
কয়রা উপজেলা, হয়ত আমরা এই উপজেলাটির নাম খুব কম শুনেছি, বাংলাদেশের একটি জনপদ যেখানে সরকার দূরে থাক সয়ং ঈশ্বর ও যেন ওখানকার মানুশকে এড়িয়ে চলেন। ওদের কেউ নেই।
আমরা ভিনদেশী রোহিংগা, কাশ্মীরি, ফিলিস্তিনি, সুদানি নানার জাতীর নিগ্রহের খবর প্রতিনিয়ত পাই, কিন্তু নিজের দেশে অবহেলিত ঐ অঞ্চলের নিজের চোখে দেখা হাল বর্ণনা করতে চাই। মানবতার চরম বিপর্যয়ের সাক্ষী কয়রা।
সুন্দরবন লাগোয়া খুলনা জেলার এই জনপদ বাংলাদেশের চরম দারিদ্র পীড়িত অঞ্চল। জীবনের মানে সেখানে থমকে থাকে সবসময়, মানবাধিকার দূরে থাক, বেচেঁ থাকার উৎসাহ যেন ভাটা পরেছে ঐ জনপদে।

(আইলার স্যাটেলাইট চিত্র)
দুবার ঘূর্ণিঝড় আঘাত এনেছে জনপদটিতে একটি আইলা ও একটি সিডর রুপে। সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। সমুদ্রের জোয়ারের সাথে নিত্ত নোনা পানিবন্দী জীবনের হাহাকার।
খাবারের কোন জোগান নেই, পানি উন্নয়ন বোর্ড নামকাওয়াস্তে যেই বাধ নির্মাণ করে, টাকার হরিলুটের সেই বাধ প্রতিবছর বর্ষায় ভেংগে যায়। কোথাও না ভাংগলে স্থানীয় প্রভাবশালীরা বাধ কেটে দিয়ে ফসলী জমির ক্ষতি করে পানি ঢুকিয়ে তৈরী করে চিংড়ি ঘের। বিস্তীর্ণ সেই জলাভুমিতে গরীব কৃষকের জমি দখল করে তৈরী হয় ঘের। সেখানে আর কোন সাধারন মানুশের জমি নেই সব দখল হয়ে গেছে। কারো রোজগার নেই, কিছু করার নেই। গ্রামের দিকে নেই কোথাও একটু রাস্তা।
রেড ক্রিসেন্ট এর সারি সারি ঘর লাল টিনের তৈরী দেখা মিলবে কয়রাতে, একটুকরো ফসলী জমি পাওয়া যাবেনা, এশিয়ান ডেভেলাপমেন্ট ব্যংকের কাজে যাওয়া মাত্র শত শত মানুশের ভীর কিছু পাওয়ার আশায়। যা কিছু করেছে সব বেসরকারি এন জি ও রা। মানুশের খাবার যেখানে নেই সেখানে সেনেটারি ব্যবস্থা থাকার কথাই ওঠেনা। সরকার কিসের ভিত্তিতে বলে খাদ্য সয়ং সম্পূর্ণ আর স্যনেটারী শতভাগ দাবী করে আমার জানা নাই, বাংলাদেশের শাসকগনের প্রতি আমার চ্যালেঞ্জ ওরা হয়ত কয়রার কথা ভুলে গেছে, স্যনেটারী ল্যাট্রিন না থাকার বিপদ জেনেছি ওখানেই হাতে কলমে, ডায়রিয়ার শত শত শিশু মৃত্যু। চারদিকে পানি নোনা পানির থই থই কোথাও পান যোগ্য পানির দেখা পাওয়া দুষ্কর। লাশ দাফনের জায়গা নেই, ভেলায় ভাসিয়ে দেয়া হয়। চারদিকে চামড়ার সাথে লেগে থাকা হাড্ডিসার শরীরগুলো চোখ মুখ ঠিকরে জানান দিচ্ছে নিজেদের অসহায়ত্ব। আর মৌলিক অধিকার! বিদ্যুত, ইন্টারনেট থাক ওসব বিলাসিতা। বেঁচে থাকার লড়াইটা বড় অসম এখানে।

(কয়রার একটি স্কুলের চিত্র)
একটা বাচ্চা, আমার শার্ট এর হাতল টেনে ধরে বলছে "স্যার একটা মাঠ করি দেন "।
আমি খালি শরীরের ঐ বাচ্চার জীর্ণ মুখের দিকে তাকিয়ে মিথ্যে সান্তনা দিতে পারিনি।
একটা শিশু কি দেখে বড় হচ্ছে, বাজারের ফার্মেসি তে বসে থাকা একজন বলছে, এখানকার রোজগারের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে পতিতাবৃত্তি, দূর দুরান্ত থেকে লোক আসে বেচে থাকার জন্য গরীব মানুশের সব রাস্তা বন্ধ।
ফসলের জমি নেই, ব্যবসা নেই, মাছ ধরার পানিও ইজারাদারের দখলে, বিশ্বাস হয়নি।
নিজের চোখে দেখতে বের হলাম, সব কথা যে মিলে যাচ্ছে অক্ষরে অক্ষরে। মানবতার কি চড়ম অবনতি।
কি করবে এই গরীব মানুশ গুলো? আমাদের ইটকাঠের সুন্দর শহরে এইসব অবহেলিত মানুশগুল বস্তিতে বসত গড়ে শত কষ্টের মাঝেও, আমরা সেগুলো পুড়িয়ে দেই কিছুদিন পরপর।
আর যাদের শহরে আসার ও শক্তি নেই তারা কি করে বাঁচে ঐ জলদস্যু , ভুমিদস্যু আর লুটেরাদের মগের মুল্লুকে?

(কয়রার জীবন যাত্রা।)
ঢাকার শাসকদের সহকারীরা চালিয়ে যাচ্ছে এক অন্যরকম জাহান্নাম।
ঢাকায় ফ্লাই ওভার করেন, স্যাটেলাইট ফুটান, শাসকের নতুন গাড়ি, নতুন বাড়ি, নতুন নতুন রক্ষিতা, গুলশান, বনানী, ক্রিম এন্ড ফাজ আইস্ক্রিম আর গ্লোরিয়া জিন্সের কফি, আর কয়রা আর এর মত যারা আছে তারা কি আমাদের কলনী?
ওরা আমাদের মানুশ, আমাদের নিজেদের। আমাদের মত চোখ মুখ, একদম নিজেদের ভাই বোন।
ইংরেজ আমলের ভাইসরয়েরা চলে গেছে কিন্তু এখনো আমাদের মুক্তি মেলেনি।
শাসকেরা বৃটিশের মত আচরন করলে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদিরাম, প্রীতিলতা জন্মাতে সময় লাগবেনা।

(কয়রার ভৌগলিক অবস্থান)
সর্বশেষ এডিট : ১৫ ই মে, ২০১৮ সকাল ৮:৪১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




