং যাকাত দিবে (সুরা বাকারা আয়াত ১১০); পবিত্র কুরআনে এসেছে ঈসা (আঃ) বলেন-তিনি আমাকে আজীবন সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিয়েছেন (সুরা মারইয়াম আয়াত ১৩); ইসমাঈল (আঃ) সম্পর্কে বলা হয়েছে-তিনি তার পরিবার পরিজনের সালাত ও যাকাতের নির্দেশ দিতেন (সুরা মারইয়াম আয়াত ৫৫)
যাকাতের উদ্দেশ্য
তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহন কর যাতে তুমি সেগুলোকে পবিত্র করতে এবং সেগূলোকে বারাকাতময় করতে পার এর মাধ্যমে (সুরা তাওবাহ আয়াত ১০৩);
যাকাত বাবদ যে আংশটা দেয়া হয় সেটা আল্লাহর নিকট পৌঁছে না । লোক দেখানোর উদ্দেশ্যে বা লোকে মস্তবড় দাতা বলে প্রশংসা করুক বা পার্থিব কোন প্রয়োজনে দান করলে আল্লাহ পাক কবুল করবেন না । শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য দান করলে আখেরাতে এর উত্তম বদলা পাবেন এবং ইহকালে ও তার ধন সম্পদ কখনো শেষ হবে না । শরী’আতের হুকুমের গোপন রহস্য ও হিকমাত পরিপূর্ণভাবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না । সুতরাং শরী’আতের কোন হুকুমের রহস্য ও হিকমাত কারো বুঝে আসুক বা না আসুক তা যে মহান আল্লাহর হুকুম এজন্য বিনা দ্বিধায় অবশ্যই পালন করতে হবে ।
যাকাত একটি নৈতিক ব্যবস্থাও, কেননা ধনী লোকদের মানসিকভাবে লোভ, কার্পণ্য আত্মম্ভরিতার ময়লা ও আবর্জনা থেকে পবিত্র করা এবং বদান্যতা, দানশীলতা ও কল্যাণ প্রেমে তাদের পরিশুদ্ধতায় ভরপুর করে দেয় । অন্য লোকদের দুঃখ-দুর্দশায় সহানুভুতি ও দয়া মায়া সহকারে তাদের সাথে একাত্ম করে তোলে । বঞ্চিতদের অন্তরে যে হিংসার আগুন জ্বলে উঠে তা নিভিয়ে দিতে যাকাত বিরাট কাজ করে ও ধনীদের সুখ সম্পদ দেখে তাদের মনে যে কষ্ট অনুভব করে যাকাত তা প্রশমিত করে দেয় ।
যাকাত কোথায় ও কাকে দিতে হবে
এ সম্বন্ধে আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ সদাক্বাহ পাবার যোগ্যতা রাখে শুধুমাত্র ফকির, মিসকীন, যাকাত সংগ্রহকারী, যাদের অন্তরে (ইসলামের প্রতি) ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা আছে, আর ক্রীতদাস মুক্তিতে, ঋণগ্রস্থরা, আর যারা আল্লাহ তা’আলার রাস্তায় আছে, আর রাস্তার পথিক । এটা আল্লাহর তরফ থেকে ফরয । আল্লাহ তা’আলা সমস্ত কিছু জ্ঞাত আছেন, আর তিনি হিকমাতওয়ালা (সুরা তাওবাহ আয়াত ৬০);
এখানে ৮ ধরনের লোকের কথা বলেছেন-
১) ফকিরঃ তার যা প্রয়োজন তা তার কাছে একেবারেই নেই ।
২) মিসকীনঃ মিসকীন ফকিরের চেয়ে উত্তম।যেমন তার প্রয়োজন ১০ টাকার আছে মাত্র ৭ টাকা।আল্লাহ বলেন-আর ঐ নৌকা যা ছিল কয়েকজন মিসকীনের, যারা সমুদ্রে কাজ করত (সুরা কাহাফ আয়াত ৭৯)
৩) যাকাত সংগ্রহকারীঃ তারা হলেন কোন দেশের ইমাম বা তার নায়েব কর্তৃক নিযুক্ত লোক সকল । তাদের মধ্যে আছে মাল জমাকারী, হিফাজতকারী, লেখক, হিসাব রক্ষক, পাহারাদার, এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিবহনকারী এবং বিলি বন্টন করে তারাও । এদের যাকাতের মাল দেয়া যাবে । যদি কোন ধনী লোক স্বেচ্ছায় এ কাজে আত্মনিয়োগ করে এবং উপরোক্ত ব্যক্তির কারো জীবিন যাপনের অন্য ব্যবস্থা থাকে তারা স্বেচ্ছায় কিছু পারিশ্রমিক নিতে পারবেন বেতন হিসেবে তবে তাদের যাকাত দেওয়া বা নেওয়া বৈধ নয় । আর বনু হাশেম গোত্রের হলে যাকাত দেওয়া যাবে না । রাসুল (সাঃ) বলেছেন-নিশ্চয়ই যাকাত ও সদাক্বাহ মুহাম্মদ (সাঃ) এর বংশধরদের জন্য নয় (মুসলিম, মিশকাত হাদিস ১৭৩১/৩)
৪) যাদের অন্তর ইসলামের দিকে ঝুঁকেছেঃ যে সমস্ত গরীব বিধর্মী যারা ইসলাম গ্রহণ করতে চায় বা মুসলিমদের শত্রুর হাত হতে রক্ষা করতে চায় তাদের যাকাত দেওয়া যাবে । যেমন সফওয়া ইবনু উমাইয়াকে হুনাইন যুদ্ধের গণীমাত দিয়েছিলেন । রাসুল (সাঃ) আবু সুফিয়ান ইবনু হারবকে দিয়েছিলেন । আক্‌বা ইবনু হাবেসকেও দিয়েছিলেন । উয়াইনাহ ইবনু মিহসান কেও দিয়েছিলেন (মুসলিম)
৫) ক্রিতদাস মুক্তিতেঃ দাসদের মুক্ত করা, যারা মুক্তির ব্যাপারে লিখে তাদের সাহায্য করা, শত্রুর হাতে বন্দী তাদেরও মুক্ত করা ইত্যাদি । এ সমস্ত কাজে যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যায় ।
৬) ঋণগ্রস্থঃ যারা ঋণ করেছে এবং শোধ করার সামর্থ নেই তাদের যাকাতের টাকা দিয়ে সাহায্য করা যাবে ।
৭) যারা আল্লাহর রাস্তায় আছেঃ যারা দীন প্রচারের কাজে আত্মনিয়োগ করেছে-যেমনঃ কেউ কোন বিষয়ে কুরআন হাদিস সংগ্রহ করে বই আকারে বিনামূল্যে বিতরণ করে । যারা কোন রকম হাদিয়া ছাড়াই ওয়াজ নছিহত করে, কোন এতিম খানা কোন গরীব সন্তানদের মাদ্রাসায় পড়ানোর জন্য । যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করে । ইত্যাদি ক্ষেত্রে যাকাত দেওয়া যাবে ।
৮) রাস্তার পথিকঃ ঐ মুসাফির যে এক স্থান হতে অন্য স্থানে বা দেশ হতে অন্য দেশে গেছে কিন্তু টাকার অভাবে নিজ গৃহে যেতে পারছে না । তাকে ঐ পরিমান যাকাত দেয়া হবে যাতে নিজের গৃহে ফিরে আসতে পারে । যদি কোথাও ধার কর্জ পায় তবে যাকাত নিতে পারবে না । পাপের সফরে চলবে না বরং কোন ওয়াজীব মুস্তাহাব বা মুবাহ কাজের জন্য হতে হবে ।
কতটা সাহায্য প্রয়োজন
ফকির মিসকীনদের জন্য খানা, পোষাক, বাসস্থান এবং অন্যান্য জিনিস যা ছাড়া বাঁচা সম্ভবপর নয়, তবে কোন অতিরিক্ত খরচ করা চলবে না । এর পরিমান নির্ধারণ করা সহজ নয় । কারণ যা এক ব্যক্তির চলে অন্যত্র অন্য ব্যক্তির চলবে না । যা এক জনের ১০ দিনের খরচ তা অন্য কারো ১ দিনের খরচ । তবে সর্বোত্তম ব্যবস্থা হল-অসুস্থের চিকিৎসার জন্য পুর্ণ খরচ দেওয়া, অবিবাহিতের বিবাহ খরচ দেয়া এবং যাকে যাকাত দেয়া হয় ভবিষ্যতে যাতে আর যাকাত নিতে না হয় এরকম ব্যবস্থা করে দেওয়া । যেমন-কোন কর্মের ব্যবস্থা করে দেয়া । এমন কিছু দেয়া যা দ্বারা সে আয় করে জীবিকা অর্জন করতে পারে । যেমন-রিক্সা, ভ্যান, অটোগাড়ী, গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগীর খামার ইত্যাদি যাকাত হিসেবে দেওয়া যাতে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে । সাহাবীরা এমন পরিমানে যাকাত দিতেন পরিবর্তীতে সে লোকের আর যাকাত নেওয়ার প্রয়োজন হয় নাই । খলীফা উমার (রাঃ) এর আমলে যাকাত বা অর্থনৈতিক নিরাপত্তা এত সুন্দর ভবে রূপায়িত হয়েছিল যে, সারা দিন ঘুরেও যাকাত নেয়ার মত লোক খুজে পাওয়া যেত না । খলিফাহ উমার বিন আব্দুল আজিজ (রাঃ) এর সময়েও এরূপ অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল । তিনি যাকাত নেবার লোক না পেয়ে শেষে আফ্রিকা মহাদেশে গিয়ে যাকাত বন্টনের আদেশ দিয়েছিলেন । ইসলামের আবির্ভাবের পর হতে চার খলীফাহ ও পরবর্তী কোন কোন খলীফাহর খিলাফত কালে যেভাবে যাকাত আদায় ও বন্টন করা হতো, বর্তমানে দুন্‌ইয়ার মুসলিম সরকারগুলো সরকারী ভাবে তদ্রুপ ব্যবস্থার প্রচলন করলে দুনিয়ার সকল মুসলিমদের অবস্থাই পরিবর্তন হয়ে যেত । কিন্তু নির্মম হলেও সত্য যে আজকের মুসলিম সমাজ কুরআনের এই নির্দেশ বর্জন করে চলছে ।
আমাদের যাকাত কে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র করে অনেকের মাঝে না বিলিয়ে আমাদের নিকটতম দরিদ্র আত্মীয় স্বজনকে বা সমাজের ফকির মিসকীনদের এমন ভাবে দিলে ভালো হবে যাতে তার আর্থিক স্বচ্ছলতা আসে । কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় প্রতি বছরই তাদের যাকাতের জন্য দ্বারে দ্বারে যেতে হয় এবং তাদের অভাব অন্টনের কোন পরিবর্তন হয় না ।
যাকাত দেয়া যাবে নাঃ রাসুল (সাঃ) বলেছেন-ধনী বা কর্মক্ষম যারা তাদের এতে কোন অংশ নাই (আহমাদ, আবু দাউদ, নাসায়ী, মেশকাত হাদিস ১৭৩৮/১০)


দান প্রসঙ্গ
আল্লাহ তা’আলা বলেন-তোমরা সালাত কায়েম কর, যাকাত দাও আর আল্লাহকে উত্তম ঋণ দিতে থাক । যা কিছু ভাল ও কল্যাণ তোমরা নিজেদের জন্য অগ্রীম পাঠিয়ে দিবে তা আল্লাহর নিকট সঞ্চিত মওজুদ রূপে পাবে । এটাই অতীব উত্তম । আর এর শুভ প্রতিফলনও খুব বড় (মুজাম্মিল আয়াত ২০); তোমরা আল্লাহ ও তার রাসুলের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন কর এবং তিনি তোমাদেরকে যার উত্তরাধিকারী করেছেন তা থেকে ব্যয় কর । অতঃপর তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও ব্যয় করে, তাদের জন্য রয়েছে মহাপুরুষ্কার (আল হাদিদ আয়াত ৭); সৎ কর্ম শুধু এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, বরং বড় সৎ কাজ হলো এই যে, ঈমান আনবে আল্লহর উপর, ক্বিয়ামত দিবসের উপর, মালায়িকাদের উপর এবং সমস্ত নবী রাসুলদের উপর । আর সম্পদ ব্যয় করবে তারই মুহাব্বাতে আত্মীয়-স্বজন, ইয়াতীম-মিসকীন, মুসাফির-ভিক্ষূক ও মুক্তিকামী ক্রীতদাসদের জন্য (বাকারা আয়াত ১৭৭); তোমরা তোমাদের প্রিয়বস্তু খরচ না করা পর্যন্ত কক্ষনো পুণ্য লাভ করবে না, যা কিছু তোমরা খরচ কর নিশ্চয়ই আল্লাহ সে বিষয়ে খুব ভালভাবেই অবগত (আল ইমরান আয়াত ৯২)
আন্দুল্লাহ ইবনু সালামাহ (রাযিঃ) থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) আসমাহ (রাযিঃ) কে বলেন-(দান না করে) গুনে গুনে সঞ্চয় করে রেখো না, তাহলে আল্লাহও তোমাকে না দিয়ে সঞ্চয় করে রাখবেন (বুখারী হাদিস ১৩৪১); আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হিতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন-মহান আল্লাহ বলেছেনঃ হে আদম সন্তানেরা! তোমরা অকাতরে দান করতে থাক, আমিও তোমাদের উপর ব্যয় করব (মুসলিম হাদিস ২১৭৯);
দান আত্মীয় থেকে শুরু করতে হবেঃ আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) বর্ণনা করেন রাসুল(সাঃ) বলেন-উত্তম সদাক্বাহ হলো যা দান করেও দাতার সম্পদ কমে না । নিজের আত্মীয়দের থেকে (দান খয়রাত) শুরু কর (বুখারী হাদিস ৪৯৫৬); আবু হুরায়রাহ (রাযিঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন-একটি দীনার তুমি আল্লাহর পথে ব্যয় করলে, একটি দীনার গোলাম আজাদ করার জন্য এবং একটি দীনার মিসকীনদের দান করলে এবং আরো একটি তোমার পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করলে । এর মধ্যে (ছওয়াবের দিক থেকে) ঐ দীনারটি উত্তম যা তুমি তোমার পরিবার পরিজনের জন্য ব্যয় করলে (সহীহ মুসলিম হাদিস ২১৮২) আপনি গিয়ে রাসুল (সাঃ) কে বলুন, দুজন মহিলা দরজায় দাঁড়িয়ে আছে । তারা আপনার কাছে জানতে চাচ্ছে-যদি তারা তাদের সদাক্বাহ নিজ স্বামীকে দান করে এবং তাদের ঘরেই প্রতিপালিত ইয়াতীমদের দান করে তাহলে কি তা আদায় হবে ? আর অনুরোধ হলো আমাদের পরিচয় তাঁকে জানাবেন না । রাবী বলেন অতঃপর বিল্লাল (রাযিঃ) রাসুল (সাঃ) এর কাছে গিয়ে ব্যাপারটি জিজ্ঞেস করলেন । রাসুল (সাঃ) তাকে জিজ্ঞেস করলেন মহিলাদ্বয় কে?তিনি বললেন, একজন আনসার গোত্রের এবং অপরজন যায়নাব । রাসুল (সাঃ) পুনরায় জিজ্ঞেস করলেন, কোন যায়নাব? তিনি বললেন আব্দুল্লাহর স্ত্রী যায়নাব । অতঃপর তাকে রাসুল (সাঃ) বললেন, তারা উভয়েই তাদের দানের জন্য দ্বিগুন ছওয়াব পাবে । এক আত্মীয়-স্বজনদের সাথে সদ্বব্যবহারের জন্য; দুই সদাক্বাহ করার জন্য (সহীহ মুসলিম হাদিস ২১৮৯); তাদের ঠিক পথে নিয়ে আসা তোমার দায়িত্ব নয়, বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছে ঠিক পথে পরিচালিত করেন, বস্তুত তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তা তোমাদের নিজেদের জন্যই এবং তোমরা তো শুধু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্যই ব্যয় করে থাক এবং যা কিছু তোমরা মাল হতে ব্যয় করবে, তোমাদেরকে তার ফল পুরোপুরী দেয়া হবে এবং তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না (বাকারা আয়াত ২৭২);
সামান্য হলেও দান করঃ আবী ইবনু হাতিম (রাযিঃ) হতে বর্ণিত আমি নবী (সাঃ) কে বলতে শুনেছি, তোমরা জাহান্নাম হতে আত্মরক্ষা কর এক টুকরা খেজুর সদাক্বাহ করে হলেও (বুখারী আঃ প্রঃ ১৩২৫ ইঃ ফাঃ ১৩৩১)
মৃত ব্যক্তির নামে দানঃ আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত জনৈক ব্যক্তি নবী (সাঃ) কে বললেন, আমার মায়ের আকস্মিক মৃতু ঘটে, কিন্তু আমার বিশ্বাস তিনি (মৃতুর পূর্বে) কথা বলতে সক্ষম হলে কিছু সদাক্বাহ করে যেতেন । এখন আমি তার পক্ষ হতে সদাক্বাহ করলে তিনি এর প্রতিফল পাবেন কি? তিনি নবী (সাঃ) বললেন হ্যাঁ (বুখারী হাদিস ১২৯৭, মুসলিম হাদিস ২১৯৭)
প্রতি ভাল কাজই সদাক্বাহঃ আবু যার গিফারী (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) বলেছেন তোমার ভাইয়ের প্রতি তোমার হাস্যজ্জ্বল মুখ করাটাও একটা দান; কাউকে ভাল কাজের উপদেশ দেয়াটাও একটা দান; পথ ভুলা মানুষকে পথ দেখানোও একটা দান; কোন চক্ষুহীন ব্যক্তিকে সাহায্য করাও তোমার একটা দান; চলার পথ থেকে পাথর, কাঁটা বা হাড় সরিয়ে দেয়াও একটা দান এবং তোমার বালতি হতে তোমার (অপর) ভাইয়ের বালতি ভরে দেয়াও তোমার একটা দান (তিরমি্যী, মেশকাত হাদিস ১৮১৬/২৩); হুযাইফা (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেন-প্রতিটি ভাল কাজই সদাক্বাহ অর্থাৎ দান হিসেবে গণ্য (মুসলিম হাদিস ২১৯৯); আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবী (সাঃ) এর নিকট কিছু সংখ্যক সাহাবী তাঁর কাছে এসে বললেন, হে আল্লাহর রাসুল ! ধন সম্পদের মালিকেরা তো সব ছওয়াব লুটে নিয়ে গেছে । কেননা আমরা যেভাবে সালাত আদায় করি তারাও সেভাবে আদায় করে । আমরা যেভাবে সিয়াম পালন করি তারাও সেভাবে পালন করে । কিন্তু তারা তাদের অতিরিক্ত সম্পদ দান করে ছওয়াব লাভ করছে অথচ আমাদের পক্ষে তা সম্ভব হচ্ছে না । নবী (সাঃ) বললেন আল্লাহ তা’আলা কি তোমাদের এমন অনেক কিছু দান করেননি! যা সদাক্বাহ করে তোমরা ছওয়াব পেতে পার ? আর তা হলো প্রত্যেক তাসবিহ (সুবহানাল্লাহ) একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক তাক্ববীর (আল্লহু আকবার) একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক আলহামদুলিল্লাহ বলা একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু বলা একটি সদাক্বাহ, প্রত্যেক ভাল কাজের আদেশ ও উপদেশ দেয়া একটি সদাক্বাহ এবং মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করা ও বাধা দেয়া একটি সদাক্বাহ । এমনকি তোমাদের শরীরের অংশে অংশে সদাক্বাহ রয়েছে । অর্থাৎ আপন স্ত্রীর সাথে সহবাস করাও একটি সদাক্বাহ (মুসলিম হাদিস ২২০০)
দানের উত্তম সময়
যারা নিজেদের মাল রাতে ও দিনে, প্রকাশ্যে অপ্রকাশ্যে ব্যয় করে থাকে, তাদের জন্য সেই দানের ছওয়াব তাদের প্রতিপালকের নিকট রয়েছে এবং তাদের কোন ভয় নেই, তারা চিন্তিতও হবে না (বাকারাহ আয়াত ২৭৪); হে ঈমানদারগণ! আমার দেয়া জীবিকা থেকে খরচ কর সেদিন আসার পূর্বে যেদিন কোন বিক্রয়, বন্ধুত্ব এবং সুপারিশ কাজে আসবে না । বস্তুতঃ কাফিরগণই অত্যাচারী-বাকারা আয়াত ২৫৪); আমি তোমাদের যে রিয্‌ক দিয়েছি তোমরা তা হতে ব্যয় করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার পূর্বে; (অন্যথায় মৃত্যু আসলে সে বলবে) হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছু কালের জন্য কেন অবকাশ দাও না, দিলে আমি সদাক্বাহ করতাম এবং সৎ কর্মশীলদের অন্তর্ভুক্ত হতাম (মুনাফিকুন আয়াত ১০)
আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন-কারো আপন জীবিনকালে এক দিরহাম দান করা তার মৃত্যুকালে একশত দিরহাম দান করা অপেক্ষা অধিক উত্তম (আবু দাউদ, মেশকাত হাদিস ১৭৭৬)
যাকাত ও দানের উপকারিতা
নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করেছে সৎকাজ করে । সালাত প্রতিষ্ঠিত করে এবং যাকাত দান করে, তাদের পুরুষ্কার তাদের পালনকর্তার কাছে রয়েছে (বাকারা আয়াত ২৭৭); তোমরা যা কিছু ব্যয় কর, তিনি তার বিনিময় দেন । তিনি উত্তম রিয্‌ক দাতা (সাবা আয়াত ৩৯)
আল্লাহর পথে দান বৃদ্ধি পায়ঃ যারা আল্লাহর পথে নিজেদের মাল ব্যয় করে, তাদের (দানের) তুলনা সেই বীজের মত, যা থেকে সাতটি শীষ জন্মিল, প্রত্যেক শীষে একশত করে দানা এবং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা করেন বর্ধিত হারে দিয়ে থাকেন । বস্তুত আল্লাহ প্রাচুর্যের অধিকারী, জ্ঞানময় (বাকারা আয়াত ২৬১);
দানে বিপদ কাটেঃ আলী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন দান আল্লাহ তা’আলার রাগ প্রশমিত করে এবং মন্দ মৃত্যু রোধ করে (তিরমি্যী, মেশকাত হাদিস ১৮১৪/২১); আলী (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন-তোমরা দানের ব্যাপারে তাড়াতাড়ি করবে । কেননা বিপদাপদ তাকে অতিক্রম করতে পারে না (অর্থাৎ দানে দূরীভুত হয়)-মেশকাত হাদিস ১৭৯৩;
দানের ফাযীলাতঃ রাসুল (সাঃ) বলেন-যে ব্যক্তি হালাল উপার্জন থেকে একটি খেজুরও দান করে আল্লাহ তা’আলা তার ডান হাতে গ্রহন করেন । অতঃপর তা দানকারীর জন্য বাড়তে থাকেন, যেভাবে তোমাদের মধ্যে কেউ আপন ঘোড়ার বাচ্চাকে লালন-পালন করতে থেকে । অবশেষে তা একদিন পাহাড় সমতুল্য হয়ে যায় (মুসলিম হাদিস ২২১২)
১) অন্তরকে পরিষ্কার পরিছন্ন করে, কৃপনতা ও কার্পণ্যের হীন চরিত্র থেকে মুক্ত করে।
২) ধনী গরীবের মধ্যে সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে ।
৩) যাকাত ঋণগ্রস্থের ঋণ শোধ করে দিয়ে তার মনের পেরেশানী দূর করে ।
৪) ঈমানের মধ্যে দৃঢ়তা আনে এবং পরিপূর্ন বিশ্বাস সৃষ্টি করে ।
৫) যারা আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ করবে যাকাত তাদের প্রস্তুত করে ।
৬) কোন মুসাফির মুসলিম যাত্রা পথে বিপদে পড়লে ঐ পরিমাণ যাকাতের মাল দেয়া যাতে ঘরে ফেরত যেতে পারে ।
এছড়া আরো বহুবিধ উপকারীতা রয়েছে । রাসুল (সাঃ) বলেছেন-ন্যায় নিষ্ঠার সাথে যাকাত দানকারী কর্মী আল্লাহর রাস্তায় জিহাদকারী গাজীর ন্যায় (আবু দাউদ, তিরমি্যী, মেশকাত হাদিস ১৬৯৩/১৪)
করযে হাসানা ও অনুসরনীয় বিষয়ঃ যদি তোমরা আল্লাহকে করযে হাসানা দাও তবে তিনি তোমাদেরকে তা কয়েকগুন বাড়িয়ে ফেরত দিবেন এবং তোমাদের গুনাহসমুহ মাফ করে দেবেন (তাগাবুন আয়াত ১৭)
দান ও যাকাত না দেয়ায় দুনইয়ার ও আখিরাতের ভয়াবহ শাস্তি
যারা সোনা, রূপাকে জমা করে রাখে এবং তা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে না, তাদের কপালে, শরীরের পার্শ্বে ও পিঠে ছেক দেয়া হবে । (আর বলা হবে) এটা হচ্ছে ঐ সম্পদ যা তোমরা জমা করে রেখেছিলে নিজেদের জন্য । আর ঐ জিনিস জমা রাখার শাস্তি গ্রহন কর (তওবাহ আয়াত ৩৪-৩৫)
যাকাত যে মালের সাথে মিশ্রিত হয়ে থাকে তা অবশ্যই বিপর্যয়ের শিকার হবে (মেশকাত হাদিস ১৭০১/১২); সম্পদের অধিকারী কোন ব্যক্তি যদি যাকাত না দেয় তবে ক্বিয়ামতের দিন ঐ সমস্ত জিনিসকে জাহান্নামের আগুনে গরম করে পাত বানানো হবে, তারপর এর দ্বারা পার্শ্ব, কপাল ও অন্যান্য অঙ্গে ছেক দেয়া চলতে থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ বিচার শেষ করেন । ঐ দিন হবে পঞ্চাশ হাজার বৎসরের সমান । তারপর তার নির্দিষ্ট স্থান হবে হয় জান্নাত না হয় জাহান্নাম (মুসলিম হাদিস ২১৬১); যে ব্যক্তিকে আল্লাহ তা’আলা সম্পদের অধিকারী করেছেন, তিনি যদি যাকাত আদায় না করেন তবে ঐ সম্পদকে এক শক্তিশালী টাক মাথা, দু’শিংওয়ালা রুপে উঠানো হবে যা তাকে ক্বিয়ামতের দিন আঘাত করতে থাকবে । তারপর তাকে দাঁত দিয়ে কামড়াবে ও বলবেঃ আমি তোমার মাল, আমি তোমার গুপ্ত সম্পদ (বুখারী হাদিস ৬৩৭৪); যাদেরকে উট, গরু বা ছাগলের অধিকারী করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তাদের যাকাত আদায় করেনি, তখন ঐ পশুদের ক্বিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে আরো বড় ও মোটা করে । তখন তারা তাদের মালিককে শিং ও পা দ্বারা আঘাত করতে থাকবে । যখন একটি ক্লান্ত হয়ে যাবে তখন অন্যটি শুরু করবে । আর এটা চলতে থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ পর্যন্ত না বিচার শেষ হবে (মুসলিম হাদিস ২১৬৮)
লোক দেখানো দান বৃথাঃ হে ঈমানদারগণ! দানের কথা মনে করিয়ে দিয়ে ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দান-খয়রাতকে সে ব্যক্তির ন্যায় ব্যর্থ করে দিও না যে নিজের সম্পদ লোক দেখানোর জন্য ব্যয় করে থাকে, অথচ সে আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাসী নয় । তার তুলনা সেই মসৃণ পাথরের মত, যাতে সামান্য কিছু মাটি আছে, অতঃপর প্রবল বৃষ্টিপাত তাকে পরিষ্কার করে ফেলে । তার স্বীয় কৃত কার্যের ফল কিছুই পাবে না; আল্লাহ কাফিরদেরকে পথপ্রদর্শন করেন না (বাকারা আয়াত ২৬৪); যদি তোমরা প্রকাশ্যে দান কর তবে তাও উত্তম, আর যদি তোমরা তা গোপনে দান কর এবং তা অভাব গ্রস্থদেরকে দান কর, তবে তাও তোমাদের জন্য আরও উত্তম, অধিকন্তু তিনি তোমাদের কিছু গুনাহ মোচন করে দেবেন, বস্তুতঃ যা কিছু তোমরা করছ, আল্লাহ তার খবর রাখেন (বাকারা আয়াত ২৭১)
কৃপণতার পরিনামঃ মু’মিন কৃপণ হয় না; আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) বলেছেন-এ দু’টি স্বভাব কোন মু’মিনের মধ্যে একত্রিত হতে পারে না-কৃপণতা ও দুর্ব্যবহার খারাপ চরিত্র (তিরমিযী, মেশকাত হাদিস ১৭৭৮)
কৃপণের প্রতি অভিশাপঃ আবু হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত নবী (সাঃ) বলেছেন-প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন । তাদের একজন বলেন হে আল্লাহ! দাতাকে তার দানের উত্তম প্রতিদান দিন আর অপরজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করে দিন (বিখারী হাদিস ১৩৪৯, মুসলিম হাদিস ২২০৬)
কৃপণ ও দান করে খোটা দাতা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে নাঃ আবু বকর সিদ্দীক (রাঃ) বলেন রাসুল (সাঃ) বলেছেন-জান্নাতে প্রবেশ করবে না প্রতারক, কৃপণ এবং যে ব্যক্তি দান করে খোটা দেয় (তিরমি্যী, মেশকাত হাদিস ১৭৭৯)
ধন-সম্পদ অশান্তির কারনঃ আল্লাহ বলেন, “যে ধন সম্পদ জমা করে আর বার বার গুনে, সে মনে করে যে, তার ধন-সম্পদ চিরকাল তার সাথে থাকবে, কক্ষনো না, তাকে অবশ্যই চূর্ণ বিচূর্ণকারীর মধ্যে নিক্ষেপ করা হবে । তুমি কি জান চূর্ণ বিচূর্ণকারী কী? তা আল্লাহর প্রজ্জ্বলিত আগুন, যা হৃদয় পর্যন্ত পৌঁছে যাবে (অর্থাৎ জাহান্নামীর বোধশক্তিকে নাড়িয়ে দিবে-কী কারনে তাকে জাহান্নামে জ্বলতে হচ্ছে?) তা তাদেরকে চতুর্দিক থেকে পরিবেষ্টন করে রাখবে (হুমাযাহ আয়াত ২-৮); আর তাদের ধন-মালের প্রাচুর্য ও সন্তান-সন্তানি যেন আপনাকে ধোঁকায় না ফেলে । আল্লাহ তো ইচ্ছাই করেছেন যে, এসবের জন্যই তাদেরকে দুনইয়াতে আযাবের মধ্যে রাখবেন এবং তাদের প্রাণ কুফরের অবস্থায় বের হয়ে যাবে (তাওবাহ আয়াত ৫৫-৮৫) আল্লাহ আর বলেন-আর ধন মাল তার কোন কাজে আসবে না, যখন সে ধ্বংস হয়ে যাবে (লাইল আয়াত ১১)
অপচয় কারীদের পরিনামঃ আবু যর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) ক্বাবার ছায়ায় বসাছিলেন । এমন সময় আমি গিয়ে তাঁর সামনে উপস্থিত হলাম । তিনি আমাকে দেখে বললেন-ক্বাবার প্রভুর শপথ! তারা ক্ষতির মধ্যে নিমজ্জিত । বর্ণাকারী বলেন, অতঃপর আমি গিয়ে তাঁর পাশে বসলাম কিন্তু বসে থাকতে পারলাম না । উঠে দাঁড়িয়ে বললাম, হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)! আমার মাতা পিতা আপনার জন্য কুরবান হোক, সে ক্ষতিগ্রস্থ লোকেরা কারা ? তিনি বললেন-এরা এমন সব ধনাঢ্য ব্যক্তি যারা এখানে সেখানে ইচ্ছে মত খরচ করে এবং সামনে থেকে, পিছন থেকে, ডান থেকে ও বাম দিক থেকে অকাতরে (অপ্রয়োজনে ও অপাত্রে) খরচ করে । আর তাদের মধ্যে এমন লোক খুব কমই আছে যারা জিহাদ ও দ্বীনের সাহায্যের জন্য আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের সন্তুষ্টির জন্য খরচ করে । আর যে সব উট, গরু ও ছাগলের মালিক এর যাকাত আদায় করে না ক্বিয়ামতের দিন এসব জন্তু পৃথিবীতে যেভাবে ছিল তার চেয়ে অনেকগুন মোটা তাজা ও চর্বিযুক্ত হয়ে এসে তাকে (মালিককে) পা দিয়ে দলিত মথিত করবে এবং শিং দিয়ে আঘাত করবে । এর শেষ পশুটি অতিক্রম করলে প্রথমটি পুনরায় এসে ঐরুপ করতে আরম্ভ করবে । আর এভাবে চলতে থাকবে যতক্ষণ না বান্দাদের বিচার শেষ হবে (মুসলিম হাদিস ২১৭১)
যাকাত অমান্যকারী কাফির
ইসলামী শরীয়াতে যাকাত ফরয এবং এটি এমনই গুরুত্বপূর্ণ যে এর অস্বীকার কারীকে ও এর অমান্যকারীকে “আলিমগণ কাফির হিসাবে আখ্যায়িত করেছেন এবং বলেছেন যে ধনুক থেকে যেমন তীর বের হয়ে যায় ঠিক তেমনিভাবে সেও ইসলাম থেকে বের হয়ে যায় । ইমাম নবাবী (রহঃ) বলেন-যাকাত দেয়া ফরয এ কথা স্বীকার করে কেউ যদি তা দিতে অস্বীকার করে তাহলে দেখতে হবে সে নওমুসলিম কিনা যে এ সম্পর্কে না জানার দরুন কিংবা সমাজ-সভ্যতা থেকে দূরে বিচ্ছিন্ন অবস্থানের কারনে এরূপ করেছে । এরূপ হলে তাকে কাফির বলা যাবে না । তাকে তখন ভালভাবে জানাতে ও বোঝাতে হবে এবং তারপর তার কাছ থেকে যাকাত নিয়ে নিতে হবে । এ সময় যদি সে দিতে অস্বীকার করে তাহলে কাফির বলতে হবে । কিন্তু যদি এমন হয় যে, লোকটি মুসলিম, মুসলিম সমাজেই বাস, এ বিষয়ে কোন কিছুই তার অজানা নয়, তারপরও সে অস্বীকার করছে, তবে সেক্ষেত্রে সে নির্ঘাত কাফির বলে গণ্য হবে (আবুল হাসান নদভী লিখিত পুস্তকের বরাতে ইসলামের যাকাত বিধান ১০২ পৃষ্টা)
যদি তারা তাওবাহ্ করে এবং সালাত কায়িম করে এবং যাকাত আদায় করে তবে তারা তোমাদের দ্বীনি ভাই (তাওবাহ আয়াত ১১)
“আমীন”
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২

কারবারটা যেমন তেমন : ব্যাপারটা হইলো কি ???



আপনারা যারা আখাউড়ার কাছাকাছি বসবাস করে থাকেন
তবে এই কথাটা শুনেও থাকতে পারেন ।
আজকে তেমন একটি বাস্তব ঘটনা বলব !
আমরা সবাই... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×