somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এনালগ ডায়েরী : সংস অফ ইনোসেন্স ~~~* (১)

১০ ই নভেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বছরে দুইবার মামাবাড়ি যেতাম। বৈশাখ মাসে মামা বাড়ীর পাশে ইয়া বড় বৈশাখী মেলায় আর কার্ত্তিক মাসে কালীপূজোয়। তখন ঐদিকে কারেন্ট ছিল না। কালিপ্রতিমা কিনে নৌকায় করে নিয়ে যেতাম, সাথে মাইক, ক্যাসেট আর ব্যাটারি। সারা পথ মাইক বাজত আর খালের দু ধার দিয়ে বাচ্চা ছেলে মেয়েরা আমাদের সাথে সাথে ছুটত। কি সব গান... 'জানে জিগার জানে মান’, ‘মুঝে নিঁদ না আয়ে’ এখনো কানে লেগে আছে...



সারা রাত আমরা অনেক মজা করতাম, তারাবাজি, ঘটবাজি, হাতুরি-বোমা সারারাত ই চলত। প্রতিবছর এই একটা দিনের জন্য চেয়ে থাকতাম... কবে কালী পুজোর দিন আসবে আর মজা করবো! ভুমিকা বেশী হয়ে যাচ্ছে। ঐ সময় থেকেই কালী মা কিংবা কালী পুজা জিনিসটাই অনেক আনন্দের বিষয় ছিলো আমার কাছে।

এইচ এস সি পরীক্ষার আগে বছর খানেক আমাকে রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্রাবাসে রাখা হয়েছিল বাসায় ঠিকমতো পড়াশুনা করতাম না বলে। মিশনের তত্ত্বাবধায়ক কে আমরা মহারাজ স্যার বলতাম। আমার দেখা পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ এই লোকটি পুজা অর্চনার ক্ষেত্রে কেবলমাত্র ব্রাহ্মন দের মুখাপেক্ষী ছিলেন না। তার যুক্তি ছিল ঈশ্বরের কাছে সবাই সমান। একজন ব্রাহ্মন যেমন, একজন মুচিও তেমন। মিশনে একজন ঠাকুর নির্দিষ্ট করে রাখা থাকলেও সপ্তাহে একদিন করে পালাক্রমে সব ছাত্রকে মন্দিরের যাবতীয় কাজ করতে হতো।

সকাল পাঁচটায় উঠে মন্দির ঝাড়ু দেয়া, মোছা, মন্দির খুলে দেয়া, ফুল তোলা, সকালের প্রার্থনা, সন্ধায় প্রার্থনা, আরতি, প্রসাদ বিতরন, রাতে মন্দির বন্ধ করা সবকিছুই করতে হতো আমাদের।
প্রথম প্রথম আমার অনেক বিরক্ত লাগতো। একঘেয়ে কাজ। একটা সময় এ কাজগুলো আমার ভালো লাগতে শুরু করলো।

সবচেয়ে ভালো লাগার বিষয় ছিল রাতে যখন কালী মন্দিরের দরজা বন্ধ করে একমনে কালী প্রতিমার দিকে তাকিয়ে থাকতাম। কি যেন এক অদৃশ্য আকর্ষণে বসে থাকতাম প্রতিমার সামনে। অত বড় মূর্তির সামনে যেতে সচরাচর ভয় লাগার কথা তাও দরজা জানালা বন্ধ করে। অদ্ভুত ব্যাপার আমার একটুও ভয় করতো না। মায়ের কাছে আছি, ভয় কিসের। কি অদ্ভুত মধুমাখা হাসি মায়ের মুখে! অদ্ভুত এক আবেশে আমি তন্ময় হয়ে থাকতাম...

নিয়ম অনুযায়ী প্রতিবছর নতুন প্রতিমা আনার সময় পুরনো প্রতিমা বিসর্জন দিতে হয়। যেদিন মায়ের প্রতিমা বিসর্জন দিলাম আমরা, আমার সারা গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠেছিলো, কষ্টে বুকটা ফেটে যাচ্ছিলো। জানি এ বিগ্রহ মাটির এটা মাটি, কাঠের কাঠামো আর খড় কুটা দিয়ে বানানো তবুও বার বার মনে হচ্ছিলো আমরা যেন রক্ত মাংসের বিগ্রহ কে জলে ভাসিয়ে দিচ্ছি... এ অনুভূতি বুঝিয়ে বলা যায় না...

শেষ কবে মামাবাড়ি গিয়েছি মনে নাই...

এখন আমার যুক্তিবাদী মন কংক্রিট প্রমান ছাড়া কোন কিছু মানতে চায় না। যত বেশী জানার চেস্টা করেছি, জেনেছি, ততই দূরে সরে গিয়েছি বিশ্বাসের সারল্য থেকে।

‘সংস অফ ইনোসেন্স’ অবিশ্বাসের ভিড়ে ‘সংস অফ এক্সপেরিএন্স’ হয়ে গেছে। এখন আর মা তার পাপী সন্তানের কাছে আসেন না। মন্দিরেও যাই না অনেকদিন। শেষ যেবার গিয়েছিলাম মা আমার সাথে কথা বলেননি।

৩টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আরো একটি সফলতা যুক্ত হোলো আধা নোবেল জয়ীর একাউন্টে‼️

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৮:৪০



সেদিন প্রথম আলো-র সম্পাদক বলেছিলেন—
“আজ শেখ হাসিনা পালিয়েছে, প্রথম আলো এখনো আছে।”

একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আজ আমি পাল্টা প্রশ্ন রাখতে চাই—
প্রথম আলোর সম্পাদক সাহেব, আপনারা কি সত্যিই আছেন?

যেদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

লিখেছেন নতুন নকিব, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:১১

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ নয়, আমরা শান্তি চাই

ছবি এআই জেনারেটেড

হামলা ভাংচুর অগ্নিসংযোগ প্রতিবাদের ভাষা নয় কখনোই
আমরা এসব আর দেখতে চাই না কোনভাবেই

আততায়ীর বুলেট কেড়ে নিয়েছে আমাদের হাদিকে
হাদিকে ফিরে পাব না... ...বাকিটুকু পড়ুন

তৌহিদি জনতার নামে মব সন্ত্রাস

লিখেছেন কিরকুট, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৪




ছবিঃ অনলাইন থেকে সংগৃহীত।


দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিক সময়ে ধর্মের নাম ব্যবহার করে সংঘটিত দলবদ্ধ সহিংসতার ঘটনা নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তৌহিদি জনতা পরিচয়ে সংঘবদ্ধ হয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুখ গুজে রাখা সুশীল সমাজের তরে ,,,,,,,,

লিখেছেন ডঃ এম এ আলী, ২০ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৫


দুর্যোগ যখন নামে আকাশে বাতাশে আগুনের ধোঁয়া জমে
রাস্তা জুড়ে কখনো নীরবতা কখনো উত্তাল প্রতিবাদের ঢেউ
এই শহরের শিক্ষিত হৃদয়গুলো কি তখনও নিশ্চুপ থাকে
নাকি জ্বলে ওঠে তাদের চোখের ভেতর নাগরিক বজ্র
কেউ কেও... ...বাকিটুকু পড়ুন

নজরুল পরিবারের প্রশ্ন: উগ্রবাদী হাদির কবর নজরুলের পাশে কেন?

লিখেছেন মাথা পাগলা, ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৩:০১



প্রায় অর্ধশতাব্দী আগে কাজী নজরুল ইসলামের দেহ সমাধিস্থ করা হয়েছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মসজিদের পাশে। শনিবার বাংলাদেশের স্থানীয় সময় বিকেল ৪টে নাগাদ সেখানেই দাফন করা হল ভারতবিদ্বেষী বলে পরিচিত ইনকিলাব মঞ্চের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×