আমাদের দেশে সাধারনত জ্ঞানীগুনীদের বুঝাতে বুদ্ধিজীবী শব্দটি ব্যবহৃত হয় । এ বুদ্ধিজীবী শব্দটির হুবহু কোন সমর্থক শব্দ কোনদেশে নেই।এলিট,ইন্টেলেকচুয়াল,বুজুর্গ ইত্যাদি শব্দগুলোর অর্থ ঠিক বুদ্ধিজীবীর মত নয়।মানুষের বুদ্ধি ও দক্ষতা এক একটি বিক্রয়যোগ্য পদার্থ।আমরা সবাই কমবেশি বিভিন্ন উপকরনের সাথে বুদ্ধি ও জ্ঞান বিক্রি করি।কেউ যদি নিজস্ব কারিশমায় কেবল বুদ্ধিবিক্রী করেই জীবিকা নির্বাহ করতে পারে তাহলে তাকে কটাক্ষ নাকরে বরং বাহবা দেয়াই সংগত।কিন্তু বিপত্তিটা ঘটে তখনই যখন এ বুদ্ধিজীবী জ্ঞানী গুনী ব্যক্তিরা পানির দরে বুদ্ধির সাথে সাথে বিবেকটাও বিক্রি করে দেয়।আজকাল আমাদের সমাজের বুদ্ধিজীবি, জ্ঞানী ব্যক্তিদের দেখলে মনে হয় তারা তাদের বিবেক, বুদ্ধি,জ্ঞান হয় পুরোপুরি বিক্রি করে দিয়েছে নাহয় বন্ধক রেখেছে।
হাদীসে এসেছে এক সাহাবীকে শয়তান আয়তুল কুরসীর ফজিলতের কথা বলেছিল।ঐ সাহাবী শয়তানকে চিনতে পারেনি, এ কথা নবী (সঃ) কে বলা হলে তিনি বলেছিলেন এতো ছিল শয়তান,তবে আয়তুল কুরসীর ফজিলত সম্পর্কিত তার বক্তব্যটি সঠিক।হোক না শয়তানের মুখ দিয়ে বের হয়েছে ,ঠিক কথা হলে আমরা মুসলিমরা মেনে নিই।তাইতো হুমায়ুন আজাদ,জাফর ইকবাল,আরজ আলী মাতাব্বুর কিংবা বাট্রান্ড রাসেল যে কেউ যে কোন কথা বলুকনা কেন যদি সেটা যদি ঠিক হয়ে থাকে আমাদের মেনে নিতে
কোন আপত্তি নেই।নাস্তিক হুমায়ুন আযাদ সাহেব একটা কথা বলেছেন
“বুদ্ধিজীবীরা এখন বিভক্ত তিন গোত্রে। ভণ্ড, ভণ্ডতর, ভণ্ডতম”।
খাঁটি কথা বলেছেন।শয়তান নিজেই নিজেকে সবচেয়ে ভাল চিনে,তাই তার সম্পর্কে তার বর্ননাই সর্বোত্তম। হুমায়ুন আযাদের কথায় এ উপলব্ধিটা খুব ভালভাবেই হয়েছে।শোকরিয়া
ডিসকভারি চ্যানেলে দেখেছি,চীনের কোন এক অঞ্চলে যে মেয়ের পা যত ছোট সে মেয়ে ততবেশি আকর্ষনীয় ও সুন্দরী।আফ্রিকার কিছু কিছু অঞ্চলে মেয়েদের ঠোঁট আর গলার সাইজ দেখে তাদের সৌন্দর্য নিরুপিত হয়।তাই কৃত্রিমভাবে মেয়েদের ঠোঁট এবং গলা বড় করা হয়।প্রাকৃতিক বিষয়গুলো এভাবে পরিবর্তন করে সৌন্দর্য স্কেলটা কিভাবে নির্ধারিত হলো তা আমার বোধগম্য নয়।বর্তমান পশ্চিমা পুঁজিবাদী সমাজ ব্যবস্থা মেয়েদেরকে পন্য বানানো এবং সাথে সাথে বিলিয়ন ডলার হাতিয়ে নেয়ার যে মিশনে নেমেছে তারাও এরকম কৃত্রিম ও বায়বীয় স্কেল নির্ধারন করে নিয়েছে।মেয়েদের “Hour glass” ফিগার নাহলে আকর্ষনীয় হয়না,সুন্দরী আর সেক্সি হতে হলে breast enlargement,liposuction,brow lift ইত্যাদি রকমের কসমেটিক সার্জারী করতেই হবে।এ সকল কৃত্রিম প্রয়োজন আর কৃত্রিম স্কেল নির্ধারনের মাধ্যমে কসমেটিক,ফ্যাশন হাউজ আর প্লাস্টিক সার্জারীর কোম্পানী গুলো হাতিয়ে নিচ্ছে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার।বর্তমান সমাজে ও আমাদের তথাকথিত বুদ্ধিজীবীরা জ্ঞানেররাজ্যের এরকম একটি বায়বীয় ও কৃত্রিম ক্ষেত্র তৈরি করে রেখেছে।আর তারাও সে সকল জ্ঞানেরই পাহাড়।তাই আজ আমাদের সমাজে লালন আর রবী ঠাকুরকে নিয়ে পি.এইচ. ডি করা হয় অথচ যারা সিরাত পড়ে,হযরত ওমরের জীবনী পড়ে তাদেরকে দেখা হয় নিঁচু মস্তিষ্কের হোমো সেপিয়েন্স হিসেবে।অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে পড়ানো হয় রবী ঠাকুরের জন্ম- মৃত্যু ,বিবাহের সাল,অথচ আমরা নবী সঃ কত বছর বয়সে নবুওয়াত পান,কত বছর বয়সে হিজরত করেন,কত বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এসব জানিইনা। বদনসীব!! কালিদাস চন্ডীদাস এখানে যথেষ্ট সমাদর পেলেও শেখ সাদী,মাওলানা রুমী কিংবা আল্লামা ইকবালের সাহিত্যের মূল্য এখানে নেই বললেই চলে। সব বাকোয়াস! লালনের তথাকথিত আধ্যাত্মিকতার মোড়কে বিকৃত যৌনাচার এখানে পরম বরনীয় আর মুসলিমরা যে আধ্যাত্মিকতার কথা বলে সেটা মধ্যযুগীয় কুসংস্কার হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে।এ সকল বুদ্ধিজীবীরা রাশিয়া থেকে সমাজতন্ত্র আমদানী করে,চে গুয়েবারার বিপ্লব তাদের কাছে পরম আদর্শ অথচ আরবের ইসলাম এ দেশে আমদানি করলেই তাদের গায়ে চুলকানি শুরু হয়ে যায়।বিশ্বের সেরা বিপ্লবী মুহাম্মদ (সঃ) এর বিপ্লব নিয়ে কথা বলতে গেলেই তাদের বক্তব্য “তুই জংগী”, সারমেয়ের মত তাদের ঘ্রানশক্তি অসাধারন এমনকি কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের ঘ্রানশক্তি দেখে সারমেয়রাও লজ্জা পায়।সবকিছুতেই তারা মৌলবাদ আর জংগীবাদের গন্ধ পায় ।এ সকল শব্দ তাদের মস্তিষ্কে খুব ভালভাবেই সেট করে দেয়া হয়েছে এবং সময়ে সময়ে যেন ঠিকভাবে ডেলিভারী দিতে পারে সে প্রোগ্রামিংটাও অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করা।
আপনি যে কোন বিষয়ে কথা বলতে গেলেই আপনাকে যথেষ্ট জ্ঞানের সাথে কথা বলতে হবে।যে বিষয়ে আপনি কথা বলবেন সে বিষয়ে আপনার প্রমান থাকতে হবে।কেউ যদি আইন বিষয়ক কথা বলে তাকে সতর্ক থাকতে হবে কারন শত শত উকিল নাহয় তার ভুল ধরে বসবে।ডাক্তারী বিষয়ক উলটাপালটা কিছু বললে আরো শত শত ডাক্তার আপনাকে গাধা প্রমান করার জন্য তৈরি।তাই যে কোন বিষয়ে কথা বলতে হলে অবশ্যই আপনাকে সতর্ক হতে হবে। এটা একটা চিরায়ত নীতি।কিন্তু এসকল বুদ্ধিজীবী,সুশীল নাস্তিকরা এ নীতির একটা অনুসিদ্ধান্ত বের করেছে।সবকিছু নিয়ে কথা বলতে জ্ঞান লাগলেও ধর্ম নিয়ে কথা বলতে কোন জ্ঞান লাগেনা।কারন ধর্ম নিয়ে কথা বললে যদি ভুল কিছু বলে তাহলে ভুলটা তো মোল্লা,মৌলভীরাই ধরবে, আর তাদের তো এর আগেই তারা আধুনিক বিশ্বে বোকা প্রমান করে বসে আছে।তাদের জ্ঞানকে এ সকল বুদ্ধিজীবীরা মধ্যযুগের জ্ঞান,চিন্তাধারাকে মধ্যযুগীয় ধারা প্রমান করেছে অত্যন্ত দক্ষতার সাথেই।অতএব তাদের কথা সসম্মানে প্রত্যাখানযোগ্য।আর যে দুরচারজন আধুনিক ও ধর্ম শিক্ষায় শিক্ষিত তাদের কথায় ভে্টো প্রদান করবে, তাদের তো আগেই তারা মৌলবাদী,জামাত, শিবির আর হিযবুত তাহরীর খেতাবে ভুষিত করে রেখেছে।কিছু বললেই সে সকল খেতাবের নাম ধরে কথা বলা শুরু হবে।অতএব ধর্ম বিষয়ে প্রলাপ বকতে এ সব বুদ্ধিজীবিদের ফিল্ড পুরোপুরি প্রস্তুত।সাথে সাথে তারা এ বিষয়েও জ্ঞাত তাদের এ প্রলাপে কিছু পাবলিক ছাগলের তিন নং বাচ্ছার মত লাফাবে এবং তাদেরকে ডীফেন্ড করার আপ্রান চেষ্টা করবে।
কোরআনে যেহেতু জ্বীনদের কথা আছে তাই জিনে বিশ্বাস করি।জ্বীনদের মধ্যে ভাল জিন আছে খারাপ জিন আছে ।শুনেছি খারাপ জ্বীন নাকি মানুষের উপর আছর করে ।এটাকে সম্ভবত গ্রামে গঞ্জে ভুত বলে।এ খারাপ জ্বীন বা ভুত যেটাই হোক, আছর করলে নাকি মানুষ নিজের থেকে কিছু বলেনা।ভুত নাকি তার কথাগুলো মানুষটির মুখ দিয়ে বের করে।তাই মুখটি মানুষের হলেও বের হওয়া কথাগুলো ভুতের।জানিনা এ সবের সত্যতা কতটুকু?তবে আমাদের বুদ্ধিজীবীদের যে পশ্চিমা ভুতে পেয়েছে সে বিষয়ে আমি মোটামুটি নিশ্চিত।তারা নিজের বিবেক বা মস্তিষ্ক দ্বারা চিন্তা করে কিছু বলেনা।তা্দের কে যা শিখিয়ে দেয়া হয়েছে সেগুলোই তারা অনর্গল আওড়াতে থাকে।তাই যে চেহারা বা মুখ আমরা দেখছি সেটা আমাদের বুদ্ধিজীবীদের হলেও কথা গুলো কিন্তু তাদেরনা।তারা অত্যন্ত সততার সাথে শেখানো কথাগুলোর যথাযথ প্রতিধ্বনি করে।অন্তত এ জন্য হলেও তারা বাহবা পাওয়ার যোগ্য।মারহাবা!
এসকল বুদ্ধিজীবীদের একমাত্র ব্রতই ইসলামকে আক্রমন।যেখানে ইসলামের কিছু শুনবে সেখানেই তারা মৃগীরুগীর মত ছটফট করতে থাকে।আর শেখানো বুলিগুলো ছাড়তেই পারলেই যেন তারা নাকের কাছে জুতা পায়(মেডিকেল সায়েন্স এ বিষয়ে কি বলে আমি জানিনা)অমনিই তারা কিছুটা সতেজ হয়ে ঊঠে।ইসলামের বিরুদ্ধে তারা অত্যন্ত সুকৌশলে তাদের অপ্রচার গুলো চালাচ্ছে।শিকার ধরার জন্য যেমন টোপ দিতে হয় তেমনি এসকল বুদ্ধিজীবীরা ও অত্যন্ত সুকৌশলে বিজ্ঞানের টোপ দিয়ে শত শত মানুষকে বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে।
মক্কার অন্যতম জ্ঞানী ছিলেন আবু জেহেল।তাকে মক্কায় আবু হাকিম বা জ্ঞানীর পিতা বলেও ডাকা হত।ইসলামের পরিষ্কার প্রমান সে অস্বীকার করে আজ সে পুরো দুনিয়ার কাছে আবু জেহেল বা মুর্খের পিতা হিসেবে পরিচিত।আপনি যে জ্ঞান অর্জন করেছেন সেটা কতটুকু আপনার প্রভুকে চিনিয়েছে,নিজেকে চিনিয়েছে,সমাজ উন্নয়নে কাজে লাগবে সেটাও গুরুত্বপূর্ন।
বিঃদ্রঃ১,আমার জন্য দোয়া করবেন।
২,ভাল লাগলে নোটখানা শেয়ার করবেন
collected from facebook-MuZahid Rasel

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



