গত ২৫ আগস্ট রাত থেকে মিয়ানমারের সেনা, পুলিশ ও সীমান্তরক্ষী বাহিনী রাখাইন প্রদেশে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের নামে অসহায় রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর যে মানবিক নির্যাতনে যে বিপর্যয় নেমে এসেছে তা মর্মন্তুদ রাখাইন ট্র্যাজেডি হিসেবে আখ্যায়িত করা হচ্ছে। যে যৌথ অভিযান শুরু হয়েছে তাতে জলস্থলে বা পাহাড় পর্বতে রোহিঙ্গাদের মৃতের সংখ্যা ৩ সহস্রাধিক ছাড়িয়ে গেছে। সাগর পথে টেকনাফে এ পর্যন্ত ৫টি নৌকাডুবির ঘটনা ভেসে আসা লাশ মিলেছে ৫৬। নিখোঁজ রয়েছে আরও অন্ততপক্ষে অর্ধ শতাধিক। জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্যসহ বিভিন্ন দেশের আবেদন-নিবেদন উপেক্ষা করে মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর বর্বর আচরণ অব্যাহত রেখেছে তা বর্তমান সভ্য দুনিয়ার ইতিহাসে নতুন ঘৃণ্যতম বর্বরতার ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। নির্বিচারে গুলি করে হত্যা, হেলিকপ্টার থেকে গান পাউডারে গ্রামের পর গ্রাম জ্বালিয়ে দেয়া, সহায় সম্পদ কেড়ে নেয়াসহ এমন কোন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা নেই যা সেখানে ঘটছে না। ফলে গত ১০ দিনে অর্থাৎ ২৫ আগস্ট গভীর রাতের পর থেকে বাংলাদেশে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটেছে দেড় লক্ষাধিক। টেকনাফ থেকে বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি পর্যন্ত সীমান্তের বিভিন্ন এলাকার জিরো পয়েন্টে সোমবার পর্যন্ত হাজার হাজার রোহিঙ্গা নর-নারী ও শিশুর মাতম চলছে। এরপরও রাখাইন প্রদেশে রোহিঙ্গা নিধন অভিযান কোনভাবেই যেন থামছে না। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হচ্ছে মিয়ানমার বাহিনী রোহিঙ্গাদের ওপর মরণ ছোবল হেনেছে। লাখ লাখ রোহিঙ্গা নর-নারী সেদেশের মংডু, রাচিদং, বুচিদংসহ বিভিন্ন শহর ও শহরতলী এলাকায় গৃহবন্দী হয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। খাদ্য, পানীয়র অভাবে ওসব রোহিঙ্গার অনেকেই এখন অনাহারে-অর্ধাহারে মৃত্যুপথে যাত্রী হয়ে আছে। সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের সঙ্গে হিন্দু সম্প্রদায়ের সদস্যদেরও ওপর নেমে এসেছে বর্বরতার শেষ খড়গ। এ অবস্থায় জাতিসংঘ, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, তুরস্ক, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, সৌদি আরবসহ বিভিন্ন দেশের পক্ষ থেকে নানাভাবে রোহিঙ্গা নিধন থামিয়ে তাদের ন্যূনতম অধিকার নিশ্চিত করা জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতি দফায় দফায় আবেদন জানানো হয়েছে। কিন্তু কোন আবেদনই যেন মিয়ানমার সরকারের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাচ্ছে না। বরং রোহিঙ্গাসহ বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সদস্য হত্যার শিকার হয়েছে তা নিয়ে সে দেশের সরকারের তরফ থেকে মিথ্যাচার করছে। তাদের স্পষ্ট বক্তব্য যাদের বিরুদ্ধে অভিযান চলছে তারা বাঙালী এবং জঙ্গী। এছাড়া ওরা মিয়ানমারের নাগরিক নয় অনুপ্রবেশকারী বলে দাবী করছে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সদস্যদের ওপর যে মানবিক নির্যাতন চালাচ্ছে তা আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী। দেশটির উচিত আন্তর্জাতিক আইন ও অঙ্গীকার অনুসরণ করে চলা ও নাগরিকদের আক্রমণ থেকে বিরত থাকা। তাদের নির্মম হত্যাযজ্ঞ অবিলম্বে বন্ধে জাতিসংঘের হস্তক্ষেপ কামনার পাশাপাশি বিশ্বের সকল দেশের সমর্থন অত্যন্ত জরুরী।
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৭:৪৮