somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শিশু সব করে রব

০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৪:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[‘জানো আমারনা ভিডিও গেম আছে’।
‘আমারো আছে, আমার বড় ভাইয়ানা একতা গেম খেলে। বলবনা.. হি হি হি। শুধু গুলি করে .. আর .. হি হি ..মেয়ে গুল কোন জামা পরেনা।‘
‘আমার আব্বুওনা কাল রাতে কম্পুতে একতা পোছা ছবি দেখছে... হি হি.. কি পোছা।']
----------------------------------------------------------------
সেদিন আমার এক বন্ধুর মুখে গা-গা-গা গু-গু-গু জাতীয় অদ্ভুত বিজাতীয় ধ্বনি শুনে থমকে গেলাম। বন্ধুটিকে অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলাম,’কিরে, এরকম করছিস কেন? তোর প্রব্লেমটা কি?’ কে শোনে কার কথা। বন্ধুটি চালিয়ে গেল- উকু বুকু মুকু, ইটলি পিটলি। পরে খোলাসা হোল। ও আসলে ওর আধো বোল শেখা দু’বছুরে বাচ্চার সাথে বাতচিত করছে।

শিশুরা বড়ই নির্মল। ফুলের মত সুন্দর। অবশেষে সব বাদ দিয়ে এই ফেরেশতার মত মানব শিশুদের নিয়ে রসিকতা বড়ই কষ্টদায়ক। আমার আর কি দোষ। আমি জানিনা গ্রীক দার্শনিক প্লেটোর কয়টি ছিঁচকাঁদুনে ছেলেমেয়ে ছিল। তিনিতো ছেড়েদিলেন এক বাণী- ‘যতসব জীব জানোয়ার বিদ্যমান তার মধ্যে, মনুষ্য পুরুষ সন্তান ম্যানেজ করা সবচেয়ে কঠিন কাজ’।

আসলে যেকোনো শিশুই –ছেলে হোক বা মেয়ে- শিশু লালনপালন করা দুনিয়ার সব চেয়ে কঠিন কাজ গুলির একটি।
আর এই কঠিন কাজে যুগে যুগে ব্রতী হয়েছে মানব কূল, যেমন হয়েছেন আমার এক প্রতিবেশী ইদ্রিস সাহেব। তিনি তার ফেরেশতার মত ৪/৫ বছরের ছেলেটিকে একদিন নিয়ে গেছেন মসজিদে। ছেলেটির নাম লেখা।
মসজিদে ঢুকেই ইদ্রিস সাহেব ছেলেকে সাবধান করলেন, ‘লেখা, কোন দুষ্টুমি করবানা। চুপচাপ আমার পাশে থাকবা। মনে থাকবে?‘
লেখা শান্ত ছেলের মত মাথা নেড়ে জানাল, থাকবে।
নামাজ শুরু হল। আছরের নামাজ। নিয়ম অনু্যায়ী ইমাম সাহেব নিঃশব্দে তেলাওয়াত করছেন। মোটামুটি পিন পতন নিস্তব্ধতা। ঠিক এমনি সময়ে লেখা শুরু করল তার অপারেশন। বাবার পাশ থেকে আস্তে করে কেটে পড়ে তার প্রায় সমবয়সী মসজিদে আসা আর এক বাচ্চার সাথে গল্প জুড়ে দিল-
‘জানো আমারনা ভিডিও গেম আছে’।
‘আমারো আছে, আমার বড় ভাইয়ানা একতা গেম খেলে। বলবনা.. হি হি হি। শুধু গুলি করে .. আর .. হি হি ..মেয়ে গুল কোন জামা পরেনা।‘
‘আমার আব্বুওনা কাল রাতে কম্পুতে একতা পোছা ছবি দেখছে... হি হি.. কি পোছা।'
বেশ কয়েকজন মুসল্লি ইতিমধ্যেই অস্বস্তিতে গলা খাঁকারি দিতে আরম্ভ করেছেন। ঘটনা এই পর্যন্তই থেমে থাকলে তাও চলত। এর পর মুসুল্লিরা সবাই সেজদায় গেলেন। লেখা যা করল তা ভয়াবহ। এক দৌড়ে সেজদারত মুসুল্লিদের এক এক করে টুপি খুলে নিতে শুরু করল। কে বলে শিশুরা অবুঝ? শিশুটি ভাল করেই বুঝেছে, সব নামাজিরা এখন নাচার। নামাজরত অবস্থায় কারো কিছু বলার জো নেই। সৌভাগ্যবশত ইমাম সাহেব ছিলেন মাটির মানুষ। তাই সেই যাত্রা রক্ষা।

শিশুরা শেখেও খুব দ্রুত। যা শোনে, ভোলেনা। আমার এক আত্মীয়ার দেড় বছরের বাচ্চার কথাই ধরুন। সে কোন এক কুক্ষণে শুনল এক গালি ‘কুত্তার বাচ্চা’। বাসায় যেই আসে, অত্যন্ত হাসি মুখে অভ্যর্থনা জানায়, ‘কুত্তার বাচ্চা’। আমি ওই বাসায় বেড়াতে গেলাম। আদর করে সবাই যা জিজ্ঞাসা করে তাই করলাম, ‘বাবু তোমার নাম কি’? বলার সাথে সাথে দেখলাম বাবা-মার চোখে আতংকের ছাপ। আমি ব্যাপার কিছু বোঝার আগেই শিশুটি লাফাতে লাফাতে বলল, ‘কুত্তার বাচ্চা, কুত্তার বাচ্চা।‘ নিষ্পাপ শিশুটি আর একধাপ এগিয়ে হাততালি দিয়ে বলল, ‘চাচা, কুত্তার বাচ্চা’। এহেন অভ্যর্থনায় বিচলিত না হয়ে পারলাম না। বাবা মা জানাল নিরপরাধ শিশুটির এই নতুন শব্দ জ্ঞানে তাদের প্রায় ঘুম হারাম হবার যোগাড়।

শিশুরা স্বাদ নেবার বেলায় সব সময়ই উদার। ললিপপ থেকে শুরু করে নিজের বিষ্ঠা পর্যন্ত মুখে পুরে দিতে কোন আপত্তি নেই। তবে অবস্থা ভয়াবহ রূপ নেয় যখন তাদের নতুন দাঁত গজায়। আমি একদিন ট্রেনে করে ব্রিজবেনের দিকে যাচ্ছি। পাশের সিটে বসেছেন এক উচ্ছ্বসিত দম্পতি, সাথে কেবল হাটতে শেখা এক বছরের ভয়াবহ সুন্দর এক শিশু। বাচ্চাটি হাটি হাটি পায়ে আমার পাশে এসে বলল, ‘হেলো’। আমিও ‘হেলো’ বলে হাত বাড়িয়ে দিলাম, পরে বুঝলাম এটি ছিলা আমার জীবনের বড় ভুল গুলির একটি! শিশুটি আর কোন কথা না বলে সোজা আমার ডান হাতের বুড় আঙ্গুলটি মুখেপুরে তার সদ্য ওঠা দাঁত দিয়ে দিল এক মরণকামড়। কিছুতেই হাত আর ছাড়াতে পারিনা। আমারতো জান যায় যায় অবস্থা। অনেক কষ্টে যন্ত্রণা সামলে মরিয়া হয়ে সাহায্যের আশায় শিশুটির বাবা-মার দিকে তাকালাম। মা আনন্দের আতিশায্যে প্রায় বাকরুদ্ধ হয়ে বললেন, ‘He is teething!’ মানে ‘ওর দাঁত উঠছে’। আমি মনে মনে আওড়ালাম ঈশপের গল্পের ব্যাঙেদের মত-‘What’s fun to you, that’s death to me’.

কোমলমতি শিশুদের নিয়ে এত সব খারাপ খারাপ কথা লিখে আমার নিজেরই বিবেকের দংশন হচ্ছে। অ্যালান মার্শাল বেক বলে এক মনীষীর লেখা থেকে উদ্ধৃতি দিয়ে দোষের দায়ভার থেকে মুক্ত হতে চাই-
“ওদের সব জায়গায়ই পাওয়া যাবে... উপরে, নীচে, ভিতরে, গাছে, সাঁতরাতে, দৌড়াতে, লাফাতে, কিনা করতে। মায়েরা ওদের ভীষণ ভালবাসেন, সমবয়সী মেয়েরা ওদের দু’চোখে দেখতে পারেনা, বড় ভাই ও বোনেরা ওদের সহ্য করে, বড়রা ওদের না দেখার ভাণ করেন, আর ঈশ্বর ওদের রক্ষা করেন। এই শিশুটি সত্যিই শিশু যখন ওর মুখ কাঁদায়-ধুলয় মাখামাখি হয়, ওর সৌন্দর্য ওর আঙ্গুলের কাটা দাগে, ওর বুদ্ধিদীপ্ততার প্রমাণ যখন ওর চুলে বাবল গাম লেগে থাকে..আর ওদের নিয়ে আমাদের ভবিষ্যতের সব আশাভরসা উঁকি দেয় যখন ওদের পকেটে থাকে ছোট্ট ব্যাঙের বাচ্চা।“

ছবি সূত্রঃ Click This Link

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১১ বিকাল ৫:১৫
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:২৫

বন্ডাইর মত হত্যাকাণ্ড বন্ধে নেতানিয়াহুদের থামানো জরুরি...

বন্ডাই সৈকতের হামলাস্থল। ছবি: রয়টার্স

অস্ট্রেলিয়ার সিডনির বন্ডাই সৈকত এলাকায় ইহুদিদের একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠানে সমবেত মানুষের ওপর দুই অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী অতর্কিতে গুলি চালিয়েছে। এতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহ সর্বত্র বিরাজমাণ নন বলা কুফুরী

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১৪



সূরাঃ ২ বাকারা, ২৫৫ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৫৫। আল্লাহ, তিনি ব্যতীত কোন ইলাহ নেই।তিনি চিরঞ্জীব চির বিদ্যমাণ।তাঁকে তন্দ্রা অথবা নিদ্রা স্পর্শ করে না।আকাশ ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে সমস্তই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×